বন্যা

জলদস্যু এর ছবি
লিখেছেন জলদস্যু (তারিখ: বুধ, ০৮/০৮/২০০৭ - ৬:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে বিবিসির রিপোর্টটা পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বাংলাদেশে ৮ মিলিয়ন মানুষ আজ বন্যা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে। অথচ কোন উদ্যোগ নেই। সরকারিভাবে তো বাদই দিলাম, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ত্রাণ তৎপরতার ব্যাপারে কেন জানি উদাসীন। গত কয়েকদিন বেশ কিচির মিচির সংবাদপত্রে দেখা গেলেও গত দু'দিন যাবত ঢাকার আশেপাশের বন্যা পরিস্হিতির উন্নতি ও অতি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে ৮০ লাখ পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও আমরা ভুলে যেতে বসেছি।

আমি ৮৮-র বন্যা দেখেছি। বয়স তখন খুবই কম। তেমন বুঝতাম না। টিভিতে দেখাত এরশাদ সাহেব গামবুট পড়ে কোমরপানি ঠেঙ্গিয়ে ত্রাণ দিচ্ছেন আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে "তোমাদের পাশে এসে সব ব্যাথা বুকে নিয়ে, আমিও যে হব একাকার" সংগীত। হতে পারে ভন্ডামী, হতে পারে স্বৈরশাসকের স্বেচ্ছাচার, কিন্তু এত হৃদয়স্পর্শী ছিল সেই গান ও গানের চিত্রায়ন যে আমার বালকমনে সে দৃশ্য দাগ কেটেছিল। দাগ কেটেছিল আমার বড়চাচার মনে, যিনি এই চিত্রায়ন দেখে ৫০০ টাকা দান করে এসেছিলেন বন্যার্তদের সহযোগীতায়। আজকে ২০০৭ সাল। ১৯ টি বছর পার হয়ে গেছে। দেশ এগিয়ে গেছে অনেক। ৮৮ সালে ছিল ১টি টিভি চ্যানেল, আজকে বাংলা টিভি চ্যানেল কতটি, তা কুইজের প্রশ্ন হতে পারে, টিভিতে কলাকুশলী বেড়েছে, নামি-দামি সংগীত তারকা,গীতিকার হয়েছেন, কিন্তু এই বন্যার্ত মানুষের জন্য ভালো কিছু করার, মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য উদ্বুদ্ধ করার মত কোন কাজ কি তারা করেছেন? সংবাদপত্রে সাক্ষাতকারে তারা বলেন তারা নাকি আগে শিল্পী, তারপর অভিনেতা-অভিনেত্রী। আসলেই দেশ এগিয়ে গেছে, আগে দেশের শাসক ছিলেন ভন্ড, এখন পুরো জাতিই হতে চলেছে ভন্ড।

১৯৯৮ সালের বন্যার সময় আমি কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের কোঠায় পা দিয়েছিলাম। একটু হলেও সার্বিক একটা পরিস্হিতি বিবেচনা করার মত মগজ মাথায় ছিল। সারাদেশ ছিল বন্যাকবলিত। পত্র-পত্রিকায় একটাই খবর বন্যা। কারণও ছিল। ঢাকা তলিয়ে যাবার অবস্হা হয়েছিল সেবার। মিরপুরে সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি স্হানীয় অধিবাসীরা বালুর বস্তা দিয়ে বন্যার পানি হতে ঢাকা শহরকে রক্ষা করছেন, এই দৃশ্য টিভিতে দেখেছি স্পষ্ট মনে আছে। ৯৮-এর বন্যায় ঢাকা ডুবতে ডুবতে ডুবেনি, যেমন ডুবেনি এবার। তাই আমাদের কাছে মনে হয় ৮৮'র বন্যাই সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। কিন্তু ভুক্তভোগী মানুষের কাছে ৮৮-৯৮-০৭ সবই এক। আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি না, কারণ আমরা ভুক্তভোগী ছিলাম না। আমরা তাই ব্যস্ত থাকি পরিসংখ্যান নিয়ে ও কল্পনাপ্রসূত হিসাব নিয়ে---যা দিয়ে আমরা বন্যার ভয়াবহতার রেটিং করি।

এলোমেলো লেখা। গুছিয়ে লিখতে পরিনি। তবে আমি জানি এখানে অনেক ভালো ভালো লেখক আছেন যারা কলম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, দয়া করে আপনারা পত্র-পত্রিকায় লিখুন ও বন্যার্ত মানুষের পাশে এগিয়ে আসার জন্য সবাইকে অনুরোধ করুন।


মন্তব্য

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনার লেখাটাই অনেক মনকাড়া হয়েছে, ক্ষোভটা স্পর্শ করতে পারছি।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

দুশ্চিন্তা করবেন না। প্রধান উপদেষ্টা নাকি ত্রাণভান্ডার খুলেছেন। ওখানে সাপলাই এতই বেশি যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিসও রয়ে যাচ্ছে, যা অনেকে লুটপাটও করছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দেশে থাকা অবস্থায় শেষ বন্যা পেয়েছিলাম ২০০৪ এর আগষ্টে । তার এক মাস পরে বাইরে আসি ।
অন্যসকল বারের মতো সেবার ও সরকারী ত্রানের চেয়ে সাধারন মানুষের উদ্যোগই ছিলো মুখ্য । পাড়ার বখাটে ছেলেগুলোকে ও দেখেছি এ সময়টাতে কি ভীষন কাজের হয়ে যেতে । ঘরে ঘরে গিয়ে সাহায্য নেয়া,পাড়ার মোড়ে চাদ্র বিছিয়ে টাকা তোলা। এর কিছুটা হয়তো দুষ্টপথে চলে যেতো কিন্তু বেশীর ভাগ উদ্যোগই কার্যকর হতো ।

এবার সবকিছু মিলিয়ে ভদ্রলোকদের জলপাই সরকার সাধারন মানুষদের জন্য আতংক হয়ে আছেন । সেই আতংক থেকেই মানুষ নিজেরা উদ্যোগ নিতে পারছেনা । ২০০৪ এ যে ছেলেগুলোকে নিয়ে আমরা ত্রানের কাজ করছিলাম,নিশ্চিত তাদের বেশীর ভাগ এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে, যারা আছে তারা ও দ্বিধাগ্রস্থ,জমায়েত হওয়া আইনসংগত কিনা, ত্রান তোলা যদি চাঁদাবাজি হয়ে যায়? যারা চাঁদা দেবে তাদের ও দ্বিধা,যদি এর উৎস ও জানাতে হয়?

মোদ্দা কথা মানুষ বিভ্রান্ত । মানুষের বিভ্রান্তি কাটিয়ে আপদকালীন সময়ে সবাইকে উদ্যোগী করার দায়িত্ব ছিলো সরকারের ।

সরকার ব্যর্থ এ ক্ষেত্রে এবং ব্যর্থ নিজস্ব উদ্যোগ গ্রহন করতে ও ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।