রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি এবং জমিদারের রবীন্দ্রগিরি :চতুস্ত্রিংশ পর্ব

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৬/০৪/২০১২ - ১১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কুলদা রায়
এমএমআর জালাল

মুসলমান খণ্ড—৬

রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৩ সালের ১৩ জুলাই পাবনার সিরাজগঞ্জের সেবক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আবুল মনসুর এলাহী বক্সকে চিঠিতে লিখেছেন, মানুষের দুঃখ দূর ঈশ্বরের উপাসনার শ্রেষ্ঠ অঙ্গ। তোমরা সেই শ্রেয়ঃ সাধনায় ব্রতী হয়েছো, তার সফলতা চিরদিন অন্তরে বাহিরে তোমাদের অনুবর্তী হোক এই আমার সর্বান্তঃকরণের আশীর্বাদ।

এর পরই তাঁকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন মুসলমান সম্পর্কে তাঁর ধারণা, বোগদাদের মরুভূমিতে একজন বেদুয়িন দলপতি আমাকে এই বলেছিলেন যে, যাঁর বাক্যের দ্বারা , কর্মের দ্বারা, কোনো মানুষ পীড়িত হয় না, তিনিই যথার্থ মুসলমান। যাঁর বাক্য অসহায়ের সহায়, নিরাশ্রয়ের আশ্রয়, দুঃখীর সান্ত্বনা তিনিই সত্য ধর্মের দূত।

জসীমউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হলেই রবীন্দ্রনাথ হিন্দু-মুসলমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি এই সমস্যার মূলসূত্রটি ধরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে। বলেছেন, দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে দিলেই যে ঘরে আগুন লাগে তার কারণ সেই ঘরের মধ্যে বহুকাল আগুন সঞ্চিত ছিল। যাঁরা বলতে চান, আমরা সবাই মিলে মিশ হয়ে ভালো ছিলুম, ভাল ইংরেজ এসেই আমাদের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দিল, তাঁরা সমস্যাটি এড়িয়ে যেতে চান।

সে সময়ে বন্দে মাতরম গানটি নিয়ে হিন্দু-মুসলমান হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে খুব বিরোধ চলছিল। রবীন্দ্রনাথ জসীমউদ্দিনকে বলেছিলেন, বন্দে মাতরম গানটি যেভাবে আছে, তোমরা মুসলমানেরা এ জন্য আপত্তি করতে পার। কারণ এ গানে তোমাদের ধর্মমত ক্ষুণ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তখন কংগ্রেসের জহর লাল নেহেরু গানটি রবীন্দ্রনাথের কাছে পাঠিয়েছিলেন। কবির এ গানে মুসলমানদের আপত্তিজনক অংশটি কেটে ফেলার জন্য কবি নেহেরুকে পরামর্শ দেন। এর কংগ্রেসের কোনো সভায় বন্দে মাতরমের আপত্তির জায়গাটি আর না গাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

জসীমউদ্দিনের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে কবি বলেছেন, কেন যে মানুষ একের অপরাধের জন্য অপরকে মারে! ও-দেশের মুসলমানেরা হিন্দুদের মারল, তাই এদেশের হিন্দুরা এখানকার নিরীহ মুসলমানদের মেরে তার প্রতিবাদ করবে, এই বর্বর মনোবৃত্তির হাত থেকে দেশ কিভাবে উদ্ধার পাবে বলতে পার? দেখ, কী সামান্য ব্যাপার নিয়ে কলহ হয়। গরু কোরবানী নিয়ে, মসজিদের সামনে বাজনা নিয়ে। একটা পশুকে রক্ষা করতে কত মানুষকে হত্যা করছে।

এইসব আলোচনা করতে করতে কবি মাঝে মাঝে বড়ই উত্তেজিত হয়ে উঠতেন। জসীমউদ্দিন জানাচ্ছেন, কবির মনে একদেশদর্শী হিন্দুত্বের স্থান ছিল না। মুসলমানদের মধ্যে যাহারা স্বাধীন মতবাদ নিয়ে ধর্ম ও সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করতেন, তাদের প্রতি কবির মনে প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল।
বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলনের নেতা কাজী আব্দুল ওদুদকে বিশ্বভারতীতে নিজাম-বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করেন। আব্দুল ওদুদ সেখানে হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ বিষয়টি নিয়ে তিনদিন লিখিত বক্তৃতা দেন। কবি তখন বেশ অসুস্থ। কিন্তু অসুস্থতা নিয়েও তিনি নিজে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা শুনেছেন। কবি আব্দুল কাদির জানিয়েছেন, সে-সময় তাঁর (কাজী আবদুল ওদুদ) সঙ্গী হয়ে আমি ও সৈয়দ মোতাহের হোসেন চৌধুরী শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম। আমরা প্রায় সপ্তাহকাল রবীন্দ্রনাথের অতিথিরূপে শান্তিনিকেতনে অবস্থান করেছিলাম। প্রত্যহ দুপুরে দক্ষিণায়নে আমাদের আহারের সময় কবিগুরু উপস্থিত থাকতেন এবং নানা প্রসঙ্গে আলাপ করতেন। সে আলাপ জুড়ে থাকত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি—হিন্দু-মুসলমানের মিলন কামনা।

শামসুন্নাহার মাহমুদকে ১৯৩৩ সালের ৭ নভেম্বর শান্তিনিকেতন থেকে চিঠিতে তৎকালীন সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং বিশেষভাবে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ বিষয়ে কবি লিখেছিলেন—আমি পারস্য ইরাক ইজিপ্ট ভ্রমণ করে এসেছি। বহু শতাব্দীর মোহান্দকার ভেদ করে সর্বত্রই নবপ্রভাতের আলোক আজ প্রকাশিত, সর্বত্রই সেখানকার নানা লোকের মুখে শুনে এলেম ভারতবাসীর অন্ধতার প্রতি ধিক্কার। স্পষ্ট উপলদ্ধি করেছি আজকের দিনে নবজীবনের উৎসাহে উদ্দীপ্ত সমস্ত প্রাচ্য মহাদেশের মধ্যে একমাত্র ভারতবর্ষেই আমরা মুক্তির ক্ষেত্রে কাঁটাগাছ রোপণ করে বসেছি। এই মূঢ়তার অপমান সমস্ত পৃথিবীর সম্মুখে আজ অনাবৃত্ত অথচ হতভাগ্য দেশে এর প্রতিকার আজ এত দুঃস্বাধ্য।

ময়মনসিংহের করিমগঞ্জের জুট রেজিস্ট্রেশনের সহকারী ইন্সপেক্টর কাজী আহমদকে লেখা চিঠিতে জানা যাচ্ছে কবি ধর্মান্ধদেরকে ক্ষুদ্র হৃদয়ের অধিকারী হিসাবে মনে করেন। তিনি লিখেছেন —ধর্ম যদি মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে খর্ব্ব করে তার চেয়ে শোচনীয় কিছু হতে পারে না। যারা সর্ব্ব মানুষের এক ঈশ্বরে যথার্থ বিশ্বাস রাখেন তারা কোনো কারণেই মানবকে অপমান করে নিজের ধর্মকে অপমানিত করতে পারে না। এই আমার মত। ক্ষুদ্র হৃদয় যাদের ঈশ্বরের সিংহাসনকে তারা সংকীর্ণ করে—এটা আপরাধ।

এই অপরাধের জন্য তিনি কঠোরভাবে সেকালের হিন্দু-মুসলমান উভয়কেই দায়ী করেছেন। তবে সেই অপরাধটা কিন্তু নিম্নবর্গীয় হিন্দু বা মুসলমানের মধ্যে দেখতে পান নি। শিলাইদহ সহ পূর্ব বঙ্গে জমিদারী পরিচালনা করার সময়ে তিনি নিম্নবর্গের বাউলদের দেখেছেন। সে অভিজ্ঞতা থেকে কবি লিখেছেন—আমাদের দেশে যাঁরা নিজেদের শিক্ষিত বলেন তাঁরা প্রয়োজনের তাড়নায় হিন্দু-মুসলমানের মিলনের নানা কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অন্য দেশের ঐতিহাসিক স্কুলে তাঁদের শিক্ষা। কিন্তু, আমাদের দেশের ইতিহাস আজ পর্যন্ত, প্রয়োজনের মধ্যে নয়, পরন্তু মানুষের অন্তরতর গভীর সত্যের মধ্যে মিলনের সাধনাকে বহন করে এসেছে। বাউল হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই; একত্র হয়েছে অথচ কেউ কাউকে আঘাত করে নি। এই মিলনে সভাসমিতির প্রতিষ্ঠা হয় নি; এই মিলনে গান জেগেছে, সেই গানের ভাষা ও সুর অর্ধ অশিক্ষিত মাধুর্যে সরস। এই গানের ভাষায় ও সুরে হিন্দু-মুসলমানের কণ্ঠ মিলেছে; কোরান পুরানে ঝগড়া বাধে নি। এই মিলনেই ভারতের সভ্যতার সত্য পরিচয়, বিবাদে বিরোধে বর্বরতা। বাংলাদেশের গ্রামের গভীর চিত্তে উচ্চ সভ্যতার প্রেরণা ইস্কুল-কলেজের অগোচরে আপনা-আপনি কিরকম কাজ করে এসেছে, হিন্দু মুসলমানের জন্য এক আসন রচনার চেষ্টা করেছে, এই বাউল গানে তারই পরিচয় পাওয়া যায়।

হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দ্বটা শুরু হয়েছিল বৃটিশদের আগমণের পরে। বৃটিশ বেনিয়ারা শুরুতে শাসক মুসলমানদের বদলে হিন্দুদের শাসনকার্যে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে। মুসলমানরা ইংরেজদের শত্রুজ্ঞানে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে শিক্ষা দীক্ষা অর্থ বিত্তে হিন্দুরা মুসলমানদের চেয়ে এগিয়ে যায়। তবে এই এগিয়ে যাওয়াটা কিন্তু উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত হিন্দু সম্প্রদায়েই ঘটে। এদেরকে বাবু হিসাবে গণ্য করা হত। মুসলমানদের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসাবে ইংরেজরা যতটা দায়ী—ততটা মুসলমান সম্প্রদায় নিজেরাও দায়ী। তারা ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। এবং এক্ষেত্রে হিন্দুরাও দায়ী। কারণ ক্রমঅগ্রসরমান হিন্দু সম্প্রদায় অর্থনীতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের সমতা আনার কোনো চেষ্টা করে নি। বরং তারা তাদেরকে সামাজিকভাবেও পিছিয়ে যেতে দিয়েছে। এই অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসমতা থেকেই সাম্প্রদায়িক বিভেদের জন্ম।

রবীন্দ্রনাথ যখন এই সাম্প্রদায়িক বিভেদকে দেখেন তখন কিন্তু নির্মোহভাবে সকলের ছিদ্রটাকে দেখিয়ে দেন। এবং একটা বিষয় স্পষ্ট যে এই বিভেদটা উচ্চবিত্ত হিন্দু ও মধ্যবিত্ত হিন্দু বাবুদের মধ্যেই ছিল। তারা একে পুষ্টি দিয়েছে। অথচ নিম্নবর্গের মানুষের মধ্যে কোনো ভেদ ছিল না। নিম্নবর্গের একজন জোলা মুসলমান এবং একজন নমশুদ্র হিন্দু সমভাবে এই বাবুদের কর্তৃক অপমানিত ও শোষিত হয়েছে। গোরা উপন্যাসের দরিদ্র চাষী ফরু সর্দার যখন জমিদার বা ইজারাদারদের শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তখন তাকে সহযোগিতা করে হিন্দু নাপিত। আবার যখন মুসলমান অধ্যুষিত পাবনা সিরাজগঞ্জে প্রজাবিদ্রোহ হয়েছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিল একজন হিন্দু প্রজা। তাঁর সহযোগী মুসলমান প্রজা। ইতিহাস বলে এই বাবু হিন্দুরা যেমন নিম্নবর্গের হিন্দু-মুসলমানকে শোষণ করেছে—একইভাবে মুসলমান জমিদার-ধনী মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নিম্নবর্গের স্বধর্মের প্রজাদের দিক থেকে।

সেকালে বাংলায় মুসলমান জমিদার শ্রেণীর সংখ্যাও কিন্তু কম ছিল না। তারা এই নিম্নবর্গের মুসলমান প্রজাদেরকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে হিন্দুর বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছে। আবার নিম্নবর্গের হিন্দুদেরকে প্রতিবেশী মুসলমানের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ফেসাদে নামিয়েছে। দাবার গুটি হিসাবে ব্যবহার করেছে। নিম্নবর্গের মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য শিক্ষিত ধনী হিন্দু-মুসলমান কেউ-ই কখনো ভাবেন নি। তাদের জন্য কাজ করেন নি। তারা নিজেদের আখের গোছানোর রাজনীতিটা করেছেন। তাদের এই রাজনীতিটা কখনো ধর্মরক্ষায় ছিল না। ছিল উচ্চবিত্ত হিন্দুদের সঙ্গে উচ্চবিত্তের মুসলমানদের ক্ষমতার লড়াই। প্রতিটা দাঙ্গার ইতিহাসটাও এই রকম। এগুলোর দিকে গভীর দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে--এগুলো ধনীগরীবের লড়াই। শোষক-শোষিতের লড়াই। শোষকদের মধ্যে যেমন সম্প্রীতি আছে, আবার শোষকদের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে লড়াই আছে। ধর্মকে—সম্প্রদায়-বিভেদকে এই শোষক শ্রেণীই নানা কায়দায় ব্যবহার করেছে।

কবি ঠিকই বুঝেছেন যে, ভারতের স্বরাজ-সমস্যার অন্যতম প্রধান বাধা হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সামাজিক-অর্থনৈতিক স্বার্থের বৈষম্য—অর্থাৎ একদিকে সামাজিক ভেদবুদ্ধির পাপ, অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব। এই স্বার্থ প্রধানত উপরতলার মানুষের, এবং দুই পক্ষেরই সাধারণ গ্রামীণ জনতা এই স্বার্থবুদ্ধির শিকার। আর এই খেলায় বাতাস দিয়েছে শাসক ইংরেজের চতুর কুটনীতি।

ব্যাধি ও তার প্রতিকার লেখায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, আমরা বহুশত বৎসর পাশে পাশে থাকিয়া এক খেতের ফল, এক নদীর জল, এক সূর্যের আলো ভোগ করিয়া আসিয়াছি; আমরা এক ভাষায় কথা কই, আমরা একই সুখে দুঃখে মানুষ; তবু প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিবেশীর যে সম্বন্ধ মুনষ্যোচিত., যাহা ধর্মবিহিত, তাহা আমাদের মধ্যে হয় নাই। আমাদের মধ্যে সুদীর্ঘকাল ধরিয়া এমন-একটি পাপ আমরা পোষণ করিয়াছি যে, একত্রে মিলিয়াও আমরা বিচ্ছেদকে ঠেকাইতে পারি নাই। এ পাপকে ঈশ্বরকে কোনোদিনই ক্ষমা করিতে পারিবেন না।

হিন্দু ও মুসলমান নামে একটি লেখায় রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, অন্য দেশের কথা জানি না কিন্তু বাংলাদেশে যে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সৌহার্দ্য ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। বাংলায় হিন্দু অপেক্ষা মুসলমানের সংখ্যা বেশি এবং হিন্দু-মুসলমানে প্রতিবেশিসম্বন্ধ খুব ঘনিষ্ঠ। কিন্তু একজন সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলমান বলিতেছিলেন বাল্যকালে তাঁহারা তাঁহাদের প্রতিবেশী ব্রাহ্মণ পরিবারের সহিত নিতান্ত ভালোভাবে মেশামেশি করিতেন। তাঁহাদের মা-মাসিগণ ঠাকুরানীদের কোলো পিঠে মানুষ হইয়াছেন। কিন্তু আজকাল শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে নূতন হিন্দুয়ানি অকস্মাৎ নারদের ঢেঁকি অবলম্বন করিয়া অবতীর্ণ হইয়াছে। তাঁহারা নবোপার্জিত আর্য অভিমানকে সজারুর শলাকার মতো আপনাদের চারি দিকে কণ্টকিত করিয়া রাখিয়াছেন; কারো কাছে ঘেঁসিবার জো নাই। হঠাৎবাবুর বাবুয়ানার মতো তাঁহাদের হিন্দুয়ানি অত্যন্ত অস্বাভাবিক উগ্রভাবে প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। উপন্যাসে কাগজে পত্রে অকারণে বিধর্মীদের প্রতি কটাক্ষপাত করা হইয়া থাকে। আজকাল অনেক মুসলমানেও বাংলা শিখিতেছেন এবং বাংলা লিখিতেছেন—সুতরাং স্বভাবতই এক পক্ষ হইতে ইট এবং অপর পক্ষ হইতে পাটকেল বর্ষণ হইয়াছে।

তিনি রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন ১৯০৮ সালে পাবনায় অনুষ্ঠিত ভারতীয় কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মিলনীতে—কত শত বৎসর হইয়া গেল, আমরা হিন্দু ও মুসলমান একই দেশমাতার দুই জানুর উপরে বসিয়া একই স্নেহ উপভোগ করিয়াছি, তথাপি আজও আমাদের মিলনে বিঘ্ন ঘটিতেছে। এই দুর্বলতার কারণ যতদিন আছে ততদিন আমাদের দেশের মহৎ কোনো আশাকে সম্পূর্ণ সফল করা সম্ভবপর হইবে না; আমাদের সমস্ত রাষ্ট্রিয় কর্তব্য-পালনই পদে পদে দুরূহ হইতে থাকিবে।

কবি তাঁর দীর্ঘ জীবনে দেখেছেন, বাইরে থেকে এই বিভেদকে উস্কানী দেওয়া হয় বটে, কিন্তু সেটা ব্যাধির লক্ষ্মণ—ব্যধি নয়। ব্যাধিটা রয়েছে আমাদের মধ্যে। সুতরাং ব্যাধির প্রকাশ নিয়ে হাক পাড়লেই হবে না। ব্যাধির কারণটা দুর করতে হবে। ব্যাধির কারণটা দুর করা গেলে ব্যাধির প্রকাশটাও দূরে চলে যাবে। তখন মিলনের জন্য হাপিত্যেশ করা লাগবে না। একই হৃদয়ে হৃদয়ে মিল হবে স্বাভাবিকভাবে। তখন হিন্দু শুধু মুসলমানের সুবিধার্থে, মুসলমান শুধু হিন্দুদের সুবিধার্থে মিলবে না— পরস্পরের অসুবিধায়ও মিলবে। সুখে মিলবে—অসুখে মিলবে। আনন্দে মিলবে—বেদনায়ও মিলবে। এটাই আত্মার মিলন। সুবিধা কথাটাই সব সময় সন্দেহজনক। সুবিধার পরিস্থিতিটা চলে গেলে অসুবিধা চলে আসে। তখন সকল ব্যবস্থাই ফাঁকি বলে মনে হয়।

'হিন্দু মুসলমান' রচনায় এই বিষয়টিই ব্যাখ্যা করে বলেছেন -- আমরা মুসলমানকে যখন আহ্বান করিয়াছি তখন তাহাকে কাজ উদ্ধারের সহায় বলিয়া ডাকিয়াছি আপন বলিয়া ডাকি নাই। যদি কখনো দেখি তাহাকে কাজের জন্য আর দরকার নাই তবে তাহাকে অনাবশ্যক বলিয়া পিছনে ঠেলিতে আমাদের বাধিবে না। তাহাকে যথার্থ আমাদের সঙ্গী বলিয়া অনুভব করি নাই, আনুষাঙ্গিক বলিয়া মানিয়া লইয়াছি। যেখানে দুই পক্ষের মধ্যে অসামঞ্জস্য আছে সেখানে যদি তাহারা শরীক হয়, তবে কেবল ততদিন পর্যন্ত তাহাদের বন্ধন থাকে যতদিন বাহিরের কোনো বাধা অতিক্রমের জন্য তাহাদের একত্র থাকা আবশ্যক হয়—সে আবশ্যকটা অতীত হইলেই ভাগবাঁটোয়ারার বেলায় উভয় পক্ষেই ফাঁকি চলিতে থাকে।

রবীন্দ্রনাথ এই বিভেদের কারণটি আরও সুর্নিদিষ্ট করে উন্মোচন করেছেন-- আমরা গোড়া হইতেই ইংরেজির ইস্কুলে বেশি মনোযোগের সঙ্গে পড়া মুখস্ত করিয়াছি বলিয়া গভর্নমেন্টের চাকরি ও সম্মানের ভাগ মুসলমান ভ্রাতাদের চেয়ে আমাদের অংশে বেশি পড়িয়াছে সন্দেহ নাই। এইরূপে আমাদের মধ্যে একটা পার্থক্য ঘটিয়াছে। এইটুকু কোনোমতে মিটিয়া না গেলে আমাদের ঠিক মনের মিলন হইবে না, আমাদের মাঝখানে একটা অসূয়ার অন্তরাল থাকিয়া যাইবে। মুসলমানেরা যদি যথেষ্ট পরিমাণে পদমান লাভ করিতে থাকেন তবে অবস্থার অসাম্য-বশত জ্ঞাতিদের মধ্যে যে মনোমালিন্য ঘটে তাহা ঘুচিয়া গিয়া আমাদের মধ্যে সমকক্ষতা স্থাপিত হইবে। যে রাজপ্রসাদ এতদিন আমরা ভোগ করিয়াছি আজ প্রচুর পরিমাণে তাহা মুসলমানদের ভাগে পড়ুক, ইহা আমরা যেন সম্পূর্ণ প্রসন্নমনে প্রার্থনা করি। পদ-মানশিক্ষায় তাহারা হিন্দুর সমান হইয়া উটে ইহা হিন্দুদের পক্ষেই মঙ্গলকর।

সমস্যা প্রবন্ধে কবি বলেছেন, ভারতবর্ষের কল্যাণ যদি চাই তাহলে হিন্দু-মুসলমানে কেবল যে মিলিত হতে হবে তা নয়, সমকক্ষ হতে হবে। এই সমকক্ষতা তাল ঠোকা পালোয়ানীর ব্যক্তিগত সমকক্ষতা নয়, উভয় পক্ষের সামাজিক শক্তির সমকক্ষতা।

হিন্দু মুসলমান রচনায় দেখিয়েছেন দিনে দিনে কীভাবে এই ভেদরেখাটি ঘনীভূত হচ্ছে। কবি বলেছেন, এই সমকক্ষতার অভাবে ভেদটা এমন দাঁড়িয়েছে যে ধর্মমতে হিন্দুর বাঁধা প্রবল নয়, আচারে প্রবল, আচারে মুসলমানের বাধা প্রবল নয়, ধর্মমতে প্রবল। একপক্ষের যেদিকে দ্বার খোলা অন্যদিকে সেদিকে দ্বার রুদ্ধ। এরা কী করে মিলবে?

সমস্যা রচনায় তিনি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, আত্মীয়তার দিক থেকে মুসলমান হিন্দুকে চায় না, তাকে কাফের বলে ঠেকিয়ে রাখে; আত্মীয়তার দিক থেকে হিন্দুও মুসলমানকে চায়না, তাকে ম্লেচ্ছ বলে ঠেকিয়ে রাখে। ধর্মই তাদের মানববিশ্বকে সাদা কালো বলে ছক কেটে দুই সুস্পষ্ট ভাগে বিভক্ত করেছে—আত্ম ও পর।

গোরা উপন্যাসে পরেশবাবু নামে একটি চরিত্র বলেছিলেন, একটা বিড়াল পাতের কাছে বসে ভাত খেলে কোনো দোষ হয় না অথচ একজন মানুষ সে ঘরে প্রবেশ করলে ভাত ফেলে দিতে হয়, মানুষের প্রতি এমন আপমান এবং ঘৃণা যে জাতিভেদে জন্মায়, সেটাকে অধর্ম না বলে কী বলব? মানুষকে যারা এমন ভয়ানক অবজ্ঞা করতে পারে তারা কখনোই পৃথিবীতে বড়ো হতে পারে না, অন্যের অবজ্ঞা তাদের সইতে হয়। আরেকটি জায়গায় বলেছেন, ‘আমাদের দেশে মানুষ মানুষকে অসহ্য ঘৃণা করছে এবং তাতে আমাদের সকলকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।‘ হিন্দুতে মুসলমানে বিচ্ছিন্নতা এসেছে। হিন্দুতে-হিন্দুতে বিচ্ছিন্নতা এসেছে। এসেছে মুসলমানে মুসলমানে। আশরাফে আতরাফের সেই জাতিভেদের অসাধারণ উন্মোচন করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ হিন্দু-মুসলমানের মিলনের বিষয়টি তাত্ত্বিকভাবে দেখেন নি। দেখেছেন বাস্তবতার ভিতর থেকে। এক্ষেত্রে তাঁর ভাবনা প্রচলিত হিন্দুত্ববাদিদের সন্তুষ্ট করে না। তাদের বিরুদ্ধেই যায়। তিনি হিন্দুত্বের অন্যতম পরিচায়ক ধূতি চাদরকে জাতীয় পোষাক হিসাবে বাতিল করে দিয়েছেন। বলেছেন ধূতি পাঞ্জাবী আধুনিক নয়। অফিস আদালতের উপযোগী নয়। এর বদলে তিনি জাতীয় পোষাক হিসাবে চাপকানকে বেছে নিয়েছেন। এই চাপকান পরা নিয়ে সেকালে কোনো কোনো হিন্দু আপত্তি তুলেছিলেন। বলেছিলেন চাপকানটা মুসলামানী ড্রেস। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ মিলনের উৎসের মধ্যে থেকেই চাপকানকে থেকে থাকেন। বলেন, মুসলমানদের সহিত বসনভূষণ শিল্পসাহিত্যে আমাদের এমনই ঘনিষ্ট আদানপ্রদান হইয়াছে গেছে যে, উহার মধ্যে কতটা কার, তাহার সীমা নির্ণয় করা কঠিন। চাপকান হিন্দু মুসলমানের মিলিত বস্ত্র। উহা যে সকল পরিবর্তনেরই মধ্য দিয়া বর্তমান আকারে পরিণত হইয়াছে, তাহাতে হিন্দুমুসলমান উভয়ের সহায়তা করিয়াছে। এখনো পশ্চিমে ভিন্ন ভিন্ন রাজাধিকারে চাপকানের অনেক বৈচিত্র্য দেখা যায়, সে-বৈচিত্র্যে যে একমাত্র মুসলমানের কর্তৃত্ব তাহা নহে, তাহার জন্য হিন্দুদেরও স্বাধীনতা আছে।

তিনি এরপরই দিচ্ছেন সঙ্গীতের উদাহরণ। ভারতবর্ষীয় সঙ্গীত মুসলমানেরও বটে হিন্দুরও বটে, উহাতে উভয় জাতীয় গুণীরই হাত আছে। যেমন মুসলমান-রাজ্যপ্রণালীতে হিন্দু মুসলমান উভয়েরই স্বাধীন ঐক্য ছিল।

তাহা না হইয়া যায় না। কারণ মুসলমান ভারতবর্ষের অধিবাসী ছিল। তাহাদের শিল্পবিলাস ও নীতিপদ্ধতির আদর্শ ভারতবর্ষ হইতে সুদূরে থাকিয়া আপন আদিমতা রক্ষা করে নাই এবং মুসলমান যেমন বলের দ্বারা ভারতবর্ষকে আপনার করিয়া লইয়াছিল, ভারতবর্ষও তেমনই স্বভাবের অমোঘ নিয়মে কেবল আপন বিপুলতা আপন প্রাণশক্তির দ্বারা মুসলমানকে আপনার করিয়া লইয়াছিল—চিত্র, স্থাপত্য, বস্ত্রবয়ন, সূচিশিল্প, ধাতুদ্রব্য-নির্মাণ, দণ্ডকার্য, নৃত্য, গীত এবং রাজকার্য, মুসলমানের ইহার কোনোটাই একমাত্র মুসলমান বা হিন্দুর দ্বারা হয় নাই; উভয়ে পাশাপাশি বসিয়া হইয়াছে।

কিন্তু ধীরে ধীরে একটি দ্বন্দ্ব হিন্দু-মুসলমানে হয়েছে। সেটাকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন মনের মিলনের অভাব। ঠিক এইখানে দার্শনিক কারণের মধ্যে তিনি থাকেন না। তিনি দেখেছেন আসলে মনের মিলটা অর্থনৈতিক কারণের উপর নির্ভর করে। এই অর্থনীতিক অসাম্য দূর করতে না পারলে কোনো মিলনপ্রচেষ্টাই ভেতর থেকে হবে না। রবীন্দ্রনাথের এই ধারণাটা যে অসত্য ছিল না তার প্রমাণ হিসাবে দেখা যায় বঙ্গবিভাগের পক্ষে মুসলমানদের সমর্থন চলে যায়। তারা মনে করেছিলেন মুসলমানদের জন্য আলাদা ভুখণ্ড হলে পিছিয়ে পড়া মুসলমান সম্প্রদায় অর্থনীতক বৌদ্ধিক সর্বপ্রকার উন্নতির দিকেই চলে যাবে।

কবি বলেন, মুসলমানের এ কথা অসঙ্গত নহে যে আমি যদি পৃথক থাকিয়াই বড়ো হইতে পারি তবেই তাহাতে আমার লাভ। এই বিভেদকে দূর করার জন্য তিনি অর্থনৈতিক-সামাজিত অসমতা দূর করা পাশাপাশি শিক্ষাকে ফলপ্রসূ মাধ্যম হিসাবে মনে করেন। এ কারণে তিনি পাঠ্যপুস্তকে মুসলমান জীবনের কথা লেখার আহ্বান জানান। স্বধর্মের সদুপদেশ এবং স্বজাতির সাধুদৃষ্টান্ত মুসলমান বালকের পক্ষে একান্ত আবশ্যক, একথা কেহ অস্বীকার করিবেন না। আমরা আরও বলি মুসলমান শাস্ত্র ও সাধুদৃষ্টান্তের সহিত পরিচয় হিন্দু বালকদের শিক্ষার অবশ্যধার্য অঙ্গ হওয়া উচিৎ।

বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান যখন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, পরস্পরের সুখ-দুঃখ নানা সূত্রে বিজড়িত, একের গৃহে অগ্নি লাগিলে অন্যকে যখন জল আনিতে ছুটাছুটি করিতে হয়, তখন শিশুকাল হইতে সকল বিষয়েই পরস্পরের সম্পূর্ণ পরিচয় থাকা চাই। বাঙালি হিন্দুর ছেলে তাহার প্রতিবেশী মুসলমানের শাস্ত্র ও ইতিহাস, এবং মুসলমানের ছেলে তাহার প্রতিবেশী হিন্দু শাস্ত্র ও ইতিহাস অবিকৃতভাবে না জানে তবে সেই অসম্পূর্ণ শিক্ষার দ্বারা তাহারা কেহই আপন জীবনের কর্তব্য ভালো করিয়া পালন করিতে পারিবে না। ...বাংলা বিদ্যালয়ে হিন্দু ছেলের পাঠ্য পুস্তকে তাহার স্বদেশীয় নিকটতম প্রতিবেশী মুসলমানদের কোনো কথা না থাকা অন্যায় এবং অসংগত। (মুসলমান ছাত্রের বাঙ্গালা শিক্ষা, রর।)

জীবনের শেষ দিকে কবি ইরাক ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে বাগদাদ পৌরসভা থেকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন ইতিহাসের গৌরবের যুগে আপনাদের আরবসভ্যতা প্রাচ্য ও প্রতীচ্য জগতের অর্ধেকেরও বেশি জায়গাজুড়ে প্রাধান্য লাভ করেছিল; আজও ভারতবর্ষের মুসলমান অধিবাসীদের আশ্রয় করে আমার দেশের মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে আরবসভ্যতা প্রতিষ্ঠিত আছে। আজ আরবসাগর পার হয়ে আসুক আপনাদের বাণী সার্বজনীন আদর্শ নিয়ে; আপনাদের পুরোহিতরা আসুন তাঁদের বিশ্বাসের আলো নিয়ে; জাতিভেদ, সম্প্রদায়ভেদ ও ধর্মভেদ প্রেমের মধ্যে অতিক্রম করে সকল শ্রেণীর মানুষকে আজ সখ্যের সহযোগিতায় মিলিয়ে দিন তাঁরা।

মানুষের মধ্যে যা-কিছু পবিত্র ও শাশ্বত তারই নামে আজ আমি আপনাদের কাছে আমার প্রার্থনা জানাই, আপনাদের মহানুভব ধর্মপ্রতিষ্ঠাতার নামে আজ আমি আপনাদের অনুরোধ করি—মানুষে মানুষে প্রীতির আদর্শ, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আচার-ব্যবহারগত পার্থক্য নির্বিবাদে সহ্য করার আদর্শ, সহযোগিতার উপর সভ্য জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করবার আদর্শ, প্রতিবেশীর প্রতি ভ্রাত্বভাবের আদর্শ আজ আপনারা সকলের সম্মুখে প্রচার করুন। আমাদের ধর্মসমূহ আজ হিংস্র ভ্রাতৃহত্যার বর্বরতায় কলুষিত, তারই বিষে ভারতের জাতীয় চেতনা জর্জরিত, স্বাধীনতার দিকে ভারতের অভিযান আজ বাধাপ্রাপ্ত। তাই আমার প্রার্থনা, তমসাচ্ছন্ন কুবুদ্ধিজনিত সমস্ত কুসংস্কার ও মোহ অতিক্রম করে আজ আপনাদের কবিদের আপনাদের চিন্তাবীরদের বাণী আমার দুর্ভাগা দেশে প্ররণ করুন, তাকে দেখিয়ে দিন কল্যাণের পথ, দেখিয়ে দিন নৈতিক বিনষ্টি থেকে মুক্তিলাভের পথ।

বন্ধুগণ, আজ আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, স্বদেশের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক অভাব মোচন করাতেই জাতীয় আত্মপ্রকাশের সকল দ্বায়িত্ব শেষ হয় না---দেশকালে সীমানা অতিক্রম করে আপনাদের বাণী পৌঁছানো চাই সেইখানে যেখানে মনুষ্যত্বের নৈতিক সমস্যাগুলো আপনাদের বিচার ও বিবেচনার জন্য অপেক্ষা করে আছে। প্রয়োজন হলে দ্বিধা না করেই সত্যবাক্য শোনাতে হবে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।