জেলার নাম লালকুপি - ১৩

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: রবি, ২৪/০১/২০১০ - ৯:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই জানুয়ারীটার ধৈর্য কম। এসেই চলে যেতে চাইছে। বছর ঘোরার সময় যা দু একটা পরিকল্পনা ছিল তার থেকে সবগুলোতেই কামড় বসিয়ে আছি। কোনটাই পুরোটা সাবাড় হয় না।
---
কর্মক্ষেত্রে কারবালা। স্ট্রেস লিভ এর হিড়িক। আমার সহকারিনী কৃসমাসের পর আর ফেরেনি। অফিসের ডাক্তারের ইমেইল, এ টিপিক্যাল কেস অফ প্রফেশনাল স্ট্রেস। ভাবি, ছুটিতেই তো ছিলি আম্মা, স্ট্রেসটা কি? তার আর দোষ কি? দোষটা এই বালের দেশের। কাজে থাকলে যা, বাসায় বসে থাকলেও তা। পাওনা বছর খানেকে কিছু কমবে না, তারপরে চলে যাও চাইলে অফিসে ফেরত আসো, নয়তো বেনেফিট। মাঝখানে মন করলে ব্যাকপ্যাক নিয়ে কাঠমন্ডু নয় বলিভিয়া। তবে আপাতত জীবনের মহাপরিকল্পনা হল আগামী শুক্রবার রাতে কোন ডিজের শব্দবানে কানের বারোটা বাজানো হবে। যা আম্মা, তুই বাসায় গিয়ে শুয়েই থাক। আমিও মিটিংগুলোতে একঘন্টা দেরী করে গিয়ে দাত কেলিয়ে বলি, মাই সেক্রেটারি'স অন লিভ।
---
দুই বছর আগের গল্প। জেমস ওয়াকার, আমরা একই বছরে কোম্পানিতে ঢুকেছি, একই সাথে কোম্পানীর অনবোর্ডিং কোর্সে গেছি। সেই থেকে বন্ধুর মত। তখন মাস খানেক হয়, একই প্রকল্পে কাজ করছি। মুখোমুখি ডেস্কে বসি।

পাখি ডাকা এক নরোম রোদেলা দুপুরে জেমস হঠাত ঠাস করে চেয়ার ঠেলে এক লাফে ডেস্কের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রোজেক্টের ওপেন প্ল্যানে যতদূর চোখ যায়, সবার চোখ জেমসের দিকে। কাঁচের ঘেরাটোপের অন্যদিক থেকে বে-প্রজেক্টের লোকেরাও উকিঝুঁকি দিচ্ছে। আমার স্ক্রীনে ইন্টার্নাল ম্যাসেঞ্জারের একটার পর একটা প্রশ্ন টুন টুন করে জেগে উঠছে। জেমস কি করছে, জেমস কি পাগল হয়ে গেল?

জেমস তখন ডেস্কে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে। স্কুল পি টি'র এটেনশান মুদ্রা। তার হাত মুঠ করা। শ্বাস দ্রুত। কিন্তু চোখ শান্ত। মুখে তার রহস্যঘেরা হাসি।

কাঠমান্ডু থেকে ফিরে জেমস তার গ্রামে একটা মাছধরার নৌকা কিনে নেয়। হেব্রিডেস থেকে স্ক্যালপ তোলে। ভাল আছে। সুখে আছে।

---

টেম্পিং কোম্পানি থেকে যেটাকে এনে ফেলেছে, সেটার জন্য আলাদা করে ট্রাকভাড়া চার্জ করে কি না, মাস শেষ এর বিলে দেখা যাবে। থাকবেন তিনমাস। এসেই তার বসবার জায়গাটার পরিবেশে কিছু পরিবর্তন এনেছেন তিনি।

এল এল কুল জে'র নাঙ্গা উর্ধাংগ এখন আমাদের ওপেন প্লানের সবকটা ব্যাটাছেলেকে কর্মদিবসের আট-নয় ঘন্টা মশকরা করে।

---

বসকে সুধাই, ইকনোমিস্ট কে সুধাই, মেন্টরকে সুধাই। আইচ্ছা, সবাই বলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাহলে আমাদের এই রিজিওনের এই দশা কেন? কাস্টমারেরা সবাই সিকি আধুলির উত্তর দেয়। হাতে কিছু ভাঙ্গারী পড়ে আছে। দুই তিন বছর আগে হলে আম্রিকান, জাপানী নাইলে নিদেনপক্ষে ইন্ডিয়ান কেউ জুটেই যেত গছানোর জন্য। আজকাল কোন দালালও আসেনা। বস নিজেই চিন্তিত, এপ্রিলের কোয়ার্টার্লি শেয়ারহোল্ডার মিটিং এ এক্সেক বোনাসের কথা কিভাবে তোলা হবে। আমাদের গৃহপালিত ইকনোমিস্ট আফা একবার হু করে, একবার হাঁ করে। ঘুরে দাঁরানো ফারানো ওগুলো এশিয়ায়, আমেরিকায়। ইউরোপের আঙ্গুল চোষা ছাড়া গতি নেই।

এখানের স্টিয়ারিং নষ্ট।

---

বিফাল ভরদ্বাজ এবারেও নিরাফ করেনি। মকবুল, ওমকারার পর কামিনে। গাই রিচির ছবির মত টানটান। গড়পরতার বলিউডি ছবির মত গা ছেড়ে দেখার উপায় নেই। আজাইরা জিনিফ ছেঁটে ফেলা হয়েছে। কুত্তার ওপর বাঘ, বাঘের ওপর ঘোগ আর ঘোগের ওপর মামদোভুত - অপরাধজগতের ইকোফিফটেমের ফবগুলো বোতল থেকে এক এক পেগ নিয়ে এক বালতিতে ঘুউটা-ঘুউটা দেবার পরে আপনাকে ফেখান এক গেলাফ তুলে দেয়া হয়েছে। ঠিক যেন ফিরিঙ্গিবাজারের লেবুপাতারফুনমরিচবাটাকাঁকড়াভাজির সাথে রেলওয়ে ক্লাবের চোলাই। (উফ চট্টগ্রামের বর্ষনমূখর সেই সন্ধাগুলো)।
মজাটা জমে বিফ মিনিট পর, তার পর মিনিটে মিনিটে কিক। বেঁচে থাকো বাবা বিফাল।

ফবগুলো ফ'কে ফ লিখলাম কেন? ফিলিমটা একবার চেখে দেখুন। বোঝা গেলেউ যেতে পারে।


মন্তব্য

নৈষাদ এর ছবি

আপনার এই ... দেশে ইচ্ছা করলে জেমস ওয়াকার হওয়া যায়। আমার ইচ্ছা হয়, শেষে পারি না...।

শেখ নজরুল এর ছবি

সুন্দর সময়গুলো তাড়াতাড়ি গত হয়। ভালো লাগলো লেখা। ধন্যবাদ।
শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

সিরাত এর ছবি

স্ট্রেস-ওয়াকারের গল্প বেশি ভাল লাগলো, তাই চার। হিন্দী জিনিসে আগ্রহ কম।

আপনার স্ট্রেস হয় না? তখন কি করেন? ইতিহাস পড়েন? হাসি

দুর্দান্ত এর ছবি

হিন্দিতে আমারো সবসময় পোষায় না। তবে বিশাল ভরদ্বাজ বা এমন কিছু চিজ আছে যারা অন্যরকম। তুমি ওমকারা দিয়ে শুরু কর। বিফলে মূল্য ফেরত।

ওডিন এর ছবি

এক পাখি ডাকা, নরোম রোদেলা দুপুরে জেমস হঠাত ঠাস করে চেয়ার ঠেলে এক লাফে ডেস্কে দাঁড়িয়ে গেল।

হইলে এইরকম হঠাৎ করেই হয়- বিনামেঘে বাজ পড়ার মতো। দুইহাজারসাতে একবার হয়েছিলো। আবারো দিন মনে হয় ঘনাইতেছে! চিন্তিত

ভালো লাগে না আর। জানিনা প্রফেশনাল স্ট্রেস কি না।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

তিথীডোর এর ছবি

পড়ে মজা পেলাম...
আপনিও চাঁটগাঁর লোক তাহলে?

--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

লাবন্য [অতিথি] এর ছবি

কাঠমান্ডু থেকে ফিরে জেমস তার গ্রামে একটা মাছধরার নৌকা কিনে নেয়। হেব্রিডেস থেকে স্ক্যালপ তোলে। ভাল আছে। সুখে আছে।

-বড়ই ইচ্ছা করে এরকম কিছু করতে! অফিসে কাজের (মাঝে মাঝে অকাজের) চাপে মাথা খারাপ হলে দিবাস্বপ্ন দেখতে বসি। যখন দিবাস্বপ্নে মাথা আরো খারাপ হয়, তখন শুরু হয় সহকর্মীদের কাছে ঘ্যাঘ্যান! শেষে তাদের উপদেশ (অথবা দাবানি) শুনে আবার কাজে মনঃসংযোগ। জেমস-এর মত কিছু করার মত সাহস যে কবে হবে!!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমার জেমস ওয়াকার হতে ইচ্ছে করে না। কারণ আমি আমার মতোই আছি। জেমসেরই কোনো একদিন ধুগো হৈতে ইচ্ছে করবে। দেঁতো হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।