রহস্যগল্প ০০৬

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: শুক্র, ২৮/০৭/২০০৬ - ৯:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গাব্রিয়েল মগাদিশু চৌরাসিয়া বললেন, "তাই নাকি?"

পমি রহমান চোখ টিপে বলে, "হ্যাঁ!"

চৌরাসিয়া বলেন, "আপনার কাছে কোন প্রমাণ আছে?"

পমি রহমান একটু চটে যায়। বলে, "সেই ছোটবেলা থেকে সিনেমা খাই, ভাই! ইস্কুল ফেলে সিনেমা দেখেছি, কলেজ ফেলে সিনেমা দেখেছি, ইউনিভার্সিটি ফেলে সিনেমা দেখেছি, কাজ করি সিনে সাংবাদিকের, কতো নায়িকা ঘেঁটে চুল পাকালাম, মানে, আমার নিজের চুল, আর তারপরও প্রমাণ চান?"

চৌরাসিয়া বলেন, "লেট মি রিফ্রেইজ। উদাহরণ দিন কিছু।"

পমি রহমান একটু শান্ত হয়। এক ঢোঁক বিয়ার খায় সে। বলে, "ধরেন, নায়িকা নাদুশার কথা। না দিয়ে নাম শুরু। চরম ছিনাল! কীসব যে সে করেছে আপনি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করবেন না!"

চৌরাসিয়া বলেন, "হুমম!"

পমি রহমান আরো এক ঢোঁক বিয়ার খায়। বলে, "তারপর ধরেন, নায়িকা নাভানার কথা! এ তো চরম খাচ্চু! এই তো কিছুদিন আগে আমি নিজে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে সাইজ করায় আনলাম!"

চৌরাসিয়া বলেন, "হুমমম!"

পমি রহমান বলেন, "আবার ধরেন গিয়ে," এক ঢোঁক বিয়ার হয়ে যায়, "নায়িকা মাহাৎমা। আগেও মা পরেও মা। বড়ই মা টাইপ। ঐদিন দেখলাম এক নতুন দুবলা নায়কের থুৎনি ধরে মাথার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে।"

চৌরাসিয়া বলেন, "আচ্ছা!"

পমি রহমান বিয়ার খেয়েই চলেন। "তাছাড়া ধরেন, নতুন নায়িকা মালিশা ... ওর মধ্যেও মাতৃভাব প্রকট। সেদিন দেখি আমাদের বুড়া ডিরেক্টর ঢালী নজরুল ওর কোলে বসে আছে। বাৎসল্য।"

চৌরাসিয়া বলেন, "বলেন কী!"

পমি রহমান চোখ লাল করে বলেন, "হাঁ! এখন বিশ্বাস হলো?"

চৌরাসিয়া বলেন, "হুমমম!"

পমি রহমান এবার উঠে পড়ে। তার নাকি কী কী কাজ আছে। এফডিসি যেতে হবে।

চৌরাসিয়া একটু স্মৃতিতাড়িত হয়ে পড়েন। এফডিসি। আহা, যৌবনে কত ফিল্ডিং মেরেছেন ওখানটায়। কত রংচং মাখা নায়িকার ছবির পেছনে অটোগ্রাফ নিয়েছেন।

কিন্তু পমি রহমানের গাঁজাখুরি, মানে, বিয়ারখুরি তত্ত্ব তিনি মাথা থেকে একদম ফেলে দিতে পারেন না। তাঁর মনে পড়ে যায় পুরনো বান্ধবীদের কথা। আহা। আসলেই তো। তাঁর কলেজের বান্ধবী নাজায়েজা, আসলেই মহা বিটকেল ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স জীবনের প্রেমিকা নাফরমানা, সে-ও দুষ্টু কম ছিলো না। মাস্টার্সে এসে প্রেম হলো মাঞ্চুরিমার সাথে, খুবই মাতৃপ্রতিম মেয়ে, চৌরাসিয়ার বিস্তর উদ্ভট আব্দার কত স্নেহের সাথে মেনে নিয়েছিলো সে। মাঞ্চুরিমার খালাতো বোন মাদৃদিয়া, সে-ও বড় স্নেহময়ী ছিলো, অবশ্য এখন সে স্পেনে, একটা খোলামেলা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট।

চৌরাসিয়া আরো মেলাতে থাকেন। তাঁর জীবনের বিভিন্ন সময়ে যেসব পাড়াপ্রতিবেশিনী, গবেষণা জীবনের সহকর্মিনী, বিভিন্ন পরিচিতা নারী, বন্ধুর স্ত্রী থেকে শুরু করে বারমেইড, সবার নাম বিশ্লেষণ করতে থাকেন তিনি। ভাবতে ভাবতে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আসলেই তো! কেন এই অঘটন? যেসব নারীর নাম না দিয়ে শুরু, তারা বড় চুলবুলে প্রকৃতির, আর যাদের নাম শুরু মা দিয়ে, তারা ওরকম শান্তশিষ্টা মা-মা গোছের!

চৌরাসিয়া এক ঢোঁক ভোগান্তি পান করেন। তারপর শ্রাগ করে ভাবেন, রহস্যভেদী হয়েছেন বলেই যে সব রহস্যের সমাধান করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। তাছাড়া এই রহস্যের সমাধান করে কী লাভ? পয়সা তো পাওয়া যাবে না। তিনি তো আর ফেলুদা নন যে রহস্য মোচনের আনন্দ ধুয়ে পানি খাবেন। জাহান্নামে যাক এই নাম রহস্য ... শালা পমি রহমান ... কী একটা জিনিস মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে গেলো!

চৌরাসিয়া সাতপাঁচ ভেবে ঠিক করেন, মোড়ের দোকান থেকে নায়িকা নাদুশা আর নাভানার কোন লেটেস্ট সিনেমার ডিভিডি এনে দেখবেন। রহস্যের চেয়ে নাচগান অনেক ভালো।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।