মহাপ্রলয়ের পর

সংসপ্তক এর ছবি
লিখেছেন সংসপ্তক (তারিখ: শুক্র, ০২/০৭/২০১০ - ৭:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আজকের সমুদ্রটা অসাধারণ সুন্দর। উজ্জ্বল, ঝকঝকে, ময়ূরকণ্ঠী নীল রঙের স্রোতের চূড়ায় সোনালী আলোর কোমল স্পর্শে অপূর্ব এক গোধূলি লগ্ন। আমি প্রায় ই এই সময় টা আমার বাড়ির ছাদে এসে বসে থাকি। সূর্যাস্তের খানিকটা সময় আগে থেকে, গোধূলির আবির পশ্চিমাকাশে যতক্ষণ না মিলে মিশে ধূসর হয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আমি এই ষোল তালা বাড়ির ছাদে কার্নিশে পা ঝুলিয়ে বসে থাকি। ঠাণ্ডা বাতাস আর গাংচিলের ডাক শুনতে শুনতে কখনো কখনো একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলি। আমার লাইটারটা আমার বন্ধুদের খুব ঈর্ষার বস্তু। ধাতব, চকচকে লাইটারটার গায়ে খোদাই করে ইংরেজিতে লেখা 'zippo'। আমার দাদাভাইয়ের শেষ স্মৃতিচিহ্ন। আমার জন্মের পর থেকেই তার কাছে মানুষ হয়েছি আমি। আমার সপ্তম জন্মদিনের মাত্র তিনদিন পর তিনিও মারা জান। সেই থেকে আমি এই ষোল তালা বাড়ির একজন। প্রায় আট বছর হয়ে গেলো।

সরকারি অনেক গুলো অনাথাশ্রমের একটি এটি। এই বাড়িতে আমার মত আরও তেরো শো কিশোর-কিশোরী আছে। বেশিরভাগেরই বাবা-মাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে সমুদ্র; হয় ঘূর্ণিঝড়, নয়তো জলোচ্ছ্বাস। কারো ২০৭৭ এ, কারো '৭৯ তে, কারো '৮৪, কারো হয়তোবা '৯১ এ। আমি আমার বাবা-মা কে হারিয়েছি ২০৮১ র মহাপ্রলয়ে। দাদাভাইয়ের মুখে শুনেছি তাঁরা দুজনেই ঘুমন্ত অবস্থায় প্রবল জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ঘরের ভেতরই ডুবে মারা জান। যদিও সামুদ্রিক ঝড়, দুর্যোগ প্রায় প্রতি বছর ই হয়, '৮১ র প্রলয়ের মত প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও অদ্বিতীয়।
তিনদিন ব্যাপী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে প্রায় ৩২ লক্ষ লোক প্রাণ হারায়। আমি তখন তিন বছরের শিশু। না মায়ের মুখ, না বাবার কণ্ঠস্বর, কিছুই মনে পড়ে না আমার।

আমার দাদাভাইয়ের মুখেই শুনেছিলাম, আগে নাকি সমুদ্র আরও অনেক দূরে ছিল । এখান থেকে সমুদ্র পর্যন্ত ছিল বিস্তীর্ণ জনপদ। সুবিশাল অট্টালিকা ছিল, সোনালী ধানের মাঠ ছিল, আকাশ ছুঁতে চাওয়া অরণ্য ছিল। পুরনো বই-পত্র থেকে ধূলি ধূসরিত বর্ণনায় উঠে আসে হারিয়ে যাওয়া সেই সব জনপদের কথা, উঠে আসে কিছু অজানা নাম – খুলনা, বরগুনা, বাগেরহাট, হাতিয়া, সাতক্ষীরা! আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ে যাই সুন্দরবনের কথা, সুন্দরবনের বাঘ একসময় পৃথিবী বিখ্যাত ছিল। ছবি দেখে বিশ্বাস হতে চায় না, এত অপূর্ব একটা প্রাণী সত্যি সত্যি ঘুরে বেড়াত বাংলাদেশে । যশোর নামে যে সুবিস্তীর্ণ লোনা জলাভূমিতে সাপ,কুমির আর বিষাক্ত ক্লোরিন বাষ্পে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, তা একসময় একটি আধুনিক শহর ছিল!

একটানে সিগারেটের শেষ অংশটুকু ছাই করে আমি উঠে দাঁড়াই। আজকে আমার খুব কষ্টের দিন। জাফর কালকে চলে যাবে। এই অনাথাশ্রমে আমার একমাত্র বন্ধু জাফর। সরকারি জেলার এক দম্পতি তাকে দত্তক নিয়েছে, দানবের মত বিশাল দুই বিদেশী। ওর ভাগ্যে অনেকেই ঈর্ষান্বিত। সরকারি জেলা মানেই ভালো খাবার, সবসময় বিদ্যুৎ, হলোগ্রাম চলচ্চিত্র, এমন কি খেলার মাঠ! দুবেলা নোনা মাছ সিদ্ধ,ভর্তা,ভাজা খেতে খেতে মুখ হেজে যাওয়া সাধারণ একজন নাগরিকের কাছে এগুলো প্রায় স্বপ্নের মত।

সাধারণ মানুষ খুব সহজে সরকারি এলাকায় যেতে পারে না। অনুমতিপত্র, কোয়ারান্টাইন, নিরাপত্তা স্ক্যান – হাজার ঝামেলা । বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শহর ওটা, ভয়ঙ্করতম জলোচ্ছ্বাস থেকেও নিরাপদ।

২০৬৫ সালে খাদ্য ও স্বাদু পানির সংকট চূড়ান্ত রূপ নিলে নির্বাচিত সরকার তার সমাধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। পরবর্তী দুই বছরে একাধিক রাষ্ট্রনায়ক ক্ষমতা দখল করে শান্তি বজায় রাখার নামে পাইকারি গণহত্যা চালানো শুরু করার পর আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী বাংলাদেশ শাসনের ভার নেয়। সরকারি জেলা তাদেরই সৃষ্টি।

জাফর কাল থেকে তাদেরই একজন হয়ে যাবে। বড় হয়ে সরকারি মাছধরা জাহাজে কামলা খাটার ভাগ্য থেকে ও বেঁচে যাবে।সত্যিকারের সুন্দর জীবন হবে ওর। প্রায় নিশ্চিত হয়ে বলা যায়, আমার সাথে ওর আর দেখা হবে না। আমি আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকি। বারো তলায় আমার জন্য নির্দিষ্ট হলঘরটির দিকে।

হলুদ রঙের বিশাল ঘরটিতে আমরা প্রায় পঞ্চাশ জন থাকি। পঁচিশ টা দোতলা খাট আর পাঁচটা জানালা, ঘুমের আগেও তাই ঘুম ভাঙ্গার পরেও তাই। এই আমার ঠিকানা।

আমাকে দেখেই জাফর ছুটে এলো।

'কি রে, কয়টা বাজে খেয়াল আছে? আজকে যাবি না?'

'দাঁড়া, বের হবো। সুপার ঘুমাতে যাক না। তার আগে কি?'

আমাদের পঞ্চাশজনের দেখভালের জন্য একজন সরকারি সুপারিন্টেনডেন্ট আছে। মানুষ খারাপ না, তবে নিয়ম-কানুনের বেলায় খুব কঠোর। মার আমি প্রায়ই খাই, কিন্তু অকারণে মার খাওয়ার কোন ইচ্ছাই আমার নেই।

আজকে আমাদের কামট শিকারে যাবার কথা। আমাদের এই এলাকায় হাঙ্গরের সংখ্যা একটু বেশি। জোয়ারের সময় মাঝে মাঝেই দল বেঁধে ঢুকে পড়ে খাবারের খোঁজে। বাঘা, হাতুরিমাথা,কামট আর নীল হাঙ্গরের কোন অভাব নেই আমাদের এই অঞ্চলে। কামটগুলো সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দেয়। আকারে ছোট বলে একবারে হাঁটু পানিতেও চলে আসতে পারে। অনেকেরই হাত বা পায়ের আঙ্গুল কেটে নিয়ে গেছে হারামি গুলা।

বিশেষ করে এই বর্ষাকালে, যখন সবগুলো উপকূলীয় বাড়ির দোতলা পর্যন্ত জোয়ারের সময় পানি চলে আসে, হাঙ্গরের উৎপাতে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। বড় বড় ডোরাকাটা বাঘা হাঙ্গরগুলো লেজের বাড়িতে নৌকা উলটে ফেলে মানুষ টেনে নিয়ে যেতে ওস্তাদ। এজন্যই বর্ষাকালে চার তলার নিচে নামা পুরাপুরি নিষেধ। কিন্তু এই নিষেধ কাজগুলো করতেই আমার কেমন যেন একটা জিদ চেপে যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে রাত্রে জোয়ার আসলেই আমি কামট মারতে নিচে নেমে আসি। রাত্রে বেলাই আসতে হয়, কারণ সুপারের চোখে পড়লে নিশ্চিত ছাল চামড়া ছাড়িয়ে ফেলবে মারতে মারতে।

জোয়ার নেমে গেলে কম পানিতেও কামটগুলো রয়ে যায়। বাড়ির দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নামলেই মাঝে মাঝে দেখা যায়। সিঁড়ির ধারে কাছেই ঘোরাঘুরি করে, আবর্জনা স্তূপ গুলো নিয়ে কামড়াকামড়ি করে। ঘণ্টা খানেক আগে এক বালতি মাছ ফেলে দিলে তো আর কথাই নেই। একেবারে মোচ্ছব লেগে যায়। কমপক্ষে দশ বারোটা মিলে গুঁতোগুঁতি করতে থাকে। কার্নিশে বসে লোহার ফলা লাগানো বল্লম দিয়ে নিশ্চিন্তে এক আধটা মেরে ফেলা যায়। কামটের মাংসের স্বাদ ভালো। মাছ মাছ গন্ধ নেই।

'সুপার বলে, আসল মাংসের স্বাদ নাকি অনেকটা কামটের মত। ও বলে, মরা মানুষ খেয়েই নাকি এইগুলার গায়ে মাংসের স্বাদ চলে আসে। সত্যি নাকি রে?'

আমি জাফরের এই আজগুবি প্রশ্ন শুনে একটু থমকে যাই।
'হুম, ভাবনার বিষয়। হতে পারে। অন্য সব মাছের একরকম গন্ধ। কামটের নাই কেন?'

জাফর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার জিজ্ঞাসা করে,'বড় হাঙ্গর নাকি আরও ভালো খেতে। এক টুকরা বাঘা হাঙ্গর আর এক টুকরা গরুর মাংসে নাকি কোন তফাত নেই?'
'কে জানে , সত্যি না মিথ্যা। গরুর মাংস সুপার নিজে জীবনে খেয়েছে? তোর চিন্তা কি, তুই তো কালকে থেকে সত্যিকারের মাংস খাবি, ফল খাবি।'
জাফর চমকে ওঠে, “সত্যি মাংস? সরকারি জেলায় সত্যিকারের মাংস পাওয়া যায়? সব বেলায়?'
'অবশ্যই।'
আমার উত্তর শুনে ওর চোখ চক চক করে ওঠে।
'আচ্ছা, পরের কথা পরে। ফলা ধার দিয়েছিস ভালো মত? হাতল কত বড়?'
'সব তৈরি। একেবারে দুই হাত বাঁশের হাতল। দড়ি রেখেছি বিশ হাত। চিন্তা করিস না'

কামট অন্য হাঙ্গরের চেয়ে ছোট হলেও খুব সহজ বস্তু না। একে তো দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করে, ওই ঝাঁকে পড়লে চোখের নিমেষে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলবে, হাড় কয়টা ছাড়া আর কিছু থাকবে না। একলা কামট ও কম না, বড় গুলা প্রায়ই সাত-আট হাত বড় হয়। ছোট গুলাও হাত চারেক বড় হয়। আর একদম সিমেন্টের মত রঙ আর ছোট পাখনার কারণে অনেক সময় দেখাও যায় না হঠাৎ। রাত্রে বেলা তো কথাই নাই। কামট মারা টা কেবল খাওয়ার জন্য না, উত্তেজনাটাই আমাদের অনেক বড় আকর্ষণ।

রাত বারোটার ঘণ্টা বাজলে আমি আর জাফর ধীরে ধীরে চার তলায় নেমে আসি। বর্ষাকাল, তাই কেউ নেই। আমরা দ্রুত আমাদের সাজ-সরঞ্জাম গুছিয়ে নেই। পুরনো একটা সিমেন্ট মেশানোর যন্ত্র থেকে খুলে নেয়া লোহার ফলাটা বেশ ভারী, প্রায় কেজি খানেক ওজন হবে।আমি আর জাফর মিলে ওইটাকে খাঁজ কেটে আর ধার দিয়ে রীতিমত ভয়ংকর একটা চেহারা দিয়েছি। ফলাটাকে বাঁশের হাতল আর দড়ির সাথে বেঁধে নিলে হাঙ্গর শিকারের চমৎকার একটা অস্ত্রে পরিণত হয়।

আর আছে আসল জিনিস, কামট মারার বিষ। পুরনো দালানের জলে ডোবা, ধ্বসে পড়া অংশের ফাঁকে ফাঁকে নীল রঙের, স্বচ্ছ, ছোট ছোট কিছু জেলিফিশ পাওয়া যায়।প্রচণ্ড বিষাক্ত, সামান্য ছোঁয়াতেই অতি দ্রুত শরীর অবশ হয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ অ্যান্টিডোট না নিলে ঘণ্টা-খানেকের মধ্যেই মৃত্যু নিশ্চিত। সেই জেলিফিশের বিষাক্ত আকর্ষী প্রায় পোয়াটাক জমিয়ে রেখেছি আমি। গ্রীজের সাথে মিশিয়ে লোহার ফলাটায় মাখিয়ে রাখা আছে।

আজকে পূর্ণিমা,যদিও মেঘের জন্য চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। পূর্ণ চন্দ্রের প্রবল আকর্ষণে স্রোতের তোড় বেড়ে গেছে অনেক, তিন তলার সিঁড়িতেও পানি ছুঁই-ছুঁই। আস্তে আস্তে ভাঙ্গা জানলা দিয়ে বের হয়ে এসে আমি চার তলার কার্নিশে সাবধানে পা ঝুলিয়ে বসে যাই। আমার পেছন পেছন এসে জাফর কার্নিশের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকে। মেঘ ছেঁকে আসা ঝাপসা আলো আমাদের পায়ের নিচে স্থির হয়ে থাকা নরম কালো কাঁচের মত নোনা জল শুষে নেয়।

দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিয়ে আমি হতাশ হয়ে যাই। একেবারে নিস্তব্ধ চারদিক। কোন ঝাপটা-ঝাপটি তো দুরে থাক, নিস্তরঙ্গ জলের পিঠ কেটে একটাও তেকোনা পাখনা উঁকি দেয় না। বিকেলের দিকে আমি মাছের কাঁটা, আঁশ আর নাড়িভুঁড়ি মিলিয়ে প্রায় বালতি খানেক ফেলে গিয়েছিলাম। অন্যান্য দিন হলে এতক্ষণে মাতম লেগে যেতো। কিন্তু আজকে কোন সাড়া-শব্দ ও নেই!
মহা বিরক্তি নিয়ে আরও আধাঘণ্টা বসে থাকলাম। যে কে সেই।

জাফর হঠাৎ লাফ দিয়ে ওঠে।
“হুরর শালা। বসে থেকে লাভ নাই। চল, সিঁড়ির কাছটায় গিয়ে দেখি। দুই-একটা নীল কাঁকড়া পেলেও চলবে।”
নীল রঙের কাঁকড়াগুলো মাঝে মাঝেই সিঁড়ির কাছে, হাঁটু-পানিতে চলে আসে। প্রায় আধ-হাত লম্বা একেকটা। না হলেও কেজি খানেক করে মাংস হয়। কাঁকড়া-পোড়া জাফরের খুব পছন্দের জিনিস। আমার তেমন একটা ভালো লাগে না। কেমন কেমন একটা পিছলা পিছলা ভাব, একটু যেন রক্ত-রক্ত গন্ধও লেগে থাকে। তবুও মন্দের ভালো।

জাফরের সাথে সাথে আমিও তিন তলার সিঁড়ি ভেঙ্গে পানিতে নেমে যাই। জাফর রেলিং এর হাতল টপকে একেবারে কোমর পানিতে লাফ দিয়ে পরে।
“সাবধানে জাফর। সরকারি জেলায় যাওয়ার আগে কামটের পেটে চলে যাস না। দেখে শুনে নাম।”
আমার দিকে ফিরে একটা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গি করে ও।
“আরে রাখ। কামট না আরও কিছু। এতক্ষণ বসে থেকে কামট কি, একটা কচ্ছপ পর্যন্ত দেখলাম না। নেমে আয়।”
আমিও আস্তে আস্তে আরও গভীরে নেমে আসি। কোমর ছাপিয়ে পানি উঠে যায় বুক পর্যন্ত।নোনতা, তামাটে স্বাদের একটা জলজ গন্ধ আমাকে ঘিরে ধরে। রাতের সমুদ্র, তাই পানি খানিকটা উষ্ণ।

আমি সাবধানে দুহাত দিয়ে আগাছা ঠেলে সামনে আগাতে থাকি। কাঁধ পর্যন্ত ডুবে গেলে আমি সাঁতরাতে শুরু করে দেই। আমার হাতের ঝাপটায় সৃষ্টি হওয়া স্রোতে পানিতে মিশে থাকা নীলচে-সবুজ আলো দেয়া ক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্কটন গুলো সরে যেতে থাকে।শরীরের জড়তা আস্তে আস্তে কেটে যেতে থাকে আমার। পনের-বিশ গজ এগিয়ে গিয়ে আমি পেছনে ঘুরে জাফর কে দেখতে পাই, বুক পানিতে এক হাতে বল্লম টা ধরে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে।

আমি ডাক দেই ওকে, “ফলাটা সিঁড়িতে রেখে নেমে আয়। রাখ তোর কাঁকড়া। আয় সাঁতার কেটে আসি। তারপর দেখা যাবে।”

ও দ্রুত ঘাড় নেড়ে অস্বীকৃতি জানায়।
“না রে। আগে এক-দুইটা ধরে নেই। সাঁতার কেটে হাঁপিয়ে যাবো, আর ইচ্ছে করবে না তখন। আর কালকে এইখানে আমি চার-পাঁচটা কাঁটার-তারা দেখেছি। আগে ওইগুলা তুলি।”

কাঁটার-তারা একরকম তারামাছ। বেশ গোল গোল, বড় বড়। উপরের কাঁটাওয়ালা খোলস ছাড়িয়ে নিয়ে মাঝখান দিয়ে কাটলে ভেতরে দুটা কমলা রঙের বলের মত ডিমের থোকা পাওয়া যায়। বেশ সুস্বাদু।

আমি আর আপত্তি না করে আরও কিছু দূর সাঁতরে যাই। মাথা আর হাত ভাসিয়ে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকি আমি।

হঠাৎ করেই একটা ঢেউ ছলকে ওঠার মৃদু শব্দ আসে আমার কানে। আমি চারদিকে তাকিয়ে কোন কিছু দেখতে না পেয়ে আবার ভাসতে থাকি। আমাদের অনাথাশ্রমটা ফিকে আলোয় বেশ রহস্যময় দেখায়। আট-নয় তালার দিকে কোন একটা জানালায় হলদে আলো জ্বলে ওঠে। একটা ছায়া এদিক-সেদিক দু-তিনবার হাঁটা-হাঁটি করে আবার বাতি নিভিয়ে দেয়। পরিচিত কৃত্রিম আলো আর মানুষের ছায়ায় আমার বুকে কিছুক্ষণ ধরে বেড়ে ওঠা একটা অস্বস্তি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।

আবারো কাছে-পিঠে কোথায় যেন একটা আচমকা ঢেউ সৃষ্টি হয়। এবার আগের চেয়ে বড়। প্রায় সাথে সাথেই আমার পায়ের নিচে পানির একটা হালকা চাপ সৃষ্টি হয়েই আবার মিলিয়ে যায়। হঠাৎ করেই একটু আগের অস্বস্তিটা ফিরে আসে আবার এবং দ্রুত তা পালটে যেতে থাকে ভয়ে। কোন কিছু একটার অদৃশ্য উপস্থিতি যেন আবছা জানান দিতে থাকে চারদিকে।

আমি দ্রুত দিক বদলে সাঁতরে আসতে থাকি জাফরের দিকে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই আমার পেছনে কাঁচের মত পানির তল কেটে বেড়িয়ে আসে কালচে-সবুজ একটা তেকোনা ডানা আর তার পরপরই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উঠে আসে একই বর্ণের বাঁকানো চাঁদের মত বিশাল একটা লেজ।

আবছা আলোতেও আমি স্পষ্ট দেখতে পাই ডানা আর লেজের ওপর চিরল চিরল ডোরা। প্রচণ্ড আতঙ্কে আমার রক্ত জমে যেতে যেতে আমি চিনে নেই আমার নিয়তিকে। বিশাল একটা বাঘা হাঙ্গর। বঙ্গোপসাগরের খাদ্য-শিকলে সর্বোচ্চ স্তরের শিকারি, সারা গা জুড়ে বাঘের মত ডোরা দাগ নিয়ে উপকূল-বাসীর দুঃস্বপ্নে ঘুরে বেড়ানো, দুর্দান্ত শক্তিতে নৌকা উল্টে মানুষ ছিনিয়ে নিতে সুদক্ষ বাঘা হাঙ্গর!

আমার গলা চিরে বেরিয়ে আসা চিৎকারে জাফর চমকে ফিরে তাকায়। আমি দূর থেকেও দেখতে পাই কিভাবে ওর মুখ রক্ত সরে ফ্যাকাসে হয়ে যেতে থাকে।

প্রাণপণে হাত-পা ঝাপটিয়ে আমি আগাতে থাকি ওর দিকে। ক্ষণিকের মধ্যে ও ও আমার দিকে দ্রুত সাঁতার কেটে আসতে থাকে।

প্রচণ্ড এক ঝাপটায় আমি পানির তল থেকে প্রায় হাত খানেক উপরে উঠে যাই। হাঙরের ধারাল খসখসে চামড়ায় মোড়া লেজের আঘাতে আমার শরীর চিড়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। নোনা পানিতে আবার ছিটকে পরতেই আমার ক্ষতে যেন আগুন ধরে যায়। যন্ত্রণার সাথে সাথে আমার মাথা কাজ করা শুরু করে। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড, কিছু করতে না পারলে এখানেই আমার শেষ। খোলা সমুদ্রে বাঘার কবলে পরে ফিরে আসা মানুষ হাতে গোণা।

জাফর আর আমার মাঝে এখনো গজ দশেক দূরত্ব। আমার শেষ ভরসা ওই ফলাটা। যত বড় বাঘাই হোক, যে পরিমাণ বিষ ওটায় মাখানো আছে, বেঁচে ফিরতে পারবে না। জাফর সেটা বুঝতে পেরেই এগিয়ে আসার চেষ্টা করে আমার দিকে।

আমি বুঝতে পারি এখনি বাঘাটা আমাকে তলা থেকে সরাসরি আঘাত করবে মাঝখান বরাবর। ছিঁড়ে দু-টুকরো করে ফেলবে ক্ষুরের মত ধারাল সারির পর সারি জমে থাকা দাঁতে। এই আঘাতটা এড়াতে পারলে বাঁচার একটা সুযোগ হয়ত হবে, জাফরকে বল্লম টা ব্যবহারের সময় সৃষ্টি করে দেয়া যাবে।

পানির চাপ অনুভব করতেই সর্বশক্তিতে মোচড় দিয়ে আমি সরাসরি কামড়ের পথ থেকে সরে গিয়েই ডুব দিলাম। প্রবল বেগে হাঙ্গর টা লাফিয়ে ওঠে পানি ছেড়ে আর সাথে সাথে বিদ্যুৎ-বেগে জাফর বল্লমটা ছুঁড়ে মারে। বাঘার মসৃণ পেটের চামড়া কেটে গিয়ে ফলাটার তীব্র মারণ বিষ ঢুকে যায় তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে। সারা দেহে ছড়িয়ে থাকা অত্যন্ত সংবেদনশীল স্নায়ুগুচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসলীলা শুরু করে দেয় ক্ষুদ্র জেলিফিশের সূক্ষ্ম তন্তু । ঠিক মত আঘাত বোঝার আগেই স্তব্ধ হয়ে যায় কোটি বছরের বিবর্তনে তৈরি হওয়া নিখাদ খুনি দেহ।

মৃত বাঘার পাশে ভাসতে ভাসতে মেঘ কেটে বেরিয়ে আসা চাঁদের আলোর ধারায় আমি আর জাফর হঠাৎ উন্মাদের মত হাসতে শুরু করি। বেঁচে থাকার আনন্দ আমাদের শরীরের ভেতর থেকে পাক দিয়ে দিয়ে উঠে আসতে থাকে দামাল ঘূর্ণির মত।

প্রায় পনের হাত লম্বা হাঙ্গরটাকে আমরা আস্তে আস্তে টেনে নিয়ে আসি আমাদের বিল্ডিং এর সীমানার ভেতরে। তিন তলার সিঁড়ির গোড়ায় টেনে নিয়ে এসে রেলিং এর সাথে বেধে রাখি।

জাফর আমার দিকে তাকায়।
“কি করবি রে এটাকে এখন? অন্তত পঞ্চাশ জনে মিলে খাওয়া যাবে। বাঘার মাংস খেতে নাকি সেইরকম মজা!”
“আর সুপার? তার কি করবি? তুই তো চলে যাবি, আমাকে তো মেরে শেষ করে ফেলবে শালা।”
“হুমমম। তাহলে? এত কষ্ট পানিতে যাবে? ফেলে দিবি পুরোটা? কেউ জানতেও পারবে না স্রেফ তুই আর আমি মিলে একটা বাঘা মেরে ফেলেছি!”
“দাঁড়া। ভাবতে দে।”

এত বড় লাশটা কাউকে দেখতে দেয়া যাবে না এটা নিশ্চিত। সুপার জানলে খবর করে ফেলবে। একটু ভেবে আমি পকেট থেকে গ্রিলের চ্যাপ্টা রড ঘষে বানানো আমার ছুরিটা বের করে বাঘাটার শিরদাঁড়ার দুপাশ বরাবর চালিয়ে লম্বা দু-টুকরো পেশীর অংশ কেটে নেই। আমাদের দুইজনের একবেলা পেট ভরে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট। দানবিক চোয়াল ফাঁক করে চাড় দিয়ে তুলে নিয়ে আসি গোটা দশেক করাল দাঁত। ভয়ংকর দাঁত গুলোর মাথা ভেতর দিকে ফেরানো, দাঁতের গায়ে আবার খাঁজ কাটা অনেক ছোট ছোট দাঁত বসান। আর কোন হাঙ্গরের এমন হয় না। এই আমাদের প্রমাণ। রেলিং এর সাথে বেঁধে রাখা দড়িটা একটানে কেটে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাঘাটার লাশ গভীর পানির দিকে ফেলে দেই।

ঠিক মত ডোবার আগেই এক ঝাঁক কামট এসে উন্মত্তের মত ছেঁকে ধরে লাশটা। মুহূর্তে চারদিকের পানি লাল হয়ে খল বলিয়ে ওঠে।
জাফর হেসে বলে, “ এই বাঘা শালার ভয়েই আজকে কামট ছিল না ধারে কাছে। এখন দেখ, অন্তত সাত-আটটা মিলে ধরেছে শালাকে।”

অর্ধেক দাঁত ওকে দিয়ে আমি অ্যাসেটিলিন শিখাটা জ্বালিয়ে লবণ মাখিয়ে মাংসের টুকরা দুটো পোড়ানো শুরু করি। একটু পরেই ভাজা মাংসের সুগন্ধে চারদিক ভরে ওঠে। গরম গরম মাংস কেটে ছোট ছোট টুকরা করে আমি জাফর কে এগিয়ে দেই। লাল অ্যালজির পাতলা পাতলা টুকরা মুড়িয়ে মাংসের একটা খণ্ড মুখে দিয়ে আমি দ্রুত চিবাতে থাকি। অপূর্ব! আমি কোনদিন এত সুস্বাদু কিছু খাইনি! একবার বন্যার পর সরকারি জেলা থেকে পাঠানো টিনে ভরা খাবার এসেছিল, তাও এত ভালো লাগে নি।

নরম মাংসের আঁশ খুলে খুলে দ্রুত আমার মুখে মিলিয়ে যেতে যেতে লাল অ্যালজির অল্প তেতোর সাথে মিশে অসাধারণ এক স্বাদের জন্ম দেয়। সাথে তাজা কাঁটার-তারার কমলা-গোলাপি ডিমের পেলবতা! স্বর্গেও এত ভালো খাবার আছে আমার বিশ্বাস হয় না।

ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটে উঠতে থাকে। আমরা ফিরে যাই আমাদের বিষণ্ণ বারো তলার পঁচিশ খাট আর পাঁচ জানালার ঘরে। আমার মনে পরে, আজকে জাফর চলে যাবে।

একসময় বিকেল হয়। ছোট্ট চকচকে রূপালী গোলকের মত একটা সরকারি উড়োজাহাজ এসে নামে আমাদের ছাদে। সুপারের তেলতেলে হাসি উপেক্ষা করে এসে দাঁড়ায় দুই সোনালী চুলের দানব। মমতাময় দৃষ্টিতে তারা জাফরকে আশ্বস্ত করে। জাফর আমাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেয় তাদের সাথে।

আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর সময় হয়ে যায় বিদায়ের। জাফর হাসি মুখে একটা বাঁকানো দাঁত বের করে আমাকে দেখায়, “যত্ন করে রাখা থাকবে আমার গুলো। তোর গুলো ও রাখিস। আমাদের প্রমাণ।” এরপর পেছন ফিরে দ্রুত পা ফেলে মিলিয়ে যায় উড়োজাহাজের ভেতর। অস্তমিত সূর্যের আলোয় একবার ঝিকিয়ে উঠে অদৃশ্য হয়ে যায় ধাতব গোলক। আমি একা দাঁড়িয়ে থাকি সূর্যের লালচে সোনালী আভায়, দমকা বাতাসের ঝাপটা উপেক্ষা করে।

পশ্চিমাকাশে দ্রুত ঘন কালো মেঘ জমছে, প্রবল বেগে বইছে বাতাস। আলো ছিনিয়ে নিয়ে সর্বগ্রাসী মেঘ আকাশ ঢেকে দিতে থাকে হু হু করে। পায়ের নিচে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠছে, ঢেউয়ে ঢেউয়ে সংঘর্ষে সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণিপাকের, নীল সমুদ্র হয়ে উঠছে ফেনিল কালো। দূরে কোথাও তীব্র শব্দে বেজে ওঠে সাইরেন। ধূসর আকাশ থেকে অঝোর ধারায় নেমে আসে বৃষ্টির ঝাপটা। সাইরেনের শব্দ ছাপিয়ে হঠাৎ সমুদ্রের অতল থেকে, মেঘের ওপার থেকে জেগে ওঠে প্রলয়ঙ্কর এক সুতীক্ষ্ণ শিষ।

চতুর্দিক আঁধার করে, অমিত শক্তিতে সৃষ্টিনাশা প্রতিজ্ঞা নিয়ে ছুটে আসতে থাকে ২০৯৩ এর প্রথম সমুদ্র তাণ্ডব।

Frenzy

গল্পটা লিখতে চেয়েছিলাম সায়েন্স ফিকশন সংকলনের জন্য। আমার অসাধারণ টাইম ম্যানেজমেন্ট এ শেষ হল আজকে। নিজেকে সান্তনা দিচ্ছি এই বলে যে, ধুর, কাঁচা হাতের লেখা, ছাপা হত না।
সে যাই হোক, প্রথম কল্পবৈজ্ঞানিক পাঁয়তারার সাথে একখানা থ্রিডি চিত্র জুড়ে দিলাম। এইটা সচলে আগেও পোস্ট করেছি অন্য থ্রিডি কাজগুলোর সাথে, কিন্তু গল্পের সাথে মিল রেখে নতুন একখান বানাতে গেলে এই গল্প আর দিনের আলোর মুখ জীবনেও দেখতো না, তাই রিসাইকেল।


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

অসাধারণ হয়েছে... এমন সাবলীল বর্ণনা যে মনে হচ্ছিল সিনেমা দেখছি।

সংসপ্তক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের দু'জনকেই।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

বাউলিয়ানা এর ছবি

হুম...ভাল লাগছে গল্পটা।

লম্বা হওয়াতে শেষের দিকে একটু খেই হারিয়ে ফেলেছি মনে হয়েছে।

সংসপ্তক এর ছবি

সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সায়েন্স ফিকশন সমগ্রে প্রকাশিত হত না মানে?!! আমারতো একটা শব্দই মাথায় আসছে - ফাটাফাটি!!
অ্যাঁ
(খালি নামটা মনে হয় অন্য কিছু হলে আরো আকর্ষণীয় হত, মানছি আমি আগে পড়ি নাই স্রেফ নাম দেখে)।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সংসপ্তক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ। একটা ভালো নাম বেছে দেবার অনুরোধ রাখলাম।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

পল্লব এর ছবি

ইশ, এইটা নিয়া একখান মুভি দেখতে পারলে ভাল্লাগতো গো! খাসা হইসে!

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

সংসপ্তক এর ছবি

একগাদা ধন্যবাদ! হাসি
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

প্রথমদিকে পড়তে পড়তে জাফর ইকবালের ভাষাশৈলীর ও শব্দপ্রয়োগের কথা বাধ্য হয়েই মনে পড়ছিলো বার বার। কিন্তু, এরপর আপনি নিজের গুহায় ঢুকে যে-কখন বাঘ হয়ে ডাক দিয়েছেন পড়তে পড়তে তা আর খেয়ালই করি নি।

একটা কথাই মনে হচ্ছিলো বার বার, এই লেখাটা কল্পগল্প সংকলনে গেলো না কেন? তবে, লেখার আকার দেখে সন্দ হচ্ছিলো, কারণ বলা বারণ। শেষমেষ আপনার প্রতিভাদীপ্ত ক্ষমাপ্রার্থনা দেখে মনের ভার নামিলো।

এ'রম গল্প আরো লিখুন, প্রণোদনা ছাড়াই। আসলেই ধন্যবাদ জানানোর মতো লেখা!

ভামোস!!
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

সংসপ্তক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

বইখাতা এর ছবি

অন্যরকম একটা সাইফাই। খুবই চমৎকার লাগলো।

Rezwan Shahriar Sumit এর ছবি

যাক অবশেষে কিছু একটা লিখেছিস। এবং দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণী শক্তিতে।
Dystopia is one of my favourite topic of pondering too. Hope to join your fleet soon.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।