সম্ভাবনার মৃত্যু !

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: রবি, ০২/০৫/২০১০ - ৬:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সম্ভাবনার মৃত্যু !
কেরামত উল্ল্যা বিপ্লবের সম্ভাবনার যখন মৃত্যু ঘটছে তখন নতুন সম্ভাবনার আলোয় আলোকিত হতে তিনি ছুটেছেন গ্রামের বাড়ীতে।
নতুন সম্ভাবনার পথেফুটফুটে নতুন মুখ এসেছে ঘরে। বাবা হয়েছেন তিনি।
একজন রির্পোটার কেঁদে কেঁদে সবার কাছে প্রার্থনা করছেন -'আমাদের কে বাঁচান, ক্যামেরাম্যান ভেজা চোখে ধারণ করছেন সহকর্মীদের কান্নার দৃশ্য ! হৃদয় বিদারক বললেও কম বলা হবে।
আমাদেরকে বাঁচান !আমাদেরকে বাঁচান !

কেরামত উল্ল্যা বিপ্লব না হয় কণ্যা শিশুর আগমনে খানিকটা আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন, কিন্তু বাকী ৪ শত কর্মীরা কি করছেন ? সেই সাথে চ্যানেল ওয়ানের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পী, কলাকুশলী, বিজ্ঞাপন সংস্থা , প্রযোজক, পরিচালকদেরই বা কি হবে যারা কোটি টাকা লগ্নী করেছেন ?
চ্যানেল ওয়ানের বিরুদ্ধে আপাতদৃষ্টে অভিযোগ হলো। চ্যানেলটি তরঙ্গ ব্যবহারের শর্ত ভঙ্গ করেছে সেই সাথে কারিগরী ব্যবহাররের অনিয়মও পাওয়া গেছে। ধর তক্তা মারো পেরেক ! ঝুলিয়ে দেয়া হলো তালা। রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হলো এই শিল্পে কর্মরত কর্মীদের ! গলা টিপে হত্যা করা হলো গনমাধ্যমের স্বাধীনতাকে !

এ যাবৎ কাল পর্যন্ত- অফ দ্যা রেকর্ড , ই-মেই,ফেস বুক ,টুইটার, কিংবা ব্লগে যে সকল কথা চালা চালি হচ্ছে তাতে সকলেই ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে একটা কথাই বলছেন, সরকারের ইশারায় এই চ্যানেল বন্ধ হয়েছে। তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দীন আল মামুন চ্যানেলটির মালিক এই কারনে কি কর্মচারীদের পথে নামতে হবে ?

অশ্রু
ব্রিটেনে কোন ব্যবসায়ি কিংবা শিল্পপতির যদি জেল দন্ড হয়, তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অর্থণীতিতে অবদান রাখে, সেক্ষেত্রে সাজাও মওকুফ করা হয়। কিন্তু চ্যানেল ওয়ানের বিষয়টিতে ওয়ান কতৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানটিকে আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি। যদিও বিটিআরসি বলছে চ্যানেল ওয়ানকে দেয়া তিনটি নোটিশের জবাবে তারা সন্তুষ্ট নয়। এই ইদুর বিড়াল খেলতে গিয়ে চোখের পলকে ৪০০ কর্মী বেকার হয়ে গেলো ! খবরের কাগজগুলো বলছে, চ্যানেল ওয়ান স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারের দেয়া সব শর্তও মানতে রাজী প্রতিষ্ঠানটির কর্তা ব্যক্তিরা। পাশাপাশি মালিক পক্ষ আইনি লড়াইএ যাবারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হয়তো একুশের মতো আবারও ফিরবে চ্যানেল ওয়ান। কিন্তু দীর্ঘ এই আইনি জটিলতায় গনমাধ্যম কর্মীদের থাকতে হচ্ছে অনিশ্চয়তার মধ্যে, ভেঙ্গে যাবে একটা ভালো কর্মী বাহিনীর বন্ধন আর মনোবল।
প্রতিবাদ!যদিও মন্ত্রী বলছেন আরো দশটা চ্যানেল আসছে , ওখানে অগ্রাধীকার পাবেন ওয়ানের স্টাফরা। কিন্তু সরকার চাইলেই পারে বিতর্কীত ও সরাসরি রাজনীতি সংশ্লিষ্ট লোক জনদের টেলিভিশনের মালিকানা দেয়া থেকে বিরত রাখতে । প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট ব্রষ্টকাস্ট নীতি মালা যা আন্তজাতিক নীতিগুলোকে সমর্থন করে। আন্তজার্তিক প্রসঙ্গটি টানছি একারনেই বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল গুলো এখন আর বাংলার আকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বের ছয়টি মহাদেশে এর বিস্তৃতি রয়েছে। তাই নিয়ম ভাঙ্গার অপরাধে বিভিন্ন দেশে তাদের জরিমানাও গুনতে হচ্ছে । সে বিষয়ে বিস্তারিত অন্য লেখায় আলোচনা করবো। কিন্তু সরকারের এই বিষয়গুলোতে শুভ বুদ্ধির উদয় হচ্ছে না। চারপাশে নানা চাটুকারের সমাবেশ। একে ওকে খুশি করার বাহানা।
অনিশ্চয়তা !অনিশ্চয়তা !
অপর গনমাধ্যম গুলো যদি চ্যানেল ওয়ানকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে এই অন্যায়ে জোরালো প্রতিবাদ না করে, ওরা বিএনপি সমর্থিত ওরা মামুন তারেকের আর্শীবাদ পুষ্ট, দুর থেকে কেবল মুচকি হাসেন, তাহলে সরকার বদল হলে তাদেরও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। যেমনটা অনেক গনমাধ্যম কর্মী চুপ ছিলেন যখন একুশে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো ! সংস্কৃতির শুরু হয়েছে ’একুশে’ টিভিকে গলা টিপে হত্যা করার মাধ্যমে ২০০২ সনে। ভিজ্যুয়াল মিডিয়াতে যেই চ্যানেলটি রীতি মত বিপ্লব নিয়ে এসেছিলো সেই একুশে টিভিকে নানান অযুহাতে বিএনপির সরকার বন্ধ করে দিয়েছিলো , তখনও বিএনপি ও জামাত সমর্থিতরা মুর্চকি হেসেছেন। বছরের পর বছর একুশে’র কর্মীরা রাস্তায় রাস্তায় সভা সমাবেশ করেও কোন কিছুই করতে পারেন নি, তাদেরকে সরকার বদল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০০৭ সনে জলপাই সরকার এসে বন্ধ করলো সংবাদের জগতের নতুন চমক ২৪ ঘন্টার নিউজ চ্যানেল সিএসবি, ২০০৯ এ পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে থাকা অবস্থায় বন্ধ হলো যমুনা টিভি। আদৌ যমুনা চালু হবে কিনা সেবিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সর্ব শেষ সংযোজন চ্যানেল ওয়ান। বাংলাদেশে গনমাধ্যমের স্বাধীনতার এই হলো নমুনা !
!
এখন গনমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে শংকা তার পর কে ? দিগন্ত, বৈশাখী, আর টিভি, বাংলা ভিশন নাকি এনটিভি ? সৃজনশীল এই পেশার বিকাশ ঘটাতে হলে দলীয় পরিচয়ে টিভি চ্যানেলের মালিকানা দেয়া যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি গনহারে লাইসেন্স দেওয়া ও ঠেকাতে হবে। ১৬ কোটি জনগনের জন্য ২০ টি টেলিভিশন চ্যানেলের কতটুকু প্রয়োজন সেই বিষয়গুলোও ভাবা দরকার।

চ্যানেল ওয়ানের এই সম্ভাবনার মৃত্যু ঠেকাতে নিশ্চই প্রধাণমন্ত্রী ,তথ্য মন্ত্রী সহ গনমাধ্যম কর্মীরা একটি কার্যকরী উদ্যোগ নেবেন। জরিমানা দিয়ে হোক কিংবা মালিকানা পরিবর্তন করেই হোক অথবা সরকারের নির্দেশিত সকল নিয়ম নীতি মেনেই যেন চ্যানেল ওয়ান আবারও সম্প্রচার শুরু করে ।

গত এক দশকে ভিজুয়্যল মিডিয়াতে আমাদের দেশে একটি নতুন যুগের সুচনা হয়েছে, এই মাধ্যমে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করার আগ্রহ যেমন বেড়েছে তেমনি ভালো প্রফেশনালও তৈরী হয়েছে। একটা ড্রিম সেক্টর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল টিভি মিডিয়া, কিন্তু গনমাধ্যমের উপর এমন হস্তক্ষেপ এই সৃজনশীল পেশাটিকেই শুধু ক্ষতিগ্রস্থই করবেনা সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন করবে।

পুনশ্চ: লেখাটি কেরামত উল্ল্যা বিপ্লবের নবজাতককে উৎসর্গ করা হলো।

ছবি কৃতজ্ঞতা : চ্যানেল ওয়ানের ফেসবুক গ্রুপ ।


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পুরোপুরি সমর্থন এই লেখার বক্তব্যের সাথে
এই দারুণ দুঃসময়ে অভিনন্দন জানাই কেরামত উল্ল্যা বিপ্লবকে

বাউন্ডুলে২৮ [অতিথি] এর ছবি

আসলেই কি আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে এ রকম 'সম্ভাবনার মৃত্যু ' ঠেকাতে পারব। আমারতো মনে হয়না।
বরং 'সম্ভাবনার মৃত্যু ' - এর সম্ভাবনা আরো বারবে...........................। কারন আমার প্রিয় স্বদেশ আজ সেদিকেই ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে।

বাউন্ডুলে২৮
auto

---------------------------------------------------------
আমি বাংলায় কথা কই...........

সোয়েব কবীর এর ছবি

সহমত.....
আমরা চাইনা রাজনৈতিক রোষানলের শিকার হয়ে কোন মিডিয়া যাতে বন্ধ না হোক। সম্ভাবনার আলো দেখার উদিত হবার আগেই যেন অস্ত না যাক ..........

Come back Channel 1 & also CSB News...

গৌতম এর ছবি

এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। সরকার চ্যানেল ওয়ান বন্ধের সমস্ত তৎপরতা থেকে সরে এসে নতুন সংস্কৃতির জন্ম দিতে পারে (অবশ্যই দুর্নীতিজনিত অভিযোগগুলো অন্যভাবে মোকাবিলা করতে হবে)। সরকারের কাছে এটুকু আশাবাদ বাড়াবাড়ি হবে না বলেই আশা করছি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত লেখকের সাথে । টিভিতে খবরটি দেখে খুব খারাপ লেগেছিল । এই সরকারের কাছ থেকে অন্তত এমন আচরণ আশা করিনি ।
যেখানে আগে একবার একুশে টিভি র সাথে .......কিছু বলার রুচি হচ্ছে না আর...

আমাদের দুর্ভাগ্য সব সময়েই অপরাজনীতির স্বীকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে ।
কবে যে বাঙালির এহেন নির্বোধের মত আচরণ বদলাবে !!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।