প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ৮ এপ্রিল ২০১৩

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম এর ছবি
লিখেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/০৪/২০১৩ - ২:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে আইসিএসএফ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছে যে কিছু মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সাধনের উদ্দেশ্যে, এবং সামাজিক সম্প্রীতিপূর্ণ বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে সোচ্চার। ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামের আড়ালে জামায়াত ইসলামীসহ এই দুষ্টচক্র সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মহান স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও নারী জাগরণের উন্মেষ রোধে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আরো লক্ষ করছি যে সরকার এসব ধর্মীয় চরমপন্থী গোষ্ঠীকে সঠিকভাবে মোকাবিলায় ব্যার্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

আমরা হেজাফতে ইসলামসহ এই জাতীয় দলগুলোর তথাকথিত লংমার্চ এবং হরতাল কর্মসূচির নামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রতিথযশা নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, এবং শাহবাগে অবস্থানরত তারুণ্যের উপর মৌলবাদীদের সুপরিকল্পিত হামলা ও আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এটি মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নগ্ন আক্রমণ। আমরা মনেকরি, বাংলাদেশের একটি ক্রান্তিকালীন সময়ে যখন আপামর জনসাধারণ ১৯৭১ এ সংঘটিত যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, ও গণহত্যার বিচারের জন্য ঐক্যবদ্ধ, সেই সময়ে একটি চিহ্নিত মৌলবাদী গোষ্ঠির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে এ-ধরনের হিংসাত্মক আক্রমণ আমাদের আরো ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত করবে মাত্র।

আমরা জানি, এদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে জনাব শাহরিয়ার কবির এবং অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মতো ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা অনন্যসাধারণ। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশরত অবস্থায় তাঁদের ওপর ব্যক্তিগতভাবে এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমাবেশের উপর হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের আক্রমণ প্রমাণ করে যে উগ্র মৌলবাদী শক্তির কাছ থেকে আমরা কেউই নিরাপদ নই। এই আক্রমণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর উপর বলেই আইসিএসএফ মনে করে।

দ্বিতীয়ত, পেশাগত দায়িত্বে নিয়োজিত নারী সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ আমাদের উদার, প্রগতিশীল, এবং গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে এ-ধরনের মধ্যযুগীয় নৃশংসতা নিন্দনীয় ও অনভিপ্রেত। সাহসী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন সহ সকল সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা বাংলাদেশে মুক্তভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, আইসিএসএফ এই প্রত্যাশা করে। এই ঘৃণ্য আক্রমণ চলতে দেওয়া নারীমুক্তি ও একটি সুষম সমাজের বিকাশে অন্তরায়। বাংলাদেশের নারীদের উপর ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী চক্র এ-দেশকে একটি পশ্চাৎমুখী সমাজব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করবো আগামি দিনগুলিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতে পুরুষ এবং নারীর সমঅধিকারের ভিত্তিতে একটি সুষম সমাজের বিনির্মাণে বাধা প্রদানকারী কুচক্রীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে। পাশাপাশি আমরা ঘটনার সময় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বহীন আচরণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

তৃতীয়ত, আমরা উৎকণ্ঠিত হয়ে লক্ষ করছি যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিশিষ্ট প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকেও সাম্প্রতিক সময়ে হুমকি ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। দুই দফায় তাঁর বাসায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলেছে এবং তাঁর নিকটাত্মীয়দের নানান ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। আইসিএসএফ মনে করে এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এই বিচারের সাথে জড়িত সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত চলমান একটি প্রক্রিয়া। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুধু একটি গণদাবি নয়, এটি মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতি আমাদের একটি পবিত্র দায়িত্ব। এই তাৎপর্যপূর্ণ কাজে যাঁরা নিয়োজিত আছেন তাঁদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

চতুর্থত, হেফাজতে ইসলামের মঞ্চ থেকে মুক্তচিন্তার চর্চাকারি ব্লগার এবং গণজাগরণ মঞ্চের উপর বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, তাঁদের নাস্তিক বলে অভিযুক্ত করা, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষার ব্যবহার একটি গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য হতে পারে না। আইসিএএসএফ হেফাজতে ইসলামের এই অবস্থানকে তীব্রভাষায় নিন্দা জানাচ্ছে এবং মনে করছে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশে সকল ধরনের মুক্তচিন্তার চর্চা হুমকির সম্মুখীন হবে। আমরা আশা করি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারের দায়িত্বশীল মহল সাংবাদিক এবং মুক্তিযদ্ধের পক্ষের সকল ব্যক্তি ও সংগঠনের নিরাপত্তা বিধানে ভবিষ্যতে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

আইসিএসএফ বিশ্বব্যাপী ১৩টি ভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে ২০০৯ সালে গঠিত একটি ফোরাম, যারা ১৯৭১ সালে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান, আইনের শাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৭১ সালে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়। এই ক্রান্তিলগ্নে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিতে একতাবদ্ধ অবস্থান এবং আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলে আইসিএসএফ মনে করে।


মন্তব্য

ঈয়াসীন এর ছবি

আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।