গাঞ্জা গল্প: সৃষ্টি ও নশ্বরতা

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৭/২০০৭ - ৭:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নওসের মিয়া খুব ভালো সমবেত সঙ্গীত শিল্পী। সেই স্কুল জীবন থেকে শুরু। সকাল বেলায় লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে তাদেরকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হতো। নওসের মিয়া কখনো কখনো শব্দদুষণ না ঘটিয়ে শুধু মুখের ব্যায়াম সেরে নিতো। স্যারেরা আবার বেত হাতে লাইনময় দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতেন। এমন বেগতিক অবস্থায় নওসের মিয়া তার সোনার গামলা কেমনে মাজাঘসা করা যায়, সেই কাহিনীতে সুর তুলতো।

সুর তুলতে চাইলেই আর তোলা যায়? হয়তো যায়। মানবের সাধনার কাছে অসাধ্য কিছু নেই। কিন্তু নওসের মিয়া সুরের সাধনায় কিছুতেই যুইত করতে পারে নাই। বুক যেটা বলে, মুখ সেটা বলতে ব্যর্থ আজীবন।

জারিসারির খুব ভক্ত সে। ছোটবেলা থেকেই। বাউলদের আসরে তালবেতাল নাঁচাদের একজন নওসের মিয়া। তার তাড়ি লাগে না, গাঁজায় দমও দিতে হয় না। ভাব আসে অনায়াসে। বাউলাদের সাথে সাথে কেমন নাচে তার কন্ঠও। অথচ বাউলারা থেমে গেলে গলা বন্ধ আসে আপনা-আপনি বেখাপ্পা বিশ্বাসহীন বেসুরো সুরের আতঙ্কে।

নওসের মিয়া মজমা বাজ। শ্রীপুরের যৌনশক্তি বর্ধনকারী বড়ি থেকে শুরু করে ৮৪ প্রকার বাত ঘুরে ক্যান্সার পর্যন্ত সবকিছুর সমাধানই তার নখদর্পণে। ইদানিং এইডসেরও একটা ধনন্তরি গাছড়া সে সাপলাই দেয়। সাথে ভায়াগ্রাও নাকি গোপনে আমদানি করে। তবে সেটা প্রকাশ্যে বিক্রি করে না। খুব করে ধরলে তাহলে দেয়। দাম একটু চড়া এবং নওসের মিয়া এখনো শ্রীপুরের বড়িকেই ভায়াগ্রা থেকে শ্রেয়তর মনে করে।

টুকটাক হাতসাফাই শিখেছে সে। তাস নিয়ে দুই নাম্বারি খেলা, পয়সা বানানো আর দড়িকাটা যাদু - এসবের মাঝেও নওসের মিয়ার এখনো পছন্দ সঙ্গীতের মাধ্যমে পাবলিকের মনোযোগ আকর্ষণ করা। উপকরণ একটি ছোট্ট ক্যাসেট প্লেয়ার। গান বাজে, "ও হায়, প্রেম কইরো না দুইজনের মন সমান না হলে ..."। নওসের মিয়াও ঝাঁকড়া চুল দুলিয়ে দুলিয়ে সুরের তালে তালে গলা ছেড়ে যায়।

প্রত্যেকটি মানুষই স্বতন্ত্র। কিন্তু তার স্বাতন্ত্র্য নিয়ে কত ভীত প্রতিটি মানুষ! স্রোতে শ্যাওলা জন্মায়। ভেসে যায়। পলি ভেসে যেতে পারে না। পড়ে থাকে মাটির টানে। তারপর, ফসল ফলায়।


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

শ্যাষ?
আমি তো মনে করলাম, চলবে।

"প্রেম কইরোনা দুইজনের মন সমান না হলে" -
আমারো নাচতে ইচ্ছা করতেসে এইরম একটা গান ছাইড়া দিয়া।

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কারুবাসনা এর ছবি

পড়সি।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

অপালা এর ছবি

ইমরুল ভাইয়ের সাথে এক মত

উৎস এর ছবি

স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টা আমার ধারনা survival instinct।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গাঞ্জীয় দর্শনে বিভ্রান্ত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টাই কি সবসময় survival instinct? তার বিপরীতটা হয় না কখনো? কিংবা বিপরীতটাই কি survival instinct না?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।