স্বচ্ছ - পর্ব ২

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: রবি, ১৭/০৬/২০০৭ - ২:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কালা গাউসের সাথে পরিচয় সংগীতায়। টিকেট ব্ল্যাক করি। খুলনায় এসে প্রথমে কয়েকদিন রিক্সা চালিয়েছি। পোষায় না। সংগীতায় তখন ফারুক-কবরীর "সারেং বউ" চলছিলো। সুপার হিট। উপার্জন অনেক। নাইট শো শুরুর আগে চরম ভিড়। কালা গাউস ডাক দেয়, "এদিকে শুইনা যা।" বিরক্ত হই। কিন্তু তার চেহারায় এমন কিছু একটা আছে, সে ডাককে উপেক্ষা করতে পারি না কোনোভাবেই।

গন্ডগোল কেটে গেলে প্রথমে কয়েকদিন ভয়ে ভয়ে কাটে আমাদের। আব্বা বাড়িতে ঘুমায় না। মেজো মামা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি অভয় দেন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে। তাতে অবশ্য আমাদের পারিবারিক ভোগান্তি কমে না; বরং বাড়ে। আব্বা আবার জুয়ার আড্ডায়। রেগুলার

"সাতক্ষীরা ল, আমার লগে।" চোখে চোখ রেখে কালা গাউস অফার দেয়।

"ক্যান?"

"বিজনেস, বিজনেস। তরে ঠকামু না। তরে দেইখাই তর উপরে মায়া পইড়া গ্যাছে।" কালা গাউস হাসে। কুচকুচে কালো শরীরটার মাঝে ঝকঝকে দাঁতগুলো বড় বেশি জ্বলজ্বল করে।

আমি বেশি বাক্যব্যয় করি না। সেই রাত্রেই নাইট কোচ ধরি।

অনেক জমিজমা ছিলো আমাদের। দাদা এলাকার বিখ্যাত ধনী এবং মানী লোক ছিলেন। ছবের মহাজনকে এক নামে দশ গ্রামের লোকে চিনতো। আব্বা প্রথমেই হাত বাড়ালো মায়ের গহনার দিকে। তারপর একেএকে জমিজমা বন্ধক, বন্ধক থেকে বিক্রি। স্রোতের জলের মত বেরিয়ে গেলো সব। বছর দুয়েকের মধ্যেই বসতের ভিটাটুকু বাদে আর কিছু রইলো না।

সাতক্ষীরায় আমার প্রথম ডিউটি ওপার থেকে আনা ইন্ডিয়ান শাড়ি এপারে সাপলাই দেওয়া। একাজে আমাদের দলে কয়েকটি মেয়ে ছিলো, যারা পা, কোমর এবং বুকের সাথে পেচিয়ে শাড়ি আনতো। বিডিআরদেরকে দিনকার মতো একটা চাঁদা দিতে হতো। অধিকাংশ সময়ই চাঁদা দেওয়ার কাজটা আমি করতাম। ওখানে পরিচয় হলো, ওসমান ভাইয়ের সাথে। একটু দূর সম্পর্কের মামাতো ভাই। বিডিআর।

ওসমান ভাই নিজেও চোরাচালানীর সাথে জড়িত ছিলো। আমাকে প্রস্তাব দিলো, ওনার সাথে কাজ করার। লাভ বেশি। ব্যাকিংও ভালো। রাজী হয়ে গেলাম। তার ব্যবসা ছিলো মূলত ফেন্সিডিলের। মাঝে মাঝে স্পেশাল অর্ডার থাকতো হেরোইনের। রিস্কি; তবে উপার্জন মারাত্মক।

কালা গাউস ব্যপারটা সহজভাবে নিলো না। "দেখে নেবে" শাসালো। পাত্তা দিলাম না।

একবার ফেন্সির চালান নিয়ে ফিরছি। আমি, সাথে আরো দু'জন। হাতে তিন ব্যাটারীর টর্চ এবং একটি রামদা। দুপুর রাত। হাওয়ার পিঠে সওয়ার হওয়া ছিঁটছিঁট মেঘের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে আধখানা অভিমানী চাঁদ। রাস্তার পাশ থেকে হঠাৎ চারজন বের হয়ে পথ আগলে দাড়ালো।

"এই খাড়া!" টর্চ মেরে দেখি কালা গাউস। চাদর গায়ে। চাদরের ভেতরে কি আছে, তা ধারণা করতে বেশি কষ্ট করতে হয় না।

"লাইট নামা।"

নামালাম। নামাতে নামাতে দেখলাম, কালা গাউসের ডানহাত চাদরের ভেতরে ঢুকছে। কোনো রিস্কে গেলাম না। টর্চটা ফেলে দিয়ে দুইহাত দিয়ে সজোরে ঘাড়ে কোপ বসিয়ে দিলাম। আমার প্রথম মানুষ খুন। ওর সাথের সবাই ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। আবার মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে চাঁদ। কালা গাউসের মস্তকহীন ধড় এখনো লাফাচ্ছে। সাথে ফিনকি দিয়ে বেরোচ্ছে রক্ত আর রক্ত। শেষ নেই। একজন মানুষের এত রক্ত!

টর্চটা তুলে নিয়ে ক্লান্ত পায়ে ফিরে চলি। ভোরের আগেই সাতক্ষীরা ছাড়তে হবে।

(চলবে)


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পড়তাছি।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

পড়ছি।

তবে পরম্পরার দিকে কি একটু বেশি নজর রাখবেন ?
দেশে ফেন্সিডিলের প্রচলন আর সারেং বউ সিনেমার মাঝে অন্তত:১০ বছরের ফারাক।আপনার কাহিনী পড়ে মনে হলো না যে আপনি এই ১০ বছর বর্ণনা করছেন,বড়ো জোর ২/৩ বছর হতে পারে।

কাহিনী খুব নিরাসক্ত ভাবে বর্ণনা করতে গিয়ে পাঠককে কাহিনীর ভেতর ঢুকার কোন সুযোগ দিচ্চেন না।এতো দ্রুত দৃশ্যপট বদলাচ্ছেন যে গল্পটা জানা যাচ্ছে কিন্তু গল্পের সাথে একাত্ম হ্ওয়া যাচ্ছে না।

কনফুসিয়াস এর ছবি

পড়ছি। দাদা'র সাথে একমত।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সবাইকে ধন্যবাদ। তবে স্পেশাল থ্যাংক্স টু আরিফ ভাই। ফেন্সিডিলের ইতিহাস দেখতে হইবো। হাসি 1978 থেকে 1980র দিকে আমরা ইন্ডিয়া থেকে আর কি কি জিনিস চোরাই পথে আনতাম, একটা আইডিয়া দেন, ফেন্সি উঠায়া দেই।

নিরাসক্ত ভাবটা ইচ্ছা করেই। একজন দর্শক হিসেবে নিজের ঘটনাকে বর্ণনা করতে কেমন লাগে-সেটা দেখাতে। তবে দর্শকও অনেক সময় ঘটনায় ঢুকে যায়; আবেগে উদ্বেল হয়; পরক্ষণে সামলেও ওঠে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নজমুল আলবাব এর ছবি

এক পর্ব থেকে আরেক পর্বে যাওয়ার স্টাইলটা বদলান ভাইজান। নাম্বার দেন নয়ত দুই পর্বের দুইটা নাম দেয়া যেতে পারে।

এখন চুলকানি দেই। আরাম পাইতাছি পইড়া।

!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নজমুল আলবাব এর ছবি

হাততালি

!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ফেন্সি জিনিষটা বাংলাদেশে আসে ৮৬ সালের দিকে।
ব্যপক প্রসার লাভ করে ৮৮ সাল থেকে ৯৮ সালে।এখনও ফেন্সিখোর না কমলেও,৯৭/৯৮ সালের দিকে হেরোইন মফস্বলে ছড়িয়ে পড়লে ফেন্সি নিয়ে হইচই টা বন্ধ হয়ে যায়।

ইন্ডিয়া থেকে চোরাচালান হয়ে আসা জিনিষগুলোর মাঝে সবচেয়ে আলোড়িত আইটেম চিনি। যুদ্ধের সময় চিনিকলগুলোর মালিকরা পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাওয়া,শিল্প কারখানা রাষ্ট্রয়াত্ব করে ত্রুটিপূর্ণ ম্যানেজমেন্ট স্থাপন করা,এসব কারনে চিনিকলগুলো ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে এবং চিনির জন্য আমরা ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি।

গল্পের এই অংশে চিনি যোগ করা যেতে পারে কারন চিনির চোরাচালান সিন্ডিকেট গুলো খুবই বড়ো হয়,লক্ষ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট থাকে এবং সেখানে গুন্ডা মাস্তানদের বিশাল অবদান থাকে।তুলনা মূলকভাবে ফেন্সিডিলের চালানগুলো হয় অন্য রকম।(এ বিষয়ে বিস্তারিত না কই।তবে এটা বলি,পুরো অভিজ্ঞতাটুকু প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষনে পাওয়া।)

আর এখন তো ভারত থেকে আনি না এমন কোন আইটেম খুজে পাওয়া খুবই দুষ্কর।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কালা গাউসরে তাইলে চিনির ট্রাকের সামনে দাড় করায়া দিমু।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হুম।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হে হে, আপত্তি জানানোট টেস্ট করতে গিয়ে এই পোস্ট এখন ফালতু হিসেবে চিহ্নিত। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওই মিয়া আপনে কি নিজেই আপত্তি জানাইছেন? অনাপত্তিকর করলাম।
====
মানুষ চেনা দায়!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হাততালি

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।