আমার বন্ধুরা - ১ (শেষ পর্ব)

জলদস্যু এর ছবি
লিখেছেন জলদস্যু (তারিখ: শনি, ০৪/০৮/২০০৭ - ৩:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

*********১ম পর্বের পর************

দেখতে দেখতে আরও ৪টি বসন্ত চলে গেল। কান্তা ততদিনে বুয়েটের ৩য় বর্ষে আর কবির ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করে অধ্যাপক। ইতিমধ্যে পদ্মা-যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। কান্তার বড়বোনেরও অবিশ্বাস্যভাবে বিয়ে হয়েছে। আমাদের ধারণা ছিল এই মেয়েকে বিয়ে করা কোন মানব সন্তানের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের সেই ধারণাকে অমূলক প্রমাণ করে সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে গেছে। কবির রেগুলার বুয়েটের স্পাই বন্ধুদের থেকে কান্তার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে। সে মোটামুটি নিশ্চিত যে কান্তার হৃদয়ের জানালা এখনো খোলা। রাস্তা পরিষ্কার ভেবে কবির ৫ বছরের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেমে পড়ল। কান্তা বেগমকে দৈনিক ফোন দেয়া শুরু করল কবির। কান্তাও সাড়া দেয় , কথা বলে দীর্ঘ সময় নিয়ে। কবিরের ইচ্ছা ভ্যালেন্টাইনস ডে তে কান্তাকে দীর্ঘলালিত ভালোবাসার কথা জানানো।

তাই কবির কান্তাকে আমন্ত্রন জানায় প্রথম ডেটিঙে। কিন্তু কান্তা রাজি হয় না। নানা রকম অজুহাত তৈরি করে। কবিরও সম্ভবত আঁচ করতে পারে যে পাখি উড়ে যাচ্ছে। তাই সে অনেক ভেবেচিন্তে ফোনেই প্রোপজ করে বসে। তারপর যথারীতি ৫ বছরের ডিউ থাকা ছ্যাঁকা খেয়ে বসে কবির। কান্তা তাকে বলে কবির যেন আর তাকে ফোন না করে।বেচারা কবির এই সমাপ্তির জন্য রেডি ছিল না যদিও আমরা বন্ধুমহল এরকম কিছু হবার ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত আগেই দিয়ে রেখেছিলাম। সে এই পরিসমাপ্তি মেনে না নিয়ে রেসকিউ মিশনে নেমে গেল। মা-বাবার কাছে লাজ-লজ্জা বিসর্জন দিয়ে বলে ফেলল তার করুণ পরিনতির কথা। কবিরের বাবা-মা সোজা বলে দিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত হবার আগে কোন বিয়ে নয়। কবির হাল ছেড়ে না দিয়ে মা-বাবাকে বুঝাতে সক্ষম হলো তার লাভ অফ দ্য লাইফের কথা। উনারা ছেলের বেহাল অবসহা দেখে মতামত পরিবর্তন করলেন। প্রস্তাব পাঠালেন কান্তার মা-বাবার কাছে। কান্তার মা-বাবা মনে হয় আগে ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিলেন, তারা এক কথায় জানিয়ে দিলেন যে কবিরের মত দুশ্চরিত্রবান ছেলের কাছে কান্তাকে সমর্প ণ করবেন না। এখানেই কবির-কান্তা অধ্যায়ের ট্রাজিক সমাপ্তি ঘটে। আর কবির আরও প্রতিষ্ঠিত হবার আশায় বিদেশ চলে আসে।

কিছুদিন আগে কবিরের সাথে চ্যাট করার সময় বলেছিলাম আমি যদি ঐ দিন কান্তাকে প্রোপজ করতাম, তাহলে কান্তা অন্তত আমাদের বন্ধুমহলে র কারও সাথেই থাকত। দীর্ঘশ্বাসটা শুনতে পারি নাই, কিন্তু অনুভব করেছিলাম। কারণ সে জবাব দিয়েছিল, "তখন তো বুঝি নাই। বুঝলে তো সম্প্রদান কারকে সত্ত্ব ত্যাগ করে কান্তাকে তোমার হাতে দিয়ে দিতাম।" সে আরও জানায় আমাদের-ই আরেক বন্ধু বাবলুর কথিত প্রেমিকা মুন্নিকে তার ভালো লাগত, কিন্তু কান্তার কারণে মুন্নিও ততদিনে অন্যের ঘরের ঘরণী হয়েছে। গতকাল আমি ফোন করেছিলাম মুন্নির এক বন্ধুকে নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা জানাতে। জানলাম বিয়ের পর নাকি মুন্নি আরও সুন্দরী হয়ে গেছে। হায়...কবির.!!

পুনশ্চঃ কবির কিছুদিন আগে মা-বাবাকে রাজি করিয়েছিল ওর বিয়ের ব্যাপারে। কিন্তু অজানা কারণে তাঁরা বেঁকে বসেন কিছুদিন পর। আমি অবশ্য কবিরকে কথা দিয়েছি নেক্সটবার আমি দেশে গেলে ওর বাবা-মাকে ১ ঘন্টা লেকচার দিব বিদেশে একলা থাকার অপকারিতা/কষ্ট সম্পর্কে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত আধঘন্টা আমার অভিজ্ঞ ভান্ডার থেকে লেকচার শুনলে উনারা উনাদের সিদ্ধান্ত বদলিয়ে ফেলবেন ও যথাশীঘ্র কবিরের বিয়ের ব্যবস্হা করবেন।

(সমাপ্ত)


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দুটো পর্বই পড়লাম। আগে হয়ত ভিড় ভাট্টায় চোখে পড়েনি। বেশ মজা লাগল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ঝাল ঝাড়েন নাকি? চাল্লু

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শামীম এর ছবি

আপনার অভিজ্ঞ ভান্ডার ... ... I see!

মজা এবং দুঃখ পাইলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

জলদস্যু এর ছবি

এই লেখা লেখার পর কবির আমার উপর ঝাল ঝাড়তে বাকি রাখে নাই। অনেক কথা শুনিয়েছিল। তবে অন্যান্য বন্ধুগণ এক বাক্যে সত্যতা স্বীকার করেছে কাহিনীর ব্যাপারে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।