সীমার নানাবিধ রূপান্তর ( খসরা)

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: সোম, ১৯/১১/২০০৭ - ৮:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সীমারা আমাদের কাছাকাছি থাকে, আমরা নিয়মিত তাদের দেখি, আমাদের সামনেই তাদের নানারকম রুপান্তর ঘটে যায়, আমরা কোনো কোনো রুপান্তরে সক্রিয় অংশগ্রহন করি, কোনোটাকে ঘৃনা করি, কোনোটাকে সাধুবাদ জানাই, তবে একটা সত্য কখনই অস্বীকার করা যায় না, পণ্যবাদী সভ্যতায় সব মানুষই একে একে পণ্যে পরিণত হয় এবং তাদের গায়ে নানরকম মূল্য তালিকা থাকে, তবে পণ্যায়নে সক্রিয় অংশগ্রহন না থাকলেও সীমারা সব সময়ই নিরীক্ষায় উপাত্ত- পরিসংখ্যানে তাদের গণ এবং গণ মানেই আসলে উপেক্ষিত এবং নাগরিক গণনার বাইরের মানুষ- আমরা আদতে যাদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ভালোবাসি কিংবা আমরা যাদের মানুষ বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি পণ্যায়িত হইবার পূর্বে সীমারা কখনই সেই পরিসংখ্যাণের অংশ নয়।

পণ্যায়িত হবার নানান কৌশল কিংবা সীমাদের নানাবিধ রূপান্তরের সরল গল্প বিবৃত করবার একটা প্রচেষ্টা এখানে আছে- তবে এই সীমা আদতে গণের একটা সাধারণ অংশ-

আমাদের সীমা বেড়ে উঠছে-

সীমার জন্মের সাথে সাথে তার মূল্যে ঋণাত্বক চিহ্ন পরে, বাবা বিমর্ষ মুখে ভাবছেন ছেলে হলেই ভালো হতো, শ্যামলা মেয়ে পার করতে ভালোই পয়সা গচ্চা দিতে হবে- বাবার ব্যালেন্স শীটে সীমার নামের পাশে ক্রেডিট লেখা হয় ২০ হাজার।

সীমার শৈশবের স্কুলে অবৈতনিক শিক্ষা, প্রাইমারী লেভেলের বই সব ফ্রি, ধীরে ধীরে সীমার ব্যালেন্স শীটে ডেবিটের অঙ্ক লেখা হয়, ১২ ক্লাশ পর্যন্ত বাৎসরিক ১২০০ টাকা, সব মিলিয়ে ৮৪০০ - ক্লাশের বইয়ের দাম আর শিক্ষকের ট্যুইশন ফি দিয়ে আবারও ক্রেডিটে লেখা হয় ১০ হাজার, শিক্ষকের ডেবিটে অঙ্গক যোগ হতে থাকে, সীমা গান শিখে, সীমা নাচতে চায়, সীমার সামনে অনেক বাধা,
স্কুলে যাওয়ার পথে সীমাকে উত্ত্যক্ত করে উঠতি ছোকরা, সীমা প্রতিবাদী যৌবনের ধ্বস্তাধ্বস্তির উপলক্ষ্য হয়ে যায়- সীমাকে ভালোবাসা জানাতে একান্তে পেতে নানারকম প্রতিযোগিতার পরে সীমার ব্যলেন্স শীটে লেখা হয়- প্রেম একবার এসেছিলো জীবনে,

সীমা হয়তো স্কুলের গন্ডী পেরুতে পারবে না- সীমা হয়তো আল ধরে যাবে বাবার খাবার হাতে- হয়তো রহিম ,করিম জগৎ শ্যামল বাঁশী শোনাবে, তবে সীমার ব্যলেন্স শীটে লেখা হবেই হবে প্রেম একবার এসেছিলো জীবনে-

সীমা কিশোরী তরুনী হবে- অবধারিত- সীমা গ্রাম ছেড়ে শহরেও আসবে হয়তো- সীমার কর্মী হাতের মূল্য বেড়ে যায়- সীমা পরনির্ভরশীল থেকে স্বনির্ভর সীমা হয়ে উঠে- তার হাতের মূল্য মাসপ্রতি ১৬০০ টাকা, আর উপরি সুপারভাইজার আর তত্ত্বাবধায়কের উপরি ভালোবাসা আর লাঞ্ছনা-

সীমা একই সাথে বামপন্থী দিদিদের বিপ্লবী সচেতন শ্রমিক, সীমা মালিকের একান্ত দাসানুদাস, সীমার গোপন কান্না আর অপুষ্টির গল্প আরও বড় সামাজিক আন্দোলনের হাতিয়ার, সীমা রাজনৈতিক পণ্য, একটা ইস্যু, গার্মেন্ট শ্রমিকের বেতন বাড়ান, সীমা গার্মেন্ট ভাঙচুরের উপলক্ষ্য- সীমাকে নির্যাতন করে সুপারভাইজার, সীমা মিছিলের শ্লোগান, সীমাকে অবিধ বরখাস্ত করলো কেনো মালিক পক্ষ জবাব চাই-

সীমা জন্মনিয়ন্ত্রন আপার উপাত্ত আর ব্যালেন্স শীটের নগদ- আজ ২ পাতা ফেমিকন নিয়েছে-

সীমা বিবাহিত, স্বামীর ব্যালেন্স শীটে জমা হলো ৫০০০ নগদ আর একটা রিকশা,

সীমা বাড়তি উপার্জনের ছুতা- সীমা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মালিক- কামাই নাই এই মাসেরটা শোধ দিয়া দে আগামি মাসে নগদ ফেরত দিমু- শালী দিয়া দে, টাকা চাইলেই খ্যাচখ্যাচ খ্যাচখ্যাচ-

সীমার চোখের পানি আর বিলাপ, সীমার স্বনির্ভতার লড়াই, সীমার বিচ্ছিন্নতা, সীমার নির্যাতন, নানারকম এনজিও দিদিমনিদের নানারকম তথ্য উপাত্তের খাতায় নগদে জমা হচ্ছে- সীমা বিভিন্ন ভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে- শ্রমিক, নির্যাতিত, স্বাবলম্বী ,মাতা, কন্যা, স্ত্রী, অপুষ্ট নারী, অপুষ্ট মাতা, বরখাস্ত শ্রমিক, সামাজিক নিগৃহের শিকার, সীমা জামাই ছাড়লে সে বস্তির মেয়েদের বিয়ে টিকে না, সীমা জামাইকে আঁকড়ে ধরলে বস্তির মেয়েরা স্বাধীন হতে ভয় পায়। নির্যাতন সহ্য করেও সংসার করে,

সীমার শেষ বিলাপ হয় ঝড়ে বাড়ি উপড়ে গেলে, সীমার বিলাপ আর চোখের পানি যায় ১২টা টিভয় চ্যানেলে, কেউ বলে ফেক- পুরাটাই মিডিয়া ক্যু, আসলে এমনটা ঘটে নি, রাজনৈতিক দলের ভেতরে সংঘর্ষ চলে মোটামুটি, ওটা আমাদের দুঃস্থ নারী শ্রমিক কল্যান সমিতির কর্মী, ওটা মিথ্যা বানোয়াট- ফটোগ্রাফিক জোচ্চুরি, সরকারের ভাবমুর্তি নষ্টের চক্রান্ত- আসলে ও নিজেই ঘড়ে ভেঙে সরকারের নামে দুর্নাম ছড়াতে চায়-

সীমার ভিডিও ফুটেজ জমা হয় ইউ টিউবে-

সীমার আহাজারি আর সীমার চোখের জল বৈদেশিক সাহায্য টেনে আনে

সীমার ত্রান নেওয়া বিধ্বস্ত চেহারা হয় রাজনৈতইক বিজ্ঞাপন, এবার ত্রাণ বিনিময়ে কোনো দুর্নীতি হয় নি সাংবাদিক ভাইয়েরা দেখেন আপনারা শুধু আমাদের খারাপনিয়েই লেখেন, এই দেখেন সীমা হাতে ৫ কেজি চাল আর তেলের প্যাকেট-

সীমা আমাদের উন্নয়ন আর সততার বিজ্ঞাপন অবশেষে


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এরকমই।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তাই তো ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।