একটি গন্ডারের অপমৃতু্য

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: সোম, ১৫/০৫/২০০৬ - ৭:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হঠাৎ সেদির চৌরাস্তার মোড়ে এসে একটি গন্ডার পাটের রশি গলায় বেঁধে লটকে পড়ে। রশির আরেক মাথা কিসের সাথে বেঁধেছিলো ঠিক স্মরণে নাই। যাই হোক।

পৃথিবীতে সব মহৎ কাজের উদ্যোগ সফল হয় না। গন্ডারটাও প্রাণে বেঁচে যায়। উঁহু, রশি ছেঁড়ে নাই, বরং ও বেচারাই ঠিক মতো গিট্টু দিতে পারে নাই। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে দিনকতক কাটানোর বাদে গন্ডারটা একটু সুস্থ হয়ে ওঠে, লেজ নাড়ায়, কান নাড়ায়, হৈ হৈ করে ছুটে আসে ইলেকট্রনিক মাধ্যমের লোকজন।

সন্ত্রাস মন্ডল তাঁর মাইক বাড়িয়ে ধরে সানগ্লাস উঁচিয়ে শুধান, "মিস্টার গন্ডার, আপনি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন কেন?"

গন্ডারটার ঠোঁট কেঁপে ওঠে। একজন ডাক্তার রেগে গিয়ে বলেন, "আহা জ্বালাবেন না বেচারাকে, ও এখনও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত নয়!"

কেউ পাত্তা দেয় না।

আরেক সাংবাদিকা মাইক উঁচিয়ে ধরেন, "মিস্টার গন্ডার, আপনি কি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এ কাজ করেছিলেন?"

আরেকজন শুধান, "নাকি আপনার জমিজমা সব ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন?"

আরেকজন বলেন, "নাকি কোন এম পি ভান্ডার লুটতে গিয়ে আপনাকে মেরে বসেছে?"

গন্ডার হু হু করে কেঁদে ওঠে। ক্যামেরা জুম করা হয় তার মুখের ওপর। সবার চোখ ছলছল করে ওঠে।

কিছুক্ষণ কেঁদে গন্ডার খুর দিয়ে চোখ মোছে। তারপর বলে, "আমাকে ... আমাকে একজন প্রচন্ড অপমান করেছে। এ জীবন আমি আর রাখবো না!"

সবাই প্রচন্ড কৌতূহলে ফেটে পড়ে। "অপমান? আপনাকে অপমান? কী অপমান?"

গন্ডারটা বহু কষ্টে বলে, "বলেছে ... বলেছে ... আমার গায়ে নাকি ... আমার গায়ে নাকি ফ্লাডারের চামড়া!"

সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। আচমকা ইসিজি মেশিন গোঁ গোঁ করে ওঠে, তারপর একটা বিদঘুটে পোঁওওও শব্দ করতে থাকে। গন্ডারটা বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। ডাক্তার এসে পালস দেখে বলেন, "আমি দুঃখিত! উনি আর বেঁচে নেই! কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট!"

সেদিন সন্ধ্যায় সব টিভি চ্যানেলে এ নিয়ে অনেক বাক বিতন্ডা হয়।


মন্তব্য

সাইফ এর ছবি

"বলেছে ... বলেছে ... আমার গায়ে নাকি ... আমার গায়ে নাকি ফ্লাডারের চামড়া!"

হা হা হা, মুখফোড়ের তুলনা শুধুি মুখফোড়। হাসতে হাসতে আমার চোখে পানি এসে গেল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।