হেকমত আলীর আত্বপোলদ্ধি ঃ একটি পারিবারিক চড় বদলে দিতে পারে সমাজ এবং দেশ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/০৪/২০১৩ - ১১:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাস্তার ট্রাফিকের শব্দটা সামনের জানালার মোটা কাচ ভেদ এই বসার ঘর থেকেও বেশ ভাল ভাবেই শোনা যাচ্ছে । ঘরের আসবাবপত্রের সংখ্যা সীমিত । মুখোমুখি ২ সোফা সেটের মাঝামাঝি মেহগনি কাঠের একটা ভারী টি-টেবিল । ঘরের এক কোনায় একটা প্যানাসনিকের ২৪ ইঞ্চি টিভি রাখা । টিভির ঠিক পাশেই মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত একটা বই এর শেলফ । শেলফের একটা বড় অংশ জুড়ে আধিপত্য বিরাজ করে আছে ধর্ম শিক্ষা, ইসলামের ঐতিহ্য, ইসলামি মুল্যবোধ, দীনের আলো মার্কা বিভিন্ন বই । টিউবলাইটের এই মৃদু আলোতেও তাদের সোনালী / রুপালী রং এর জলে খোদাই করা আরবী অক্ষরগুলো যেন দম্ভ সহকারে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। । এদের উপরেই ভাতৃত্ব্যসুলভ সৌহার্দে অবস্থান করছে হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল আর আনিসুলেরা । শেলফের ঠিক নিচের তাকে, টিভি স্ট্যান্ডের আড়ালে প্রায় ঢাকা পড়ে যাওয়া অংশ থেকে ধুলো বালির মাঝ থেকে লাজুক ভাবে উকি দিচ্ছে হুমায়ুন আজাদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর গোটাকতক কবিতার বই । এই রাম রাজত্বে এরা যেন অনাকাংক্ষিত অসুর । লুকিয়ে থাকতে হয় অন্ধকারে । টিভি থেকে আড়াআড়ি ঘরের আরেক কোনায়, জানালার পাশে একটা রকিং চেয়ার রাখা । এই রকিং চেয়ার বসে খুব ধীরে ধীরে দোল খাচ্ছেন হেকমত আলি সাহেব । দোল খেতে খেতে বেশ গভীর ভাবে চিন্তায় মগ্ন হেকমত সাহেব । নিবিষ্ট মনে তিনি টিউবের আশে পাশে জমে যাওয়া মাকরশার ঝুল গুলোর কথা ভাবছেন । "কত দ্রুতই না এই জাল ছড়িয়ে পড়ে !! ক্ষনিকের অবহেলা, অলসতা, অসচেতনতা !! সুযোগ পেলেই গজিয়ে যায় " । মনে মনে ঠিক করে ফেললেন কালকে সকালেই পরিষ্কার করে ফেলতে হবে । এই সিদ্ধান্তটা নেয়ার সাথেই সাথেই একটা অদ্ভুত উপলদ্ধি হল হেকমত সাহেবের । " জীবনের সব জঞ্জাল কি এভাবে এক সকালে পরিষ্কার করে ফেলা যায় ? অনেকে আবার এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় এই জঞ্জালের সাথে, এই জঞ্জাল সরানোর কথা হয়তো কারো মাথায়ই আসে না । " সামনের সেলুন থেকে বেজে আসা হিন্দি গানের এক ঘেয়ে সুরের সাথে গুলিয়ে গিয়ে প্রায় চিন্তার খেইটা কেটে যাচ্ছে । চিন্তাটা ভাল ভাবে জমছে না । হেকমত সাহেবের মনটাও বেশ বিক্ষিপ্ত । মেজাজটাও বেশ চড়েই আছে । মেজাজ খারাপের কারনটাও বেশ ব্যক্তিগত । হেকমত সাহেব ঠান্ডা মাথার মানুষ । সচারাচর রাগেন না । মেজাজ যে তার একেবারেই নেই তা নয়, তবে হেকমত আলী সাহেব মেজাজ জিনিসটাকেও বেশ সচেতনতার সাথে এড়িয়ে চলেন । পরিবারের লোকজনের সাথেও তিনি সচারচর উচু গলায় কথা বলেন না । এলাকায়ও তিনি নিরীহ মানুষ হিসেবেই পরিচিত । পারতপক্ষে তিনি ঝামেলাযুক্ত পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতেই ভালবাসেন । তবে আজ মেজাজটা কোন ভাবেই দমানোর চেষ্টা করলেন না তিনি । মেজাজটাকে এক খাতে প্রবাহিত করে পুঞ্জিবদ্ধ ক্ষোভে রুপ দেয়ার চেষ্টা করলেন । নিচ তলায় লোহার ভারী গেইটটা খোলার আওয়াজ পেলেন । হেকমত সাহেবের সারা সন্ধ্যার বিচ্ছিন্ন ভাবনা গুলো যেন হঠাত করেই একটা পুঞ্জিভুত রুপ পেল । সিদ্ধান্তটা নেয়ার সাথে সাথেই অদ্ভুত একটা শক্তি পেলেন তিনি । ধীরে ধীরে উঠে দাড়ালেন । সিড়ি দিয়ে একটা পায়ের শব্দ উঠে আসছে উপরের দিকে । শেষবারের মত একবার ভাবলেন হেকমত সাহেব, " পারবেন তো ? " । সাথে সাথেই এক ঝটকায় সব দ্বিধাদন্দ্ব দুর করে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন ।

-----------

হেকমত সাহেব দৈনন্দিন জীবন সাধারনত বাসা থেকে অফিস, অফিস থেকে বাসাতেই সীমাবদ্ধ । মাঝে মাঝে তিনি আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যান । আত্মীয় স্বজনের বাসায়, অফিসে কোথায় তিনি সাধারনত কোন আলোচনায় জড়ান না । একান্ত অনিচ্ছা সত্বেও যদি বা মাঝে মাঝে অংশগ্রহন করতে হয় তিনি সচেতনার সাথে নীরব স্রোতার ভুমিকায় থাকেন । দেশ, দেশের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, টালমাটাল অর্থনীতিতে এসব নিয়ে যে হেকমত সাহেব একেবারেই ভাবেন না, ব্যপারটা ঠিক তা না । দেশ নিয়ে, রাজনীতি, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিয়ে তিনি প্রায়ই ভাবেন । এই তো সেদিন হলমার্ক গ্রুপের ব্যাপারে যথাযথ অনুসন্ধান, পর্যালোচনা না করেই তাদেরকে আরো ঋন দেয়ার ব্যপারে অর্থমন্ত্রীর মতামত শুনে বেশ মেজাজ খারাপ হয়েছিল । ইচ্ছা করছিল বেকুবটার মুখে ঠাস করে একটা চড় কসিয়ে দিতে । তবে সংগেই সংগেই আবার নিজের মেজাজ সংবরন করলেন ।

মাসখানেক আগেও একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে, বাসে সামনের সিটে বসা লোকটাকে অসভ্যের মত পাশের মেয়েটার গায়ে হাত দিতে দেখে ঘৃনা, ক্ষোভে তার ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠেছিল । ইচ্ছে করছিল সবার সামনে লোকটার কলার ধরে কশে একটা চড় দিতে, যেন জীবনের তরে একটা শিক্ষা হয় লোকটার । কিন্তু কোথায় যেন বাধা পেলেন । কিসের যেন একটা সংকোচ তাকে আটকে দিল । বিবেকের তাড়নায় তাই নিজের সিট ছেড়ে দিলেন মেয়েটার জন্য।

গত শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়েও মেজাজটা বেশ ভাল রকম খিচড়ে গিয়েছিল । ৭১ এর কুখ্যাত শামসু রাজাকার এখন এলাকার মসজিদের ইমাম । খুতবার আগে পরে শামসু মাইকে মুসলিমের অধিকার এবং দায়িত্ব, দুনিয়া জুড়ে মুসলিম উম্মাহর কষ্ট , ন্যায় অন্যায় কত কথাই না বলে । গত ৪২ বছরের প্রতি সপ্তাহের প্রতিটি জুম্মার নামাজের সময় ভন্ড শামসুর মুখে ন্যায় অন্যায়ের বুলি শুনতে শুনতে হেকমত সাহেব বিচলিত হয়ে ওঠেন । প্রতি সপ্তাহেই তার তীব্র ইচ্ছা করে দাড়িয়ে চিতকার করে বলতে , " শামসু, তুই রাজাকার " । কিন্তু আসপাশের মুসল্লিদের গায়ের আতরের ঘ্রান, শামসুর গুনগুন করে খুতবা পাঠের সাথে ধর্মানুভুতি মিলিয়ে সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যায় । ৪২ বছরেও হেকমত সাহেবের বলা হয় না "তুই রাজাকার।"

কিসের একটা অদৃশ্য শক্তি যেন বারে বারেই হেকমত সাহেবকে থমকে দেয় । অক্ষমতার একটা বোবা আর্তনাদ যেন বারে বারে গুমরে মরে মনের ভেতর । "শুধু কি আমিই এমন অক্ষম ?? " এই প্রশ্নটাই যেন ঘুরে ফিরে বেড়ায় । তার মনে হয় সেই বাসে তার পাশে বসে বা দাড়িয়ে থাকা অন্য যাত্রিদের কথা । মনে হয় জুম্মার নামাজের আরো অনেক প্রবীন মুসল্লীদের কথা । এদের সামনেই তো এ দেশের নারী ধর্ষিত হচ্ছে, এ দেশ ধর্ষিত হচ্ছে । তবে এরা সবাই আমার মত নিশ্চুপ কেন ?? কি শুধু আমিই এমন অক্ষম নই । আরো অনেকেই আছেন । কোন গোপন যাদুবলে এদেশের সব মানুষ চুপ করে আছে ।

-----------------

আজ বিকেলে সস্ত্রীক বেরিয়ে ছিলেন এক আত্মীয়ের বাসায় যাবার উদ্দেশ্যে। হরতালের দিন, রাস্তাঘাট বেশ ফাকা । বিকেল ভ্রমন এবং সামাজিকতা এক ঢিলে ২ পাখি মারার এমন সুযোগ শহরের এই ব্যস্ত জীবনে খুব একটা আসে না । তা যাচ্ছিলেন ভালই । খানিকটা যাওয়ার পর হঠাত একটা জটলার কারনে রিক্সা থেমে গেল । হরতালের দিন বিকালে সাধারনত যানজট থাকার কথা না । পিকেটার নয় তো ?? আগপাছ ভাবতে ভাবতেই কয়েকটা ছেলে ২ পাশ থেকেই রিক্সাটা ঘিরে ফেলল । অধিকাংশ ছেলেই পায়জামা, পাঞ্জাবী পরা, মাথায় টুপি । দেখে মাদ্রাসা ছাত্র বলেই মনে হয় । একটা ছেলে এগিয়ে এল ভিড় ঠেলে । পরনে চেক শার্ট, গোড়ালির উপর পর্যন্ত গোটানো প্যান্ট । কি চাই প্রশ্নবোধক ভাবটা চেহারায় ফুটিয়ে তুলতেই, প্রশ্ন এল, " এই মহিলার সাথে আপনার সম্পর্ক কি ? " হেকমত সাহেব যেন আকাশ থেকে পড়লেন । একবিংশ শতকের বাংলাদেশের ঢাকা শহরের মাটিতে দিনে দুপুরে এমন প্রশ্ন তিনি শুনবেন, এমনটা তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নি । ১০ সেকেন্ড সময় লাগলো তার সংবিত ফিরতে । কাপা কাপা কন্ঠে তিনি উত্তর দিলেন, "আমার স্ত্রী " । নেতা গোছের ছেলেটি যেন উনার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না । " এতক্ষন লাগল কেন উত্তর দিতে ? আপনার বউ, তার কোন প্রমান আছে ? " এবার যেন হেকমত সাহেব মঙ্গল গ্রহ থেকে পড়লেন । তিনি এবং তার স্ত্রী পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেন একবার । বলার মত কিছুই যেন খুজে পাচ্ছেন না হেকমত সাহেব । তিনি যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না, এমনটা তার সাথে ঘটছে । " মুরুব্বী মানুষ, বেগানা বেপর্দা আওরাত নিয়া বাইরে বের হইছেন ফুর্তি করতে, লজ্জা করে না । " , "নামায়ে দে রিকশা থেকে , হাইটা বাসায় যাইব " । চারপাশ থেকে ছুটে আসা এমন মন্তব্যগুলোর কিছুই যেন হেকমত সাহেবকে আর স্পর্ষ করছে না । কিছুই ঢুকছে না তার মাথায় । অপমান গুলো যেন তার গায়েই লাগছে না । ভিড়ের ফাক গলে তার দৃষ্টি চলে গেছে রাস্তার অন্য পাশে । খোকন !!! হ্যা খোকনই তো । তার আদরের ছেলে খোকন । সাদা রংগের পাঞ্জাবী গায়ে । গত পহেলা বৈশাখে হেকমত সাহেব নিজে পছন্দ করে কিনে দিয়েছেলেন নিউমার্কেট থেকে । ১০-১৫ জন মাদ্রাসার ছেলেকে সাথে নিয়ে খোকন ঘিরে রেখেছে আরেকটি রিক্সাকে । রিক্সায় ২৩ - ২৫ বছর বয়সী একটা ছেলে আর মেয়ে পাশাপাশি বসা । হয়তো ভাই বোন, হয়তো স্বামী স্ত্রী, হয়তো প্রেমিক প্রেমিকা । ছেলেটা অসহায়ের মত চারদিকে তাকাচ্ছে । অসহায় চোখে সাহায্যের আকুতি । মেয়েটা লজ্জায় মাথা হেট করে বসে আছে । রিক্সার পাশে দাড়ানো একজন মাদ্রাসার ছেলে নিজের ইমানী দায়িত্বে মেয়েটার ওড়না টেনে দিচ্ছে মেয়েটার মাথার উপর । হেকমত সাহেব নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না । তার ইঞ্জীনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করা মেধাবী ছেলে খোকন, মাদ্রাসার ছেলেদের সাথে পথে নেমে পিকেটিং করছে । তৌহিদী জনতার ব্যানারে গন্ড মুর্খ কাঠমোল্লাদের দলে যোগ দিয়ে ইসলাম কায়েমের জেহাদ করছে । অপমান করছে কারো মা, কারো বোন, কারো বাবাকে । হেকমত সাহেবের দৃষ্টি কেন যেন ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো । তার চারপাশের দুনিয়াটা যেন ঘুরছে প্রচন্ড বেগে । সবকিছু যেন প্রলয় স্রোতে ভেসে যাচ্ছে । কেবল তিনিই থমকে আছেন, স্থবির, অনড় । অন্ধকারের চাদর গায়ে নেমে আসছে একদল অশুভ আত্মা । এর পর আর কিছু মনে নেই তার ।

-------------

হেকমত সাহেব যখন চোখ খুললেন, তখন ৬০ ওয়াটের বাতির টিম টিমে আলোতে তার স্ত্রীর মায়া ভরা চেহারাটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে । কিছুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থাকলেন । তার বুকের ভেতর থেকে চেপে থাকা দীর্ঘশ্বাসের মত একটা কথাই বেরিয়ে এল । "আমি দুঃখিত" । তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ফেললেন হেকমত সাহেব । না তবে এবার আর হেকমত সাহেব চেতনা হারালেন না । কোথাকার এক অশরীরি শক্তি যেন তাকে নাড়া দিয়ে যেতে লাগল । যেন লাখ কন্ঠের ধ্বন্বি তার কানে বাজতে লাগল । ভাবতে লাগলেন , কার দোষ । দেশ সমাজ এই অবস্থায় আজ এসে দাড়ানোর পেছনে দায়ী কে ?? মাদ্রাসার ছেলে পেলে গুলো, ?? মাদ্রাসার ঐ ছেলেগুলাকে ৩/৪ বছর বয়স থেকে যা শেখানো হয়েছে, তাই তো করছে তারা । রাজনীতিবিদ ? তাদের কাছ থেকে কি আসলেই ভাল কিছু আশা করেছিল কেউ ? মনে তো পড়ে না । তবে কার কাছে আশা ছিল ?? নিজের ব্যর্থতার উপলদ্ধিটা হঠাতই যেন বিদ্যুত চমকে আঘাত করল হেকমত সাহেবকে । " আমিই দায়ী .... , আমার কাছেই আশা করেছিল দেশ । স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের দায়িত্ব ছিল আমার মত তরুন প্রজন্মের হাতেই " । নিজের ব্যর্থতা এবং তার ফলাফলের চিত্রটার ভয়াবহতা উপলদ্ধি করতে পেরে নিজেই যেন শিউরে উঠলেন। চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন তারা । দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তারা । ধর্ম ব্যবসায়ী চক্রের জাল বিস্তার দেখেও হাত গুটিয়েই বসে ছিলেন তারা । ধর্মানুভুতির ধোয়াটে কুয়াশার মাঝে মাঝে দেশপ্রেমটা যেন যেন বারে বারে কোথায় হারিয়ে গেছে । তাদের নিরবতা, নির্লীপ্ততাই দেশকে ঠেলে দিয়েছে এই অশুভ পরিনতির দিকে । চোখের সামনে পদে পদে দেশ, দেশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতিকে ধর্ষিত হতে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে হেটে চলে গেছেন ।

শোবার ঘরের খোলা জানালা দিয়ে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস এসে পুরো ঘরের গুমোট আবহাওয়াটাকে যেন এক ঝটকায় দুর করে দিল। হেকমত সাহেবের বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলো এক সুতায় বাধা পড়তে পড়তেও কোথায় যেন আটকে যেতে লাগল । ধীরে ধীরে উঠে বসলেন তিনি । স্যান্ডেলটা পায়ে গলিয়ে ধীর পায়ে হেটে যেতে লাগলেন বসার ঘরের দিকে । বসার ঘরে ঢুকে সুইচ চেপে টিউব লাইটটা জাললেন । ধীরে ধীরে গিয়ে বসলেন রকিং চেয়ারটায় । চেয়ারে বসেই তার চোখ পড়ল টিউব লাইটের পাশে জমে থাকা ঝুলের দিকে ।

----------------------

হেকমত সাহেব যখন দরজার কাছাকাছি পৌচেছেন, ঠিক একই সময়ে তার স্ত্রী শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে খাবার টেবিলের পাশে দাড়িয়েছেন । ঘরের গুমোট আবহাওয়াটা যেন জানান দিচ্ছে একটা ঝড়ের পুর্বাভাস । বাইরে থেকে চাবি ঢোকানোর আওয়াজ কানে আসতেই হেকমত সাহেব সমস্ত শরীরে এক অদ্ভুত শীহরন অনুভব করলেন । সমস্ত মানসিক শক্তি এক করে তৈরি হতে লাগলেন । দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে যেতে লাগল । ঘরে ঢুকল খোকন । ঠিক একই সাথে হেকমত সাহেবের হাতটা উঠে এল এবং ১ সেকেন্ডেররও কম সময়ের মধ্যে নেমে এল খোকনের গালে । " শুয়োরের বাচ্চা , এই জন্য তোকে রক্ত পানি করা পয়সা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছিলাম ?? বটতলার কেতাব পড়া কাঠমোল্লাদের সাথে মিলে তৌহিদি জনতার নামে জেহাদ করতে । এমন শখ থাকলে আগে বলতি , মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিতাম । মাকে অপমান করতে, দেশকে ধর্ষন করতে যার বিবেকে বাধে না, আমার ছাদের নিচে তার যায়গা নেই । বেরিয়ে যা । যদি কোনদিন দেশকে ভাল বাসতে পারিস, নারীর সম্মান দিতে জানিস, তবে এমুখো হোস । বেরিয়ে যা । " বিস্ময় কাটার আগেই খোকন উপলদ্ধি করল তার মুখের উপর বাসার দরজা বন্ধ হয়ে গেল ।

হেকমত সাহেব তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন । তার চোখের কোনায় জমাট বাধছে জলের ধারা । ভালভাবে খেয়াল করার চেষ্টা করলেন হেকমত সাহেব । কোন আক্ষেপ বা কষ্টের ছাপ খুজে বের করার চেষ্টা করলেন তিনি । বিস্মিত হয়ে খেয়াল করলেন, তার ছিটে ফোটাও নেই ঐ মায়াভরা চোখে । বরং কোথা থেকে যেন রাজ্যের প্রশান্তি চোখ মুখ জুড়ে । একটা সস্থির নিশ্বাস ছাড়লেন হেকমত সাহেব । মনে মনে ভাবলেন , এই চড়টা যদি আজ থেকে ৬ বছর আগে দিতেন , যেদিন খোকন প্রথম বটতলার কেতাব হাতে নিয়ে বাসায় ঢুকেছিল । নিজের এই আত্মপোলদ্ধির জন্য বেশ গর্ববোধ করতে লাগলেন হেকমত সাহেব । এই ৪২ বছরে অনেক চড় জমা হয়েছে । এবার আস্তে আস্তে সব জায়গা মত চুকিয়ে দেবেন ।

না জানি আশে পাশে আরো কত মানুষের এমন হাজার হাজার চড় জমা হয়ে আছে ??

==============================

স্বপ্নবিভা


মন্তব্য

মর্ম এর ছবি

হতে হতেও হল না, গল্পটা একটু দূরেই থেকে গেল। সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে লেখা, খানিকটা শিক্ষামূলক- কিন্তু টেনে ধরলো না, অথবা খোঁচা দিল না কোথাও গিয়ে।

শিরোনামে 'আত্বপোলব্ধি'কে 'আত্মোপলব্ধি' করে দিতে মডুদের মেইল দিতে পারেন। লেখায়ও কিছু বানান ভুল চোখে পড়ল, একটু সাবধান থাকুন।

মনে রাখুন, আপনার লেখা থেকে কোন একজন ভুল বানানটাই ঠিক হিসেবে জেনে বসতে পারে, কাজেই ঠিক করে দেয়ার দায়িত্বটা আপনারই। আর এত ট্যাগ-এরও দরকার নেই আসলে। লেখার সাথে সংগতিপূর্ণ ট্যাগ ব্যবহার করুন, যা আপনার লেখাটিকে এক গাদা লেখা থেকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।

আপনার লেখা আগে পড়েছি বলে মনে পড়ছে না, লিখুন নিয়মিত। সচল থাকুন।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ।

দেশের বাইরে থেকে বাংলা কথা না ভুললেও, বাংলা বানান ঠিক রাখাটা যে কি কঠিন তা হাড়ে হাড়ে টের পাইতেছি।
ট্যাগ এর ব্যপারটা বুঝিয়ে বলার জন্য ধন্যবাদ।

আগে ২/১ টা লেখা লিখেছি । আপ্রান চেষ্টা করছি সচল থাকার।

ভাল থাকবেন ।

স্বপ্নবিভা

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

স্বপ্নহারা মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

নরাধম এর ছবি

অনেক ভাল লাগলো। চলুক

তানিম এহসান এর ছবি

লিখতে থাকুন হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ । চেষ্টা থাকবে ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।