কলি ও কলা

... ...

আমি কিছু কহিলাম না, নিরুত্তর চাহিয়া রহিলাম তাহার অনিন্দ্যসুন্দর বদনের পানে।

আমার মাশুকা। প্রকৃত নাম বলিয়া দিয়া তাহার অপমান করিব না। ধরিয়া নিন, তাহার নাম, নূরজেহান।

নূরজেহান আবারও আমার দিকে চাহিয়া ব্যাকূল কণ্ঠে কহিলো, "ওগো, তুমি ভাবিয়া দেখো, আব্বাহুজুরের প্রস্তাবটি এমন খারাপ কিছু নহে।"

আমি মৃদু কণ্ঠে কহিলাম, "না বেবি, তাহা হয় না।"

আদর করিয়া আমি তাহাকে বেবি বলিতাম।

নূরজেহান আমার দস্ত তাহার দস্তমুবারকে লইয়া মৃদু চাপপ্রয়োগ করিয়া কহিলো, "ওগো, ভাবিয়া দ্যাখো, ইহা এমন আর কঠিন কী কাজ? তুমি পারিবে, নিশ্চয়ই পারিবে ...।"

আমি আমার হস্ত ছাড়াইয়া লইয়া কহিলাম, "না, ইহা হইতে পারে না। ঘরজামাই থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হইবে না।"

নূরজেহান তাড়াতাড়ি কহিলো, "শাদী হইবার পর তো আমরা যেদিকে নজর যায় সেদিকেই রওনা করিতে পারিবো। আব্বাজানের নজর এড়াইয়া একদিন ভাগা মারিবো দুইজনে।"

তাহার সূক্ষ্ম কূটবুদ্ধির প্রশংসা করিলাম মনে মনে। সত্যই তো। শাদী হইয়া যাক, নূরজেহানের প্রাসাদোপম বাসভবনে জাঁকজমকের সহিত বাসররাত পালন করিয়া, দিন কতক আয়েশ করিয়া একদিন সুড়ুৎ করিয়া তাহাকে লইয়া পলায়ন করিবো। বুড়া ভাম শ্বশুর মরিলে আবার আসিয়া সম্পত্তি মাগিবো নাহয়। ইহাতে তাহার বিশ্রী দন্তপংক্তিও দেখিতে হইবে না, ফাই ফরমায়েশও খাটিতে হইবে না। নূরজেহানকেও বাগাইতে পারিবো।

আমি ইতস্তত ভাব করি তবুও। নূরজেহান আমাকে জাপটাইয়া ধরিয়া বলে, "ওগো তুমি কবুল করো কবুল করো কবুল করো ...।"

তাহার পেলব দেহের স্পর্শ পাইয়া একটু উত্তেজিত বোধ করি। বলি, "বেবি, তুমি তো আমার মধ্যে শয়তানকে উসকাইয়া দিতেছো ...।" বলিয়া হস্তদ্্বয়কে দুষ্টকর্মে নিয়োজিত করি।

কিন্তু নূরজেহান আমাকে বাধা দেয়। বলে, "সবুর করো প্রিয়তম। মেওয়ার চাষ করো। সবুর করিলে, আমাদের মোহাব্বতের ফল জরুর মিঠা হবে, এনশাল্লাহ!"

অমনি আমার হৃৎপিন্ডে যেন কেহ ডাঙস দিয়া ঘা মারে। এনশাল্লাহ!?

নূরজেহান আবারও তাহার নরম দেহ আমার শরীরে মিশাইয়া দিয়া গদগদস্বরে কহে, "শাদী হইয়া যাউক, তাহার পর আমরা দুইজনে কত কিছু করিবো। তুমি গত পরশ্ব যে দুইনাম্বার পুস্তকখানি দেখাইয়াছিলে, ঐ পুস্তকের যাবতীয় আসন আমরা পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়া দেখিবো। এই করুণ রাখোঢাকো অবস্থা আর রহিবে না, আমাদের ভালোবাসায় উন্নয়নের জোয়ার বহিয়া যাইবে!"

আমার হৃদয়ে আবারও যেন শেল পড়ে। উন্নয়নের জোয়ার!?

নূরজেহান আমার মুখের মিশিমাখা ভাব দেখিতে পায় না, আমার বক্ষের রোম আঙুলে টানিয়া খেলা করিতে থাকে, বলে, "একটিবার ঘরজামাই হইয়া আমাদের বাড়ি চলো, তাহার পর দেখিবে, আমাদের আর কোন দুঃখ থাকিবে না। আমাদের আয় বাড়িবে, জীবনযাত্রার মান বাড়িবে, ক্রয়ক্ষমতা বাড়িবে ...।" নূরজেহান বকিয়া যাইতে থাকে।

আমি হতভম্ব হইয়া শুনিতে থাকি। আয় বাড়িবে! জীবনযাত্রার মান বাড়িবে!! ক্রয়ক্ষমতা বাড়িবে!!!

ইহার অর্থ একটাই!

আমি বুঝিয়া ফেলি, নূরজেহান আমাকে ধোঁকা দিয়া বোকা বানাইতে চাহিতেছে। সে মিথ্যাবাদিনী। পটাইয়া আমাকে ঘরজামাই বানাইবার মৎলব তাহার। ঘরজামাই বানাইয়া তাহার বাপ আমাকে কদর্য গালাগালি করিবে, আমাকে দিয়া কাঁচা বাজার করাইবে, মোট বহাইবে, সারাদিন রাসভের খাটনি খাটিবার পর রাত্রিকালে নূরজেহানের অঙ্গস্পর্শ করিতে গেলে সে মুখ ঝামটা দিয়া উঠিবে! কহিবে, ভাগো মিনসে, তুমি ঘরজামাই হইয়া গায়ে হাত দিবার স্পর্ধা করো ... ইত্যাদি ইত্যাদি ...।

আমার জগত টলিতে থাকে। হা, আমি এই ছলনাময়ীকে ভালোবাসিয়াছিলাম!

... ...