একটা পরোটার জন্য সাড়ে চাইর কেজি এবং ছয়টার জন্য সাতাইশ কেজি ঘি (৪.৫X৬=২৭ কেজি), নাকি ছয়টা মিলায়া টোটাল সাড়ে চাইর কেজি? প্রথমটা হইলে জানি না, ২য়টা হইলে ধারেকাছে জানি। পাজিউদ্দৌলার কথা জানি না, তবে তৎকালীণ প্রিন্সলি স্টেটগুলির অনেক রাজাগজাদের উদরবিলাসিতা যে এরকমই ছিল তা জানি। আমি সাড়ে চাইর কেজিতে ছয়টা পরোটা না, ১টা পরোটা ভাজতে সম্ভবত ১ 'সের' ঘি ব্যবহার করা হতো শুনেছি। সম্ভবত বলছি কারন 'সের' কথাটা মনে আছে, কিন্তু কত সের সেটা ১০০% নিশ্চিত মনে নাই। হয়তো বেশিও হতে পারে। যাজ্ঞে, ১টা পরোটা ভাজা হয়ে গেলে পরে ঐ ১ সের ঘি ফেলে দেয়া হতো এবং তারপর তাওয়া/কড়াইতে ফ্রেশ ১ সের ঘি ঢালা হতো পরের পরোটাটা ভাজার জন্য। প্রতি। এক। সের। ঘি। একটিমাত্র। পরোটার। জন্য। প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে শোনা গল্প।
এই খানে একটা ভুল হচ্ছে মালুম হয়। সেকালের পরোটা একালের পরোটার মতো এক কেজিতে ষোলটা নয়। দক্ষিণবঙ্গে শ্রমজীবি মানুষদের জন্য বানানো ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টগুলোতে তিন পোয়া/এক সের ওজনের রুটি বানাতে দেখেছি। সুতরাং ষাঁড়েরা এই চোষকাগজের মতো হালকাপাতলা পরোটা খেতো বলে মনে হচ্ছে না। ষাঁড়দের খানাদানায় ঘি-চিনি-জাফরান-মশলার আধিক্য এতো বেশি যে তারা মূল খাবারের আসল স্বাদ কখনো পেয়েছে বলে মনে হয় না।
তপন রায় চৌধুরীর কথায়ও শুনেছি আসল মোগলাই খিচুড়ি মানেই এক পোয়া চালে এক পোয়া ডাল ও এক পোয়া ঘি! তারপর উনি রসিকতা করে বলেছিলেন, "এই খিচুড়ি যে বেশিদিন খেত সে বেশিদিন খাবার সৌভাগ্য অর্জন করতো না"
@স্পর্শ ভাইঃ আওরঙ্গজেব মামু এক শিখ গুরুরে বলে তেলে পুড়ায় মারছিলেন। আমি পয়লা অবাক হইছিলাম খামোকা পানির বদলে তেলে সিদ্ধ করার কী কাম। পরে বুঝলাম পরোটা বাবদ যদি সাড়ে চাইর সের ঘি বরাদ্দ থাকে তাইলে চক্ষের বিষ পুড়ানো বাবদ তেল খর্চা করা আর এমন কী :/
@ষষ্ঠ পাণ্ডবদাঃ তা তো বটেই। দিনে ছয়টা পরোটা খাইত লিখছে, একেকটা পরোটা যে পাশবালিশের সাইজ সেইটার ছবি তো আর দেয়নাই (ইন ফ্যাক্ট মোগল মিনিয়েচার গুলিতে খাবারের ছবি বেশি নাই)।
@সত্যপীরঃ ভুল কি বললাম? হিমুর ফর্মুলা অনুসরণ করে ব্যাকট্র্যাক করলে দেখা যায় নবাবেরা এইসব ঘিয়াল পরোটা খেয়ে যে স্বাদ, পুষ্টি আর জোশ পাইতো (যে জোশের জোরে শত হূরীওয়ালা হারেম পুষতো), তার আদি ও অকৃত্রিম উৎস হচ্ছে "ষাঁড়ের বিচির হাওয়া" : পরোটা > ঘি > দুধ > গাভীন গাই > ব্যস্ত ষাঁড় > তার বিচি > বিচির হাওয়া। তো আমি ভেবে দেখলাম, এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে আরো সিমপ্লিফাইড, স্ট্রীমলাইনড, কস্ট-ইফেক্টিভ আর এনার্জি-এফিশিয়েন্ট করা দরকার। তাহলে এত ভজঘট এবং কোনো সিস্টেম লস ছাড়াই বিশুদ্ধ জিনিসটা - অর্থাৎ সেই "হাওয়াটা" - বিশুদ্ধ আকারে পাওয়া যাবে, খরচ বাঁচবে এবং পরিবেশবান্ধব হবে, সর্বোপরি ষাঁড় বেচারারা এত ওভারটাইম খাটাখাটনির হাত থেকে চিরতরে বেঁচে যাবে - যদি আমরা ডাইরেক্ট সেই হাওয়ার আধার বিচিটাই খাই। ষাঁড়দের আর কেদেকেটে খৎ লিখতে হবে না। সবশেষে আরেকটা লাভ আছে। মন-মন ঘি খরচ করে নবাবেরা যে অতি ব্যয়বহুল এবং আমাদের মতো আমজনতার পক্ষে আন-এ্যাফোর্ডেবল স্বাদ-পুষ্টি-জোশ লাভ করতে পারতেন এবং হারেমে গিয়ে তা খরচ করতে পারতেন, সস্তায় বিচি খেয়ে আমরাও হয়তো সেই স্বাদ-পুষ্টি-জোশ ও হাওয়া অর্জন এবং এ্যাফোর্ড করতে পারবো। বিচির উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না!
আধুনিক যুগের Rocky Mountain oysters বা Huevos de toro'র মতো করে না হলেও ইরান-তুরানে কিন্তু কয়লার আগুনে ঝলসে 'বিচি' খাওয়ার বিলাসী আয়োজন ছিল। ষাঁড়কে বলদ বানানোর প্রক্রিয়ায় বা ভালো মাংস পাবার আশায় এঁড়ে বাছুরকে চর্বি চুক্চুক্ নধর বানানোর প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত 'বিচি' হাজামদের কাছ থেকে শৌখিন রসুইঘরে পৌঁছে যেতো। তবে জিনিসটা খুব সস্তা নয়। কয়েক মণ ওজনের ষাঁড়/এঁড়ে থেকে মোটে কুড়ি তোলা/কাচ্চা 'বিচি' মিলতো। ইরানী-তুরানীরা মুঘলদের মা-মামা কূল। সুতরাং ওদিক থেকে অভ্যাসটা এদিকে চালান হলে ঘি এর খর্চা কমে যেতো। খামাখা গাভীন গাই, ব্যস্ত ষাঁড়দের এতো খাটাখাটুনি করতে হতো না।
*মেট্রিক আমলের মানুষদের জন্য হিসাব। ১ মণ = ৩৭.৩২ কেজি, ১ কাচ্চা = ১৪.৫৮ গ্রাম, ১ তোলা = ১১.৬৭ গ্রাম।