যাপিত জীবন-০৪ : : একটি বিয়ে ও কুফাকাহিনী

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: শনি, ০৯/০৮/২০০৮ - ৫:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১। বন্ধুর বোনের বিয়ে । আমাকে ফোন করে বলল আমি যেন ঠিক সাড়ে ছটায় সেগুনবাগিচাতে কমিউনিটি সেন্টারে যাই । আমি বললাম ঠিক আছে । আমি আবার কাউকে কোন সময় দিলে ঐ সময়ের আগেই চলে যাই, স্বভাবের দোষ । এবারও রওয়ানা হলাম আধঘন্টা আগে মানে ছটায় । সেগুনবাগিচাতে গেলাম , বন্ধু আমাকে যে কমিউনিটি সেন্টারের নাম বলে দিয়েছিল সেটা কষ্ট করে খুঁজেও বের করলাম । কমিউনিটি সেন্টারে দেখি অন্তত বিয়েবাড়ির কেউ নেই , কিছু লোকজন আছে টেবিল চেয়ার ঠিক করছে ঝাট-টাট দিচ্ছে এটা সেটা। আমি ভাবলাম কি ব্যাপার ভুলভাল জায়গায় চলে এসেছি নাকি । বন্ধুকে ফোন দিলাম । সে বলল একটু ঝামেলা হয়ে গেছে আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই নাকি সবাই আসবে । আমি ভাবলাম হৈছে , এতদিন জানতাম আমন্ত্রিত অতিথিরা আসে বিয়ে হওয়ার সময় বা বিয়ে শেষ হওয়ার পর । টুপ করে খেয়ে উপহার সামগ্রী দিয়ে কেটে পড়ে । এই প্রথম দেখলাম কেউ একজন(মানে আমি আরকি) আসছে বিয়েবাড়ীর লোকজন আসার আগে । যাক এসেই যখন পড়েছি চারপাশে একটু চক্কর দিলে কেমন হয় । কমিউনিটি সেন্টারটার পিছনে গেলাম । ওখানে দেখি কিছু লোকজন মুরগীর চামড়া ছিলছে , কেউবা আলু-টালু জাতীয় জিনসপত্র কাটছে । আমি ভাবলাম হইছে , খাওয়া আজকে হবেনে ! এই জিনিসগুলা মাত্র ছিলতেছে । এরপর রান্না হবে । সেই বান্না আবার খাব । বুঝছি রাত দশটার আগে আর খাওয়া জুটবে না কপালে । বন্ধুর উপর রাগ হল । শালা , ডাকলিই যখন এত আগে ডাকলি ক্যান
, আটটার সময়ে ডাকলেও তো পারতি , এমন সময়ে ডাকছস সবার আগে এসে হাজির হইছি !

২। পকেটে আমার সাকুল্যে ছিল পাঁচশত টাকার একটা নোট আর খুচরা বিশ টাকার মত । ভাবলাম খেতে তো দশটার মত বাজবে , যাই ফাঁকে বিকেলে কিছু খেয়েও আসি আর পাঁচশত টাকার নোটটাও ভাঙ্গায়ে নিয়ে আসি , রাত্রে তো আবার বিকশাওয়ালা এখান থেকে পলাশী ত্রিশ টাকার কমে যাবে না । কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই একটা দোকানে গেলাম । সিংগারা , সমুচা আর কফি খেয়ে তেইশ টাকা বিল হল । পাঁচশত টাকার নোটটা ধরায়ে দিলাম দোকানদারের হাতে । নোটটা দেখে দোকানদার যেন আকাশ থেকে পড়ল । ভাংতি দেই কেমনে , ভাংতি ছিল কিন্তু কয়েকজন দোকান থেকে বড় অংকের টাকা ভাঙ্গায়ে নিয়ে গেছে , বেচাবিক্রি নাই তাই ভাংতি টাকা থাকে না -- এইসব নানান আবজাব কথাবার্তা । আমি মনে মনে ভাবলাম হৈছে ভাই আপনে আমার ভাংতি টাকাগুলাই নেন , এইসব আমারে শুনায়েন না , এমনে নিজেই নানান কষ্টের মধ্যে আছি । দোকানে পকেটের সব খুচরা টাকাগুলো দিয়ে পাঁচশ টাকার নোটটা নিয়ে ফেরত আসলাম । ভাবলাম শুরু হইছে , আজকে কুফা শুরু হইছে , আরও কত কি হয় কে জানে ? না , কুফাকাহিনীর পরবর্তী অংশের জন্য বেশীক্ষন অপেক্ষা করতে হল না ।

৩। সাড়ে সাতটার দিকে লোকজন আসা শুরু করল । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও দেখলাম দল ধরে একটা গ্রুপ আসল , অধিকাংশই চেনা । এদিক ওদিক মান্জা মেরে হাটছি এমন সময় এক জুনিয়র এসে বলল ভাইয়া আপনি একটা লুপ মিস করছেন । আমি বললাম কিসেরইবা লুপ আবার সেটা আবার মিসইবা কি ? সে বলল প্যান্টের বেল্টটা নাকি যে লুপগুলোর মধ্য দিয়ে যায় সেগুলোর একটার উপর দিয়ে গেছে , দেখতেও নাকি বাজে লাগছে খুব । বাথরুলে গিয়ে বেল্টটা ঠিক করে আনলাম । রে কুফা রে!

৪। বরমশায় আসলেন আটটার দিকে । বিয়েশাদি হয়ে খাওয়া-দাওয়া আসতে আসতে নয়টার মত বেজে গেল । প্রথম শিফটেই বসলাম । তাড়াতাড়ি খেয়ে-দেয়ে কেটে পরি । পরেরদিন আবার ল্যাবের আ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে , হাফ কাজ বাকী আছে । বন্ধুরা মিলে সবাই একসাথে বসলাম । খাবার মাত্র পবিবেশন শুরু হয়েছে এমন সময় আমাদের দাওয়াতপ্রদানকারী বন্ধুসাহেব আসলেন । দুইজন লোক নাকি আছে তাদের খুব তাড়া আছে ,
এখুনি খেয়ে বিদায় নিতে হবে , জায়গা নেই । অগত্যা আমি আর একজন বন্ধু টেবিল থেকে উঠলাম । যাক আমরা না হয় একটু পরেই খাই । এদিক ওদিক হাটছি । ভাবলাম যাই এই সুযোগে পাঁচশ টাকার নোটটা খুচরা করে নিয়ে আসি ।রাস্তার দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ । টাকাটা খুচরা করতে আধঘন্টাখানেক লাগল । ফিরে দেখি দ্বিতীয় শিফটটা অলরেডী শুরু হয়েছে এখন তৃতীয় শিফটে বসতে হবে । তৃতীয় শিফটে খব বেশী লোক ছিল না , জনাষাটেক হবে হয়ত । এই জনাষাটেক লোক আমরা ছয়- সাতটা টেবিলে হাত-টাত ধুয়ে বসলাম । বসলাম তো বসলামই খাবার আর আসে না । মিনিট ত্রিশেক পার হয়ে গেল খাবারের কোন হদিস নাই , বন্ধু ব্যস্ত হয়ে আছে
বর-কনের সাথে ভিডিওধারিত হতে । অনেকক্ষন পর তার নাগাল পাওয়া গেল । বললাম খাবার কৈ অনেকক্ষন থেকেই তো বসে আছি । সে বলল অনুমানের চেয়ে বেশী লোক দাওয়াতে এসেছে , খাবার মোটামুটি শেষ । বাকী লোকের খাবারের ব্যবস্তা নাকি হচ্ছে । বন্ধুবান্ধবরা যারা এসেছিল তারাও ইতোমধ্য বিদায় নিল । আমরা আরও কিছুক্ষন বসলাম ।

অবশেষে খাবার আসা শুরু হল । হাত আবার ধুয়ে এসে টেবিলে বসলাম । কিন্তু কুফা যে আরও কিছু বাকী ছিল এটা জানতাম না । ঠিক আমাদের টেবিলটার সামনে এসে রোষ্ট-টোষ্ট , ভাজা মাংস ইত্যাকার খাদ্য শেষ
হয়ে গেল । হাতধোয়াটা আবার মনে হয় বিফলে যায় ! এমন সময় দেখি বন্ধু আসছে । বললাম ধুর মিয়া এখনও তো খাবার পাইলাম না । মেজাজ তখন সহ্যক্ষমতার চূড়ায় উঠেছে । সে বলল এদিক-ওদিক দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া খাবারও নাকি শেষ । এদের একটা চায়নিজ খাবারের রেস্তোরা আছে সেই আইটেমগুলোই এখন দেওয়া হবে। প্রসেসিং চলতেছে , সামান্য একটু আর বসতে হবে । আমি ভাবলাম ওরে ভাই ! চায়নিজই যখন খাওয়াবি আমাদের দুইজনকে হাতে কিছু টাকাপয়সা ধয়ায়ে দে আমরা বাহিরে গিয়ে খেয়ে চলে যাই । খাবারের জন্য এতক্ষন বসে থাকতে ভাল লাগছে না ।

আরও কিছুক্ষন বসার পর বহু প্রতীক্ষার খাবার চলে এল । তৃতীয়বারের মত হাত ধুয়ে আসলাম । এবার আর কোন ভুল করলাম না আমরা , ওয়েটারের সাথে গিয়ে ওয়েটার যে টেবিলে খাবার রাখল সেখানেই জায়গা করে বসে পড়লাম । খাওয়ার সময় বন্ধুটা বলল তাড়াতাড়ি করে রান্নাবান্না করা হয়েছে জন্য নাকি রান্নাটা ভাল হয়নি বিশেষ করে মুরগীর পদটা নাকি খানিকটা অর্ধসিদ্ধই রয়েছে । আমার তখন এইসব আর শোনার সময় নাই ।
কাচা -টাচা যাই পাচ্ছি তাই গোগ্রাসে গিলে চলেছি । ঘড়িতে তখন সময় সাড়ে এগারোটা , কমিউনিটি সেন্টারটা ততক্ষনে মোটামুটিভাবে ফাঁকা হয়ে গেছে ।
--------------------------------------------------------
ঝামেলায় আছি


মন্তব্য

অম্লান অভি এর ছবি

আহারে আহারে কত তার মন
তবু শেষে রসনায় হয়েছে পুরন
বিলাস না হোক তবু ভরেছিল তো
না হলে রাতের ঘুম হারামই হতো।

সমাচার পাঠ শেষে প্রশ্ন জাগে
বিয়ে না খাওয়া আগে !
খাদক খাদ্য পাক দাবী সবার
আমিও তো কখন খাদক আবার।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাহাহাহাহাহা হাসতে হাসতে তো পেট ফেটে গেল ভাই
গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

ধুসর গোধূলি এর ছবি
তানবীরা এর ছবি

বিপদ কখনও একা আসে না। এরপর ট্যাক্সী পাওয়া গিয়েছিলতো?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাগ্যিস শুধু লুপ মিস করেছিলেন...জিপার না...হা হা হা...

ভিভিয়ান

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।