অভিভাবকহীন সমাজ

রাকিব হাসনাত সুমন এর ছবি
লিখেছেন রাকিব হাসনাত সুমন (তারিখ: রবি, ০৬/০৪/২০০৮ - ৮:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সমাজে কিছু বিশিষ্ট জন থাকেন। এই বিশিষ্ট জনেরা সাধারনত চিহ্নিত হন তাদের দীর্ঘ কর্মময় জীবন অথবা সমাজসেবামূলক কাজের নিবিষ্ট থাকার মধ্য দিয়ে। সমাজের সংকটকালীন মূহুর্তগুলোতে কিংবা সমাজের কোন অধিবাসী তাদের প্রয়োজনে এ বিশিষ্টজনদের দ্বারস্থ হন। বাংলাদেশের দীর্ঘ সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রমান করে এসব বিশিষ্টজনেরা সময়ের বিবর্তনে পরিনত হন অভিভাবকে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে অনেক।

কখনো মত আবার কখনো চলার পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও তাই বাংলার গণমানুষের অভিভাবক মাওলানা ভাসানী বাংলার গণমানুষের নেতা শেখ মুজিবকে সমর্থন করে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে বলতে পেরেছিলেন -- " মুজিবের দাবি মেনে নেন। "

কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ ? এই বাংলাদেশের কি তার কোন প্রতিচ্ছবি আছে ? স্বাধীন দেশের স্বাধীন সেনাবাহিনী একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেনাপ্রধান এর পদটি তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। এই পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ আমরা দেখেছি অবসরের পর সেনাপ্রধান এমপি হতে ঢুকে যান রাজনৈতিক দলে। বিরোধী দলে হলে তাকেও খেতে হয় পুলিশের গুতো। আবার সরকারী দলে হলে তাকে করতে হয় দলীয় প্রধানের বন্দনা... বিনয়ী হতে হয় দলের অপদার্থ কালোবাজারী কিংবা দুর্বৃত্ত নেতার প্রতি। কিন্তু এতে করে তিনি যে তার একসময়ের গৌরবময় পদটিকে অসন্মান করছেন সেটি তার বিবেক তাকে বুঝাতে পারেনা।
অথচ একজন সাবেক সেনাপ্রধান নির্দ্বিধায় হতে পারেন জাতির অভিভাবক। ক্রান্তিলগ্নে যিনি সবকিছু ফেলে মানুষের পার্শ্বে দাঁড়াবেন।
সত্যিই বিচিত্র এই বাংলাদেশ। এখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি চান সংসদের সদস্য হতে। অথচ এই সাবেক রাষ্ট্রপতিরাও হতে পারেন দেশবাসীর কাছে অভিভাবক তুল্য। যারা জাতির সংকটময় মূহুর্তে নিজেকে নিংড়ে দিবেন জাতির স্বার্থে।
একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে কাজের পরও তার লোভ জাগে এমপি হতে। কারন চাকুরী জীবনের অতিরিক্ত প্রাপ্তির অভ্যাস তিনি ত্যাগ করতে পারেননা। অথচ একজন সাবেক আমলা কিংবা সচিব কত সহজেই মানুষের প্রত্যাশাকে ধারন করে অভিভাবকে পরিনত হতে পারেন শুধুমাত্র তার ব্যক্তিত্ব ও দেশপ্রেম দ্বারা সমসাময়িক কালে ড. আকবর আলী খানই তার প্রমান।

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কিংবা অধ্যাপক অথবা সাবেক বিচারপতি ......... তাদেরকে কেন দল করতে হবে... কেন এমপি হতে হবে ?

সাবেক সেনাপ্রধান, সাবেক সচিব, সাবেক ভিসি, সাবেক অধ্যাপক, সাবেক আইজিপি, সাবেক রাষ্ট্রপতি কিংবা পত্রিকার সাবেক ও বর্তমান সম্পাদক -- এরা সবাই যদি দলীয় নেতায় পরিনত হয়ে যান ... তাহলে দেশের অভিভাবক হবেন কারা ?

এভাবে অভিভাবকশূণ্য একটি দেশ কতদিন তার স্বাতন্ত্রতা ধরে রাখতে পারে ?কিংবা অভিভাবক হীন একটি দেশের পক্ষে কি লক্ষ্য অর্জনের দুরুহ পথ অতিক্রম করা সম্ভব ??


মন্তব্য

শিক্ষানবিস এর ছবি

বাংলাদেশ আসলে অভিভাবক ছাড়াই এগোচ্ছে। এজন্যই তাৎক্ষণিক কোন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। সময়ের স্রোতে যতটুকু যেতেই হয়, ততটুকুই যেতে পারছে এই দেশ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কে বলেছে অভিভাবক নেই?
কতো রকম ঈশ্বর ছড়ি ঘোরাচ্ছে, ভাত খাবো নাকি আলু খাবো নাকি বালু খাবো।
ধন্য ধন্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।