বেত উপাখ্যান ।

থার্ড আই এর ছবি
লিখেছেন থার্ড আই (তারিখ: বুধ, ১১/০৮/২০১০ - ২:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কুমিল্লা জিলা স্কুল
অতি সম্প্রতি বেত নামক এই অস্ত্রটিকে শিক্ষা মন্ত্রনালয় যাদুঘরে প্রেরণ করিবার উদ্যোগ নিয়াছে । শিক্ষকরা এখন চাইলেই তেল দেয়া বেত দিয়ে শিক্ষার্থীদের পশ্চাত দেশে আঘাত করতি পারিবেন না। এমন সিদ্ধান্তে কোমল মতি শিশু কিশোরদের মন থেকে কিছুটা ভীতি দূর হবে। তবে ত্যদড় বাচ্চা গুলো মহা খুশি হয়েছে! চুপি চুপি প্রেম পত্র দিবে কিন্ত মারের ভয় নাই। কিন্তু এখনকার পোলাপান কি জানে তাহাদের পূর্ব পূরুষদের পশ্চাদ দেশে কি পরিমান বেতের মার সহ্য করতে হইয়াছে ? কি পরিমান নির্যাতনই না সহ্য করেছিলাম আমরা সেই কৈশরে !

স্কুলের হাতে খড়ির সময়টাতে বেতের শাসন টের পাইনি, মা শিক্ষিকা হওয়াতে সহকর্মীর ছেলে হিসাবে অন্য শিক্ষকরা একটু বাড়তি আদর করতেন বটে। তবে বাশের কঞ্চি কিংবা প্রকৃত অর্থে বেত কি জিনিষ তাহা উপলব্দী করলাম কুমিল্লা জিলা স্কুলে ভর্তি হয়ে।

মারামারিতে র‌্যঙ্কিংএ প্রথম বড় হুজুর তিনি আরবি ক্লাস নিতেন। দ্বিতীয় আলী আজম স্যার- তিনি পড়াতেন সমাজ বিজ্ঞান, আর তৃতীয় ছিলেন সহকারী প্রধাণ শিক্ষক হাবিব উল্ল্যা স্যার। ক্লাস টিচার মোসলেহ উদ্দীনের নাম না বললেই নয়। শুধু মাত্র বাড়ীর কাজ না করে আনার জন্য এই স্যার গুণে গুণে পাঁচটা বেত কষতেন। বড় হুজুর পিটাতেন বেঞ্চের উপরে তুলে, 'যারা আরবি হোম ওয়ার্ক করে নাই তারা বেঞ্চের উপরে দাড়াও'। তার পর এক মাথা থেকে মার শুরু হতো। ওনি টার্গেট করতেন পাছায়। আলী আজম স্যারের মারের স্টাইল ছিলো একটু ভিন্ন , মারার আগে তিনি লম্বা বেত তুলে মারার ভঙ্গি করতেন, বেতটা তির তির করে নড়তো পিঠের উপড়ে। যেই চোখ বন্ধ করে পিঠে মার খাবার জন্য প্রস্তুত হতাম অমনি শপাং করে বাড়ি পড়লো পাছায় ! অথবা পাছায় মারার ভঙ্গি করে মারতেন হাতের পেশিতে!

সহকারী প্রধাণ শিক্ষক হাবিব উল্ল্যা স্যার দ্বাড়িয়ে থাকতেন স্কুল গেটে। অধিকাংশ সময়ে তিনি স্কুলের মূল গেটের সামনে দেয়ালের পাঁচিল ঘেঁষে অপেক্ষা করতেন। টিফিন পিরিয়ডের শেষ ঘন্টা বাজলে যারা ঐ নিদিষ্ট সময়ের পর স্কুলে প্রবেশ করতো তাদের পিঠে এক দু’ঘা নিয়ে তার পর প্রবেশ করতে হতো। প্রথম বাড়িটি খাবার পর যে যত বেশী দ্রুত দৌড়ে পালাতে পারে সে তত কম মার খেতো। আর প্রথম বাড়িটা খেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে দাড়ালেই তার কপাল পুড়তো।

এই সব এখন শুধুই স্মৃতি ...অত্যাচারের একটা নমুনা পাওয়া গেছে ইউটিউবে :
[url]

[/url]


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধু কি মুসলেহ উদ্দিন স্যার!রশিদ স্যা্‌র,রহি্ম স্যার কিংবা মতিন স্যার কি কম ছিলেন? আর পন্ডিত স্যার এর এক দিনের মাইর এর কথা জীবনেও ভুলব না!

থার্ড আই এর ছবি

রশিদ স্যার বিখ্যাত ছিলেন থাপ্পরের জন্য। বিজ্ঞান ক্লাস নিতেন। আমারে একদিন জিগায়, ঐ তুই জানস গাছ পেচ্ছাব পায়খানা করে। আমি বলি না। স্যার বলে ভালো করে দেখে বল। আমারে বারান্দায় নিয়ে কাঁঠাল গাছ দেখায়ে বলে;এইবার বল। আমি তাও পারলাম না। আমার গালে তিনটি কষে চর! "আরে ব্যাটা এই যে গাছের নিচে লাল লাল পাতা পড়ে আছে এই গুলা হইলো পেচ্ছাব পায়খানা।"
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

অতিথি লেখক এর ছবি

ান্নান স্যারের মাইরের উপরে মাইর নাই ভাই। একদিন এমন জোরে মাইর দিল, চোখে মুখে অন্ধকার দেখছিলাম। কিন্তু, তারপর ও স্কুলের দিনগুলো মিস করিরে ভাই।

নীল তারা।।
royshawoon@gmailcom

থার্ড আই এর ছবি

মান্নান স্যারও বিখ্যাত ছিলেন তবে তেমন ক্লাস পাইনি আমরা ।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

কনফুসিয়াস এর ছবি

আলী আজম নাকি আলী আকবর স্যার?
যাকগে, ঘুম থেকে উঠেই সচলের প্রথম পাতায় নিজের ইশকুলের ছবি দেখে মন ভাল হয়ে গেলো। হাসি
হাবিবউল্লাহ স্যারের মাইর খাইনি, তবে ঝাড়ি খেয়েছিলাম বৃত্তি কোচিং-এর সময় বোম্বাস্টিং (আমরা ডাকতাম পিঠ ফুটান্তি) খেলতে গিয়ে। আরেকবার বেদম মাইর খেয়েছিলাম মোশাররফ হুজুরের হাতে, ওনাকে অবশ্য এই নামে কেউ চেনে না, উনার নিকনেইমটাই বেশি প্রচলিত, নোয়াখালির আঞ্চলিক টানে কথা বলতেন, দেখতেও ছোটখাট।

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

থার্ড আই এর ছবি

আসলে আলি আকবর স্যার ও ছিলো আলী আজম ও ছিলেন। আলী আকবর স্যার সিনিয়র ছিলেন। হাবিবুল্লাহ স্যার মারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন না তেমন। আমাকে ওনি ডাকতেন বান্দর। টিফিনের সময় প্রায় প্রতিদিনই চটপটি খেতাম। এতো ভীর হতো যে লাইন ধরতে ধরতে টিফিনের টাইম শেষ। এখন চটপটি না খেয়ে তো আর ঢুকা যাবে না। আর তখনই হাবিবুল্লাহ স্যারের একটা বেত খেয়ে ঢুকতে হতো।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

হিমেল [অতিথি] এর ছবি

খলিল স্যার মারার আগে বেত বেঞ্চে ঘষতেন.. এটাকে তিনি বলতেন সান্টিং দেয়া.. কিন্তু মারতেন খুব আস্তে.. আর টেরা রহিম, উনার কাছে পড়তামনা বলে পড়া ধরলেই, না পারলেতো মাইর দিতোই, পারলেও দিতো..

থার্ড আই এর ছবি

খলিল স্যারকে মনে পড়ছে না তেমন.....টেরা রহিম আমারা যখন প্রায় বের হবো তার দু'এক বছর আগে জয়েন করেছেন তাই তেমন সাক্ষাত হয় নাই।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

Himel এর ছবি

বাইট্টা হুজুর!!

থার্ড আই এর ছবি

হা হা হা ...বাইট্টা হুজুর ! ওনি মারতেন লাফ দিয়ে দিয়ে ......
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

অতিথি লেখক এর ছবি

আহারে নিজের স্কুলের গেইট দেইখা আমিও ঢুকলাম! কতদিন পর!
আমি ছিলাম মর্নিং এ!
ইংরেজী ব্যকরন এর মতিন স্যার মাইর শুরু করলে ৫০টা ৬০টা গুইনা শেষ করা যাইতো না! আরবী'র বাইট্টা হুজুর হাতের উলটা পাশে ডাস্টার দিয়া! আহ!!
বাংলা'র নাসিমা আপা'র ছিল কান ধইরা উঠ বসের স্বাস্তি, তয় ১০/২০ বার না, আপা একবারে দিত ৪০০/৫০০ বার!

কাজী মামুন

নীল পিপড়া এর ছবি

আমি কুমিল্লা জিলা ইস্কুলে না পরেও জিলা ইস্কুলের হুমায়ুন কবির (পোলাপান হুক্কা কাইয়া ডাকত) সারের মাইর খাইসি মন খারাপ ভিক্টোরিয়া কলেজে পরার সময় একদিন ফুলার ইসলামিয়া হোস্টেলে আমার মামাত ভাই রে দেকতে গেসি, রুমে ঢুকার দশ পনের মিনিট পর সার আইসা এল পাথারি থাপ্পর মারা শুরু করলো, আমি কি বিসয় কিছুই বুজলাম না, পরে শুনলাম ওই রুম থাইক্কা নাকি কে সারের মাইয়ারে ভেস্কি মারসে!পরে আবার সার ভুল বুজতে পাইরা আমারে ডাকছিল আমি আর ডরে যাইনাই হাসি

নীল পিপড়া

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বানানটা উপাখ্যান।

আর শিরোনামে । কেন?

স্কুলে আমিও প্রচুর মাইর খাইছি। মন খারাপ

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

থার্ড আই এর ছবি

দিলাম ঠিক করে। নিন্দুকেরা কহে 'মাইরে প্রচুর ভাইটামিন আছে'।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সেজন্য আমার এখন পর্যন্ত মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া লাগে নাই। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যি বলতে কি আমি কিন্তু এখন আমার জিলা স্কু্ল এর ভবিষ্যত নিয়া ভীষণ চিন্তিত। এই ত্যাদড় পোলাপান গুলারে স্যারেরা সামলাবে কি করে? আর ফয়যুন্নেসা কিংবা মিসনা্রির মেয়েদের কি অবস্থা করে আল্লাহ মাবুদই জানে।বেতের মাইর খেলেও কিন্তু স্যারদেরকে আজ ও খুব মিস করি এমনকি গ্রীনিচ ইউনিভার্সিটির ক্লাস রুম এ বসেও !!!

থার্ড আই এর ছবি

আমাদের এক বন্ধু ছিলো নাম শিমুল, আমরা ডাকতাম ১২ টা বিশ। প্রতি দিন ঠিক দুপুর ১২ টা ২০ মিনিটে শিমুল পিছনের দড়জা দিয়ে হাওয়া হয়ে যেত। তার কারণ একটাই, ১২ টা বিশে 'আওয়ার লেডি অব ফাতিমা গার্লস হাই' স্কুলের মেয়েদের ছুটি হতো। মেয়েদের স্কুল ছুটির সময় শিমুলের রাস্তায় দাড়াতেই হতো।
কাহিনীর শেষ নাইরে ভাই।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

অতিথি লেখক এর ছবি

ভিডিওটা তো নটরডেম কলেজ এর মুখতার স্যার এর ...... এধরনের ব্যাবহার শিক্ষকের কাছ থেকে সত্যি দুঃক্ষজনক .. মন খারাপ

-অর্ফিয়াস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।