জানোয়ারের সময়

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/১১/২০০৭ - ৬:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খুবই একটা অস্থির সময় যাইতাছে। অন্তরে বাহিরে। গত কয়েকদিন অনবরত কাজের চাপ - সকাল সাতটায় বাসা থেকা বাইর হই, অফিস থেকা বাইর হইতে হইতে রাইত দশটা এগারোটা - এক ঘন্টা ট্রেন বাসে ঝোলার পর বাসায় আইসা কিছু মুখে দেওয়ার এনার্জিও থাকে না, মেইল আর ব্লগ চেক করতে করতে সোফাতেই ঘুম। আবার ৫-৬ ঘন্টা পরে ঘড়ির অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে - আবার ইঁদুর দৌড়ে নামি।

*

অফিসে বইসা কামের ফাঁকে ফাঁকে সচল দেখি - রাজাকারগো উপর ভিডিওগুলা দেখি। মেজাজ খারাপ থেকা আরো খারাপ হয় - ভাবি আর কোন দেশে গাদ্দার আর দেশদ্রোহীর দল রাজনীতি আর সমাজে এতদূর অগ্রসর হইতে পারছে? লন্ডনে যখন নতুন আসি, তখন কাউরে চিনতাম না - একজনের রেফারেন্সে চিটাগঙ্গের দুইটা পোলার লগে থাকছিলাম কয়েক সপ্তাহ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারছিলাম যে এইগুলা খালি নামাজী গোছের মোল্লাই শুধু না - জামাত সিম্প্যাথাইজারও। এইখানে ইস্ট লন্ডন মসজিদে তাগো দলের সারাক্ষণই আনাগোনা, দল মোটামুটি ছোটও ছিল না ওগো, প্রায়ই শুনতাম মিটিং নাইলে পার্টি নাইলে অন্য কোন অনুষ্ঠান লাইগা আছে। একদমই না পারলে কথা কইতাম না। কিন্তু এক উইকেন্ডে আর সম্ভব হয় নাই - তুমুল ঝগড়া লাইগা গেছিলো - একটা পোলা ডাবল স্ট্যান্ড করা, মাথায় ঘিলু আছে ঠিকই - কিন্ত সেই শুওরের বাচ্চা পুরাপুরি ব্রেইনওয়াশড। জামাত-১৯৭১-রাজাকার নিয়া এমন বাজে, এমন অন্ধ সব বিতর্ক করলো, যে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মাইয়া একটা পোলা কেমনে এইরকম দেশ-বিরোধী সব মতামত মনের ভিতরে রাখতে পারে, সেইটাই আমারে তাজ্জব কইরা দিছিলো। ওই বাসায় বেশীদিন থাকা সম্ভব ছিল না।

তাগোই গুরুরা এখন বাইর হইছে আন্ধার গর্ত থেকা। সচীব হান্নানরে ছোটবেলায় স্কুলে দেখতাম - বক্তৃতা-ভাষণ দিতে আসতো - বুঝতাম কোন প্রকার হর্তা কর্তা - 'এন্টি-করাপশানের হেড' না কি জানি - কিন্তু আসলে যে কত বড় জানোয়ার সেই বয়সে জানতাম না। বিশ বছর পরে দেখি বুড়া মরে নাই, বরং সাপের ফণা আরো লম্বা হইছে।

*

এইদিকে নিউ ইয়র্কে আমার এক বন্ধুরে পিটাইয়া আধা-মরা কইরা ফালাইছে ওর জামাই। হয় তো কেউ কেউ ফেসবুক বা ব্লগে দেখছেন 'জাস্টিস ফর নাদিন' পেটিশনটা। জামাই আমেরিকার বড় ইউনিভার্সিটি কলাম্বিয়াতে পিএইচডি করে - বা করতো। তিন মাস আগে যখন দেশে যাই, তখন আরো কয়েকজন মিলা সবাই একলগে চা-বিস্কুটও খাইছি। তারপর লন্ডন ফেরত আসার পরে হঠাৎই শুনি আমার ফ্রেন্ড্র-রে ও বিয়া কইরা নিউ ইয়র্ক নিয়া গেছে। সবার সাথে যোগাযোগ সাডেনলি বিচ্ছিন্ন। আর তার কয়েক সপ্তাহ পরে খবর পাই - আমার ফ্রেন্ড-রে সেই জামাই অত্যাচার করছে, পিটাইয়া চেহারা চুরমার কইরা দিছে, নাক ভাইঙ্গা ফালাইছে, এমন কি রেপ-ও করছে। অমানুষ - শিক্ষিত পিশাচ। পুলিশ আইসা আমার ফ্রেন্ডটারে উদ্ধার করছে। জামাইয়ের নামে বিরাট কেস বাঁধছে এখন - assault, battery, rape - কিছুই বাকি নাই। সব ফেলোনি (felony) কেস - দোষী সাব্যস্ত হইলে দশ বিশ বছর জেল হওয়াও অসম্ভব কিছু না। কুত্তার বাচ্চার বাপ নাকি দেশে সেক্রেটারি ছিল - হান্নানের মতনই - নাম জনিবুল হক - করাপ্ট আর লোভী সচীব হিসাবে নাম কামাইছিলো। আর তার বউ, মানে আমার ফ্রেন্ডের প্রাক্তন শাশুড়ির হাতে মাইর খাওয়া বুয়ার চিৎকার সারা ধানমন্ডি জুইড়া শোনা যাইতো, এমনটাও শুনছি।

এইরকম মানুষের পোলা আর কত ভালো হইবো? দেশের উপরতালা খালি জানোয়ার দিয়া ভইরা গেলো কেমনে? এরপর আমার ফ্রেন্ড নাদিনের বাপ-মা'র উপর প্রচুর প্রেশার দিছে তারা ঢাকায় - কেস ড্রপ করো নাইলে খবর আছে, এইরকম থ্রেট - কিন্তু কেস করছে তো নিউ ইয়র্ক স্টেট, এইখানে আমার ফ্রেন্ডের কিছু বলার নাই, সে বেশীর বেশী স্বাক্ষ্য প্রমান দেওয়া থেকা বিরত থাকতে পারে। এই সপ্তাহে মামলার শুনানি শুরু। কি হইবো শেষমেষ কিছুই জানিনা। ভাবি এতো গজব কবে আসান হইবো। চারিদিকে খালি অস্থির। ভিতরে আর বাইরে।


মন্তব্য

ভুতুম এর ছবি

কিছুদিন আগে সামহোয়ারইন ব্লগে দেখলাম কে একজন কম্পেয়ার করতেছে কে বেশি সিভিলাইজড, পশ্চিমারা না আফ্রিকান আদিবাসীরা। তার মতে পশ্চিমারা নেংটু হইতে শরমায় না জনসমক্‌খে (নেকেড বিচের পিকচার পোস্ট করছিল প্রমান দেখাইতে), তাই তারা আনসিভিলাইজড। আপনার ফ্রেন্ড এর ঘটনা নিউয়র্ক এ না হয়ে আমাগো বাংলাদেশে ঘটলে কি হইত ভাবেন একবার।

হযবরল এর ছবি

আম্রিকায় ফেলোনি কেস। খাইছে আমারে। মেয়ে যদি একটু সহযোগীতা করে তাইলে জেল থেইকা অই পোলার আর বাইর হওন লাগবো না।

চট্টগ্রাম, সিলেটে জামাত সিম্পেথাইযার একটু বেশীই। কথাটা একদম ভুল না। তবে দেশের বেশ বড় একটা অংশ লোক, অকাট মূর্খ। এদের ভাষ্য হচ্ছে, পিছনের কথা বলে কি লাভ, দেশ এগিয়ে নিতে হবে, একটা বিরোধী পক্ষ থাকতেই পারে যুদ্ধে , এইরকম আরো নানা ফ্যানানো। মূল বিষয় হইতাছে, আমাদের দেশে জামাত-ইসলাম-সৎ লোকের শাসন এইগুলি সব সিনোনিমাস কইরা ফালাইছে। নিজামী কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী, ভালোই চালাইছে... ... । কিন্তু কোন বান্দীর পোলা এইটা দেখলো না, চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র আইসা খালাস হইছে শিল্প
মন্ত্রণালয়ের ডকে। কেমনে আইলো। অই কেস নতুন কইরা এখনো মার্কেটে আহেনা ক্যা ? এইটার কুনো জবাব নাই।

এরমদ্যি সবচেয়ে বড় আশ্চার্য্য হইলো, সব হারামজাদার এক রা। এর আগে এক জামাতী হুক্কা হুয়া দিলে, আরেক জামাতী সেইটার জবাব দিতে হপ্তা দুই লাগতো। এখন অগো হুক্কা হুয়া রবের ফ্রিকোয়েন্সী গ্যাছে বাইড়া। হপ্তায় তিন-চার বার হয়া গ্যাছে। বিষয় কি ? ক্যামনে কী ?

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আইজকা কোর্টে শুনানি আছিলো নিউ ইয়র্কের শয়তানের। হারামজাদা যায় নাই। শুরুতে জামিন দিয়া জেলের বাইরে আছিলো, এখন মনে হইতাছে বেইল জাম্প করছে। বাপে সম্ভবত ভূয়া পাসপোর্ট দিয়া আমেরিকার বাইরে পাঠায় দিছে এতক্ষণে - বাংলাদেশেও ফিরা গিয়া থাকতে পারে। গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করছে পুলিশ। সুবিচার হইবো এই আশা করতাছি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

কেমিকেল আলী এর ছবি

কালকে হিমু ভাইয়ের ইউটিউবের পোষ্ট করা জানোয়ার হান্নানের কথা শুনে এতটাই মেজাজ খারাপ হয়েছিল তা বলার মত না।

আসলেই জানোয়ারের সময় এখন

বিপ্লব রহমান এর ছবি

কি কুৎসিত!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অয়ন এর ছবি

একটা পোলা ডাবল স্ট্যান্ড করা, মাথায় ঘিলু আছে ঠিকই - কিন্ত সেই শুওরের বাচ্চা পুরাপুরি ব্রেইনওয়াশড।

ডাবল স্ট্যান্ড করতে যে মাথার ঘিলু লাগে না সেইটা সে প্রমাণ করছে ব্রেইনওয়াশড হওয়ার মাধ্যমে।

কালোবিড়াল এর ছবি

আমার মনে হয় এডুকেশন, মেধা এইগুলা কোনো ফ্যাকটর না। রাজাকারেরা বংশানুক্রমিক রাজাকার হয়। জামাতি ভাবনা মোস্টলি উত্তরাধিকার সুত্রে বিস্তার লাভ করে, কিছুটা ব্রেইন ওয়াশ এর মাধ্যমে। আমার পরিচিত এক মেধাবি সন্তানরে দেখতাম জামাত / রাজাকার / মুক্তিযুদ্ধ, এই সব প্রসংগ আড্ডায় উঠলে চুপ হইয়া যাইত। ভাইজান আবার বুয়েটে শিক্‌খতা করে আসছেন; নলেজিবল মানুষ। একদিন না পাইরা বইলাই ফেল্লো যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কয়েকজন জেনারেল এর ভুল সিদ্ধান্তের কারনে ঘটে। উনি উনার কোমল হৃদয়ে কারাগারে আবদ্ধ 'ভাইয়া'র জন্য কিছুতা সিম্প্যাথি রিজার্ভ রাখছেন, সেইটাও বুঝলাম একদিন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।