দেল্লু রাজাকার কী করিয়া চাল ছাইয়া দিয়া দেলোয়ার সাঈদী হইলেন?

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৭/১২/২০১২ - ১০:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


(পিরোজপুরের ইন্দুরকানীকে দেলোয়ার সাঈদী জিয়ানগর নাম দিয়ে একটা উপজেলা করে। সেই জিয়া নগরের সাউথখালী গ্রামে দেল্লু রাজাকার বাড়ি। সেই বাড়িতে দুটো পুরোনো টিনের ঘর আছে। এই ঘরগুলো একাত্তরে লুটকরা বাড়ি। আর পুরনো রেইনট্রী গাছ আছে বেশ কয়েকটা। আছে একটা পুকুর। এই পুকুরে কিছু লাশ ফেলা হয়েছিল। আমি একটা লেখা লিখেছিলাম এই সব ঘটনা নিয়ে। অনেক বড় হয়ে গেছে। তার একটা অংশ এখানে দিলাম)
------------------------------------------------------------------------------------------------------

একাত্তরের ২৫ মার্চে ঢাকায় রাতে পাকবাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের নামে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করে। পরদিন ২৬ মার্চ বিকেলে এমএনএ এনায়েত হোসেন খান টাউন হল ময়দানে বক্তৃতা করলে বিক্ষুদ্ধ জনতা অদুরে মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে পিরোজপুরের ট্রেজারী ভাঙ্গিয়া ফেলে। অস্ত্রপাতি লুট করে। টাকার বাক্সও তাহাদের হস্তগত হয়। টাকার বাক্স লইয়া এইদিন পাড়েরহাট সড়কস্থ জামালুল হক মনুর সহোদর ভাই ফজলুল হক খোকন পাড়েরহাটের দিকে রওনা করেন। খালে নামিবার সঙ্গে সঙ্গে পিছল মাটিতে খোকন পা হড়কাইয়া নামাজপুরের ভারানি খালের পানিতে পড়িয়া যায়।

টাকার বাক্সটি মাথা হইতে পড়িয়া যায়। পড়িয়া বাক্সটির ডালা খুলিয়া যায়। ইহাতে জিন্নার মস্তকচিহ্ণিত লক্ষ লক্ষ শতকিয়া নোট খলখল করিতে করিতে পানিতে ভাসিতে থাকে। সেই নোট নামাজপুর হইতে বাদুখালি, বাদুখালী হইতে শঙ্করপাশার ঠোঁটায় যাইয়া মল্লিকবাড়ির সামনে ঘুল্লি খায়। সেখানে নাসির মল্লিক নামে মল্লিকবাড়ির এক পোলা ঘাটে বসিয়া দাঁতন করিতেছিল। জিন্নাহ সাহেবের মাথার তসবির খাড়া নোট দেখিয়া সেই নাসির মল্লিক খালে ঝাপাইয়া পড়ে। বলে, আলহামদুল লিল্লাহ। এটি তার খালুজান দেল্লু মিয়ার নিকট হইতে প্রাপ্ত। ্খালু নেসারাবাদ হইতে টাইটেল পাশ করিয়া পাড়েরহাটের টগরা ফেরীঘাটে তাবিজ বিক্রি করেন।

টাকার বাক্সটি নামাজপুরের ভারানী খালে পড়িয়া জাইবার কালে জামালুল হক মনুর সহোদর ভাই খোকন বাক্সের আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া শহীদ হন। তাহার নাম শহীদের খাতায় লেখানো আছে। তাহার নামের পিরোজপুর শহরের একটি সড়কের নাম করণ করা হইয়াছে—শহীদ ফজলুল হক সড়ক। সড়কটি মহিলা কলেজের সামনে। এই সড়ক জামায়াতে ইসলামীর অফিস হইতে শুরু করিয়া সোজাসুজি পাড়েরহাট সড়কে চলিয়া গিয়াছে। তাহারপর চারাখালি নদী। ও পারে ইন্দুরকানি। নট হিন্দুরকানি।

ইন্দুরকানির মাথায় সাউথখালি। সেইখানে চাল ছাইত দেল্লু মিয়া। কারো ঘরের চাল ছাওয়ার দরকার হইলে দেল্লু মিয়া আইয়া পড়িত। কইত, ভাইজান, আমি আপনের চালডা ছাইয়াদি। এই চাল ছাইয়াদি শব্দ হইতেই সাইয়েদী শব্দটির উৎপত্তি। সাইয়েদী শব্দটিকে একটু খাতনা করিয়া রাখা হইয়াছে সাঈদী। ফাইনালি হোসাইন সাঈদী। বিশুবাবু আস্তে করিয়া বলেন, সাঈদী শব্দটা একাত্তরের প্রোডাক্ট নয়। উহা পোস্ট একাত্তর প্রোডাক্ট।

নাসিম আলী বিশুবাবুর সঙ্গে একটু যোগ করেন, পোস্ট মানে আরও ক্লিয়ার কইরা কইলে—ধরেঞ্জে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পরের ঘটনা। এই সাড়ে তিন বছর হ্যার কোনো খবরাখবর জানা যায় না। কথিত আছে জান বাঁচানো ফরজ এই বিবেচনায় এই কালে যশোরের বাঘারপাড়া ইউনিয়নের দহখোলা গ্রামে রওশন আলী নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে লুক্কায়িত ছিল এই সাঈদী। বোঝেন কাণ্ডটা, পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে আর্মি ক্যুতে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হলে সাঈদীকে রংপুর-দিনাজপুর-সিলেট এলাকায় জনসম্মুখে ওয়াজ মাহফিল করতে দেখা যায়। সে এলাকায় একাত্তরের আগে সাঈদীকে কখনো যায় নাই। এই তথ্যটি নোট করিয়া আমরা প্রশ্ন করি, একাত্তরে হোসেন সাইদী কী করে?

নাসিম আলী একটু উসখুস করিয়া জবাব দেন, একাত্তরে সাঈদী দেল্লু নামে রাজাকারি করে। তাহার লগে পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন এজাজের ওঠাবসা। মানুষ ধইরা ঠুস ঠুস করে। আর ফুস ফুস কইরা লাশের গায়ে লাত্থি দিয়া কয়, হারামজাদারা পাকিস্তান আর ভাঙ্গবি? ক ভাঙ্গবি?

এইখানে আসিয়া নাসিম আলী আরেকটি পুরু ফাইল ঝাড়িয়া পুছিয়া আনিলেন। তাহার ভিতর হইতে এক টুকরো কাগজ আমাদেরকে দেখান।

তাহাতে লেখা–
সাক্ষাৎকার
আমি, নাম : মোঃ মাহাবুব আলম হাওলাদার, সাং উদেমপুর, পাড়েরহাট, পিরোজপুর, সজ্ঞানে বিবরণ দিতেছি যে, একাত্তরে পিরোজপুরে বিশাবালী নামে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে গুলি করিয়া হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদারদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার বাহিনী। আর জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীই তাহাকে হত্যার নির্দেশ দেয়। ১৯৭১ সালের ২ জুন পিরোজপুরের উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় হত্যাযজ্ঞ চালায় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। ওই সময়ই সাঈদীর নির্দেশে অসুস্থ বিশাবালীকে একটি পাকুড় গাছের সঙ্গে বাঁধিয়া হত্যা করা হয়।

হত্যা করিয়া জাইবার কালে হঠাৎ দেল্লু রাজাকারের চক্ষে পড়িল—মৃত বিশাবালীর ঘাড়টি বামদিকে কাত হইয়া আছে। সে কিঞ্চিত ভ্রু কুচকাইয়া ছুটিয়া আসিয়া ঘাড়টি ডানে ঘুরাইয়া দিল। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ জনিত কারণে ঘাড়টি আবার বামেই ফিরিয়া আসে। ক্যাপ্টেন এজাজের তাড়া ছিল। তাহাকে এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্মীদিয়া গ্রামেও অপারেশন করিতে হইবে। সেইখান হইতে সৈয়দ আফজালের সঙ্গে শান্তি কমিটির মিটিংএ যোগদান করিতে হইবে। ঢাকায় টিক্কা খানের কাছে ডেইলি রিপোর্ট পাঠাইতে হইবে। আগামীকাল নাজিরপুর অপারেশনের প্লানটি পর্যালোচনা করিতে হইবে। সুতরাং মৃত বিশাবালীর মৃতদেহের কাছে ঘুচুর মুচুর করিতে দেখিয়া ক্যাপ্টেন এজাজ বলিয়া উঠিল, তুম দের কিউ কর রহে হো? হোয়াই লেট? শুনিয়া তাড়াহুড়ায় দেল্লু রাজাকার মৃত বিশাবালীর ঘাড়টি সজোরে ডানে ঘুরাইতে গিয়া মট করিয়া ভাঙিয়া ফেলিল। তখনো বিশাবালীর গা গরম—একেবারে ঠাণ্ডা হয় নাই। ঘাড়টি যখন দেল্লু রাজাকার ভাঙিয়া ফেলিল, তখনো বিশাবালীর গা গরম—ঠাণ্ডা হইতে সময় লাগবে। ঘাড়টি ভাঙিয়া যাইবার কালে অকস্মাৎ মৃত বিশাবালীর বামচক্ষুটি খুলিয়া গিয়াছিল। তাহা আর বন্ধ হয় নাই। তাহার রং লাল। ডানচক্ষুটি বন্ধ। এইবার চূড়ান্তভাবে ঘাড়টি ডানে স্থির হইল। বিড়বিড় করিয়া দেল্লু রাজাকার কহিল—কুফরী লেফট। পাকিস্তানে লেফটিস্টদের জায়গা নাই। ক্যাপ্টেন এজাজ হাঁকিয়া উঠিল, লেফট রাইট। লেফট রাইট।

উমেদপুর গ্রামে বিশাবালীর মৃতদেহটি পাকুড় গাছটিতে সেইভাবে বহুদিন দড়ি বাঁধা অবস্থায়ই দাঁড়াইয়া ছিল। তাহা কেহ খুলিতে সাহস করে নাই। এই হেতু রোদে বৃষ্টিতে বিশাবালীর দেহটি হইতে মাংশ গলিয়া গলিয়া পড়িয়া গিয়াছিল। যখন শুধুমাত্র কঙ্কালটি হাত বাঁধা অবস্থায় পাকুড়গাছটির সহিত খাড়াইয়া ছিল তখন তাহাকে বিশাবালী বলিয়া চিহ্ণিত করা কঠিন হইয়া পড়ে। শুধু কঙ্কালটির ঝুঁকিয়া পড়া মাথার কপাল দেষ্টে একটি গোল ছিদ্র ছিল। আর গলদেশে একটি বেলের আইচার মালা। মালাটি মৃত হইবার পূর্বে বিশাবালীর গলদেশেই ছিল। এই মালাটিই প্রমাণ করে বিশাবালী এলাকায় বিচ্ছেদী গানের গায়ক হিসাবে জনপ্রিয় ছিল। তাহার একটি গান অত্র এলাকায় এখনো লোকের মুখে মুখে ফেরে, পোষাপাখি উইড়া যাবে, একদিন ভাবি নাই তো মনে –ওগো সজনী। গানটির রচয়িতা নড়াইলের কবিয়াল বিজয় সরকার। পাকুড় গাছের নীচে কঙ্কালটি ঘিরিয়া কেবল অমাবশ্যাকালে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকীরা ফিকির ফিকির করিয়া জ্বলিত। সেই হেতু বহুদূর হইতে রাত্রিকালে কঙ্কালটি জ্বলন্ত অবস্থায় দৃষ্টিগোচর হইত। এখনোঅব্দি সেইখানে রাত্রিকালে মনুষ্যআকৃতিরূপ জোনাকীরা জ্বলে আর নেভে। এই হেতু উমেদপুরের লোকজন পাকুড়গাছটি রাত্রিকালে এড়াইয়া চলে।

অত্রস্থলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ নম্বর সেক্টরের একটি সাব সেক্টরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করার দায়িত্বে ছিলাম আমি মোঃ মাহবুবুল আলম। ৭ মে শান্তি কমিটির (পিস কমিটি) সদস্যরা বাগেরহাটে পাকিস্তানী সেনাদের স্বাগত জানায়। সে সময় সাঈদীও সেখানে উপস্থিত ছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের লুট করা মালামাল দেখভালের দায়িত্বও নিয়াছিল সাঈদী। বাগেরহাটে তাঁহার নেতৃত্বেই লুটতরাজ চালানো হয়।

সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীর নাম নাই। স্বাঃ অস্পষ্ট।

এই সাক্ষাৎকারটি কোথাও প্রকাশিত হয় নাই। সাক্ষাৎপ্রদানকারীর স্বাক্ষর আছে—মোঃ মাহাবুব আলম হাওলাদার। এই বিষয়ে ইত্তেফাকের দুই নম্বর স্থানীয় বার্তাপরিবেশক নাসিম আলী বা তাহার সহযোগী জগৎপ্রিয় দাশ বিশুবাবুর কোনো মন্তব্য নাই। আমরা ইহা এক নজর বুলাইবার সঙ্গে সঙ্গে নাসিম আলী কাগজটি হস্তগত করেন এবং ফাইলে দ্রুত সংরক্ষণ করেন। ইহার একটা ফটোকপি লওয়া যাইতে পারে কিনা তাহা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন, দরকার নাই। এইটা সিক্রেট ম্যাটার।
আমরা নোটে উল্লেখিত প্রশ্নটি আবার করি, তাইলে পিরোজপুরের শহীদ দেলোয়ার কে?

শুনিয়া নাসিম আলী বলেন, খাড়ান। জামালুল হক মনুর ভাই ফজলুল হক খোকনের জিগরি দোস্ত হইল এই শহীদ দেলোয়ার। ট্রেজারী ভাঙ্গার খবর পাইয়া লখাকাঠি থেইকা দেলোয়ার খোকনের লগে আইসাছিল ট্রেজারিতে। নামাজপুরের ভারানীখালে যখন পা পিছলাইয়া খোকন শহীদ হইল–ঠিক তার পিছনে আছিল সেই দেলোয়ার। খোকনের লগে লগে সেও পা হড়কাইয়া পড়ছিল। শহীদ দেলোয়ার শ্যাষ ম্যাশ শহীদ না। বাক্স হইতে পতিত জিন্নাসাবের মাথার আঘাতে তার একটি অণ্ডকোষ থেতলাইয়া যায়। এরপর দেলোয়ারের আর খবর পাওয়া যায় নাই। শোনা যায় সে বরিশালে ট্রিটমেন্ট লইছিল। অক্টোবরে আবার তাকে দেখা যায় পাকিস্তানীগো বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করছেন। সাব কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন। সাউথখালিতে দেল্লু রাজাকারের বাড়িও শহীদ দেলোয়ার অভিযান করে। সেখানে কচা নদী। সেইখানে এককালে কুমীর আছিল। লোকে কইত—কুম্ভীর। আর আমরা কই কুমোইর। এই লখাকাঠীর দেলোয়ারের এক বন্ধু শঙ্করপাশার নাসির মল্লিক।

দেল্লু রাজাকার তখন আর সাউথখালি নাই। শঙ্করপাশায় মল্লিকবাড়ি। সেখান হতে পাড়েরহাটের লালাবাবুদের ঘরবাড়ি লুট কইরা মল্লিকবাড়ি ভরে। শহীদ দেলোয়ার মল্লিকবাড়ি থেইকা দেল্লু রাজাকারকে ধইরা পাড়েরহাটের উমেদপুর ভারানী খালের কাছে খাড়া করায়। গ্রামে গ্রামে ঢেড়া পিটাইয়া লোকজন জমা করে। লোকজনের দাবীতে ধৃত দেল্লু রাজাকারকে উমেদপুর ভারানী খাল হইতে পাকুড়গাছ তলায় লাইয়া আসা হয়। পাকুড়তলায় তখনো বিশাবালীর কঙ্কালটি হাতবাঁধা অবস্থায় দাঁড়ানো। সেখানে বিশাবালীর একমাত্র পুত্র নিশাবালীও হুলারহাটের নিকটবর্তী রাণীপুরে অবস্থিত ফুফু-ফুফা লীলাবালী-আরব আলী ফয়িরের বাড়ি হইতে লুকাইয়া চুরাইয়া আসিয়া উপস্থিত ছিল। সেইদিনই তখন বিশাবালীর কঙ্কালটির হাতের বন্ধনটি খুলিয়া ফেলা হয়। খুলিবার কালে অকস্মাৎ করোটিটি ধড় হইতে খসিয়া পড়ে। বাতাসে উড়িয়া আসিয়া বেলের আইচার মালাটি ধৃত দেল্লু রাজাকারের কপালে আসিয়া আঘাত করে। তাহাতে সেই অবস্থায় দেল্লু রাজাকার সুরা ইয়াসিন পড়িয়া বিড়বিড় করিয়া বলে—শালা মালাউন। সেই মালাটি দেখিয়াই নিশাবালী তাহার পিতাকে চিনিতে পারে। এবং সমাধিস্থ করার উদ্দেশ্যে কঙ্কালটি লইয়া তাহাদের পোড়া বাড়ীর দিকে চলিয়া যায়।

পাকুড়গাছটির নিচে সমবেত জনসম্মুখে দেল্লু রাজাকারকে খাড়া করিয়া শহীদ দেলোয়ার কয়, হ্যান্ডস আপ। রাইফেল রেডি। ট্রিগারের চাপ দেবে। ঠিক তক্ষুণি শঙ্করপাশার নাসির মল্লিক দৌড়ায় আইসা হাত চাইপা ধরে। কয়, দোস্ত করতেআছিস কি? আমার খালুজানরে মারস ক্যান? শহীদ দেলোয়ার কয়, রাজাকাররে ছাপা কইরা দিমু। নাসির মল্লিক এইবার তাঁহার কানে কানে কয়, ব্যাডা, রাজাকার থাকলে থাউক গিয়া। আগে হে মোগো খালুজান। তরও খালুজান লাগে। এইখানে আগে পলিটিক্স না—আগে ফ্যামিলি রিলেশন। দ্যাটস ইট। ফাইল বন্ধ। বিশুবাবু একটু যোগ করে বলেন, হ্যার পরে দেল্লু আর দেল্লু নাই। পুরো দস্তুর দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। নেতা অফ জামাতে ইসলামী।

বিশুবাবুর কথা শেষ করিবার পরপরই নাসিম আলীকে আমরা আবার শুধাই, তাইলে দেলোয়ার?
নাসিম আলী এক ঢোক পানি খান। এক সঙ্গে পুরোটা খান না। অর্ধেক খান। একটু গভীর দম লন। তাহার পর বলেন, তাইলে জানা নাই।
–তাইলে কি জানেন আপনি?
–তোতা পাখি জানি। আতাগাছে তোতা পাখি সব জানে। তোতা পাখি আইবে একদিন। হেইডাই জানি। এইটাই খবর। লেটেস্ট খবর। এরপর নাসিম আলী দুলাইন মুখে মুখে রচনা করেন। ঘুরিয়া ঘুরিয়া নাচো—আর বউ নিয়া বাঁচো।

বিশুবাবু লাইন দুটি লিখিয়া লইবার কালে টেবিলে ঠেকা দিয়া তেরছা করিয়া ইত্তেফাকের দুই নম্বর পিরোজপুরের জেলা বার্তা পরিবেশক নাসিম আলী আব্দুল আলীমের একটি বিখ্যাত গান ধরেন–
আতাগাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মউ
আমি ডাকি তুমি কথা
কও না কেন বউ।।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটখাটো তথ্যের ক্রটিপূর্ন উপস্থাপনে মূল রচনা অনেক সময় ওজন হারিয়ে ফেলে। 'আলহামদু-লিল্লাহ' কিন্তু কোন সূরা নয়। লেখার শুরুতেই এ ধরনের ভুল কিছুটা অস্বস্তিকর। এধরনের ডিটেইলস দিতে চাইলে জেনে দেয়া উচিত বলে মনে করি।

ভালো থাকবেন।

- খাইশুই

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

'আলহামদুলিল্লাহ' সূরা নয়? 'সূরা ফাতিহা' সূরা নয়? অ্যাঁ

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অতিথি লেখক এর ছবি

রিটন ভাই, 'আলহামদুলিল্লাহ' সূরা ফাতিহার জনপ্রিয় সিনোনিমাস শব্দ-গুচ্ছ। কিন্তু এ লেখায় 'আলহামদুল লিল্লাহ' সূরা ফাতিহাকে রিপ্রেজেন্ট করছে না। তৃতীয় প্যারায় যদি দেখেন - নাসির মল্লিক মুফতে নোট পাওয়ার আনন্দে এটা ব্যবহার করেছে। খুশিতে সূরা ফাতিহা পাঠ রীতিমতো অপ্রাসঙ্গিক। লেখকও সেটা বোঝাতে চাননি বলেই মনে করি। যাই হোক, ছিদ্রান্বেষনের জন্য দুঃখিত।

লেখককে ধন্যবাদ। "এই সুরাটি তার খালুজান দেল্লু মিয়ার নিকট হইতে প্রাপ্ত।"- এই লাইনের 'সুরা' শব্দটি উনি বাদ দিয়েছেন।

পুতুল এর ছবি

খুশিতে সূরা ফাতিহা পাঠ রীতিমতো অপ্রাসঙ্গিক।

কোন কোন সময়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করা রীতিমতে?

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মুস্তাফিজ এর ছবি

আল্‌হামদুলিল্লাহ আরবী শব্দ। বাংলা অর্থ সকল প্রশংসা সৃষ্টিকর্তার। ইংরেজী Thanks God. আরবী ভাষী মুসলমান, খৃষ্টান, ইহুদী সবাই এটা যত্রতত্র ব্যবহার করে।
সূরাহ্‌ শব্দের অর্থ পরিপূর্ণ, নিখুত (complete and perfect)। কোরানের ১১৪টা (১১৪টাই তো?) ভাগের প্রতিটাই একেকটা সূরাহ্‌। শুধুমাত্র কোরানের ক্ষেত্রেই সূরাহ্‌ শব্দ ব্যবহার হয়না, অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়, যেমন নধর নাদুদ নুদুস গরু ছাগলের সাথেও সূরাহ্‌ শব্দ যায়।

...........................
Every Picture Tells a Story

স্বপ্নচারীর স্বপ্ন এর ছবি

''নধর নাদুদ নুদুস গরু ছাগলের সাথেও সূরাহ্‌ শব্দ যায়'', আপনার লগে যায় না?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।