রাজনৈতিক দরকষাকষি ও পিষ্ট হওয়া মত প্রকাশের স্বাধীনতা

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: বুধ, ০৩/০৪/২০১৩ - ৮:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গণজাগরণ মঞ্চ কার্যক্রম শুরু হবার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলে গেছে। ঘটনাক্রমে প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মকার্ড খেলা শুরু করেছে। রাজনীতির মঞ্চে নতুন উদয় হওয়া বিএনপি জামাত সমর্থিত হেফাজতে ইসলাম এই মুহুর্তে রাজনীতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা দখল করতে পেরেছে। পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপটের বলি হচ্ছে ব্লগাররা ও ব্লগের মতো স্বাধীন মতপ্রকাশের মাধ্যম। ব্লগার ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিনিধি হয়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চও তার প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা অনুযায়ী বিকশিত হতে পারছে না।

কাদের মোল্লার লঘুশাস্তির প্রতিবাদে গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া গণজাগরণ মঞ্চের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বেশ অনেকটাই বদলে গেছে। এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সাম্প্রতিক সংযোজন দুই দফায় ৬ জন ব্লগারের গ্রেফতার হওয়া।

১.

ব্লগারদের এই গ্রেফতার হওয়ার ঠিক দুইদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কর্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি গত রোববার বেলা ১১টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একদল ইসলামী ব্যক্তির সাথে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে ইসলামী চিন্তাবিদ-আলেম ও কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বৈঠকে সভাপতি ছিলেন কমিটির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইনউদ্দিন খন্দকার। অপরপক্ষে আলেমদের পক্ষে ছিলেন রাজারবাগ পীরের পত্রিকা দৈনিক আল ইহসানের সম্পাদক মাহবুব আলম আরিফ, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. ইয়াকুব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মুফতি ওলিউর রহমান খান, আলেম-ওলামা-মাশায়েখ এক্যজোটের সভাপতি আব্দুল হালিম সিরাজ প্রমুখ। এদের মধ্যে মূলত: মাহবুব আলম আরিফ বক্তব্য পেশ করেন। লক্ষ্যনীয়, এরা সবাই আওয়ামী লীগ ঘরানার আলেম।

বৈঠকে আলেমদের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য পাঠ করা হয়। এই বক্তব্যে রেফারেন্সসহ ত্রিশজনের মতো ব্লগার ও এ্যাটাচমেন্ট হিসেবে ৫৬জন নাস্তিকের তালিকা পরিবেশন করা হয়। পত্রিকায় এর সংখ্যা ৮৪বলা হলেও ডুয়াল লিস্টিঙের কারণে মোট সংখ্যাটা ৮০র নিচে হবে।

এর পরদিন রাতে ব্লগার রাসেল, আল্লামা শয়তান ও সুব্রত শুভ গ্রেফতার হন। বলাবাহুল্য এরা আলেমদের তালিকাভুক্ত ব্লগার।

পুরো প্রেক্ষাপট না জানা থাকলে ব্লগারদের এই গ্রেফতার কয়েকজন হুজুরের দাবি এবং সেই কারণে তারা গ্রেফতার হয়েছেন এরকমটি মনে হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তাদের এই গ্রেফতার গত প্রায় এক মাস ধরে জাতীয় রাজনীতিতে দরকষাকষির একটি প্রত্যক্ষ ফল।

২.

শাহবাগ আন্দোলনের তুমুল মুহুর্তে হঠাৎ একদিন থাবাবাবা নিকের একজন ব্লগার খুন হন। থাবাবাবা খুনের সাথে জড়িতরা গ্রেফতার হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানা যায় তাদের উদ্বুদ্ধ করেছে শিবিরের এক নেতা। এই খুনের পরপরই জামাত শিবিরের পক্ষ থেকে জোর প্রচারণা চালানো হয় যে ব্লগে থাবাবাবা কী ধরণের ইসলাম বিদ্বেষী লেখা লিখতো। বিপরীতে শাহবাগের আন্দোলনকারীরা তারা যে থাবাবাবার মতো নন সেটা প্রমানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফেইসবুকে বেঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রচারণা চলে থাবাবাবার নুরানীচাপা ব্লগটি থাবার মৃত্যুর পরে তৈরি। এর মাঝে গণজাগরণের অনুষ্ঠান ধর্মীয় টেক্সট পাঠ করার মধ্যে দিয়ে শুরু হতে থাকে।

তো শাহবাগের আন্দোলনকারিদের নিজেদের আস্তিক প্রমানের চেষ্টা খুব একটা কাজে দেয়নি। মৌলবাদি গোষ্ঠি এর মধ্যে সারাদেশে ব্লগার মানেই নাস্তিক এরকম একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা করে ফেলে।

এর মাঝে রাজনীতির ময়দানে হাজির হয় হেফাজতে ইসলাম নামে একটি আপাতদৃষ্টিতে অরাজনৈতিক দলের। চট্টগ্রাম শহরতলির হাটহাজারি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এই দলটির নেতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী নামে এক ব্যক্তি। গত ৯ মার্চ জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে এই দলটি তাদের ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে। সেখানে ব্লগ (ও সম্পর্কিত আন্দোলন) সম্পর্কে দাবি তোলা হয়েছে,

২। আল্লাহ্‌, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।

৩। কথিত শাহবাগী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-র শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। ব্যক্তি ও বাক-স্বাধীনতার নামে সকল বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

[পুরো তালিকা পড়তে ক্লিক করুন।[নীড়পাতা.কম]

এই মুহুর্তে এই দাবিকে সামনে রেখে আগামি ৬ই এপ্রিল তারা ঢাকার দিকে ৫০ লক্ষ লোকের লংমার্চ করবে বলে ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পনামাফিক আগাচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞে জামাতে ইসলামি সাংগঠনিক সহায়তা দিচ্ছে বলে খবরে প্রকাশিত হয়েছে। [সূত্র ১] উপরন্তু কানের সাথে মাথা হিসেবে ইতিমধ্যে তারা ১৮ দলের "নৈতিক" সমর্থন যোগাড় করতে পেরেছে। [সূত্র ২]

৩.

লংমার্চের ঠিক আগে আগে সরকারকে তালিকা সরবরাহ ও সেইমতে তিনজন ব্লগার গ্রেফতার এরকম একটা ধারণার জন্ম দিয়েছিলো যে সরকার "ধর্মের বিপক্ষে নেই" এটা প্রমান করতে আন্তরিক। মৌলবাদিদের চোখে ভালো হবার এই সরকারি চেষ্টাটা আরো নগ্নভাবে ধরা পড়ে ৩১শে মার্চ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা থেকে প্রকাশ পাওয়া আলাপচারিতায়। সেখানে [সূত্র ৩] হেফাজতে ইসলামের সাথে সুর মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার সভাসদেরা গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধ করে আন্দোলনকারিদের পড়ালেখায় ফিরে যাবার পক্ষে মত প্রকাশ করা হয়।

এই মিটিঙের পর দুদিন ধরে হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকার পক্ষে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও অন্যান্যরা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকের ফলাফল আন্দাজ করা যায় শূণ্য।

গত সোমবার ২রা এপ্রিল সচিবালয়ে কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতার এক বৈঠকেও হেফাজতে ইসলামের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। প্রথম আলো জানাচ্ছে,

.. ধর্মীয় বিষয়ের মতো একটি সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি বা জেদাজেদিতে না যাওয়ার পক্ষে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। নির্বাচন সামনে রেখে বিষয়টি দ্রুত সমাধান চান তাঁরা। ... তাই সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হেফাজতে ইসলাম ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় আসার পক্ষে সরকার।

পরে অবস্থান পরিস্কার করতে সরকারের চার প্রভাবশালী মন্ত্রী আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু সংবাদ সম্মেলন করে ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে সেটা জানানোর জন্য এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু দাবি মেনে নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি মেনে নেয়া দাবিগুলোর একটা আন্দাজ পাওয়া যায়।

সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যকারী ব্লগারদের খুঁজে বের করার জন্য কমিটিতে দুজন আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ওই কমিটিতে কোনো ব্লগার বা অন্য কোনো ধর্মের প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি কেন জানতে চাইলে মন্ত্রীরা উত্তর দেননি। সম্ভবত ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের কোন তদন্ত কমিটি বা প্রসিকিউশন বা ক্রিমিনাল চার্জ গঠনের কাজে এর আগে কোথাও নিয়োগ দেবার কথা বলা হয়নি। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের এই বিষয়টি নিয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে। [সূত্র ৪]

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী সবাইকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে। এ জন্য প্রচলিত দণ্ডবিধি সংশোধন করে সাজা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। পরে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, দণ্ডবিধির সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান সংশোধন করে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হবে। [সূত্র ৫]

উল্লেখ্য মৃত্যুদন্ডের এই শাস্তি এই দাবিতে জামাতে ইসলামি ১৯৯২ সালে আইনে রূপান্তর করার চেষ্টা করেছিলো।

৪.

তো দেখা যাচ্ছে হেফাজতে ইসলামি বাংলাদেশে এই মুহুর্তে নির্বাচনকে সামনে রেখে সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। একাধারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমিহ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এই দলটি।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ থেকে প্রথমে মন্তব্য করা হয়নি। মঞ্চ বন্ধ করে দেয়া প্রসঙ্গে তবে ২রা এপ্রিল ২০১৩ এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন,

‘গণজাগরণ মঞ্চ কারও নির্দেশে তৈরি হয়নি। কারও রক্তচক্ষুকে ভয়ও করে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে তুলনাবিহীন সাহসিকতায় বাঙালি তার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল, সেই রকম সাহসের সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চও ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।’

উল্লেখ্য একই দিন সকালে গণজাগরণ মঞ্চের হরতাল বিরোধী মিছিলে ছাত্রলীগ যোগ দেয়নি। [সূত্র: ৬]

ফ্রেব্রুয়ারিতে গণজাগরণ মঞ্চে ধর্মীয় আবহ আনার পরও সব সমমনা দলগুলো গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে একতাবদ্ধ ছিলো। তবে এই একতা বেশি দিন টেকেনি। ২৬শে মার্চ তারিখে গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষিত নমনীয় কর্মসূচীতে প্রকাশ্যে দ্বিমত করে অন্তত দু'টি গ্রুপ। এদের একটি স্মারকলিপির পরিবর্তে ঘেরাওয়ের কর্মসূচী দাবি করে এবং আরেকটি জামাত নিষিদ্ধের দাবিতে আমরণ অনশনে যায়।

এই দু'টি গ্রুপই মূলধারা গণজাগরণ মঞ্চের সাথে তাদের বিরোধ ইত্যাদি নেই বলে আশ্বস্ত করলেও বিভেদের সুর স্পষ্ট ও পরিস্কার। সম্প্রতি ব্লগার গ্রেফতার ইস্যুতেও গণজাগরণ মঞ্চের বিবৃতি ব্যতিরেকে কোন কর্মসূচী নেই। সেই বিবৃতিও ধোয়াটে ও সেখানে আটককৃত ব্লগারদের সমর্থনে জোর গলায় কিছু বলা হয়নি। এ অবস্থায় এই ইস্যুতে কর্মসূচী দিয়েছে ও বাস্তবায়ন করছে আরেকটি গ্রুপ। যুক্ত কর্মসূচী প্রশ্নে বিরোধ ও আলাদা আলাদা কর্মসূচী চলতে থাকলে একসময় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় ফাটল ধরাবার সম্ভাবনা বেশ বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন কর্মসূচী দিতে ব্যর্থতা, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে আন্দোলনকে সেদিকে পরিচালিক করতে পারার ব্যর্থতা বা সরকারের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে চাওয়াদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত হতাশাজনক হয়ে পড়তে পারে।

সূত্র
[সূত্র ১] লংমার্চ থেকে সরে গেলেন অনেক আলেম ও ইসলামী সংগঠন, কালের কণ্ঠ

[সূত্র ২]
হেফাজতকে বিএনপির সমর্থন, বিডিনিউজ২৪

[সূত্র ৩] আন্দোলন বিষয়ে সরকারি অবস্থান: মধুচন্দ্রিমা কি শেষের দিকে? নীড়পাতা.কম

[সূত্র ৪] চার মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন : আইন অনুযায়ী ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : খালেদা জিয়াসহ ১৮ দলীয় শীর্ষ নেতারা হুকুমের আসামি হবেন : আমার দেশ-এর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমার দেশ

[সূত্র ৫] ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দণ্ডবিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত, ইত্তেফাক

[সূত্র ৬] ‘গণজাগরণ মঞ্চ কারও নির্দেশে হয়নি, রক্তচক্ষুকে ভয়ও করে না’, প্রথম আলো


মন্তব্য

যুধিষ্ঠির এর ছবি

পুরো প্রেক্ষাপট না জানা থাকলে ব্লগারদের এই গ্রেফতার কয়েকজন হুজুরের দাবি এবং সেই কারণে তারা গ্রেফতার হয়েছেন এরকমটি মনে হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তাদের এই গ্রেফতার গত প্রায় এক মাস ধরে জাতীয় রাজনীতিতে দরকষাকষির একটি প্রত্যক্ষ ফল।

এই কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যযুগীয় ইনকুইজিশনের সমতূল্য জামায়াতে আওয়ামী সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ একটি পরিকল্পিত ও স্ট্র্যাটেজিক কাজ, শুধুমাত্র একটি "ভুল" নয়। আশঙ্কা করি এটিকে ইতিহাসে "ভুল" হিসেবে রেকর্ড করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।

হাসিব এর ছবি

ব্লগারদের গ্রেফতারের আগে নিজেদের লোকজনদের ডেকে মিটিঙ করিয়ে আওয়ামী লীগ সম্ভবত প্রমান করতে চাইছিলো যে দুষ্টু হুজুরদের দল হেফাজতের আহবানে তারা নত হয়নি বরঞ্চ ভালো হুজুরদের তালিকামতো এগিয়েছে। কিন্তু নেগোসিয়েশনের জন্য দৌড়ঝাপ, চার মন্ত্রীর সম্মেলন আর মানুষজনের হাতে দুই দুই যোগ করে চার বের করার ক্ষমতা তাদের উদোম করে দিয়েছে।

ভালো হুজুরের দলের তৈরি তালিকার একটা বড় অংশ ওয়েবে ঘুরছিলো সপ্তাহখানেক ধরে। এমনও হতে পারে এটা আসলে ঐ প্রধানমন্ত্রীর অফিসেরই তৈরি করা। হুজুরদের হাত দিয়ে ওটা আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা হয়েছে। কনক্রিট প্রমান নেই বলে এই প্রসঙ্গটা পোস্টে তুলিনি।

নাফিসা এর ছবি

চলুক

আরিফুর রহমান এর ছবি

সবচে বড়ো লাভের ভাগীদার হতে পারতো নীলমণি আওয়ামী লীগ। কিন্তু বলদ যেহেতু গাছে ধরে না, সেহেতু সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি আওয়ামী লীগেরই হবে। বিনপি তার চরিত্র হারায় নি, সে দুশ্চরিত্রই রয়ে গেলো। কিন্তু আবামীলীগ সকলকে এই যে 'অবিশ্বাসে'র মধ্যে ফেলে দিলো, তার ক্ষতি তারা কি কোনদিন পুষিয়ে উঠতে পারবে?

এর পরে আদৌ কি আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে?

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
শে‌য়ার দিলাম
সবার উপরে ভোট সত্য তাহার উপরে নাই

হাসিব এর ছবি

ভোটের লাইনে আসুন।

নজমুল আলবাব এর ছবি

রাসেল এর শেষ লেখাটা সম্ভবত উন্মোচনে এসেছে। সেই লেখার সাথে গ্রেফতারের কোন সম্পর্ক নাই, এটা আমার বিশ্বাস হয় না।

লেখাটা এখানে আছে

হাসিব এর ছবি

হতে পারে নাও হতে পারে। রাসেলের নাম এ্যাটাচমেন্টে হিসেবে যে ৫৬জনের তালিকা দেয়া হয়েছিলো সেখানে আছে। রাসেল বহুদিন একই ভাবে একই স্টাইলে লেখালেখি করে আসছে। সম্ভবত আগে থেকেই সে টার্গেটেড। আল্লামা শয়তানের নামও ঐ একই লিস্টের। তার ফেইসবুক আইডি কিন্তু ডিএ্যাক্টিভেটেড। তবে এগুলো ব্যাপার না। মোট তালিকা দেখলাম ১১জনের যাদের গ্রেফতার করা হবে। ৪জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার। বাকিদের খুজছে হয়তো এখন।

আহির ভৈরব এর ছবি

ভ‌য়ংকর। একবার ব্ল‌্যাসফেমি আইন কায়েম হলে ইসলাম ছাড়াও আর কিসের বা কাদের বিরূদ্ধে মত-প্রকাশ করা ‌যাবে না তা অনুমান করা যায়। It's the beginning of the end.

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

হাসিব এর ছবি

ব্লাসফেমি আইন তো মনে হয় ইতিমধ্যেই আছে। আপনি ধর্ম, মানিলোক কারো বিরুদ্ধেই টু শব্দটি করতে পারবে না। আইন আপনাকে জেলে পুরবে।

আহির ভৈরব এর ছবি

সেই। ভাবলাম বলি এতদিন তো অন্তত আইনত মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান ছিলো না, কিন্তু তারপরই মনে হলো, না থাকলেই কী, ক্রস্ফায়ার-গুম করতে তো আইন লাগে না! এতদিন বেআইনীভাবে হতো এখন আইনেই হবে, এই যা।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

Emran এর ছবি

যে দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সেই দেশে শরিয়া এবং ব্লাসফেমি আইন না থাকাটাই অস্বাভাবিক। ইসলামী শরীয়া আইন অনুযায়ী আল্লাহ, রসুল্‌ এবং সার্বিকভাবে ইসলামবিরোধী যে কোন কথা এবং কাজের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সরকার সংবিধানকে এখন streamline করতেছে, এবং একইসঙ্গে নিজের ভণ্ডামিকেও পরিষ্কার করে তুলছে। আর যেসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এতদিন রাজাকার-যুদ্ধাপরাধির কষ্টে কাইন্দে জার-জার হয়ে গেছে, তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই ক্যান? নাস্তিক হওয়া কি মানবাধিকারের বাইরে পড়ে নাকি?

আহির ভৈরব এর ছবি

এই মন্তব্যটা নীচে দিতে চেয়েছিলাম, সরিয়ে দিলাম।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

আহমদ শফী নিয়ে কি আপনার কোন লেখা আছে?

হাসিব এর ছবি

নাই। কারণ যথাযথ ইনফরমেশন সোর্স নাই। ফেইসবুকে ঘুরতে থাকা ইমেজ বা স্ট্যাটাসের উপর ভিত্তি করে পোস্ট লেখা সমস্যাজনক। ক্রসচেক না করা গেলে সেই ইনফো নিয়ে আমি খুব বেশিদুর যাই না। ইনফরমেশন পেলে অবশ্যই লিখবো।

তবে যা বুঝি, ৫০লাখ লোক যোগাড় করার মতো সাংগঠনিক শক্তি এদের নাই। এদের সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে, অথবা টাকাপয়সার মাধ্যমে। ৩০হাজার বাহন যোগাড় করা হয়েছে শুনলাম। এতো টাকা কোথা থেকে আসছে সেটা তদন্ত করতে সরকার আগ্রহী না। তাছাড়া আরেকটা সম্ভাবনা আছে ইলেকশন ফান্ডের বিষয়ে। বাংলাদেশে ঢাকার পরে সবচেয়ে ধনবান লোকেদের বাস চিটাগাঙে। এদের থেকে নির্বাচনের ফান্ড আসে। চিটাগাঙের লোকেরা ধনী এবং কনজারভেটিভও। এমনও হতে পারে তাদের হুজুরদের কথা শুনে তারা সরকারকে চাপ দিচ্ছে। তবে ঘটনা যাই হোক, আড়ালে অনেক বড় বড় গল্প হয়তো আমাদের অগোচরে থেকে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো একটা ভুইফোড় দল এমন কী হলো যে তাকে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দলই তোয়াজ করছে!

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

আহির ভৈরব এর ছবি

অত‌্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা। ৭১-এর ইতিহাস বিকৃত করে ওরা হাত পাকিয়ে ফেলেছে। ঘটতে থাকা পরিস্থিতি এভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখা ভীষণভাবে প্রয়োজন।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

এম জে ফেরদৌস এর ছবি

বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে। তবে এর সাথে আরেকটি বিষয় যুক্ত করতে চাই-
আমার মতে, গণজাগরণ মঞ্চের সরকারি প্রভাবাধীন অংশ বরাবরই অনশন ও কর্মসূচিকে জঙ্গিত্বহীন এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অথর্ব অবস্থায়ই রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের সরকারি প্রভাব বলয়ের বাইরে থাকা কর্মীদের চাপ বিশেষত অনশনের মতো কর্মসূচির কারণে আন্দোলনের সরকারি অংশ কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে নানা কায়দায় সরকারের চাপে ও মন্ত্রী ও আওয়ামী প্রভাবাধীন বুদ্ধিজীবীদের তাড়নায় যখন অনশন স্থগিত করা হয় তখন আন্দোলনের সকল চমক পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়ে যায়। এরপরই সরকার নগ্নভাবে হেফাজতের ঘোড়ায় চড়ে আন্দোলনকে দ্বিধাবিভক্ত, মরালি ডিজঅর্গানাইজড ও ভেতর থেকে ক্ষয় করে ফেলার সামর্থ অর্জন করে। উল্লেখ্য আন্দোলনের প্রাথমিক দিনগুলির ফেস্টিভ্যাল মুড শেষ হওয়ার পর থেকেই ভোটের রাজনৈতিক হিসেব-নিকেষের কারণে আন্দোলনকে বন্ধ করার সরকারি অপচেষ্টা অব্যাহত ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ রাজনৈতিক স্বার্থের ইমেজ রক্সার কারণে । আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমন করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রথমিক দিনগুলির পরপরই আওয়ামী নেতৃত্ব বুঝে যায় এই আন্দোলন তার ভোটের রাজনীতির জন্য সুবিধাজনক অবস্তায়নেই উপরোন্তু আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিপুল অংশও আওয়ামী লীগের ভুমিকা বিষয়ে স্বন্দিহান। এই পরিস্থিতে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামকে কিছুটা প্রাধান্য দিয়ে, তাকে প্রধান ফ্যাক্টর দেখিয়ে আন্দোলনকে দমন করার কূট কায়দা অবলম্বন করেছে। হেফাজতে ইসলাম আসলে একই সাথে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামাত উভয়ের স্বার্থ সার্ভ করে চলেছে। আন্দোলনের অনশন কর্মসূচি দীর্ঘায়ু হলে এবং যদি তাতে কারো জীবননাশের পরিস্থিতি তৈরি হতো তাহলে না চাইলেও আওয়ামী লীগকে জামাত নিদ্ধের দাবিটি আমলে আানতে হতো।
আর এখন শাহবাগ আন্দোলন নিজেই নিরাপত্তা ও আন্দোলনকারীরা হুমকির মুখে। এই পরিস্তিতি একই সাথে দেশকে পেছন দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মধ্যযুগ অত্যাসন্ন।

হাসিব এর ছবি

আপনি যা যা বললেন সেগুলো অনেকের ফেইসবুকের স্ট্যাটাসে বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কদিন পরেই সেগুলো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনারা প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারিরা যদি সবাই মিলে ব্লগগুলোতে না লিপিবদ্ধ করেন তাহলে ইতিহাস পরবর্তিতে বিজয়ীরাই লিখবে। সবসময় বিজয়ীরাই সঠিক ইতিহাস লেখে এমনটা নাও হতে পারে।

নাফিসা এর ছবি

চমৎকার পর্যবেক্ষণ!

নাফিসা এর ছবি

এটি সমসাময়িক কালে আমার পড়া চমৎকার বিশ্লেষণ গুলির মধ্যে অন্যতম!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ বিশ্লেষণ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হুম চলুক আর কী কমু?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ধুসর জলছবি এর ছবি

চলুক

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ভাল বিশ্লেষন । সবার ওপরে ভোটই সত্য এই দূর্ভাগা দেশে ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

নীল আকাশ এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।