সবুজ বাঘের জন্য গল্প : কিম্পুরুষ : দি স্টোরি অব দি গ্রেট বিয়ার--পর্ব. এক

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৩/১০/২০১০ - ১১:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoআমাদের শহরে একবার ভালুক এসেছিল। গা ভর্তি কালো চুল। চারপায়ে হাঁটতে পারে—দুপায়েও পারে। দশাসই ফিগার। তর তর করে গাছে চড়ে। ভালুকটিকে কেউ দেখে নি। গলায় একটি ঝুমঝুমি আছে। খবরটি তাজা।

শুনে আমার বন্ধু প্রতিক বরইগাছের কচি ডাল পুড়িয়ে চারকোল বানিয়ে নিয়েছে। আর জোগাড় করেছে বড় সড়ো কার্টিস পেপার। কাঁধে ঝোলা। আমাকে নিয়ে সারা শহরময় ঘুরে বেড়ায়। ইচ্ছে জ্যান্ত ভালুকের ছবি আঁকবে—এই লাইভ পোর্টেট অব এ্যান আননোন বিয়ার। এ ভবে সুযোগ সব সময় আসে না হে। ডরো মাৎ।

আমরা দুজনে মিলে পাচুড়িয়া পার হয়ে সোনাকুড় পর্যন্ত যাই। নদীর পাড়ে বসে থাকি। শশ্মানঘাটে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। ব্যাংক পাড়ায় পদ্মপুকুর পাড়ে নসুকাকু ছিপ রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখ খুব কালো। তার মাছ ধরার সাধ। টোপ নাই। যে লোকটি বনবাঁদার খুঁজে টোপ এনে দেয়—তার কোনো পাত্তা নাই। জীবনে এই প্রথমবারের মত নসুকাকু দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে ছিপ নাই। সামনে নিস্তরঙ্গ পুকুর। আমাদের দেখে ফস করে বলেন, কি রে তোদের ভয় করে না?
--ভয় করবে কেন। আমরা তো ভুত খুঁজছি না। ভালুক খুজছি।
--ভালুকটার বাড়ি কোথায় রে?
--জানি না। কোনো আফ্রিকার জঙ্গলে টঙ্গলে হতে পারে।

ঘরের মধ্যে লোটাস জানালায় ছিল। আমাদের গলা শুনে দৌঁড়ে ঝুল বারান্দায় ছুটে এসেছে। চেঁচিয়ে বলে, আফ্রিকায় কেন হবে! ওইটার বাড়ি গৌরনদী। জিলা বরিশাল। বিখ্যাত দি লক্ষ্মণদাস সার্কাসের ভালুক। খাঁচায় খাঁচায় থাকে। খেলা দেখায়।

লোটাস আরও কি সব তথ্য বলে হাত নেড়ে নেড়ে। লোটাসের মা এসে পাশে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। এইবার বোঝা যায়—মাকে ছাড়িয়ে গেছে মেয়ে। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মায়ের বুকের ভিতর থেকে। হাত দিয়ে লোটাসের লম্বা চুল নাড়ে চাড়ে। বেনী বেঁধে দিতে সাধ জাগে। নসু কাকু এইসব দেখে না। পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জলে চাঁদ ওঠে। মাছ ধরা ছিপটি ঘাসের মধ্যে পড়ে আছে। বলে, খুব সাবধান। ভালুক ভয়ংকর প্রাণী। ধারালো দাঁত আছে।
চিন্তিত নসুকাকা এইসব বিড়বিড় করে বলে। আর মায়ের সামনেই লোটাস ভেংচি কেটে বলছে, ভ-এ কারে উল্লুক—ভাল্লুক।

পদ্মপুকুরে পদ্ম ফোটে। লাল পদ্ম। নীল পদ্ম। পাশাপাশি। গলাগালি করে ফোটে। লোটাস এলে জলের উপরে হাওয়া খেলে যায়। গোল গোল পাতা হালকা করে নেচে ওঠে। প্রতিক কখনো লোটাসকে লোটাস বলে ডাকে নি। ডাকে, পদ্ম। পদ্মরাগমণি। পদ্মই রাগ করে মন থেকে বলতে পারে—হুইম, বেটা ভাল্লুক।

চানমারিতে মাসে একবার ফায়ারিং হয়। সেদিন আমাদের শহরে মানুষজন একটু নড়ে চড়ে ওঠ। খুব বুড়ো এবং জালি ছেলে মেয়েরা দল বেঁধে চানমারিতে গুলি খুঁজতে বের হয়। পুলিশ তখনো মাটিতে শুয়ে পড়ে গুলি করার ঢং করছে। আর তাদের পাছার উপরে পা তুলে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বস। চেঁচিয়ে বলে, গুলি কর।
--গুলি নাই। গুলি করুম কেমনে?
--হালার পো হালা। গুলি নাই তো কি অইছে। কইছি গুলি কর। তুই গুলি করবি। অর্ডার। ইহা কথা না—পুলিশি অর্ডার।

পুলিশগুলো বন্দুকের ট্রিগারের হাত রাখে। ল্যাতল্যাতে আঙুল দিয়ে ট্রিগার খোটাখুটি করে। লোকজন হা হা করে হাসে। আর জালি ছেলে মেয়েরা ওদের সামনেই চানমারিতে দৌঁড়ে যায়। মাটি খুঁড়ে গুলি বের করে আনে। কেউ কেউ পুরনো দেওয়ালে ইটের ফাঁক ফোঁকরে হাত ঢোকায়। বস বলে--গুলি কররে হারামজাদা। অর্ডার। জালি ছেলে মেয়েদের কেউ কেউ বলে ওঠে, পাইসি। ক্ষুদে ক্ষুদে গুলি। অমৃত মুচি চৌরঙ্গীর মোড়ে জুতা সেলাইয়ের ফাঁকে ফাঁকে এই সব গুলির গায়ে ফুঁ দেয়। মজুরী এক আনা। বলে লাল সুতোয় বেঁধে ছেলেরা ডান হাতে আর মেয়েরা বাম হাতে বেঁধে ন্যাও গো বাবুসাব। ডরো মাৎ। ভালুক বলে বাপরে বাপ। আমি আর নাই--নাই রে সোনা।

এই অমৃত মুচিকেই ধরা হয়। অমৃত মুচি শহরে খ্যাতিমান লোক। শিডিউল কাস্ট কোটায় একবার ভোটেও দাঁড়িয়েছিল। ফল--অতিশয় দুর্বল। অমৃত মুচি দুপায়ের ফাঁকে জুতো ঢুকিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে সেলাই করতেই ভালবাসে। বলে-- বুঝলে বাপো, আমাগো দ্যাশের পারলামেন্টের জন্য জুতা বানানো দরকার। হ্যার পায়ে ধুলা। কেউ কেয়ার করে না।
অমৃত মুচি দুআনা পয়সা চায় আমাদের কাছ থেকে। হাত বাড়িয়ে বলে, দ্যাও।
---কি দেব?
--গুল্লি।
--আমরাতো গুল্লি খুঁজছি না দাদু।
--কি--কি খুঁজতাছ কাগু?
--ভাল্লুক। ভাল্—ল্লু—উ-ক।
অমৃত মুচি শুনে থমকে যায়। নিজের চক্ষু দুটো হাতের চেটোর ভাল করে ঘষে। আমারদের দুজনের কপাল গভীর করে দেখে। তারপর মাথা নাড়ে এদিক ওদিক। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বলে, পাবা। একটু সবুর ধইরো। সবুরে মেওয়া ফলে।

আমাদের মেওয়া বলে কিছু নেই—আছে মেথর। মেথড় পাড়া আছে। সোনালী ব্যাংকের পিছন দিয়ে সরু রাস্তা। ইট বিছানো। পা রাখলে ইটগুলো ধড়ফড় করে। একটু এগুলেই মেথড় পাড়া। বৈরাগীর খাল পাড়ে কয়েক সারি খুপরি ঘর। আধাআধি ফাঁকা। ছাড়া বাড়ি। ঘরের সামনে জল কাদা। আর একপাল শুয়োর চরছে। খালি গায়ে কয়েকটি শিশু ভোলানাথ তাদের সঙ্গে গড়াগড়ি খাচ্ছে। একটি সজনে গাছের নিছে লছমিপ্রসাদজী দিন দুপুরে তাড়ি গিলছে। আর হড়বড় করে চেঁচিয়ে বলছে, বুয়েছিস কাহু, তুরা ভাল্লুক ভি আছিস। উল্লুক ভি আছিস। শুল্লুক ভি আছিস। লছমিপ্রদসাদজীর বহুবিবি শিউলীবালা এক হাড়ি খালের জল তার সোয়ামীজীর মাথায় ঢেলে দিয়েছে। আর হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেচে উঠেছে—
হাওয়া মে উড়তা যায়ে
মেরা লাল দুপাট্টা মল মল ও যায়ে।

শহরের উত্তর পাড়ায় গোরস্তান। এর সামনেই ডাইরেক্ট বেদগাঁ রোড। এখানেই ছোট খোকাদের বাড়ি। পুরনো আমলের টিনের ঘর। চালে দুপাশে ময়ুর—জং ধরা টিনের ময়ুর। মাঝখানে চান তাঁরা। বাড়িতে ছোট খোকা নেই। খবর এসেছে, ছোট খোকা মারা গেছে। ঢাকায়। লাশ মর্গে পড়ে আছে। লাশ আনতে কিছু টাকা পাঠাতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। ছোট খোকাদের বাসার সামনে কিছু লোক জমে গেছে। কেউ শুকনো মুখে ঘুরছে। কেউ ফিসফিস করছে। কেউ স্টার সিগারেট ধরিয়ে বাহ্য আগমনের অপেক্ষা করছে। কেউবা লম্বা একটা হাই তুলে বাসায় ফিরে যাচ্ছে।

ছোট খোকার মা বুড়ি মানুষ। কাঁদবেন কি আছাড়ি বিছাড়ি খাবেন বুঝতে পারছেন না। একবার বারান্দায় উঠছেন। একবার ঘরের দরোজায় উঁকি দিচ্ছেন। আবার উঠোনে কোমর ধরে ছুটে আসছেন। চুলায় ভাত উতরায়। একটি বিড়াল লেজ উঁচিয়ে চুলার চারধারে ঘুরছে। ঘরের মধ্যে বড় খোকা নিমকাঠের পালঙ্কে ঘুমিয়ে আছে। তার সদ্য স্নাত বউটি খুব খেয়াল করে সিঁথি কাটছে। আর মাঝে মাঝে বড় খোকার গায়ে ঠেলা মেরে বলছে, ওঠো। ওটপা না। উইঠা দ্যাখো। ছোট খোকা আবার মইরা গেছে।
বড় খোকার কপাল কুঁচকে গেছে। তার আরও গভীর করে ঘুম পায়। পাশ ফিরে বলে, এই নিয়া ছয়বার মরল। আরও দুএকবার মরুক। তারপর উঠবানি।

একটি লিকলিকে লোক বারান্দায় বসে মুড়ি খাচ্ছে। খেতে খেতে দেখছে, মুড়ির গন্ধে পিঁপড়ে এসে গেছে। মাটিতে পড়ে থাকা কয়েকটি মুড়ি কামড়ে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সারি বেঁধে যাচ্ছে। পিঁপড়েদের কোনো টেনশন নেই। দেখতে দেখতে লোকটির মনে হয়—আরেকটু নলেন গুড় হলে ভাল হত। কাছে একটি কুকুর পায়ের ভিতরে মুখ গুঁজে পড়ে আছে। নিস্তব্ধ। এদিক ওদিক তাকিয়ে লোকটি উঠে পড়েছে। বুড়ি মা তার দিকে দৌঁড়ে আসে। হাত ধরে বলে, যাইও না বাবা। টাকা লৈয়া যাও।

লোকটি হাসে। এক খাবলা মুড়ি মুখে পোরে। কয়েকটি মুড়ি মুখের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। এই মুড়ির গন্ধে একটু পরে পিঁপড়ে ঠিক এইখানেও আসবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করাটা জরুরী নয়।লিঁকলিকে লোকটি শান্ত গলায় বুড়ি মার হাতটি ছাড়িয়ে নিয়ে বলে—চিন্তা নাই। আপনে ট্যাকার জোগাড় করেন। লাশ আইব।

লোকটির বামগালে একটি বড় কাটা দাগ । আলোতে চকচক করে। অন্ধকারে ধকধক করে জ্বলে। লোকটি যখন আর আসে না তখন ছোট খোকার বুড়ি মা ফ্যাল ফ্যাল করে আকাশ পানে চায়। সুর্যটা মাথার উপর থেকে পশ্চিমে একটু হেলে পড়েছে। কয়েকটি কাক উড়ে যাচ্ছে দূরে কোথায়। তখন মনে পড়ে লোকটির গোঁফজোড়া পেরজাপতির মতো পাঙ্খা মেলা। সাদা আর কালো। ঝিলমিল করে গো। তোমরা শুইনো গো বাছা।

বেলা পড়ে এলে গোরস্তানের একপাশে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে ছোট খোকার বুড়ি মা। সামনে ছোট একটি আচি খাল। নাম বৈতরণী। কুল কুল করে জল আসে। ভুল ভুল করে জল চলে যায়। দুএকটা গুই সাপ সড় সড় করে মাথা গুঁজে মাছ খুঁজে ফিরে যায়। সাঁজবাতির পরে রাত্রি নেমে আসে। চন্দ্রও মেঘের সঙ্গে গলাগলি করে উঠে পড়ে। তাড়াহুড়া করে বলে পুরোটা উঠতে পারে না। আধখানা করে উঠে। আমার বন্ধু প্রতিক এই অর্ধ চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে ভালুক খোঁজে। আর থেকে থেকে আমাদের খিদে পায়। চোখ দুটো জ্বলে ওঠে। আধো অন্ধকারে আধো আলোতে দেখা যায় ঝোঁপের পিছনে একটি দুপেয়ে ভল্লুক বেরিয়ে এসেছে। গা ভর্তি কালো চুল। দশাসই ফিগার। থরথর করে কাঁপছে। বুড়ি মা মমতা ভরে ভালুকটির গায়ে পিঠে হাত বোলায়। বলে, দুষ্টু ছাওয়াল। ভাল্লুক সাজছিস ক্যান। ভয় দেহাবি?

ভালুক চোখ বোজে আরামে। তার গায়ে অনেকদিন পরে সুড়সুড়ি লাগে। বলে, ভয় দেহাব ক্যান গো মা। খেলা দেহাবার সাধ হয়।
--তাইলে?
--মানুষ সাইজা থাকা বড় কষ্ট। ভাল্লুক হইবার মঞ্চায়।

এই ভালুকটা কিন্তু মিথ্যা। বুড়ি মানুষের ভীমরতি। সত্যি সত্যি ভালুক তো আসে না। এলেও তো তিনকেলে বুড়ির দেখার কথা নয়। বুড়ির চোখ নাই। চোখে দুটো সাদা পাথর জ্বলজ্বল করে। মাঝে মাঝে কিছু জল গড়িয়ে পড়ে। ডালিম দানার মত টলটলে। লাল। হালকা গরম।

বুড়ি ছোট খোকার আশায় গোরস্থানের অশ্বত্থগাছের নিচে বসে থাকে। হাওয়া আসে। শুকনো চুল ওড়ে—সাদা সাদা চুল। দুএকটা পাতার উপরে খচখচ শব্দ হয়। পায়ের কাছে আচি খাল কুল কুল করে বয়ে যায়। খালের নাম বৈতরণী। খুব জাগ্রত খাল। এই খালের ওপারে যারা যায় তাদের নাম হুব্বুত—ছায়াময় কায়া হে। বুড়ি কিছুটা বোঝে—কিছুটা বোঝে না। খনখন করে বলে, ছোট খোকা—অ ছোট খোকা, আইলি?

কোথায় ছোট খোকা! চাঁদের ভিতর থেকে এক টুকরো ভিজে আলো এসে বুড়ির ঠোঁটে এসে লাগে। থরথর করে ঠোঁট দুটো কাঁপে। জল পিপাসা মেটে। আর কিছু নয়। এ সময় গেট খোলার শব্দ হয়। প্রতিক আমার হাত চেপে ধরে। বলে, ভালুক আসছে। রেডি হ। ভালুক আসছে।

প্রতিক আমার হাতটা খুব শক্ত করে চেপে ধরেছে। হাতদুটো বেশ গরম। কিছুটা ভয় ভয় করে। প্রতিকের গা ঘেষে বসতে হয়। প্রতিক কার্টিস পেপারের ভাজ ঠিক করার চেষ্টা করে। ফিস ফিস করে, শ্ । ভালুক আসছে। আমাদের ভালুক সত্যি সত্যি আসছে। রেডি ওয়ান, টু, থ্রি…।

গেট খোলার শব্দ আরেকটু জোরে হয়। বহু পুরনো মর্চে ভাঙার শব্দ। বুড়ি অন্ধকারের দিকে মুখ করে বসে আছে। গেট খোলার ক্যাচর ম্যাচর শব্দ হয়। বৈতরণীর জলে কি একটা উসুক করে ওঠে। বুড়ি বলে, অ ছোট খোকা দেরি করতিছিস ক্যান। তর ঠাণ্ডা লাগে না বাপো?

বুড়ির গলাটা শ্লেষ্মা জড়ানো। ঠোঁটের কম্পন আরও তীব্রতর হয়। দাঁত নাই। ফসফস করে একটা বায়ু সরার মত আওয়াজ ওঠে। প্রতিক ফস করে বলে, অই দ্যাখ।
--কী
--ভালুক। ভালুক আইছে রে।
ভালুক কই। দুইটা মানুষ। একটা পুরুষ। আরেকটা মাইয়া। মেয়ে মানুষটির মুখ ব্যাজার। এবং কিছুটা ভীত। বারবার গোরস্থানের স্তব্ধ কবরগুলোর দিকে তাকায়। আর নিজের বুকের আঁচলটি টেনেটুনে গলায় প্যাচ মারে। পুরুষটির হাতের ফাঁকে ঢুকে যেতে চেষ্টা করে। খামচে ধরে পেশল বাহু। বাহু থেকে একটি গুলির কবজের লাল সুতো ছিঁড়ে যায়। ঘাসের মধ্যে ছিটকে পড়ে।

মেয়ে মানুষটি পুরুষটির মুখের পানে চেয়ে বলে, চান মাথার উপ্রে যাওয়ার আর দেরী নাই। চলেন—ঘরে যাই। আজ চান ফিরা গেলি ঝামেলা। রোজ রোজ ভাল লাগে না।

( আরও দুটো পর্ব আসবে, ইচ্ছে করলে পড়বেন, আপাতত আমেন গো বেরাদর।)


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

কিছু জিনিস বুঝি নাই। একটা লিস্টি করি -

  • নলেন গুড়
  • চানমারি
  • শিডিউল কাস্ট কোটা

পরের পর্বগুলো পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

কুলদা রায় এর ছবি

আমাদের গোপালগঞ্জে খেজুরের গুড়ের মধ্যে নলেন গুড় খুব সুস্বাদু।

চানমারি--চাঁদমারি। গুলি করা প্রাকটিস হয়।

শিডিউল কাস্ট কোটা--সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এটা এক সময় চালু ছিল। অমৃত মুচি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলেন। এটা নিয়ে তার বিমেষ গর্ব ছিল।
ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অতিথি লেখক এর ছবি

শিডিউল কাস্ট মানে যতদূর জানতাম, হিন্দুদের চারবর্ণের বাইরে ও যারা থাকে। বাংলায় নমঃশূদ্র বলা হয় সম্ভবত।

সজল

কুলদা রায় এর ছবি

আমি ভাই শিডিউল কাস্টের লোক।
চতুবর্নের বিভাজনটা মনুমহারাজের। কিন্তু মুচি, মেথড়দেরও শিডিউল কাস্টের অন্তর্ভুক্ত করে ভোটের কোটা করা করা হয়েছিল বৃটিশ আমলে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অতিথি লেখক এর ছবি

হিন্দুধর্মের এই কাস্ট সিস্টেমটা নিয়ে কিছু বলার নাই। আমি এমনকি জানিনা জন্মসূত্রে আমি কোন কাস্টে পড়ি, তবে তলানীর দিকেই হওয়ার কথা। আমার ব্যাখ্যার উদ্দেশ্য একটাই ছিল, শব্দটাকে যতটা নীরিহ মনে হয়, ততটা আসলে না।

সজল

কুলদা রায় এর ছবি

শব্দটি খুবই ভয়ংকর। আবার ল্যাতর‌্যাতেও বটে। দেবেশ রায় মশাই একখান বই লেখসেন--যোগেন মণ্ডল।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সবুজ বাঘ এর ছবি

গল্ফে সিনসিনারি বিশি। ঘ্যাছাঘ্যাছ আহে আর যায়। তয় সিনসিনারি সৌন্দর্যমিণ্ডত।
পুনশ্চ: দাদা এই সবুজ বাঘটা ক্যারাগো?

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সুবুস বাগ নামে একজনরে চিনি। সে ভালো লুক ওস্তাদ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

কুলদা রায় এর ছবি

সবুজ বাঘের বাড়ি টাঙ্গাইল। আকুর টাকুর পাড়া নাকি রে ভাই?
টাঙ্গাইলে আমার এক কাকার বাড়ি ছিল। শুনছি তার নাম তারাপদ রায়।
টাঙ্গাইলে লুক সকালে ঘোম তৈকে উইঠা কাডাল খায়। দুফরে কাডাল। রাইতে কাডার।
কাডালের ইচড় হ্যাগো মতো আর কেউ রানতে পারে না।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কুলদা রায় এর ছবি

পৃথিবীতে আপনি ছাড়া আর দ্বিতীয় সবুজ বাঘ কি আছে?
আপনার গল্পের মুগ্ধ পাঠক আমি। এ কারণে আপনার জন্য এই গল্পটি লিখেছি গত পরশুদিন। টাইপ করতে আলস্য পাই। তাই ভেঙে ভেঙে তিন পর্বে দিচ্ছি।

গল্পটি বর্ণনাত্মক ভঙ্গিতে লেখা। আমাদের পুরনো দিনের লেখার স্টাইলতো এরকমই। এজন্য সেভাবেই লিখছি।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সবুজ বাঘ এর ছবি

মাইরালাইছেন গো মাইরালাইছেন। আপনাগো মতো গুণীলেহকরা যুদি আমারে এইভাবে গ্যাংটকে পাঠায়, তাইলে তো বস এ যৌবন মন সকলই দাও তার মতো সুখ কোথাও কি আছে? আফোনার কথা ভুলিয়া যাও টাইপের আনন্দ বেদনায় গড়াগড়ি দিতে ইচ্ছা করে।

কী যে কন, গল্পের সমস্যা নাই, পাঠকের মনোযোগের সমিস্যা আছে।

পুনশ্চ: বিজ্ঞান আপনার মঙ্গল করুক।

কুলদা রায় এর ছবি

কারণে অকারণে যাগো পা ঠক ঠক কইরা কাঁপে হ্যারা হৈল পাঠক। হ্যাগো পায়ে গড় হইগো বেরাদর।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

লক্ষণ দাসের সার্কাস ও তার 'বাকি ইতিহাস' নিয়া ঢাকার মঞ্চে আমার একটা প্রিয় নাটক আসে, নাম 'সার্কাস সার্কাস'। দল - প্রাচ্যনাট। সাহসী নাটক খুব। যদিও সেকেন্ড টাইম দেইখা ফার্স্ট টাইমের মতো লাগে নাই। যাক, সেইটা অপ্রাসঙ্গিক।

গল্পের পরের পর্বের অপেক্ষায়। আর, প্যারা শেষ কইরা একটা বড় কইরা এন্টার মাইরেন, যাতে দুইটা প্যারার মধ্যে ফাঁক থাকে। আসল গল্প তো সেই ফাঁকেই লুকায়া থাকে।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আঁকাইন এর ছবি

আমার বন্ধু প্রতিক বরইগাছের কচি ডাল পুড়িয়ে চারকোল বানিয়ে নিয়েছে। আর জোগাড় করেছে বড় সড়ো কার্টিস পেপার। কাঁধে ঝোলা। আমাকে নিয়ে সারা শহরময় ঘুরে বেড়ায়। ইচ্ছে জ্যান্ত ভালুকের ছবি আঁকবে—এই লাইভ পোর্টেট অব এ্যান আননোন বিয়ার।

শুরুতেই ভালো লেগে গেল। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা।
আঁকা ছবিটি অপুর্ব। হাসি
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।

============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।

কুলদা রায় এর ছবি

এই ছবিটা আমি আঁকি নি ।কিন্তু ইচ্ছা করলে আঁকতে পারতাম। আকুম নাকি? কি কন?
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

হরফ এর ছবি

আপনার গল্পের নামকরণটা তো বোঝা গেল না লেখক। "কিম্পুরুষ" অর্থে যে মহাভারতের "সিংহানন কিরাত জাতি" নন তা বুঝতে পারছি, কিন্তু সেক্ষেত্রে এই শব্দটির মানে কি হয় বলুন তো? মানে বাঙালী বা তামিল বা হান এই জাতীয় জাতি নির্দেশক শব্দের একটি করেই মানে হয় কিনা! আবার শব্দটার আক্ষরিক অর্থ তো হল একটি প্রশ্ন "মানুষ কি?", তাতেও ভাল বোঝা গেল না তাতপর্যটা।
------------------------------------------------------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"

ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে

কুলদা রায় এর ছবি

আমিও জানি না।
তবে কাপুরুষ নামে একটি অর্থ দেখতে পাচ্ছি বঙ্গীয় শব্দার্থকোষে। নতুন উদ্যমে নতুন কিছু করার সাহস যাদের নেই, তাদের কিম্পুরুষ বা কাপুরুষ বলার প্রচলন হয়। শব্দটি ক্রমে পৌরুষহীন বা ভীতু অর্থে ব্যাপ্তি লাভ করে।
ভাই, পাঠক, আপনার প্রশ্নটি পড়ে আমার পা ঠক ঠক করে কাঁপতে শুরু করেছে। কি যে চাপা মারি আপনার কাছে। যদি জানতেই চান তাহলে বলি--নামকরণের সার্থকতা বলে বিশেষ কিছুতে আমার আস্থা নাই। এই গল্পটির নাম রজ্জু দেখিয়া সর্প ভ্রম বা ম্যানিলা দড়ি দিলেও চলত। অথবা বাবু খেলা দেখে যান--কেড়ে নাগ ধেড়ে নাগ ইত্যাদি।
বাকী দু পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
শুভ শারদীয়া।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কামরুল হাসান রাঙা [অতিথি] এর ছবি

উদ্ধৃতি

" ঘরের মধ্যে বড় খোকা নিমকাঠের পালঙ্কে ঘুমিয়ে আছে। তার সদ্য স্নাত বউটি খুব খেয়াল করে সিঁথি কাটছে। আর মাঝে মাঝে বড় খোকার গায়ে ঠেলা মেরে বলছে, ওঠো। ওটপা না। উইঠা দ্যাখো। ছোট খোকা আবার মইরা গেছে।
বড় খোকার কপাল কুঁচকে গেছে। তার আরও গভীর করে ঘুম পায়। পাশ ফিরে বলে, এই নিয়া ছয়বার মরল। আরও দুএকবার মরুক। তারপর উঠবানি।"

.........................
এই নিয়া ছয়বার মরল...............ঠিক বুঝলাম না।

লেখা ভাল হয়েছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।