গাঞ্জা গল্প: কাঠিন্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: শুক্র, ২৩/১১/২০০৭ - ৯:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষটার কঁড়া পড়ে গেছে - পায়ে, হাতে, গোঁড়ালিতে, আঙুলে-আঙুলে। একফালি ছিন্ন কাঁথার আয়েশে-আরামে ফাঁকে ফাঁকে ছারপোকা ধরা কেঠো খাটের দোদুল্যমান আসনে সারারাত গুজরানে পাথর হয়ে আছে বুক-পিঠ-অস্থি মায় চর্ম। হাতে পেঁড়া নারকেল তেলে জবজবা চুলে জটা বাধা হয় নি। তবু আঁকিবুকি মুখমন্ডলে কাঠিন্যের শান্তি, অসুখের অস্বস্তি; কিংবা পোড়ো হুতাশের একরকম ন্যাড়া ন্যাড়া স্বস্তি।

সূর্যের সাথে ভাবনাহীন সখ্যতা মনে পড়ে তার অভাবেই শুধু। ইদানিং মেঘেরা দূরন্ত খুব, বারবার মনে পড়ে যায় সূর্য ছিলো ঠিক গতকালও, সখ্যতা ছিলো, হাসিমাখা মুখ - দেখা হয় নি যা; অথচ মিশে ছিলো অস্তিত্বময়। মেরুদন্ডে ঝড় নামে, নিউটনের সূত্র মেনে শক্ত হয় শক্তির ধাক্কায়। নিউটন কে সে জানে না, তবে ঢাকাবাসী চৌধুরী সাবের ছেলের নাম নিউটন শুনেছে সে। ছেলেটা পড়ালেখায় বেজায় ভালো। রফিকটা পড়া পারে না, বিষ্ঞু মাস্টার অনেক বলেকয়েও স্কুলমুখো করতে পারে নি ওকে, মার্বেলে অবশ্য হাত খুব ভালো। ধুর, কী আর হবে স্কুলে গিয়ে!

ঘুন ধরে ধরে গেছে লাঙ্গলে, ট্রাক্টর চলে হরদম, তবু কাঠিন্য মরে না, এখনও দঁড়া পড়া কড়া পড়া গোঁড়ালি, আঙুল। এখনও জ্বলজ্বলে চোখে কাঠিন্য, শান্তি, অহং।

কী যে হলো কি থেকে! রমিজ মেম্বার সেদিন খুব করে পান খেয়ে খর বেয়ে বেয়ে পড়া মুখে খুব ভেংচি কেটে কেটে কেমন মরা বাপ তুলে আজেবাজে কথা বললো। বাপটা সহজ-সরল ছিলো তার; কিন্তু সাহসী। অন্যায় দেখলে সাত-পাঁচ না ভেবেই..... । মা কতবার বকেছে, রাগে মামাবাড়ি গিয়ে থেকেছে, বাপটা আর স্বভাব পালটায় নি। রমিজ মেম্বারের কাছে সে এখন 'মুক্তির পো'। মুক্তি কি খুব খারাপ কিছু? তার বাবা কি খুব খারাপ মানুষ ছিলো?

সেই দঁড়া পড়া, কঁড়া পড়া কাঠিন্যে ঘুন ধরে, ভিতরে থকথকে জীবিত মাংসের টগবগে রক্তের স্রোতে অনুভূতিগুলো জ্বলে জ্বলে ওঠে। পোঁড়ে চর্ম, পোঁড়ে অস্থি, পোঁড়ে কঁড়াপড়া আঙুল; ফেটেফুটে কুটিকুটি হওয়া অস্তিত্বের ভাঙচুরে তাকে দাঁড়াতেই হবে যে!


মন্তব্য

বিবাগিনী এর ছবি

আমারও এমন ‌‌কঠিন হতে ইচ্ছা করে।খুব ভাল লাগল।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

হাসিব এর ছবি

অস্তিত্বের ভাঙচুরে তাকে দাঁড়াতেই হবে যে!

ঠিক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

রমিজ মেম্বার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খর কিনতে গিয়ে হালকা প্যাঁদানি খেয়েছে। হাসি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশে আজ শতকোটি মুক্তির পো চাই

পোঁড়ে চর্ম, পোঁড়ে অস্থি, পোঁড়ে কঁড়াপড়া আঙুল

----পোড়ে না শুধু রক্ত! শুধু গরম হয়, পোড়ে না

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অতিথি লেখক (নাম দেন নি) অনেক ধন্যবাদ। এখন রক্ত পুঁড়ে বিশুদ্ধ হওয়ার সময়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।