কেন্দ্র থেকে বৃত্তের বাইরে

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি
লিখেছেন আশরাফুল আলম রাসেল [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২২/১২/২০০৯ - ২:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অরূপ তার সমস্ত ভাবনাকে কেন্দ্রীভূত করার পর, সমস্ত ভালোবাসাকে, বিশ্বাসকে, কষ্টকে, ক্ষোভকে, না পাওয়াকে কেন্দ্রীভূত করার পরই ঘটলো ঘটনাটা। আসলে এমন হবে অরূপ আগে ভাবতেও পারেনি। গল্পের রাতগুলো ছিটকে গেলো ঘুমহীন এক অন্ধ গহ্বরে। নিকোশ শূণ্যতায় স্বপ্নগুলো ক্রমাগত কাটলো ডুব-সাঁতার, তবু ক’ল পেলো না কোনো। কবিতায় এলো ভীষন ছন্দপতন। অরূপ কবে যেন কবিতাকেও কেন্দ্রীভূত করেছিলো বোকার মতো।
কেমন আছে স্বাতী? অরূপ জানতে পারে না, ভাবতে পারে না, ভালোবাসতে পারে না, রাখতে পারে না বিশ্বাস। স্বাতী অরূপকে শেষ কবে চিঠি লিখেছিলো সেই তারিখটা ক্যালেন্ডারের পাতার সাথেই হয়তো উঠে গেছে কোন জিলাপীর ঠোঙায়। শেষ কবে তাকে ভালোবেসেছিলো স্বাতী? অরূপ ভীষন হোঁচট খায় এই জায়গায় এসে, কখনো বেসেছিলো কি? ভালোবাসা কেমন তবে? অরূপ যেভাবে বাসে, স্বাতী যেভাবে বাসে, নাকি স্বাতী যাকে বাসে আর সে বাসে স্বাতীকে...? ভালোবাসা কি হিংস্র নেঁকড়ের মতো একাই সব গ্রাস করতে চায়? ভালোবাসা কি সংক্রামক রোগ কোনো, একবার ভালোবাসলে অনেককে ভালোবাসতেই ইচ্ছে হয়? স্বাতী থাকেনি অরূপের সাথে। আসলে কখনোই ছিলো না। আসলে একটা তুলনা হয়েই স্বাতীর কাছে আশ্রয় পেয়েছিলো অরূপ। স্বাতীর কষ্টের জায়গাগুলোকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবার জন্য অরূপের নিজেকে পাল্টাতে হয়েছে খুব। স্বাতীর উপযোগি করে তুলতে গিয়ে সবসময় রাখতে হয়েছে হাসিমুখ। তবু, মাঝে মাঝেই আরো অনেকের হাসি স্বাতীর ভালোলেগে যায়। আর তখন অরূপ নিজেই হয়ে যায় হাসির উপকরণ, হাস্যকর কিছু একটা।
স্বাতী আর অরূপের সম্পর্ক হবার পর সময়গুলো ভালোই যাচ্ছিলো, অন্তত: অরূপের মেনে নেবার প্রবনতা তখন আরো প্রখর ছিলো। একদম প্রথম প্রেমের মতো সুন্দর। স্বাতীর প্রতিবারের টাঁটকা প্রেমের মতো। স্বাতী এবং স্বাতীর টাঁটকা অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকা এখনকার কারো মতো সময়টা ছিলো ভীষন সুখকর অরূপের কাছে। সময়গুলো যেতো স্বাতীর অপেক্ষার প্রহর গুণে, ঠিক এখন যেমন যায়। স্বাতী প্রতি মুহূর্তেই তুলনা করতো অরূপ অন্য কারো সাথে, আর কারো সাথে। প্রতিটিদিন শুরু হতো একটা রেসের মতো। জিততে হবে, নিজেকে সংযত রাখতে হবে, উহু মুখটা অমন থ্যাবড়ানো লাগছে কেন...তবু, কোনো একদিন স্বাতীর অন্য কাউকে ভালোলেগে যায়। নিজেকে প্রমাণ করতে অরূপ হয়ে ওঠে মরিয়া। করবে না-ই বা কেন? অরূপ তো শুধু একটা রেসই শিখতে পেরেছিলো। তুলনার রেস। যতোবার সে প্রাণপণ দৌড়েছে, ততোবারই স্বাতী ইঙ্গিত দিয়েছে একপেশে রেফারির মতো। তারপর একদিন পুরোনো হয়েছে সেই ছেলেটিও। তুলনার চাপে হেরে আর খেলার ধৈর্য্য রাখতে পারেনি। শুধু সে কোন প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে অরূপ একাই খেলছে এই খেলা। কতোবার যে তাকে হারতে হয়েছে, নিজেকে একদিনই যে কতোবার প্রমাণ করতে হয়েছে...। আর তারপর তিলে তিলে নিজেকে নিঃশেষ করতে করতে অরূপ একদিন সত্যিই বুড়ো হয়ে যায়। জিরজিরে শরীরে, ঝাঁঝরা বুকে এখন তার দাঁড়াতেও খুব কষ্ট হয়। লোকের বয়স বাড়লে ক্ষতি নেই, কিন্তু হৃদয়ের বয়স বাড়লে, সম্পর্কের বয়স বাড়লে এই রেসের জন্য সে ভীষণ অনুপযোগী । অরূপ কাল সন্ধ্যায় সিন্ধান্ত নিয়েছে সে আর এই রেস খেলবে না। অরূপের কষ্ট হচ্ছে না এমন না, তবে তার রকম পাল্টেছে। এই প্রথম অরূপ শিখেছে স্বাতীকে ঘৃণা করতে। এই প্রথম অরূপের নিজেকেও ভীষণ ছোট মনে হচ্ছে। চারপাশের চেনা বলয় থেকে বেরিয়ে সে কী এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছিলো এতোদিন? কিন্তু আশ্চর্য, আজ একদম প্রথমবারের মতো তার নিজেকে ভীষণ সাহসী মনে হচ্ছে। খেলার মাঠের বাইরেও আছে আরো এক সবুজ পৃথিবী। স্বাতীর সম্মিলিত শেষ আঘাতটা তাই আর কাতর করতে পারছে না তাকে আগের মতো। অনেক দীর্ঘকাল চলছে এই খেলা। মাঠের কোন ঘাসটা আজ নতুন ডগা তুলেছে তাও অরূপের জানা। তবু এক কংক্রিট সন্ধ্যায় অরূপ হিসেব কষে। আশ্চর্য অংকে কাঁচা অরূপ হিসেব কষতেও শিখে গেছে! কেন্দ্র থেকে সে বের হয়ে এসেছে একদম বৃত্তের বাইরে। পাচ্ছে মুক্তির সাধ একদম প্রথমবারের মতো। সে পেরেছে, অরূপ জানে স্বাতী বৃত্ত রচনার বৃত্ত থেকে কোনোদিন বের হতে পারবে না।


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

অরূপ কি শেষ পর্যন্ত বৃত্তের বাইরে থাকতে পারবে?
..................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

অরূপ হয়তো অন্য কোনো বৃত্তে নিজেকে কেন্দ্রীভূত করবে। আসলে জীবনটা এমনই। বারবার কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়া।

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

মূলত পাঠক এর ছবি

পড়ে মনে হচ্ছিলো উপন্যাস লেখার আগে খসড়া লিখেছেন, ছোটোগল্পের রস পেলাম না। এই কাঠামোকে ছোটো ছোটো ঘটনা দিয়ে প্রকাশ করলে ভালো উপন্যাস হতে পারে।

কয়েকটা বানান: নেকড়ে, টাটকা, নিকষ, শূন্যতা, প্রবণতা, উপযোগী (অনুপযোগী'র বানান কিন্তু ঠিক লিখেছেন হাসি )।

তুলিরেখা এর ছবি

আহা, অরূপের আর ভয় কী? স্বাতী নাই কিন্তু বৃত্তের বাইরে এখন চিত্রা বিশাখা শতভিষা রেবতী-হাজার হাজার।
অরূপেরা এমনই। একেবারে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। তবু "স্বাতী কেন আর কাউকে, উঁ উঁ" বলে ঠোঁট ফোলানো কমলো না। হাসি
নিজের আমার অশ্বিনী ভরণী কৃত্তিকা রোহিণী সবাইকেই চাই, কিন্তু ওদের কারুর তেমন হলে চলবে না, তাদের জন্য আমি একাই একেশ্বর! নইলে উঁ উঁ উঁ। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

তোমার প্লটগুলো কিন্তু মজার থাকে রাসেল, বরাবরই, সেগুলোর মধ্যে সত্যিই অনেক অনেক আলাদা আলাদা গল্প থাকে, অনেক সম্ভাবনাময়। সেভাবে গুছিয়ে হ্যান্ডেল করা উচিত কিন্তু।
বিষয়বস্তু আর উপাদানে বেশ ভালো লাগলো। চূড়ান্ত বা সার্বিক গঠনে বেশ ভালো না। হাসি

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

হুমম, লিখতে চাই গুছিয়েই, তবু বেশ অগোছালো হয়ে যায়।

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।