জাতীয় কবি!

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: রবি, ২০/১২/২০০৯ - ৯:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাণীর সাথে ভাবের মিল রেখে গান করার শিল্পী আজকাল বড় কম। তার উপর রাগাশ্রয়ী গানের ভাব-বাণী ঠিক রেখে গানের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রুপদটুকু পরিবেশনা সহজ কর্ম নয়। অনেক গুনী শিল্পী গানের উপর রাগের ওজন চাপিয়ে বাণীর টুটি চেপে ভাবকে বিদেয় করে প্রাণহীন দ্রুপদী প্রসব করেন। অবশ্য তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা রাগ শুনতে চাই নিজের কথায়। এদিকে পাশ্চাত্য সংগীতের যাঁতাকলে দেশী গানের গায়কদের এমনিতেই ভাত মেলেনা। বাবা আলাউদ্দীনের মত গজল পরিবেশনার বায়না শুনে উচ্চাঙ্গ সংগীতের সেবায় দেশান্তরী হবে কয় জন!

অসংলগ্ন ভাবনায় জাফর সব সময় মজে থাকে তা নয়। কিন্তু আজকের ঘরোয়া আয়োজনে নজরুল গীতির এমন অপূর্ব পরিবেশনা সে আশা করেনি। এতো অল্প বয়সে মেয়েটা আত্মস্থ করে গাইল! শুনে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সৌখিন তবলচী হয়ে ভদ্রলোক আধা তালটা বাজাতে পারলেন! গানটার হামিং শুনে জাফর ধরেই নিয়েছিল আহীর ভৈরবীর সাথে বেচারা তবলচী চলন সই একটা কাহারবা তালের ঠেকা খুঁজে পেলেই হয়। হয়তো সৌখিন বলেই জোর করে লগ্গী, রেলা বা কায়দায় গানটাকে জব্দ করেনি।

সব মিলিয়ে একটা সুন্দর সন্ধ্যা উপভোগ করে জাফরের সাহস গেল বেড়ে। ঠিক সাহস নয়, এই সব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে হল আর কি। জাফরের মনে জলির মুখটি এ সময় উঁকি দিয়ে গেল। আহা কেমন করে বেচারী জাফরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতো। জলি সাথে এলে ভালই হতো। হয়তো জাফরকে আবার গাইতে ধরতো। কে জানে মেয়েটির এমন পরিবেশনায় জাফরের মুগ্ধতা দেখে হয়তো রেগে যেতো! বিচিত্র মেয়েদের মন।

-জাফর ভাই,চলবে না কি?
গিয়াস জাফরের দিকে ছিপি খোলা একটা বিয়ারের বোতল এগিয়ে দিতে দিতে বলে।
আজ যেনো জাফরের কিছুতেই আপত্তি নেই। ব্যবহারহীন যন্ত্রের মমতার মত,গান না গেলেও সিগারেট, বিয়ার এসব এড়িয়ে চলতো ঐ গলাটার জন্যই। কিন্তু আজ? আজ জাফর বিয়ার নিল। কি হবে রেওয়াজহীন গলার যত্ন করে!

-মা কালীর মত চেহারা মেয়েটার কিন্তু গলাটা কত মিষ্টি শুনলেন!
প্যাকেট থেকে একটা সিগারেটের অর্ধেকটা বের করে জাফরের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে কথাটা বললো গিয়াস।

-ভাই মানুষের সৌন্দর্য দেহে নয়,মনে। সিগারেটটা নিতে নিতে জাফর শুধরে দেয় গিয়াসকে।
-সরি বস,গান শুনে এতো ভাল লাগল যে,কথাটা ফস করে নেগেটিভ অর্থে বের হয়ে গেল। কিন্তু আপনি জানেন আমি কি বোঝাতে চেয়েছি। গিয়াসের গলায় কৈফিয়তের সুর।

-সেটাই ভাবছিলাম। খুব আপনার করে গায় মেয়েটা। শুনেছি জামালের বোন নজরুল গীতি গায়। কিন্তু এতো ভাল গায় সেটা ভাবিনি। গিয়াস সরি বলায় মনটা আবার তারার দিকে জাফরের। ছোট ছোট ভুল গুলো শুধরে নিলে মানুষ কেমন সুন্দর হয়ে উঠে!

-যাই বলেন বস, আজকাল নজরুল গীতি তেমন একটা গায়না কেউ। খালেদ হোসেন, সোহরাব হোসেনের পরে আমার শুধু শবনম মুস্তারীর কথা মনে আসে। তার পর যেন আর কেউ তেমন করে নজরুলকে ধারণ করেনি। অবশ্য দেশে ব্যান্ড সংগীতের বাইরে আমার তেমন কিছু ধারণা নেই। আপনি ভাল বলতে পারবেন।

ভূমিকা দিয়ে গিয়াস মূল আলোচনাটা যোগ্য ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দিলো।

বোদ্ধা লোকেরা যা করে,জাফর কিছুটা অভিযোগ অস্বীকারের মত বললো;আমিই বা কতটুকু খোঁজ রাখি! কত দিন হল দেশ ছেড়েছি। গানতো ছেড়েছি তারও আগে। তবে আমাদের দোষ বড় কম নয়। মোনায়েম খাঁ রবীন্দ্র সংগীত রচনার ভার ডঃ আব্দুল হাইয়ের হাতে ছেড়ে রবীন্দ্র সংগীত করে দিল নিষিদ্ধ। আমাদের মতো শিক্ষিত লোকেরা প্রতিবাদ স্বরূপ পান্তা ইলিশের প্রচলন করলাম। এতেই বোঝা যায় আমারা কত জন বিচ্ছিন্ন। গ্রাম এলাকার মেলার মত ছোট ছোট আয়োজন গুলো মার খেল। অথচ আমাদের উদ্দেশ্য তা ছিল না।

-তা যা বলেছেন জাফর ভাই। আমার মনে হয় সে থেকে নজরুল চর্চা সুশীল সমাজে একটু ভাটীর দিকে। গিয়াসের সহমত পেয়ে জাফর এগিয়ে যায়-

-সেটা একমাত্র কারণ হয়তো না,নজরুল গীতি গাওয়াও খুব সহজ নয়। এতো সুরের কারুকাজ সবার গলায় আসে না। তবে সমাজের অগ্রভাগে রবীন্দ্র ভক্তির সাথে ঐ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিলিত হয়ে যা দাঁড়াল,তার ফল হলো নজরুলের প্রতি অনিচ্ছাকৃত ঔদাসীন্য।

ওরা কথা বলছিল বারান্দায়। ভেতর থেকে হারমোনিয়ামের সুর ওদের আবার ভেতরে ডাকলো। খালি হারমোনিয়ামও একটা শোনার মত যন্ত্র,জাফরের এখন মনে পড়ল। মেয়েটার হাতটা বড় মোলায়েম,সবগুলো সুর ছুঁয়ে যায় !

দাঁড়ালে দুয়ারে মোর কে তুমি ভিখারিনী
গাহিয়া সজল চোখে বেলা শেষের রাগিণী।

গানটা যেনো জাফরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। জামালের ঘরের সব অতিথি এতো মনোযোগ দিয়ে গানটা শুনছে, জাফর অবাক হলো। যন্ত্র নির্লিপ্ত। যন্ত্রী তাকে জীবন দান করেন। কথাটা কি তা হলে সত্যি! শিশু-কিশোররা পর্যন্ত তাদের মনোযোগ এ গানে বা গানের পরিবেশনকারীনিকে দান করলো। না কী জাফরের ভিখিরি দশা সবাই মিলে উপভোগ করছে!

মাছ যেমন জলে থাকে, সৌখিন তবলচী, যাকে জাফর এতদিন বাদক বলেই ভাবতো না, সেও ঠিক জায়গায় পরিমিত লগ্গি,তেহাই দিয়ে সমে এসে ছেড়ে দিচ্ছে। আবার সেলাম দিয়ে ঠেকায় ফিরছে। গান জেনে জন্মালেই হয়না। সাধনা দিয়ে তাকে প্রাণ দিতে হয়। এখানে কোন বাইপাস নেই। সুরের অলি-গলিতে গোল্লাছুট খেলেই গান কণ্ঠে ধারণ করতে হয়। নজরুল গীতি গাওয়ার জন্য জাফর উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখেছিল। তার প্রসাদ বাংলাদেশে মিলেছিল,গোল্ড মেডেল। সেই জাফর আজ ভিখিরি? তাই তো। অরুন কান্তি কে গো যোগী ভিখিরি আহির ভৈরবীর এই গানটা গাইতে আজ জাফরের সাহস হবে? কক্ষনো না। তাইতো জামালের বোনের ‌'দাঁড়ালে দুয়ারে মোর কে তুমি ভিখারিনী 'বুকে এতো বাজছে। কারণ জাফর আজ সজল চোখে বেলা শেষের রাগিণী গলায় ধরতে পারবে না।

সব পছন্দের বিষয়ের মত গানের আসরটা অন্তরে অতৃপ্তি রেখেই কেউ ভোলে না কেউ ভোলে গানটা দিয়ে খাওয়ার শেষে দৈ-মিষ্টি ছাড়াই শেষ হল। এবার জাফর সাহস করে জামালের বোনকে গিয়ে কথাটা বলবে। কিন্তু মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতাদের ভিড়ে পথ করে যাওয়াটা শোভন দেখাবে না। ভাবীদের কেউ জলিকে ফোনে নিশ্চয়ই অনুষ্ঠানের বিস্তারিত জানাবেন। তার সাথে জাফর উপযাচক হয়ে মেয়েটির প্রাণঢালা প্রশংসা করেছে শুনলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সংসারের শান্তি বিঘ্নিত হতে বাধ্য। জাফরকে খুব ভেবে চিন্তে এগুতে হয়।
গিয়াসের চোখ ইশারায় জাফর সারা দিয়ে বারান্দায় গেল। গমের রস আর তামাকের ধো‌‍য়ায় মৌমাছির মত মেয়েটার আশেপাশে ভীড়টা কমুক।আপনি গুনী লোক,বলেন জামালের বোনের গান কেমন লাগলো?
-ওহ! মেয়েটার নামই জানিনা! কি নাম ওর?
-হা হা বস, আগে বলুন গান কেমন শুনলেন? তার পর নাম বলব। গিয়াসের হাতে এখন গুপ্তধন।
জাফরের নামের চেয়ে কাজের দিকে মনোযোগ বেশী। সে জন্যই নামটা জিজ্ঞেস করা হয়নি কাউকে। কিন্তু এখন বুঝতে পারলো,নামটা জানলে তেমন ক্ষতি কিছু হতো না। মৃদু হেসে তাই বলল;আচ্ছা বলনা নামটা কি মেয়েটার। জামালের বোন তো আমাদেরও বোন। তার নাম জেনে না নেয়াটা অন্যায় বৈকি!
-বস ,বললে বিশ্বাস করবেন না!এমন একটা অসাধারণ মেয়ের নাম বুড়ি!
এক গাল হেসে জাফর বলে;সেটা বোঝাই যায়,জামালদের পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোনের নাম বুড়ি ছাড়া আর কি হতে পারে!কিন্তু সেটাই মাথায় এলো না এতক্ষণ!হয়তো পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন হওয়ায় সব রকমের স্বাধীনতা পেয়েছে। তার ফল দেখ,প্রয়াত বিদ্রোহীর প্রেমে পড়েছে।
--বস ,এই কারণে আপনাকে গুরু মানি। নজরুলের প্রেমে না পড়লে কেউ এমন করে গাইতে পারে!
-গুরু হওয়ার কোন যোগ্যতা আমার নেই। তবে গানটা ভাল না বাসলে এমন করে গাওয়া সম্ভব না,সেটা মানলাম।
গিয়াস গমের রস একটু বেশী পান করেছে বলেই বলতে পারলো;গুরু গানটা আবার ধরো। ভাবীকে বোঝানোর দায়িত্ব আমরা নেবো।
অন্যের ঝামেলায় নাক গলানোর চেষ্টা না করার জন্য কিছু একটা উপদেশ জাফর খুঁজতে যাচ্ছিল; কিন্তু বুড়ি বারান্দায় এসে পরায় সেটা আর হল না। বুড়িকে এত কাছে পেয়ে চট করে কোন কথাও খুঁজে পেল না।
অগত্যা অপ্রস্তুত করে দেয়ার কারণে বুড়িই কথা শুরু করল অনেকটা অতিথি পরায়নতার দায় থেকে। তোমাদের আড্ডাটা আমার মিনমিনে গানের জন্য নষ্ট হল!
এবার গিয়াস ত্রাতা হয়ে উঠলো,এতক্ষণ আপনার কথাই হচ্ছিল। এত ভাল গান অনেক দিন শুনিনি।
-আমার নাম বুড়ি,তোমরা আমাকে আপনি আপনি বলে দাদীমার মত পায়ে ধরে সালাম করবে না কী!
এবার দুজনেই অবাক হয়ে বুড়ির দিকে তাকালো।
একটু বুঝিয়ে দেয়ার জন্য বুড়ি যোগ করলো;বাড়িতে সবাইকে তুমি করে বলিতো!অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনা। আপনারা কিছু মনে করবেন না। আশা করি আমার গানে আপনারা বিরক্ত হন নি।
এবার জাফরের চৈতন্য ফিরল। আরে বলো কি! তুমি করেই তো বলবে। আসলে আমরা তোমার গানে এত ডুবে ছিলাম যে...
না,তা কেন হবে। প্রসংসার চেয়ে সমালোচনা বেশী জরুরী। সেটাই কেউ করতে চায় না। তোমরা আপনার লোক। আমার ত্রুটি গুলো খুঁজে দেবার দায়ীত্বও তোমাদের।
গিয়াস হাত উঁচু করে বললো;আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে তোমার গান শুনলাম। আর জাফরের দিকে ইঙ্গিত করে বললো গুরুর কাছে সেটাই বললাম।
তোমার বিরুদ্ধে একটাই অভিযোগ তুমি গাওনা! তোমার কন্ঠেই প্রথম নজরুলের গান শুনি। তার পরিণতি তো দেখলে!এখন তুমিই গাইছনা!
না রে পাগল। নজরুলের গান গাইবার মত বিদ্রোহী আমি নই। তোদের কাছেই নজরুল অনেক আদরে আছে। বুড়ির অভিযোগের বিরুদ্ধে জাফরের দুর্বল যুক্তি।
-না ভাইয়া। দেশে শুধু নজরুল গীতি গেয়ে বেঁচে থাকার কোন উপায় নেই।
-সে তো কোন কালেই ছিল না। স্বয়ং নজরুলই তা পারেন নি।
-ঠিকই বলেছ ভাইয়া। মনের কথা বলার মত লোক পেয়ে বুড়ির ঝাঁপি খুলে যায়।
নজরুল বিদ্রোহী কবি ছিলেন সেটাই প্রকৃত বিদ্রোহীরা মানতে নারাজ।
বুড়ির কথায় গিয়াস অবাক হয়েই জানতে চাইলো সেটা কেমন?
বামপন্থীঈ মানুষ হয়েও তা জানোনা!জাফর অবাক হয়েই গিয়াসের দিকে মুখ ফেরালো
_কৈফিয়তের সুরে গিয়াস বললো বস,
দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার
-নজরুলের এই কবিতা দিয়েইতো সমাজতন্ত্রের বড়ি বিক্রি শুরু করতাম। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই বলে শেষ করতাম!
নজরুলকে অনেকেই অনেক ভাবে বেচা-বিক্রি করেছেন। আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন। তোমার কথায় নজরুল সম্পর্কে কমরেড বদরুদ্দীন ওমরের উক্তিটি মনে পড়ে গেল। তাঁর মতে “ ... তাঁর সাহিত্যে একটা প্রগতিশীল ভূমিকা থাকলেও এ কথা বলা চেলে না যে তিনি নির্ভেজাল সাম্যবাদের কবি...। গিয়াসের মুখে আপত্তির অভিব্যক্তি লক্ষ্য করে জাফর যোগ করলো... অবশ্য নজরুল সম্পর্কে তাঁর বাকী মন্তব্যে আমি একমত।
-আতেলদের কথা বাদ দিলে আমার কি মনে হয় জানো? নজরুলকে স্থায়ী ভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসাটাই একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল। গিয়াসের কণ্ঠে শ্লেষ।
-হঠকারী না বলে সাম্প্রদায়িক বলাই উচিৎ। বুড়ি জাফরের কথায় প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল। কিন্তু জাফরের কথা তখনো শেষ হয়নি,পুরো বক্তব্য শেষ করার সুযোগ দিতে বুড়ি আপাতত থেমে গেল।
অনেকটা ধন্যবাদের ভঙ্গিতে বুড়ির দিকে মাথা নেড়ে জাফর শুরু করলো;
মুসলমারা ক্ষমতা দখল করে নিজেরাই ভারতীয় হয়ে গিয়েছিলেন। ধর্মটা বাদ দিলে ভারতের শিল্প-সংস্কৃতিতে তাঁদের অবদান বড় কম নয়। ভারতের চিত্র-কলা মুসলমান রাজন্যবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন প্রাণ পেয়েছে। ছয়টা বেদ-এর মধ্যে ছ’নম্বরটা না কী শুধু সংগীতের ছিল। যার অস্তিত্ব এখন আর নেই। কিন্তু বেদের জ্ঞান ছাড়াই দেখ আজকের ভারতীয় দ্রুপদ সংগীত! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংগীতের একটা এই ভারতীয় সংগীতের আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার পুরো ভাগে মুসলমান পণ্ডিতদের অবদান ছোট করে দেখার উপায় আছে!

সেটাইতো বলতে চাইছিলাম। দেখ বিশ্ববিখ্যাত রবি শংকর! বাবা আলাউদ্দীনকে নমঃ নমঃ করেইতো বিশ্ব কবির চেয়ে বিশ্বে বেশী পরিচিতি পেলেন!তিনি অন্নপূর্ণা দেবীকে ত্যাগ করেছেন বলে আমি অবশ্যই ক্ষুব্ধ। কিন্তু ভারতীয় সংগীতকে বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
কথা বলেও তৃপ্তি পাওয়া যায়,এই অনুভূতি বুড়ির কাছে নতুন মনে হল!
একটু গাম্ভীর্যের সুরে গিয়াস বললো;তবে আমার কাছে মনে হয় নিখিল ব্যানার্জীর চেয়ে ভাল সেতার আর কেউ বাজাতে পারেননি!
সেটাই। আমার কাছেও নিখিল ব্যানার্জীর বাজনাই বেশী ভাল লাগে। যা বলছিলাম, জাফর নজরুল প্রসঙ্গ ফিরে এল:
দেখ ভারতে জন্মনেয়া একজন কবি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হলেন। বিশ্ব কবি বাংলাদেশে কুঠি বাড়ি থেকেও, তার চেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেও জাতীয় কবির মর্যাদা পেলেন না। যশোরের কপোতাক্ষ নদীর কবি যেন বাংলাদেশের মানুষই নন!তো তার মধ্যে চুরুলিয়া গ্রামের কবিকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কেন করা হল? আমি মনে করি অবশ্যই নজরুল যে কোন দেশের জাতীয় কবি হতে পারেন।
ব্যাপারটা আমি তেমন করে কখনো ভেবে দেখিনি। তবে আমার মনে হয় কি জানেন,রাজত্ব হারিয়ে বাঙ্গালী মুসলমানরা মোরাকাবায় বসে হালখাতা নিয়ে হিসাব করছিল,স্বাধীন ভারতে তাদের অবস্থান কোথায় হবে? স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য নজরুলের আবির্ভাব পর্যন্ত তাদের ভেবেই সময় গেল। কিছুটা ব্যাঙ্গ করেই বলল গিয়াস।
সেটাও একটা কারণ। তবে তখকার অবস্থায় রবির খড়তাপের সামনে আপন মহিমায় জ্বলে এমন চেরাগ একমাত্র নজরুলই ছিলেন। এবং বাঙ্গালী মুসলমানদের জেগে উঠার জন্য তার প্রয়োজনও ছিল। জাফর নিজের ভাবনা যোগ করলো গিয়াসের সাথে।

সিগারেটে টান আর বিয়ারে চুমুক অনেকটাই কমে গেছে দেখে বুড়ির ভাল লাগল। কিন্তু নজরুলকে জাতীয় কবি করায় দোষটা কোথায় তা পরিষ্কার হল না। তাই বললো:

-কিন্তু নজরুলকে জাতীয় কবি করায় দোষটা কোথায়?

শোন,কবির অসুস্থতা ধরা পরার পর,তখনকার লেখক বুদ্ধিজীবিরা একটা সমিতি করে নিজেদের পকেটের টাকায় দু’শ টাকা মাসিক চাঁদা তুলে দিচ্ছিলেন। অসমর্থিত সূত্রে বলা হয়ে থাকে কবি জসিম উদ্দীনের কলকাঠি নাড়ায় টাকার যোগান বন্ধ হয়ে যায়। তার পর অবিভক্ত বাংলার স্থায়ী সাহিত্য বৃত্তিই ছিল কবির একমাত্র ভরসা। তাদের সাধ্যানুযায়ী তাঁরা কবির সব দেখভাল করেছেন। রাঁচি, লন্ডন এবং ভিয়েনায় তৎকালীন বিশ্বের সেরা মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা চিকিৎসা করিয়েছেন। এক সাথে অনেক কথা বলে গিয়াসের এবার একটা সিগারেট ধরানো চাই।

এই ফাঁকে বুড়ি বললো দেখ,পশ্চিম বঙ্গের লোকেরা কবির জন্য কম করেছেন সেটা আমি মনে করি না। এখনো আমাদের চেয়ে বেশী নজরুলগীতি ওখানে হচ্ছে। এবং ভাল করেই হচ্ছে।

গিয়াস খুব দ্রুত আবার কথায় ফিরবে তেমন মনে না হওয়ায় জাফর আগে বাড়ল;
তো সেটাই। তিরিশ বছর তিনি সুখে দুঃখে কোলকাতায় কাটালেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হল। বঙ্গবন্ধু দেশে এসে কবিকে ঢাকায় নিয়ে এলেন। অবশ্য এর অনেক আগেই ১৯৫৫ সালে বুলবুল একাডেমীর তৎকালীন সম্পাদক নূরুল হুদা কবিকে ঢাকায় আনার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তখন ভারত সরকারের অনুমতি মেলেনি। তো সে যাই হোক। বাংলা ভাষায় নজরুলের মত কেউ নেই। সেটা মাথায় নিয়েই বলছি;নজরুল আমাদের জামাই বাবু, যেহেতু দু’টো (একটি অনেকে বিয়ে বলে মানেন না।) বিয়েই কুমিল্লায় করেছেন। তাকে দেশে আনা হল। আরো অগণিত গুনিজন বাংলাদেশে জন্মেও এতটুকু মনোযোগও কেন পেলেন না!হয়তো তাদের বেশীর ভাগ হিন্দু বলেই?

ফাঁক পেয়ে গিয়াস আবার আলোচনায় ঢুকলো;তাইতো বলছি নজরুলকে ঢাকায় আনার পর থেকেই একটা ইসলামী কবি টাইপের আলখেল্লায় ঢেকে দিতে চেষ্টা করছে সাম্প্রদায়িক শক্তি।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার দিন কয়েকের মধ্যে কবি ভবন বরাদ্দ পেলো ঢাকার এসপি। পিজির বদ্ধ পিঞ্জরে জীবনের এক বছর, এক মাস, সাত দিন কাটিয়োছেন কবি। বাংলাদেশের চার বছর, তিন মাস, পাঁচ দিনের জীবনে একটা বড় সময়। কোলকাতার লোকেরা চিকিৎসার নামে কবিকে বন্দী করেননি।

এখন বিএনপির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জামাতীরা কবিকে ইসলামী কবি সাজায়। আমরা চেয়ে দেখি একই সভায় রবীন্দ্রনাথকে আমার পরাণ যাহা চায় গান লেখার অজুহাত ভৎসনা করা হচ্ছে!

-জামাতীদের কথা বাদ দাও। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা পড়লে এরা মূর্ছা যাবে। বুড়ির গলায় সান্ত্বনা সুর।

জামাতীদের এই সুযোগটি শুধু একা নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণা করেই করে দেয়া হয়েছে। এতে নজরুলকে সম্মানের বদলে অসম্মানই করা হয়েছে বেশী। অন্নদাশঙ্কর রায় যর্থাথই বলেছেন;“নজরুল কারো একার নন।“ আমরা নজরুলকে শুধু আমাদের করতে গিয়ে তাকে অপমানই করেছি বেশী।

খাবার দেয়া হয়েছে, তোমরা ভেতরে এসো। জামাল ভাইয়ের ডাকে কথায় বাধা পড়ল। চলো কিছু পেটে দিয়ে বুদ্ধি চর্চা করা যাবে। বুড়ি সবাইকে খাবার টেবিলে ডাকার জন্য না কী আলোচনা বন্ধ করার জন্য বারান্দার দরজা খুলে ভেতরে ইঙ্গিত করলো বোঝা গেল না।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়া শেষ করে উপরে গিয়ে আবার ট্যাগটা দেখে নিলাম।
এটা গল্প, গল্পের মতোই, কিন্তু গল্পটা চোখে পড়লো না। নজরুলকে নিয়ে কিছু বিতর্ক। গল্পের মোড়কে দিলে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায় না। দূর্বল হয়ে যায়। কোনো বক্তব্য যদি আপনি দিতে চান, তো গল্প না দিয়ে আলাদা করে নজরুল নিয়েই লিখলে ভালো হতো।

বানানের বেশ অনেক সমস্যা আছে। সেগুলো মেনে নিলেও রবীন্দ্রনাথ যখন রবিন্দ্র নাথ হয়ে যায়, সেটা খুবই চোখে লাগে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল ভাই,
কবি গুরুর নামটা ঠিকমত লিখতে না পাড়া একটা পাপ। আমি কম্পু কানা, বানান ঠিক করতে আপনা বানান প্রগ্রাম নামিয়ে এই লেখাটা চেক করলাম। ফলাফল ভয়াবহ!
নিজে নিশ্চিৎ নই বলে আপনা বানানের সুপারিশমত ঠিক করে দেখি ভুলের সংখ্যা আরো বেড়েছে! না দেখেই খুব তাড়াহুড়া করে পোস্ট করে দেয়াটা বোকামী হয়েছে। আমার বেগমের হস্তক্ষেপে আশা করি কিছুটা বানান প্রমাদ ঘুচেছে।

আমার কাছে আছে শুধু "তোমার সাম্রাজ্যে যুবরাজ" আর "অগ্নি-বীণা"। বিষয়টা নিয়ে লিখতে গিয়ে দেখলাম এতো অল্প ইনফরমেশনে একটা প্রবন্ধ লেখা আমার পক্ষে অসম্ভব।
প্রবন্ধ লিখতেও পারি না। সে দৈন্যতা তো আছেই। অথচ কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল খুব। সে জন্য এই রকম একটা জগাখিখুড়ী হল। কিন্তু আলোচনা করতে সমস্যা কী?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

দুর্দান্ত এর ছবি

পুতুল ভাই, আমি ভাই জাতীয় পশু, পাখি, ফুলের মত জাতীয় কবির ধারনাটা ঠিক বুঝতে পারি না। জাতীয় কবি থাকলে জাতীয় ভাস্কর, জাতীয় স্থপতী, ইত্যাদি থাকতে দোষ কি? আর যদি এপথেই হাঁটা হল, তাহলে জাতীয় প্যাকেজ নাটক, জাতীয় আজ-যে, জাতীয় মোবাইল রিং টোন তক যেতে কয়দিন?
---
"মা কালীর মত চেহারা মেয়েটার কিন্তু গলাটা কত মিষ্টি শুনলেন!" যদিও আপনার গল্পের চরিত্রের মুখ দিয়ে কথাটা বেরিয়েছে, তারপেরেও আপনার গল্পের নারীচরিত্রটির তথাকথিত বাহ্যিক অনাকর্ষনীয়তা প্রসংগে 'মা কালী মত' বলে উল্লেখের দরকার ছিল বলে আমার মনে হয়নি।
---
আগে রবিশঙ্কর, এফ আর খানের ও পরে সাহাবুদ্দিন, পার্থপ্রতীম মজুমদার এর মত লোকেদের আমরা দেশ-মন সবখান থেকেই রপ্তানি করে ফেলে এখন আমরা মূলত আমদানিপ্রধান দেশ হয়েছি।

পুতুল এর ছবি


আমাদের জাতীয় পশু-পাখির সাথে আর একটা জিনিস নাই। সেটা হল জাতীয় চোর।


আপনার সাথে একমত।


সত্যিই দ্বিমত করার অবকাশ নেই।

অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে মন্তব্য করার জন্য।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তানবীরা এর ছবি

পড়লাম।
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ তনবীরাপু।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

সমালোচনার হক বোধকরি এতদিন কারোরই ছিলো না। হিমুর একটি পোস্ট থেকে জানলাম ব্যাপারটা অতীব জরুরি। কিন্তু এ ব্যাপারটি যদিও আমার প্রত্যাশিত ছিলো আরো আগেই, সে ক্ষেত্রে সচলায়তন আমাকে হতাশ করেছে সন্দেহ নেই । তবুও গল্পের ব্যাপারে আমাদের অনেকেরই ভালো-মন্দ লাগার বিভিন্ন দিক রয়েছে বলতে পারি।

১. আমি নিজেও তেমন একটা স্বাচ্ছ্ন্দ্য নই ছোটগল্পের ক্ষেত্রে। তার চেয়ে আরো বেশি বিপাকে পড়ে যাই অণু বা পরমাণু (?)গল্পের ক্ষেত্রে। তবে আমি বুঝি নিজের মত করে। (সেই কোন আমলে পড়েছি ...কাহাকে বলে? আজকাল মাথায় হাতুড়ি ঠুঁকেও স্মরণ করতে পারি না।) কথক গণ্পটিকে কী ভাবে উপস্থাপন করবেন তার উপর নির্ভর করে তৈরী হবে গল্পের ছাঁদ।

২. গল্প বলার সময় কিছু কিছু যতি বা বিরতি চলে আসতে পারে। এমন কি কথক পরবর্তীতে কী বলবেন তা নিয়ে্ও ভাবতে পারেন কিংবা শ্রোতা বা পাঠককেও কিছুটা ভাববার অবকাশ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে অনেকেই অনেক ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেন দেখেছি। সেগুলো হতে পারে পেছনের কোনো ঘটনার আভাস দেয়া। সুন্দর কোনো দৃশ্য, ভাব বা কল্পনার মিশেল দিয়ে সেই যতি বা (বিরতিটুকু। যাকে অনেকে ঝুলে পড়া বলে থাকেন।) সে ফাঁকটুকু পূর্ণ করে দিতে হয়। যা অনেক সময় আমি নিজেও ধরতে পারি না। তবুও (নজরুলের মন্তব্য যোগ করে) আমার মনে হয়েছে বারবার হোঁচট খেতে খেতে এগুচ্ছি। ঠিক ঘরোয়া আলাপে যেমন একটি ভিন্ন আমেজ ফুটে ওঠে কিংবা বৈঠকে (দরবার) যে ভাবে আলোচনাটা শুনতে পাই সেভাবেও, গল্পটাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া যেতে পারে বলেই আমার ধারণা। (ধারণা কেবলই আমার। কোনো বিশিষ্ট সাহিত্যিকের নয়। দেঁতো হাসি

তারপরও বড় কথা হচ্ছে কে কি বলেছেন তা না ভেবে আপনি কিভাবে গল্পটা বলতে চান সেটার উপরই নির্ভর করবে গল্পের কাঠামো। গল্পের সার্থকতা।

ধন্যবাদ পুতুল। আপনার পরবর্তী গল্পের প্রতীক্ষায়।

.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ জুলিয়ান সিদ্দিকী ভাই,
গল্প আসলে লিখতে পারি না। নড়াচড়ার সুযোগ ছোট গল্পে খুব কম পাওয়া যায়। বর্ণানা বা কথকের ভাবনা যোগ করার অবকাশ ছোটগল্পে খুব সিমীত। কিন্তু মাঝে মাঝে মাথায় কোন বিষয় চেপে বসে। তাড়াতে পারিনা কোন ভাবে। তার দু'একটা এই রকম জগাখিচুড়ী হয়ে বের হয়। গপ্র= গল্প+প্রবন্ধ। কিন্তু নতুন উপন্যাস শুরু করার জন্য মথাটা পরিষ্কার করার দরকার ছিল।
উপন্যাসেই যেহেতু সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সেদিকেই থাকার চেষ্টা করবো।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

কামরান আহমদ এর ছবি

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু আমি ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে দেখি। আমি বরং বলি রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চে পল্টনের জনসভায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথ কোন .'বাঙলা 'নিয়ে গানটি লিখেছেন তাও একটি প্রশ্ন। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের ' personal idology' একটি স্বাধীন দেশের জন্য পরিষ্কার নয় বলে আমার ধারনা। তাছাড়া তিনি 'বন্দে মাতরম্ ' স্বদেশের স্বপ্ন দেখতেন।
ব্যাক্তি রবীন্দ্রনাথ আর কবি রবীন্দ্রনাথের অনেক পার্থক্য বলে আমি মনে করি। আমি নিজে নজরুল সংগীতের চেয়ে রবীন্দ্র সংগীত পছন্দ করি।

পুতুল এর ছবি

ব্যাক্তি রবীন্দ্রনাথ আর কবি রবীন্দ্রনাথের অনেক পার্থক্য বলে আমি মনে করি।

আমরাতো ব্যাক্তি রবীন্দ্রনাথকে চিনতামনা কখনই। এই দেশে কতো জমিদার ছিল! কার নাম মনে আছে আমাদের? আমি মনে করি কবি বলেই আমরা গুরুকে মনে রেখেছি, এবং আলোচনা কবি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে হওয়া উচিৎ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অবাঞ্ছিত এর ছবি

"হায় রে ভজনালয়
তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরে ঘৃণা করি'
ও' কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি'
ও'মুখ হতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে।
পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল! - মূর্খরা সব শোনো
মানুষ এনেছে গ্রন্থ; - গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।
দাউদ আদম ঈসা মূসা ইব্রাহিম মোহাম্মাদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,- বিশ্বের সম্পদ্,
আমাদেরি এঁরা পিতা পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
তাঁদেরি রক্ত কম-বেশি করে প্রতি ধমনীতে বাজে।
আমরা তাঁদেরি সন্তান, জ্ঞাতি, তাঁদেরি মতন দেহ
কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ। "

- মানুষ
কাজী নজরুল ইসলাম

এরপরও কেউ তাঁকে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের কবি দাবি করলে তা কি তাঁর অপমান নয়? সমস্যা হচ্ছে মুহিব খানের মতন ছাগুরা তাঁর লেখাই পড়ে নাই। হুদাই চিল্লায়।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

পুতুল এর ছবি

সমস্যা হচ্ছে মুহিব খানের মতন ছাগুরা তাঁর লেখাই পড়ে নাই। হুদাই চিল্লায়।

সমস্যা সেখানেই। এই বরাহ নন্দনরা "মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই" শুনেই
নজরুল ভক্ত হয়ে যায়।

সময় নিয়ে কবিতাটা এখানে দেয়ার জন্য অপনাকে ধন্যবাদ প্রিয় অবাঞ্ছিত। মুখস্তই ছিল!

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।