উত্তরাধিকারের সমস্যা

উৎস এর ছবি
লিখেছেন উৎস (তারিখ: সোম, ১৮/০৬/২০০৭ - ৫:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাল্টাপাল্টি পোস্ট হিমুর সাথে৷ মানে আমরা দুইজন মিলেঝিলে লিখব৷ আগে গনতন্ত্র নিয়ে একবার চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে পাঠকদের ধিক্কারের মুখে বেশী আগায় নি৷ যদিও আমাদের ব্লু-প্রিন্ট মোটামুটি সমাপ্তির পথে ছিল৷ এবার উনুন গরম থাকতে থাকতেই পুরোটা ভেজে নেয়া হবে৷

এরশাদ শিকদারের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে৷ খুলনার লোকাল গডফাদার, খুনী ইত্যাদি৷ শিকদারের মেয়ের নাম ঠিক মনে করতে পারছি না, বড় মেয়ে৷ শিকদারের ফাসীর আদেশের পর ও-ই সবচেয়ে বেশী কান্নাকাটি করছিল৷ প্রথমআলোতে এরকম লেখা ছিল, শিকদারের অন্যান্য ছেলেমেয়েরা চুপচাপ থাকলেও শিউলি (সম্ভবত এটাই নাম ছিল) কোনভাবেই তার বাবার ফাসীর আদেশ মেনে নিতে পারছিল না৷ শিকদারের অপরাধ যে গুরুতর সন্দেহ নেই৷ মানে শিকদারের যদি এসব অপরাধের পরও মৃত্যুদন্ড না হতো তাহলে বাংলাদেশে মৃত্যদন্ডাদেশ থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সন্দেহ দেখা যেত৷

এখন শিকদারের মেয়ের প্রতিক্রিয়াকে কিভাবে মুল্যায়ন করব? ঠিক? ভুল? যথাযথ? বাড়াবাড়ি? মানবিক? অমানবিক? শিকদারের মেয়ে শিকদারকে খুনাখুনি করার পরামর্শ দিয়েছে বলে শুনি নি৷ বাধা দিয়েছে বলেও শুনিনি৷ তিরস্কার করেছে কি না জানি না৷ বাধা দেয়ার কতখানি সুযোগ ছিল, বা দিলেই কাজ হতো কি না সেটাও প্রশ্নস্বাপেক্ষ৷

বঙ্গবন্ধুর খুনি মহিউদ্দিনের ছেলে রুবেনের কাজকর্ম কিভাবে দেখা উচিত৷ উচিত-অনুচিতের সীমারেখা টানা জটিল৷ কারন ভেতরের সমস্যাটা আসলে অনেক বেশী জটিল, আমি স্রেফ উদাহরন দিয়ে দিয়ে লিখছি বলে বিচ্ছিন্ন ঘটনার স্বাপেক্ষে হয়তো নানা রকম ব্যখ্যা করা যেতে পারে৷ রুবেন আর শিকদারের মেয়ে যা করছে বা করেছে, তাদের পক্ষে বিপক্ষে অনেক কিছুই বলা যায়, তবে অন্তরালের প্রক্রিয়া অনেক পুরোনো, ঘুরেফিরে বারবার আসছে৷

“আমাদের সময়” এর, নাঈমুল ইসলাম খান যেমন সরাসরি বলেন, যে তার বাবা রাজাকার ছিলেন, ইত্যাদি৷ এ ধরনের স্বীকারোক্তি, বা উত্তরাধকারের দ্বায়িত্ব নেয়াটা দর্শক হিসেবে শুনতে ভালোই লাগে, বাহবাও দেই৷ নাঈমুল ইসলাম মহিউদ্দিনের বা এরশাদ শিকদারের ছেলে হলেও হয়তো এরকম পরিচ্ছন্নভাবে ভাবে বেরিয়ে আসতে পারতেন৷ কিন্তু নাঈমুল ইসলামের মতো লোকের সংখ্যা কম বলেই আমার ধারনা৷

যেমন আমাদের মধ্যে কতজন বলার মতো যোগ্যতা রাখি যে, আমার বাবা রাজাকার, অথবা আমার বাবা ঘুষখোর ইত্যাদি৷ যোগ্যতার কথা বললাম এই জন্য যে আমার একটা সন্দেহ নাঈমুল ইসলাম বা এরকম দুচারজন যাদেরকে নিজেদের বাবা-দাদার অপরাধের দায় স্বীকার করতে দেখেছি তাদের অনেকেই স্বীয় যোগ্যতায় ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত৷ কে জানে এই প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কোন ভুমিকা আছে কি না এখানে৷

হিমু তার মতো বিশ্লেষন করে লিখবে, “Memetic Invasion”৷ আজকে আধঘন্টা নাড়াচাড়া করলাম বিষয়টা নিয়ে৷ এরকম উদাহরন আছে, বাপ-মা তুলে গালি দিলে লোকে খুব ক্ষেপে যায়৷ পাঠ্য বইয়ে, মুজতবা আলীর একটা লেখায় ছিল অনেকটা এরকম, “আপনার নামে কেউ কিছু বললে হয়তো মনে মনে সয়ে যাবেন, কিন্তু আপনার দেশের নামে কিছু বললে দশগুন হয়ে লাগবে”৷ কেন রে ভাই, দেশের নামে বললে আমার কি আসে যায়৷ মনে হতে পারে বাপ-মা, বা দেশের পবিত্রতা ইত্যাদি নিজের চেয়েও বেশী?

আরেকটা লেখা লিখব, বেশ কিছু সন্দেহজনক শব্দ নিয়ে, যেগুলো semantic validation করলে উতরাতে নাও পারে৷ এখানে সাইডট্র্যাক না হয়ে, এরকম বলা যায়ঃ বাবা, মা, এলাকা, দেশ এগুলোকে আমরা নিজেদের আইডেন্টিটির অংশ ধরে নেই৷ ধরা যায় আমরা জন্মগতভাবেই এভাবে প্রোগ্রামড৷ এগুলোর কোনটাই সেভাবে শিখতে হয় না৷ বাপ তুলে গালি দিলে, বাপের গায়ে গিয়ে গালি লাগার আগে নিজের আইডিন্টিটি/ইগো তে গিয়ে লাগে৷ অন্ধত্বের এই অংশটাতে আলো ফেলা অত সহজ নয়৷ একটা mental uplifting দরকার এজন্য৷ নানা ভাবে অর্জন করা যেতে পারে, কেউ এই রাস্তায় অনেকদুর, কেউ অন্তত কিছুদুর পার হওয়ার সামর্থ্য রাখেন৷

দৃশ্যতঃ নাঈমুল ইসলাম এটা পেরেছেন৷ নাঈমুল ইসলাম কে “আপনার বাপ রাজাকার” এটা সামনাসামনি বললে কি মাইন্ড করবেন, কে জানে, পরিচিত কেউ থাকলে এটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারেন৷ রুবেন মহিউদ্দিন স্পষ্টতই তার বাবার অপরাধ দেখতে পাচ্ছেন না৷ শিকদারের মেয়েও পায় নি৷ আমরা যারা ভাগ্যবান, যাদের বাবা সন্তানদের এরকম সমস্যায় ফেলে দেয় নি, তারা আপাতত বাবা দিবসে পিতাকে ধন্যবাদ দিতে পারি এজন্য৷


মন্তব্য

অরূপ এর ছবি

বস, আরেকটু ঘন ঘন লেখা যায় না?
Great as usual!.. চলুক
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই জন্যই কাউরে 'কুত্তা' কইলে খেপবো না; কিন্তু 'কুত্তার বাচ্চা' কইলে খবরাছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

জিনতাত্ত্বিক দিকটা জানিনা। তবে আবহ অবশ্যই একটা ফ্যাক্টার। যারা পরিবর্তিত হইছে তারা কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে ইন্টেলেকচুয়াল স্ট্রাগল করতে বাধ্য হইছে। এই পরিস্থিতিটা খুব জরুরি।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসিব এর ছবি

মইন দাবি করতো তার বাপে চিটাগাং জামাতের আমীর । সত্য মিথ্যা জানিনা ।


ছাগু পাগু ও উটুতাড়ক, দ্য এটিম ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সামহোয়ারের মঈন?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসিব এর ছবি

ফেডারেশনের মইন


ছাগু পাগু ও উটুতাড়ক, দ্য এটিম ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হুম।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হিমু এর ছবি

মেমেটিক ইনভেশন বা মিমের হানাদারি নিয়ে কেস স্টাডি করতে গিয়ে ভিড়মি খেলাম আজকে। হায়রে লাঞ্চব্রেক। দেখি শিগগীরই প্রথম পর্ব নামাবো।

গণতন্ত্র ২.০ এখনও ঝুলে যায়নি বলেই মনে করি। লেখা হচ্ছে না, পাঠের অভাবে। কিছু বইপত্র এনে রেখে দিয়েছি, পড়া হচ্ছে না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

উৎস এর ছবি

শনিবারের আগে বিষয়টা গুটিয়ে ফেলতে হবে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

এইঠে কি কোন প্রজেক্ট নাকি যারে নিয়া মাঠে নামছেন!
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>

উৎস এর ছবি

প্রজেক্ট তো। হিমু চালক, আমি হেল্পার।

অরূপ এর ছবি

গনতন্ত্র ২.০ এখানে দিলে ক্ষতি কি?
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

হিমু এর ছবি

কোন ক্ষতি নাই। আংরেজিতে লিখছিলাম। বাংলায় গণতন্ত্র ২.০ উৎস ভাই-ই কয়েন করেছেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

আমি উৎস ভাইয়ের সামহোয়্যারে গোড়ার দিকের পোস্টগুলি এখানে পুনর্পোস্টের দাবি জানাচ্ছি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ভাস্কর এর ছবি

হাসিব মঈনের কথায় বিশ্বাস কইরা বহুত লোকে ধরা খাইছে। ২০০০'এ ও সবাইরে কইলো ওর বাপে মরছে তাই সুইজার ল্যান্ড থেইকা ওরে ফিরা আইতে হইছে...তার কিছু দিন পর ওর চাচাতো ভাই তানিম ভাইরে জিগাইলাম আপনের চাচা নাকি মরছে কয়দিন আগে...সে তো পুরা আবু বক্কর! কি কও! আমি তো তার লগে এক সপ্তা আগেও দেখা কইরা আইছি!

আর এখন নাকি মঈনের বড় ভাই আছে ডেইলি স্টারে...সে আবার জানেনা মঈন কই থাকে...


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।