ভীতু চরিত মানস

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: বুধ, ১০/১০/২০০৭ - ৭:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


======================================
সাহসী আমি ছিলাম না কোন কালেই। বরং সত্যি বললে বলতে হয়, আমি চিরকালই ভীতুর ডিম।খুব ছোট বেলা থেকেই আমার সাধ্য ছিলনা বড় আকারের কোন ২ নাম্বারি করার। আর যদিও বা করতাম, বাসায় এসে বলে দিতাম সেই অপকর্ম এর কথা।তা সেই আমি যখন বুয়েটে গন্ডগোল হল শেষবার, তখন নিরাপদে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে পিঠটান দিবো হল এর বন্ধুদের বিপদের মাঝে ফেলে, এ আর বিচিত্র কি !


=====================================
আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, তোমার প্লাস পয়েন্ট কি ? আমি বিনা ভাবনায় উত্তর দিবো যে, আমি আমার দুর্বলতা আর সবলতা, ২ টা সম্পর্কেই সম্যক জানি। আর জানি বলেই বলতে পারি যে, আমি আসলে মানুষ খারাপ না, একটু ভীতু, এই যা।


=====================================
লেখা লেখি করার অন্তর্গত ইচ্ছাটা আসলে আমার অনেক দিনের। ইচ্ছা বলছি এই কারনে, কারন আমি যত বেশী লেখার বিষয় নিয়ে ভেবেছি তার ১০% ও কাগজ কলমে বা কী বোর্ডে প্রকাশ করিনি।তা সেই আমি কিভাবে কিভাবে যেন দুষ্ট লোকের প্ররোচনায় পড়ে, ওয়ার্ডপ্রেসে একটা ব্লগ খুলে ফেল্লাম।ভাবলাম এই বেলা সাহস করে কিছু সত্যি কথা বলে গায়ের সেঁটে থাকা ভীতু ট্যাগটা সরাই। কিন্তু ভীতু-গিরি ব্যাপারটা আমার মধ্যে জিগার আঠার( এই জিগার আঠা ব্যাপারটা ঠিক কি আমি নিজেও জানি না ভালমত) মত গেড়ে গেছে। বিনপি-জামাতের সমাlলোচনা করে তাও কিছু লেখতাম, কিন্তু ভদ্রলোকরা ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে আমি যেন ভীতু শিরোমনি হয়ে গেলাম। মনে কত কথা আসে কিন্তু লেখতে সাহসে কুলায় না।তার উপর মনে পড়ে সেই পার্থ নামের হতভাগ্য যুবকের কথা, দেশের অতি বিচক্ষণ আইটি শিরোমনি পুলিশ ড়্যাব ভাইরা যাকে ধরে "একটু আদর করে দিয়েছেন"। তাই চুপ করে ঘরের কোনে বসে রানিক্ষেত আক্রান্ত মুরগির মত ঝিমাই।কি দরকার মিছে ঝামেলার।

মাঝে মধ্যে মেজাজ খিচরে যায়, যখন কোথাকার কোন হরিদাস পালের কথা শুনে, ভদ্রলোকের সরকার পাটকল বন্ধ করে, সামান্য কার্টুনে অসামান্য ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়।মাঝে মধ্যে মনে হয়, চিৎকার করে বলি, আমার কি রকম খারাপ লাগে যখন দেখি, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক গ্রেফতারঃ জেল হাজতে প্রেরণ" শিরোনাম। তবে এর মাঝে যে অন্য কাজ করতেও ইচ্ছা করে না, তা নয়। যেমন মাঝে মধ্যেই মনে হয়, এক দলা থু থু ছিটিয়ে দেই দেশ এর সব আবাল বুদ্ধিজীবির গায়ের উপর, যারা এখনো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। জাফর ইকবার স্যার কিংবা শাহরিয়ার কবির এর মত সাহসী লোক কই যারা শিক্ষকের মুক্তি দাবি করে দ্বিধাহীণ কন্ঠে।


========================================
এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ টের পাই, উলটা পালটা ভাবছি আমি। এইসব ছাই পাশ ভেবে লাভ নাই। আমি মধ্যবিত্ত বাবা মার এক মাত্র ছেলে। বাবা মা অনেক শখ করে বুয়েটে ভর্তি করিয়েছে, পাশ করে ভাল চাকরি করার জন্য, এই সব রাবিশ চিন্তা করার জন্য না।

বিপ্লব করার জন্য অনেক লোক আছে, মধ্যবিত্তের জন্য বিপ্লব না। এইসব ভাবতে ভাবতে সার্কিট সলভ করার দিকে মনযোগ দেই,যা পেটে ভাত যোগাবে। বিপ্লবের চিন্তা অন্য কারো জন্য তোলা থাকলো।


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

খাঁটি কথা ... আসলেই আমাদের জন্য বিপ্লব না ... আমরা মন দিয়া পড়ালেখা করব, শাঁসালো চাকরি বাগাবো, চাকরি করতে করতে জিআরই দিব, তারপরে উড়াল দিব ... ফালতু ঝামেলায় গিয়া লাভ কি?

আপনি ঝামেলার ভয়ে ব্লগ লেখেন না, আর আমি নিশ্চিত জানি অনেকেই ব্লগে বিপ্লবের ফুলকি ছোটান কিন্তু সত্যিকারের দরকারের সময় লেজ গুটায়ে গর্তবাসী হয়ে যাবেন ... কিংবা আসেন ভাই প্রতিবাদ করি টাইপ পোস্ট মারবেন ... "আপনারা আসেন আর নাই আসেন আমি এইভাবে প্রতিবাদ শুরু করলাম" এই ধরণের পোস্ট কয়টা দেখছেন বলেন তো?

কাজেই লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই ... আমরা এমনই ...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আপনি তো ভীষন সাহসী হাসি
কেমন সাহস করে সত্য বলে ফেললেন!

-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দ্রোহী এর ছবি

ভাইরে, টুকটাক কাম দিয়ে কি সাহসী - ভীতু চেনা যায়? যে মানুষটি সারাজীবনে একটা সাহসের কাজও করে না, ঠিক সেই মানুষটিই কি প্রয়োজনের মুহুর্তে পুরোপুরি সাহসী হয়ে উঠে না?

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় কি ঘটেছিল? হাজার হাজার সাধারণ মানুষই কি অসম্ভব সাহসী হয়ে উঠেনি?

সত্যিকারের প্রয়োজনই নিরুপন করে দেয়, কে সাহসী আর কে ভীতু।


কি মাঝি? ডরাইলা?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই কথাগুলো নিজের কাছে স্বীকার করে নিয়ে জনসমক্ষে বলে ফেলার সাহস থাকলে আপনি কীসের ভীতু?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ওহ্যাঁ, একটা কথা মনে পড়লো ।
'জনযুদ্ধের গনযোদ্ধা' বইয়ে একটা কথা আছে --বড়মানূষেরা ছোট কাজে সাহস দেখান আর ছোট মানুষেরা সাহস দেখায় বড় কাজে,যেমন দেখিয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সবজান্তা এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে পড়ার জন্য।

এই লেখার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে, আমার ভিতরে কাজ করা এক ধরণের অপরাধবোধ, সত্যি না বলতে পারার।

আমি জানি না বড় কোন কাজে আমি সত্যিই সাহস দেখাতে পারব কিনা! তবে আমি এইটা বুঝি, এই সাহসটা আমাদের দেখানো খুব জরুরী। এখনি না দেখালে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

আরেকটা কথা, আমার লেখাতে "য-ফলা" দেখতে কি কোন সমস্যা হচ্ছে ? কারন একজন বলেছেন, তিনি য ফলার জায়গায় শুধু য দেখছেন।
-------------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

একদিন এই ভীতুরাই ডিম ফুটে বের হয়ে আসে আর "সাহস" কথাটাকেও লজ্জায় ফেলে দেয় ...

ভাল লিখসোস বনিক

- খেকশিয়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।