ধর্মীয় মৌলবাদি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম প্রায় এক বছর পরে আবারো তাদের কর্মকান্ড জোরেশোরে শুরু করেছে। বিগত দুই সপ্তাহান্তে তারা বিভিন্ন সমাবেশে উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রচার করছে। গতকাল তারা এমনকি নাস্তিকদের কতলের ফতোয়া দিয়েছে। হঠাৎ করে হেফাজতের এরকম গর্ত থেকে বের হয়ে আসার কারণ কী? এখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোন নিশ্চয়তা বা সমঝোতার প্রসঙ্গ আছে কি? বা কিছুদিন আগে দুই কিশোর ব্লগারকে জেলে পোরার সাথেই বা এসবের কোন সংযোগ আছে?
[প্রথমে একটি বিষয় পরিষ্কার করে নেয়া প্রয়োজন। এই লেখাটি গত ৫ই মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে উগ্র ধর্মব্যবসায়ী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সারাদিন ব্যাপী ভয়াবহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে রাতে চালানো আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের একটি অনুষঙ্গ নিয়ে। এটি কিন্তু এই অভিযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সেই অভিযানে নিহত প্রত্যেকটি ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা এবং
সংবিধানে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর শানে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন পাসসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল ২৪শে নভেম্বর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী। সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব হাফেজ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
এই কর্মসূচী দিতে গিয়ে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এর প্রেক্ষাপট বা কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কতোটা সত্য, কতোটা মিথ্যা এবং কতোটাই বা অতিরঞ্জন?
শেলফের একটা বড় অংশ জুড়ে আধিপত্য বিরাজ করে আছে ধর্ম শিক্ষা, ইসলামের ঐতিহ্য, ইসলামি মুল্যবোধ, দীনের আলো মার্কা বিভিন্ন বই । টিউবলাইটের এই মৃদু আলোতেও তাদের সোনালী / রুপালী রং এর জলে খোদাই করা আরবী অক্ষরগুলো যেন দম্ভ সহকারে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। । এদের উপরেই ভাতৃত্ব্যসুলভ সৌহার্দে অবস্থান করছে হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল আর আনিসুলেরা । শেলফের একেবারে নিচের তাকে, টিভি স্ট্যান্ডের আড়ালে প্রায় ঢাকা পড়ে যাওয়া অংশ থেকে ধুলো বালি আর অযত্নের অত্যাচার সয়ে লাজুক ভাবে উকি দিচ্ছে হুমায়ুন আজাদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর গোটাকতক কবিতার বই । এই রাম রাজত্বে এরা যেন অনাকাংক্ষিত অসুর । লুকিয়ে থাকতে হয় অন্ধকারে ।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে আইসিএসএফ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছে যে কিছু মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সাধনের উদ্দেশ্যে, এবং সামাজিক সম্প্রীতিপূর্ণ বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে সোচ্চার। ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামের আড়ালে জামায়াত ইসলামীসহ এই দুষ্টচক্র সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মহান স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও
গণজাগরণ মঞ্চ কার্যক্রম শুরু হবার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলে গেছে। ঘটনাক্রমে প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মকার্ড খেলা শুরু করেছে। রাজনীতির মঞ্চে নতুন উদয় হওয়া বিএনপি জামাত সমর্থিত হেফাজতে ইসলাম এই মুহুর্তে রাজনীতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা দখল করতে পেরেছে। পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপটের বলি হচ্ছে ব্লগাররা ও ব্লগের মতো স্বাধীন মতপ্রকাশের মাধ্যম। ব্লগার ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিনিধি হয়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চও তার প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা অনুযায়ী বিকশিত হতে পারছে না।