ফ্রিডম অব ডিপ্রেশন ইন বাংলাদেশ...

বিপ্লব রহমান এর ছবি
লিখেছেন বিপ্লব রহমান (তারিখ: বুধ, ০৯/০১/২০০৮ - ১১:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..
এই সমাজ বাস্তবতায় আমি বিচার চাই না, আমি শুধু বাঁচতে চাই -- রাজশাহীর সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম আকাশ তাঁর ওপর সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই কথা বলে যখন কান্নায় ভেঙে পড়েন, তখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব আইরিন খানের সঙ্গে সাংবাদিক - মানবাধিকারকর্মীদের পুরো মতবিনিময় সভায় নেমে আসে দীর্ঘ নিরবতা।

বুধবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারীর এই মত বিনিময় সভায় আকাশ বর্ণনা দিচ্ছেলেন, দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার দায়ে কী ভাবে সন্ত্রাসীরা তাঁকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে সারারাত ধরে পেটায়, বৈদ্যুতিক শক দেয়।...তার পাশেরই বসেছিলেন আরেক নির্যাতীত সাংবাদিক টিপু সুলতান। তিনি অবশ্য তখন আমার মতোই ব্যস্ত ওই মতবিনিময় সভার তথ্য সংগ্রহ করতে।

আকাশের কান্নায় যে চাপা নিরবতা তৈরি হয়, আইরিন খান নিজেই তা ভাঙেন। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে একজন নির্যাতীতের চরম ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

টিপু সুলতানও বলেন গ্রামীণ সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার অসুবিধা। এটি এখন জরুরী অবস্থার মধ্যে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক অমি রহমান পিয়ালের কণ্ঠেও হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি পেশাগত পরিচয় ছাড়াও নিজেকে ব্লগার হিসেবে পরিচিতি দেন। পিয়াল বলেন, অতিগুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দিন ইন্টারনেট লাইন থাকে না, ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যায়, চলে যায় বিদ্যুত। কঠিন হয়ে পড়ে অনলাইন এই দৈনিকে নিউজ আপডেট দেওয়া। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার সামনে আকাশ ও টিপু সুলতানের উদাহরণ আছে। তাহলে আমার কাজের নিশ্চয়তা কোথায়? আমিও কী ভবিষ্যতে আকাশ বা টিপু সুলতান হবো?

এর পর আদিবাসী নেতা সঞ্জিব দ্রং চলেশ রিছিলে মৃত্যূর প্রসঙ্গে টানেন।

সবার মনে আছে নিশ্চয়, টাঙ্গাইলের মধুপুরের গারো আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিল (৪১) গত বছর ১৮ মার্চ যৌথ বাহিনী হেফাজতে মারা যান। তিনি ছিলেন মধুপুরের ইকো - পার্ক প্রকল্পের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আদিবাসী আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলেশ রিছিল মারা গেছেন দাবি করা হলেও নিহতর পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্যাতন করেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

আইরিন খান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, নিঃসন্দেহে বিচার বাহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে চলেশ রিছিলের প্রতি সুবিচার করা হয়নি, অন্যায় করা হয়েছে। চলেশ রিছিলের বিষয়ে আমি এ দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি; চিঠি দিয়েছি। তা^র মৃত্যূর বিষয়ে গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।

এর পর আমি পেশাগত ও ব্লগার পরিচয় দিয়ে বলি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকার একদিকে ইন্টারনেট মনিটরিং, সাংবাদিকদের টেলিফোন ট্যাপিং করছে। সেনা বাহিনীর আপত্তির কারণে গত ১৫ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে মোবাইল টেলিফোন যায়নি। সেখানে বন্ধ রয়েছে তথ্য যোগাযোগের অবাধ প্রবাহ। এই সরকারই আবার তথ্য অধিকার আইন করতে যাচ্ছে। পুরো বিষয়টিকে আমার কাছে এক ধরণের প্রহসন বলেই মনে হচ্ছে।

জরুরী অবস্থা ভঙ্গের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র - শিক্ষকদের ধরপাকড়ের বিষয়ে আমি বলি, আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে, সেটি ভালো কথা। কিন্তু সরকার একদিকে শিক্ষকদের বিচারের মুখোমুখি করাবেন, আবার দস্তখত দিয়ে রাষ্ট্রপতি সাধারণ ক্ষমা দেখাবেন -- এটি কোন ধরণের প্রহসন? আমরা তো শুনেছি সামরিক জান্তা আইয়ূব খানের শাসনে এমনটি হয়েছে!

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়ে তেমন জোড়ালো কোনো মানবাধিকার আন্দোলন হয়নি, এটি সাংবাদিক - মানবাধিকার কর্মী সবার যৌথ ব্যর্থতা।

প্রথম আলোর ফারুক ওয়াসিফসহ সেখানে উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরাও সকলে বলেন, এক ধরণের সেনা শাসনের মতো দুঃশাসনের ভেতর দিয়েই দেশ যাচ্ছে। এ অবস্থায় মানবাধিকারের অবস্থা যা হওয়া উচিত, তাই হচ্ছে।

মতবিনিময় ওই অনুষ্ঠানের বিষয় টেনে (ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ) সমকালের একজন সাংবাদিক তো বলেই ফেললেন, এখন ফ্রিডম অব ডিপ্রেশন ইন বাংলাদেশ চলছে!

আইরিন খান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, তা এদেশের সরকারগুলোর কাছে পরিস্কার নয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মৌলিক মানবাধিকারের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। নইলে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

এতে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আসিফ সালেহ। সভাপতিত্ব করেন দৃক নিউজ প্রধান শহিদুল আলম।

আইরিন খান অ্যামনেস্টি ডটঅর্গ স্ল্যাস বাংলা নামে ওয়েব সাইটও উদ্বোধন করেন।।


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আইরিন খানের ওই মতবিনিময় অনুষ্ঠানের খবরটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ পড়ুন এখানে


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

বিপ্লব রহমান এর ছবি

একমত। উনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কোনো 'পোস্ট' এ নেই। তবে উনি মানবাধিকার সংস্থা দৃষ্টিপাতএবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে জড়িত বলেই জানি। ধন্যবাদ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

শুধু শিরোনামটার জন্যই হাজার খানেক বিপ্লব। বাকিটা নিয়ে কী বলবো আর? মন খারাপ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

বিপ্লব ভাই, মিটিং-এর বিবরণের জন্যে ধন্যবাদ। এমনিতে আপনার ব্যক্তিগত ইম্প্রেশন কি হলো এমনেস্টির ব্যাপারে?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

Biplob Rahman এর ছবি

Sova tike ektu elomelo mone hyache, tobe Irene Khan ke mone hyache khubi antorik...sabike onek dhannabad.

সৌরভ এর ছবি

রিপোর্টের জন্যে ধন্যবাদ।

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ কে আমার কৈশোরে দেখেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অগ্রজের সাথে পরিচয়ের সুবাদে আমাদের বাসায়।
আমার সাথে পরিচয়ের সুযোগ হয়নি কখনো।

মিডিয়ার কণ্ঠ উন্মুক্ত হোক এই সময়ে।


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

এম. এম. আর. জালাল এর ছবি

রিপোর্টের জন্যে ধন্যবাদ।আর ও সংবাদ চাই.

====
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"


এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের আলাদা কোন বাংলাদেশ চ্যাপ্টার ছিলো না এতোদিন । নতুন হলে বলতে পারছিনা ।
চলেশ রিচিলের বিষয়টি দক্ষিন এশীয়ান ডেস্ক হ্যান্ডেল করেছিলো । এমনেষ্টির পক্ষ থেকে এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচার দাবী করে সরকারকে চিঠি দেবার পর পুনঃ ময়নাতদন্ত হয় ।

সবিনয়ে বলি, চলেশ রিচিল সংক্রান্ত রিপোর্টগুলো দক্ষিন এশিয়ান ডেস্কের নজরে এনেছিলাম আমি ।
না, আমি এমনেষ্টি কর্তৃপক্ষের কেউ না । 2.2 মিলিয়ন একটিভিষ্টদের একজন ।

এ সংক্রান্ত একটা পোষ্ট ছিলো পুরোনো
এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল এ 'চলেস রিচিল' । । পেছনের গল্প
----------------------------------------
সঙ্গ প্রিয় করি,সংঘে অবিশ্বাস

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
নিঘাত তিথি এর ছবি

ফ্রিডম অব ডিপ্রেশন ইন বাংলাদেশ...

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

সত্যিই তাই। এটি আমরা সংবাদকর্মিরা প্রতি পদে পদে টের পাচ্ছি।... মন খারাপ


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।