ইরিটেটিংকা-

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০৪/২০০৮ - ৮:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত অপরাধ, যেসব অপরাধের জন্য অপরাধীকে দন্ড প্রদানের বিধান আছে, সেসব আইনের ধারায়- ২৯০ থেকে ২৯৪ নং ধারাগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখেই বলছি,
প্রকাশ্যে নোংরামি করা , স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞার পরেও নোংরামি অব্যহত রাখা, অশ্লীল ছবি কিংবা বই বিপনন এবং তরুনদের কাছে সেসব বিক্রী করা এবং অশ্লীল সংগীত রচনা এবং যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যায় এমন যেকোনো অরুচিকর কাজ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। ক্ষেত্র বিশেষে অর্থদন্ড, বারংবার সংশোধন অযোগ্য ভাবে জারি রাখার কারণে ২ থেকে ৭ বছরের জেল হতে পারে।
এই বাংলাদেশের দন্ডবিধির অশ্লীলতা বিরোধি আইন, সম্ভবত অশালীন ছবি নির্মাণ, যেটা পর্ণো কিংবা বৃষ্টিভেজা গানের চিত্রায়ন যেভাবেই হোক না কেনো- একই আইনের ভিত্তিতে অপরাধ বিবেচিত হবে।
এই পর্ণো ছবি নির্মাণ যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এটা যেমন একটা আইনের বিধান, তেমন ভাবেই এখনও যেহেতু বাংলাদেশে তেমনভাবে বয়সজনিত রেটিং প্রদানের বিধান নেই , তাই এখানে সেভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যই নির্মিত ছবি বানানোর তাগিদ নেই। বাংলাদেশে ছবির ধারায় সম্ভবত ২টা বয়স শ্রেণী আছে- সবার জন্য - কিংবা পারিবারিক ছবি- আর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছবি- ইউ এবং এ- শিশুতোষ ছবি কিংবা কিশোরদের ছবির আলাদা রেটিং নেই।

বিনোদনের বয়স্কজনোচিত রুচির চাহিদা পুরণের কাজটা বাংলা ভাষায় হচ্ছে না এমন নয়। বিভিন্ন হোটেলে চিত্রায়িত হচ্ছে বাংলা এডাল্ট ছবি। হিডেম ক্যাম ভিডওর রমরমা বাজার। এমন কি এ কাজের জন্য পয়সাও পাওয়া যায়। অর্থ্যাৎ শুধুমাত্র নিজস্ব যৌন কামনা পুরণ এবং এটা সবাইকে জানানোর মতো বিকৃতির বাইরেও কিছু মানুষ আছে যারা এসবের ক্রেতা এবং এসবের বাণিজ্যিক বিপণনের কাজটা করছেন।
কাজটা হচ্ছে, এবং বাংলাদেশ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। গণসঙ্গম জাতীয় ছবি নির্মিত হচ্ছে, সিনেমার দর্শকদের জন্য আগে যেসব ছবি নির্মিত হয়েছে ৩৫ মিমি ফিল্ম ফরম্যাটে এসবের বাইরে এখন ছবি নির্মিত হচ্ছে ডিজিট্যাল ক্যামেরায়।অর্থ্যাৎ এই ছবি নির্মাণের কাজটাতে অনেকেই জড়িয়ে পড়েছে। দুঃখ একটাই বাংলাদেশের দর্শকদের রুচি এবং সাম্ভাব্য ক্রেতাদের দিয়ে নজর দিয়ে এসব ছবির নায়িকারা আর যেমনই হোক না কৃশাঙ্গী হয় না মোটেও। স্থুলাঙ্গী এবং বিশাল স্তনের অধিকারি এসব ছবির নায়িকাদের দেখে কখনই মনে হয় না বাংলাদেশের অরর্ধেকের বেশী মানুষ অপুষ্টিতে ভুগে।
এসব ছবির নায়িকার সাথে নায়কের পার্থক্যটা খুব চোখে লাগে। মনে হয় সজনে কাঠের লাঙল দিয়ে হাল চাষ হচ্ছে।

বাংলা ছবিতে প্রথম দিকের অপটু চিত্রায়নের ধর্ষণ দৃশ্যের মাত্রা বদলে যখন ধর্ষণকে ব্যবসায়িক ভাবে চিত্রায়িত করা শুরু হলো, তখন সেটা মানুষের ধর্ষণপ্রবনতাকে হয়তো তৃপ্ত করতো।
তবে ধর্ষণের সময়ে ছিড়ে ফেলা ব্লাউজের পাশ থেকে বের হয়ে যাওয়া অন্তর্বাসের দৃশ্যও পানসে হয়ে আসলো। এরপর সম্পূর্ন অন্তর্বাস- এর পরে অন্তর্বাসের ফাক দিয়ে বের হয়ে আসা স্তন, এবং সেটা উন্মুক্ত থাকবার সময়ের পরিমাণ বদলালো।
পরবর্তীতে সম্ভবত সামাজিক দায়িত্ববোধের কারণেই এসব ছবির চিত্রগ্রাহকেরা এমন ধর্ষণ দৃশ্য চিত্রায়ন বন্ধ করে দিলো।

এরপরে দেখা গেলো গোসলের দৃশ্য। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ছবির মাঝে নায়িকা পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ছে। অন্তর্বাস বিহীন তার দেহবল্লরী আবছা দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকে নাগরিক হয়ে ওঠা গোসলের দৃশ্য- গ্রামের দৃশ্য হলে নায়িকা কলসীর পানি গায়ে ঢালছে- আর শহরের দৃশ্যে নায়িকা শাওয়ারের জলে লুণ্ঠিত হচ্ছে- সাবান রগড়ে তার গোসলের দৃশ্য দেখে বুঝতে পারি কয়লা হাজার ধুলেও ময়লা যাবে না- অনেক সাবান ঘষেও আসলে শরীর থেকে কলুষতা মুছে ফেলতো পারলো না এসব নায়িকা।
এমন দৃশ্য যে বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয় নি এমন না, প্রতিটা সৈন্দর্য্য সাবানের বিজ্ঞাপনে মডেলের গোসলের দৃশ্য ছিলো, সাবানের ফেনার আড়াল, ঝর্ণার নীচে লাফালাফি- অনেক ভাবেই সাবান ডলার দৃশ্য ছিলো, বিজ্ঞাপনের সংক্ষিপ্ত সময়ে ৩ সেকেন্ডের একটা দৃশ্য সুশ্রী মডেলের গায়ের সাবানের মোড়কটা সবার সামনে পৌছে দেওয়াটাই মূখ্য ছিলো বলেই মাথায় টাওয়েল বেঁধে মডেল হাসিমুখে আড় চোখে তাকিয়ে বলতো- ------- সৈন্দর্য্য সাবান- নজর কাড়া সৈন্দর্য্যের জন্য।

তবে বাংলা ছবির স্থুলাকায় নায়িকা গায়ে কি সাবান মাখে জানা যায় না- সাবানের ফেনাও হয়- এবং স্তনবেতো রুগীর মতোই দলাই মলাই শেষে আর কোনো ধারাবাহিকতা থাকে না এসব দৃশ্যে-

নায়িকার সাহস বাড়ে- নায়িকা বিবস্ত্র হয়- এবং এসবের মাত্রা বাড়তে বাড়তে একটা সময়ে আসলো পরিপূর্ণ রঙ্গীন সঙ্গম দৃশ্য নির্মানের ঝোঁক। প্রাথমিক পর্যায়ের সঙ্গম দৃশ্য নির্মাণের সাথে হোটেলের পরোটা বানানোর পার্থক্য ছিলো না তেমন। ময়দার মতো মর্দন করছে কৃশকায় হ্যাংলা এক যুবক, যাদের পরণে টাইটস। নায়িকার শরীর মাশাল্লাহ, নায়কের শরীর কৃশকায় এবং নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরতে পারে না এমন নায়িকার শরীরের বেড়।

এসবের পরে বর্তমানের ডিজিট্যাল ভিডিও ফরম্যাটে নির্মিত পর্ণো ছবি- অনেকটা পথ পাড় হয়ে এসেছে এসব ছবি। তবে নায়িকা এবং নায়কের দেহের মাপের পার্থক্য ঘোচাতে পারে নি এখনও।
বাংলাদেশের তথাকথিত আর্ট ফিল্মে অনাবশ্যক সঙ্গম দৃশ্যের উপস্থিতি কেনো এটা জানি না। এটা ছবির প্রয়োজনে এসেছে এমন মন্তব্য করা যাবে না। পোকা মাকড়ের ঘরবসতি ছবিতে ববিতা এবং আলমগীরের রাত্রিবাসের দৃশ্যটার প্রয়োজনীয়তা বুঝে উঠতে পারি নি এখনও- অন্য জীবনের তমালিকার দৃশ্যটাও ঠিক কোন প্রয়োজন মেটালো জানি না।

তবে সেসব অনাবশ্যক দৃশ্যেও খানিকটা সুস্থতা ছিলো চিত্রায়নে!!! তবে বি গ্রেড নায়িকাদের দিয়ে নির্মিত মূল ধারার ছবিতে তেমন সুস্থতা নেই- একেবারে নগ্ন মেয়েদের দেখে অশালীন ভাববো এমন নিরস মানুষ হতে পারি নি। তবে উপস্থাপন ভঙ্গিটাকে আমার কদর্য লেগেছে।
ইরোটিকার মূল লক্ষ্য ছিলো মানুষের ভেতরের অদম্য যৌনকামনাকে জাগিয়ে তোলা। ইরোটিক আর্টের সূচনা থেকেই এটা নানাবিধ বাধার মুখে পড়লেও চলচিত্রের সূচনা থেকেই ইরোটিকা নির্মিত হচ্ছে। শনির্বাক চলচিত্রের যুগেও ইরোটিকা নির্মিত হয়েছে- যখন টকিজ হলো তখনও ইরোটিকা নির্মিত হয়েছে।
সেগুলো মানুষের যৌন কামনা জাগাতে পেরেছে কিংবা মানুষকে যৌনসুরসুরি দিতে সফল হয়েছে। সামাজিক নৈতিকতার প্রশ্নে এটা কে অশালীন বলা হবে? এটা অশালীন নয় নেহায়েত প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের চাহিদাকেই পুরণ করছে- এটা নিয়ে বিতর্ক করা যায় হয়তো- তবে বাংলাদেশের ছবিগুলো অশ্লীল এই অভিযোগ করবো না। এগুলোকে কদর্যতার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে বড়জোর।
এমন কদর্য চিত্রায়ন এবং উপস্থাপন দেখে কেউ আনন্দিত হতে পারে না। আমরা যতই রিকশাওয়ালা শ্রেনীর দর্শকের রুচি নিয়ে প্রশ্ন তুলি- কোনো স্বাভাবিক মানুষ বারংবার এ দৃশ্যের সামনে নিজেকে আনবে না।
সুতরাং একই মাপের দৃশ্য না রেখে কনটেন্ট বদল, ফ্রেমের বদল, অনেক করেও সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়েছে বি গ্রেডের নায়িকা নায়কেরা।সুস্থ ধারার ছবি হৃদয়ের কথায় যখন পুর্ণিমা ছুটে আসছে ব্রীজের উপর দিয়ে সে দৃশ্য দেখেও কদর্য লেগেছে ।এটা আমার নিজের অবস্থান।

বাংলাদেশে অশালীনতা- কদর্যতা, নগ্নতা এবং সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করবার দায়ে অভিযুক্ত ছবিগুলো বিচার করলে দেখা যাবে অনাবশ্যক নগ্নতা নয় বরং অধিকাংশ ছবি কদর্যতার দায়ে অভিযুক্ত হবে। এসব দৃশ্য ইরোটিক নয়- ইরিটেটিং- বাংলাদেশের অশ্লীল ছবি ইরোটিক নয় বরং ইরিটেটিং।

ছবি নির্মাণের অশ্লীলতার বাইরে গিয়ে যদি ভাবি সঙ্গীতের অশ্লীলতা নিয়ে তখন একটু ঝামেলায় পড়ে যাই। সঙ্গীত অশ্লীল হয় কিভাবে, ঠিক শব্দ জনিত কারণে সংগীত অশ্লীল হবে, নেপথ্য বাজনার জন্য- বর্তমানে প্রতিটা গানের সিডির সাথেই সেই গানের ভিডও বিক্রী হয়- জুটি বেধে ১২০ টাকা। গানগুলো কথার বিচারে অশ্লীল না হলেও চিত্রায়নে অশ্লীল হতে পারে। বাংলা ছবির গান এবং চিত্রায়ন উভয়েই কদর্য- রুচিহীন- অশ্লীল বিবেচিত হতে পারে- কিন্তু আমাদের ক্যাসেট সিডির গায়িকাদের অনেকের গান নিয়ে এই অভিযোগ খাটবে না।
এর ভেতরেই ফুয়াদের গান শুনলাম।
দুই এক্কে দুই- কানিজ সুবর্ণা, পুণম আর কে যেনো গেয়েছে- গানের কথা এবং গানের উপস্থাপন শুনেছি- ফুয়াদের সংগীত প্রতিভার মুগ্ধ অভিভুত শ্রোতা নই আমি- আমার কাছে ফুয়াদের অপরিসীম দক্ষতাকে ভালো লাগে-
বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবির হোগা মেরে সাফা করে দিলো কিন্তু কোনো বাপের ব্যাটা এসে বিদ্রোহের ছিটেফোটা দেখাতে পারলো না। বিদ্রোহী নজরুল কিছুই বলতে পারে নি- বেচারা নজরুল হয়তো মসজিদের পাশে শুয়ে এখনও ব্যাথায় কাতর-

যৈবতী কন্য যখন "জলতোরঙ্গ" নিয়ে আহবান জানায় সেটাতে সায় দেওয়াই আশু কর্তব্য- মিলার গানের গলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুর্খ সাজতে চাই না। তবে তার গাওয়া শুকনো পাতার নুপুর পায়ে গানটা শুনে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছে- যৌথ প্রযোজনায় সুন্দর গানের সর্বনাশ করবার ক্ষমতা ফুয়াদ- মিলা জুটির আছে। এবং সমবেদনা অন্যসব অপরিচিত কবি- গায়ক- গায়িকা- যাদের গাওয়া- লেখা গান রিমিক্সিংয়ের জোয়ারে ধর্ষিত হতে যাচ্ছে।
মিলার গান নিয়ে বিস্তারিত লেখার আগ্রহ ছিলো- তবে সে অবসর অন্য সময়ে হবে। আপাতত নিজেই ভাবি ফৌজদারি দন্ডবিধির ২৯০ থেকে ২৯৪ ধারায় ফুয়াদের গান পড়বে কি না? কিংবা নতুন কোনো ধারা এনে মৃত মানুষের সৃষ্টিকে ধর্ষণের দায়ে কোনো মামলা করা যায় কি না এই "ফাকিং মিউজিক সেনশেসনের।"


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন।তবে মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেও মানুষ দেখবে কিনা কে জানে?
-নিরিবিলি

রাতুল এর ছবি

আপনার বাংলা গান নিয়া এক পশলা বিতর্ক তো হয়ে গেছে। তাও আবার লেখেন।

উদাস এর ছবি

আপনার লেখার আমি সবসময়েই ভক্ত। তবে আপনার লেখাতও কিন্তু তথাকথিত আর্ট ফিল্মের অনাবশ্যক সঙ্গম দৃশ্যের মতো অনাবশ্যক অশ্লীল শব্দের ব্যবহার দেখে মাঝে মাঝে একটু হোচট খাই। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত, হয়তো আপনার কথাগুলো বোঝানোর জন্য শব্দগুলোর প্রয়োজন আছে। মিলার কথা আর কি বলবো, সেদিন ডালাস এর বৈশাখি মেলাতও গিয়ে দেখলাম জোরসে মিলা চলছে, মনে হয় রবীন্দ্র আর নজরুলের পরেই (নাকি আগে) এখন বাংলা সংস্কৃতিতে মিলা আর ফুয়াদের অবস্থান!

রাতুল এর ছবি

প্রিয় রাসেল ভাই যে ফুয়াদ মিলারে এত অভক্তি করেন, একটা জরিপ চালায়া দেখেন আইজ কালকের পোলাপানের মাঝে তারা নজরুলের চেয়ে অনেক বেশী জনপ্রিয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।