দরজা

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি
লিখেছেন আশরাফুল আলম রাসেল [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৯/১১/২০০৯ - ১০:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দরজা

কিছু দরজা বন্ধ থাকাই ভালো। কিছু দরজা কখনোই খুলতে নেই। কিছু দরজা কখনোই থাকতে নেই। তবু, কাল হঠাৎ করেই ভুল দরজাটাই খুলে ফেলে রূপকথা। আশ্চর্য, এই ঘর তার পরিচিত। এখানে রূপকথা আগেও এসেছে। দেয়াল থেকে শুরু করে খাট, টেবিল, চেয়ার, আলমিরা সব তার পরিচিত। এই ঘরের জানালায় বসেই রূপকথা অপেক্ষার প্রহর গুণতো। ভাবতো ইফতির কথা। ইফতি তখন প্রায়ই দেরি করে বাড়ি ফিরতো। বাড়ি যতো কম আসা যায় ততোই ভালো। রূপকথা ট্যুরে গেলে ফিরে এসে দেখতো অগোছালো ঘর। রূপকথা বুঝে নিতো নাজিয়া এসেছিলো। তার কিংবা নাজিয়ার, কারোরই সম্পর্কটা শেষ পর্যন্ত টেকেনি ইফতির সাথে। কিন্তু ইফতি চলে যাবার পর রূপকথা আর কখনো ভালোবাসতে পারেনি কাউকে, রূপকথার ধারণা। ইফতিকেও আসলে সে ভালোবাসতো কিনা, সেই দরজার তালা বন্ধ এখনো। কিন্তু কেন সেই একই ঘটনা ঘটলো তার সাথে। রূপকথা এখন দাঁড়িয়ে আছে ফারজানার ঘরে। এই ঘরটার সাথে রূপকথার ঘরের কিছু অমিলও রয়েছে। প্রথম অমিল হচ্ছে, চারপাশে প্রচুর খেলনা। ফারজানার বাচ্চা আছে। হয়তো রূপকথা দরজা খোলার আগে হয়তো তারা এ ঘরেই খেলছিলো। হয়তো তখন ফারজানা বিষন্ন চোখে জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলো রাস্তায়, ভাবছিলো কখন ফিরবে ইমরান। আর বার বার ল্যাম্পপোস্টের আলোটাকে ঢেকে দিচ্ছিলো কুয়াশা। টেবিলে খাবারগুলো ঠান্ডা হচ্ছিলো। ফারজানা জানে রাতে ওদের দুইজনের কারোরই একসাথে খেতে বসা হবে না। নাহ, সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একটু পরেই ঘরটায় রূপকথা ইমরানকে দেখতে পায়। ইমরান একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দেয়। ধোঁয়ায় ঘরটা ক্রমশঃ অস্পষ্ট হতে থাকে। রূপকথা ইমরানের হাত ধরে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। বারান্দায় বেতের সোফায় বসে কিছুক্ষণ। ফ্রিজে বিয়ার আছে। ইমরান যায় ওদিকটায়। ইমরান চলে যাওয়ার পরপরই রূপকথা আবারও ভাবতে শুরু করে। বাথরুম থেকে শাওয়ারের শব্দ আসছে। ইমরান সম্ভবত সেখানে।
আসলে ইমরান তো তাঁর বন্ধু। কিন্তু নাজিয়াও তো ইফতির বন্ধুই ছিলো। ইফতি রোজ রাত করে বাড়ি ফিরতো। ইমরানকেও তো সে অনেক রাত করায়। ধ্যাৎ, যাচ্ছেতাই একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছিলো ইফতি, কোন ক্লাস নেই...ফারজানাও তো তাকে নিয়ে এমন কথা বলতেই পারে। বলার জন্য তো কারণ লাগেনা। যা ইচ্ছে হোক, ইমরানকে সে ভুলতে পারবে না। তাছাড়া, তাকে নিয়ে সে কোনো সিদ্ধান্তও নিতে যাচ্ছে না। ফারজানার এতো কষ্ট পাওয়ার কি আছে? কিন্তু রূপকথাও কষ্ট পেতো। অবহেলার আলাদা একটা যন্ত্রণা আছে। সেই যন্ত্রণা দিনরাত্রি গ্রাস করতো রূপকথাকে। কিন্তু, বন্ধুর মতো কিছু সময় ইমরানের সাথে কাটালে দোষ কি? আচ্ছা, নাজিয়াও কি এমন ভেবেছিলো? নাজিয়ার সাথে একটা ছেলের সম্পর্ক ছিলো। কি যেন নাম, মনে পড়ছে না। সেই ছেলেটিও কি কষ্ট পেতো রক্তিমের মতো। আচ্ছা, ফারজানার কি হবে? ফারজানাও কি তার মতো...না না, তাই কি হয়...বাচ্চাকাচ্চা থাকলে ওসব সিদ্ধান্ত কেউ নেয় নাকি? কিন্তু যদি নেয়...। আর ভাবতে চায় না রূপকথা।

সম্পর্কটা যে কিভাবে হলো! কিভাবে যে বন্ধুত্ব অন্য এক সম্পর্কে বদলে যায়! ধীরে ধীরে পছন্দ করার কারণ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে বাড়ে শেয়ারিং, একসাথে কাটানো সময়ের দৈর্ঘ্য। ধীরে ধীরে বাড়ে সিদ্ধান্তহীনতা আর পাগলামী। টেলিফোনে কথা হয় রোজ, দেখা হলে ক্ষতি কী? কাল দেখা হলোই তো আজ হলে কী ক্ষতি? এর বেশি...তার বেশি...প্রথম প্রথম ইমরান চায়নি, এসব রূপকথা জানে। আচ্ছা, ফারজানার মতো ঐ রকম চেহারার একটা মেয়েকে কিভাবে এতো ভালোবাসতে ইমরান কে জানে? না, আসলে এইজন্যই ওকে ভালোলাগতো। কেয়ারিং মানুষ খুব ভালো লাগে রূপকথার। তার কারণে কেয়ারনেসের প্রবলেম হলেও ক্ষতি নাই। আকাশ যেমন ঝুঁকে থাকে নদীর বুকে, রূপকথা তেমনি ঝুঁকে পড়েছিলো। আকাশ কখনো নদী ছোঁয়ার সাহস করেনি, করলে চাঁদ ডুবে যেতো, আকাশ জানে, রূপকথা বোঝেনা। প্রথম প্রথম ইমরানের উদাসীনতা তাকে কষ্ট দিতো খুব। কেমন জেদ পেয়ে যেতো। ইমরানের তাকে ভালোবাসতেই হবে। আসলে ইমরান কি নিজেও চাইতো জোর করুক রূপকথা? তার মতো ইমরানও কি এই সম্পর্ক গড়ার জন্য সমান দোষী নয়? কিংবা আসলেই কি কাউকে দোষ দেয়া যায়? কিন্তু ফারজানা আর ইমরানের বাচ্চারা, ওদের কী হবে? তাহলে কি ইমরান খারাপ মানুষ? রূপকথা একটা খারাপ মানুষকে ভালোবাসে? আসলে এই সম্পর্কগুলোকে কোনোভাবেই সংজ্ঞায়িত করা যায় না। ততোক্ষণ পর্যন্ত এই ধরণের সম্পর্কের বিপক্ষে থাকে মানুষ, যতোক্ষণ নিজে না জড়ায় । জড়িয়ে গেলেও বেশি ঘাঁটায় না। নিজেকে নিয়েও না। কারো সামনে এই ধরনের সম্পর্কের সাফাই গায় না। একটা অন্ধকার গলিতে গিয়ে মাঝে মাঝেই রূপকথা আর ফেরার রাস্তা পায় না। এখানেও একটা ল্যাম্পপোস্ট ছিলো। অনেক আগেই তার বাল্ব খসে পড়েছে। ইমরানকে গলিটায় সেই পথ চিনিয়ে নিয়ে এসেছে। ইমরান ফিরতে পারে হয়তো, রূপকথা পারে না। রূপকথার ফেরার পথ আছে কিনা সে বুঝতে পারে না। তার কোনো বন্ধু নেই এখন। নেই পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ। নতুন কিছু মুখ তার চারপাশে ঘুরে বেড়ায়, তারা প্রয়োজনের বন্ধুই বেশি। না, অনেকটা বোকামী করে ফেলেছে রূপকথা। আসলে বোকারাই বোধহয় এই ধরনের সম্পর্কে জড়ায়। অথবা বোকাদের পেয়ে বসে কেউ কেউ। আজ ফারজানার পাশে তো কেউ নেই। থাকবে কি করে। আজকাল সবার সাথেই যে তার বিরোধ হয়। আর নিভৃতে যদি কেউ থেকেও থাকে তাকেও গ্রাস করেছে নিরবিচ্ছিন্ন অভিমান। ইমরানের চারপাশে সবাই আছে। সবার মাঝে থেকে ইমরান তার জন্য কখনো আলাদা। রূপকথা আলদা সবার থেকে, তাকে ঘিরে কেবলই একাকিত্বের অস্থিরতা আর নীল রাত্রির চাবুক। তার মতো একলা ঘরে থাকলে ইমরান কি করতো? আসলে ইমরানের ভালোবাসাটাতো রূপকথার মতো নয়...
...মানে কি, তার মতো নয় মানে...একটা থাপ্পড় দিবো...কি লিখছো এসব সৌমিক? আর কোনো গল্প পেলে না...তুমি না রূপকথাকে ভালোবাসো...আর আমাকে নিয়ে...

(সংগৃহিত)

বি:দ্র: এই গল্পে সৌমিকের নাম রক্তিম। তার সাথে রূপকথার যে গল্পটা সেটা অলিখিত থেকে যায়। লেখা এই পর্যন্ত গড়াবার পর এরপর কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয় রাস্তায়। বেহুলা বাতাস তাকে ভাসিয়ে নিয়ে আসে আমার টেবিল পর্যন্ত।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

"(সংগৃহিত)" মানে কী? টুকলিফাই নাতো?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

মাল্টিপল সম্পর্কের এই টানাপোড়েন আসলেই জটিল, খুব জটিল! ভালো লাগলো গল্প। গল্পের ভেতরে অনেক গল্প পাওয়া গেল।
....................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

হিসাম সেতু  এর ছবি

সম্পর্ক এমনই....।লেখক নিজেও সম্পর্কের ভ্রমে ..।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

ভালো লাগলো রাসেল। বিষয়টা ভালো, মানে উপাদেয়, সম্ভাবনাময়।
তবে, গল্পের সংগঠনটাতে আরেকটু বিভাজন হ'লে হয়তো ধ'রে ধাপ বেয়ে ওঠার জন্য কিছু খাঁজ পাওয়া যেতো। সেদিক থেকেই যা আরো গোছালো হ'তে পারতো। এমনিতে, যথেষ্ট চর্বিত চেনা এই আধুনিক বিষয়টাকেও তুমি যে চোখ থেকে দেখে, দেখালেও, সেটা পুরোপুরি অভিনব না হ'লেও অন্য তো বটেই। হাসি নিয়মিত লেখার চেষ্টা করো, চর্চা-চর্যা হ'তে থাক আরো (তাতে ছোটখাটো ভুলচুকগুলোরও আর জায়গা থাকবে না আর কি!), হ্যাঁ যদিও চাকরামি আছেই, থাকবেও আমাদের। হাসি

ওহ্, সামগ্রিকে 'বেশ ভালো' দাগিয়ে গেলাম।

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

ধন্যবাদ সাইফুল ভাই। হুম লেখার বিষয়টা একদমই অভিনব নয়। গল্পটা বিষয়ের মতো ইচ্ছে করেই একটু অগোছালো করার চেষ্টা ছিলো। তাতে হয়তো ক্ষতিই হয়েছে বেশি। নিয়মিত লেখা হয় না। লিখতে পারলে আমার নিজেরও অনেক ভালোলাগতো। মাঝে মাঝেই লেখার সাথে বিরোধটা দানা বেঁধে ওঠে। সম্পর্কের অবনতি ঘটে আজকাল প্রতিদিন। সম্পর্ক আসলে কে যে বেশি অভিমানী, বুঝতে পারি না।

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

ধন্যবাদ পান্থ মন্তব্যের জন্য। এমন গল্পের মাঝে আসলেই অনেক গল্প লুকিয়ে থাকে।

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

ধন্যবাদ সেতু ভাই। গল্পের চরিত্রের লেখক যে সম্পর্কের ভ্রমে আছে তাতে সন্দেহ নেই।

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

না মুর্শেদ ভাই, গল্পটা টুকলিফাই না। হা হা হা। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।