দেবদূতের নগর ভ্রমণ - শেষ পর্ব

ঝরাপাতা এর ছবি
লিখেছেন ঝরাপাতা (তারিখ: বুধ, ২৭/০৬/২০০৭ - ৬:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেবদূতকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার সাহেব ছুরি, কাঁচি নিয়ে একেবারে প্রস্তুত। যেই বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে যাবেন দেখা দিলো বিপত্তি। বলা নেই কওয়া নেই, বিদ্যুত চলে গেলো। খবর নিয়ে জানা গেলো অনেক টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুত বিভাগ হাসপাতালের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এদিকে বিকল্প ব্যবস্থা যথারীতি বিকল। অবশেষে অনেক বচসা শেষে বিদ্যুত এলো। দেবদূতের অপারেশন হলো। পা'টা এ যাত্রায় বেঁচে গেলো। একসপ্তাহ পরে ড্রেসিং করা হবে।

আজ দেবদূতের ড্রেসিং করার কথা। কিন্তু সন্ধ্যে হতে চললো কেউ এলো না। অবশেষে দেবদূত এক নার্সকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। নার্স জানালো এখন ইন্টার্নির ডাক্তাররা ধর্মঘট পালন করছে, ড্রেসিং হবে না। ধর্মঘট কি জিনিস এ নিয়ে দেবদূত চিন্তায় পড়ে গেলেন। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কেন ডাক্তাররা ধর্মঘট পালন করছেন? নার্স গম্ভীরভাবে বললো, একজন ইন্টার্নি ডাক্তারের মাথায় এক অভদ্র কাক মিশাইল ছুড়েছে, ক্রো মিশাইল। তাই ডাক্তাররা সবাই মিলে আন্দোলন করছেন কাকমুক্ত পরিবেশের জন্য। দেবদূত কিছুই বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন।

অবশেষে প্রায় একমাস পরে দেবদূত হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেলেন। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে তিনি হাঁটতে লাগলেন। একটা পার্কের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দেখলেন এক জায়গায় বেশ ভিড়। উৎসুক হয়ে দেবদূত উঁকি দিলেন। একজন লোককে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই এখানে কি হচ্ছে? বিরক্তি সহকারে লোকটা উত্তর দিলেন, আরে মিয়া শ্যুটিং চলতাছে, ছবির শ্যুটিং। দেবদূত বিড়বিড় করে বললেন, ছবির শ্যুটিং!! লোকটা বলে, হ বাংলা সিনেমার শ্যুটিং, 'খাটের তলে মুরগী নাচে'। দেবদূত বললেন, ভাই মুরগী তো দেখছি না। লোকটা বিজ্ঞ বিজ্ঞ চেহারা নিয়ে দার্শনিক মতামত ঝাড়লেন, আরে মিয়া, ঐ যে পাঁচমণী আলুর বস্তাটা নাচতাছে ঐটাই মুরগী। এইবার বুঝছেন? দেবদূত আর কথা না বাড়িয়ে ভিড় ছেড়ে হাঁটা শুরু করলেন।

আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নেমে এলো। লাল, নীল, হলুদ মালিটকালারের কটকটে বাতিগুলো ঝকমক করে উঠতে লাগলো। অনেক পথ পেরিয়ে দেবদূত এক অন্ধকার গলির মুখে এসে পড়লেন। হঠাৎ চারপাশ থেকে বেশ কিছু যুবক দেবদূতকে ঘিরে ফেললো। একজন বললো, ঐ হালার পুত, কি আছে জলদি বাইর কর। টাইম কম। দেবদূত নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইলো। একজন দেবদূতের পাঞ্জাবীর পকেটে হাত চাললো। বলাবাহুল্য কিছুই পেলো না। ছেলেটা রাগত স্বরে বললো, 'ওস্তাদ হালা ফকিরনির পুত, কিচ্ছু নাই পকেটে।' ওস্তাদ আদেশ করলো, 'ওর গালে জোরে দুইটা থাপ্পর লাগা। আর জাইঙ্গা (জাঙ্গিয়া)সহ পায়জামাটা খুইলা নে। হালা মনে হয় জাইঙ্গার গোপন চেম্বারে (পকেটে) মাল লুকাইয়া রাখছে।' এবার ভাগ্যদেবী দেবদূতের ইজ্জত হরণে বাধ সাধলেন। তাই, সাগরেদরা যেই ওস্তাদের আদেশ পালন প্রস্তুতি নিচ্ছিল , সে সময় এক পিকআপ ভ্যান এসে হাজির হলো। পিকআপ ভ্যান হতে 'রেব' সদস্যরা নেমে এলো আর সবাইকে পাকড়ানো শুরু করলো। দেবদূত আর একজন ছিনতাইকারী অস্ত্রসহ ধরা পড়লো। তাদের থানায় নিয়ে আসা হলো। কিন্তু থানায় পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই উপর থেকে ফোন এলো, অস্ত্রসহ যে ধরা পড়েছে তাকে যেন ছেড়ে দেয়া হয়। কারণ সে ক্ষমতাসীন পার্টির বড় ক্যাডার। আরো কিছু গোপনীয় নির্দেশ এলো।

পরদিন পত্রিকার শিরোনামে দেখা গেলো, রেবের এনকাউন্টারে দুধর্ষ সন্ত্রাসী, বহু মামলার পলাতক আসামী গ্রেনেড মিজান নিহত। যদিও গ্রেনেড মিজান ততক্ষণে সরকারের ছত্রছায়ায় নতুন পাসপোর্টে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে। আর দেবদূত গ্রেনেড মিজানের কলঙ্ক নিয়ে সবার একরাশ ঘৃণাসহ এই পৃথিবীর বুকেই মাটির নীচে চিরতরে আশ্রয় নিলেন। হায়! বেচারা দেবদূত কি জানতো পর্যবেক্ষণ করতে এসে এদেশে বিধাতার পর্যবেক্ষককেই এমন গিনিপিগ হতে হবে?

** সত্যিই বেশ কয়েক মাস আগে একবার চট্টগ্রাম হাসপাতালে বিদ্যুত সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়া হয়। আর হাজার হাজার অসুস্থ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্দশার স্বীকার হতে হয়।

** মাঝে মাঝে ইন্টার্নির ডাক্তারদের ধর্মঘটগুলো খুবই হাস্যকর ঠেকে। আশা করি পাঠক ভালোই অবগত আছেন এ সম্পর্কে।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

গল্পটা ভালো লেগেছে। দেবদূতের জন্য কষ্ট হচ্ছে- আসলে আমাদের দেশের সবাই দেবদূতের ভাগ্য নিয়ে বেঁচে আছে।
__________
কি মাঝি? ডরাইলা?

ঝরাপাতা এর ছবি

ধন্যবাদ দ্রোহী। যথার্থ বলেছেন।

শুভ,
আপনার মন্তব্যের শেষ অংশ পড়ে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবার যোগাড়। অবসর মেলার পরে সামহয়্যারে গিয়েছিলাম আপনার ব্লগে আগের সব পোস্টগুলো পড়বো বলে। কিন্তু দেখি একটা পোস্টও নেই। হাসান মোরশেদের ব্লগে গিয়ে দেখি তিনি ও আর লিখবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিলো। এখানে সবাইকে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।

_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বেচারা!
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।