জামাত শিবির নিষিদ্ধ হওয়া কেন জরুরি

অয়ন এর ছবি
লিখেছেন অয়ন (তারিখ: শুক্র, ১৫/০২/২০১৩ - ৬:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। স্বৈরাচার নিপাত যাওয়ার কয়েক বছর পরের ঘটনা। সেই সময়ে এক সাপ্তাহিকে খুব ভয়ংকর একটা খবর পড়লাম। সাপ্তাহিকটা সম্ভবত চট্টগ্রামের স্থানীয়। আমার ঠিক মনে নেই। খবরটা ছিল এমন, চট্টগ্রামের কোন এক জায়গায় (রাউজান, সাতকানিয়া এরকম কিছু হতে পারে) এক কলেজের ছেলেকে আরেক একদল ছেলে মেরে ফেলেছে। কি পদ্ধতিতে মেরে ফেলা হয় সেটার বিস্তারিত বর্ণনা ছিল, এবং পুরো ঘটনাটার মধ্যে শুধুমাত্র সেটাই আমার খুব পরিষ্কারভাবে মনে আছে। ওই ছেলেকে একটা লেপের ভেতর ঢুকিয়ে বাইরে থেকে রড দিয়ে পেটানো হয়। ফলে শরীরের বাইরে কোন বড় ইনজুরি চোখে পড়ে না, কিন্তু হাড়গোড় সব চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ওই ছেলেগুলো শিবির করতো।

শিবিরের রগ কাটা কিংবা হত্যাকান্ডগুলো সাধারণত প্রকাশ্যে হয়। ওই ঘটনাটাও সবার সামনেই ঘটেছিল, অনেক খবরের কাগজেও এসেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কিচ্ছু দেখেনি। আমার বয়স তখন আট কিংবা নয় হবে, ওই সময়ের সবকিছু মনের ভেতর অনেক দাগ কাটে। শিবির নামটা শুনলেই এরপর থেকে ভয় পেতাম। তখন একটা ব্যাপার চিন্তা করিনি যেটা পরে মাথায় এসেছিল। একটা মানুষ আরেটা মানুষকে যখন খুন করার চিন্তা করে তখন চেষ্টা করে যতদ্রুত সম্ভব কাজটা শেষ করার। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা কেমন জানি। সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে লেপ যোগাড় করার ব্যাপারটা। একটা মানুষ কিংবা অনেকগুলো মানুষ একসাথে বসে চিন্তা করে বের করলো ওই ছেলেটাকে লেপের ভেতর মুড়িয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে মারবে। তারপর তারা লেপ এবং রড যোগাড় করলো। তারা গুলি করতে পারতো, ছুরি দিয়ে আঘাত করতে পারতো, এতো কিছু থাকতে তারা লেপ মুড়িয়ে রড দিয়ে পিটিয়ে মারলো। ছেলেগুলোর বয়স হবে ১৮ থেকে ২৫। এই বয়সের একদল ছেলে দীর্ঘ সময় নিয়ে চিন্তা করছে কিভাবে আরেকটা ছেলেকে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়ে মারা যায়। তারা পরিকল্পনা করলো এবং সেটা বাস্তবায়নও করলো। পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করলে গা গুলিয়ে আসে।

২.
ওপরের ঘটনাটার থেকেও ভয়ংকর একটা ব্যাপার ঘটে কিছুদিন পরেই। আমি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এলাকার ভেতর এক প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম। ভয়াবহ রকমের শিবির অধ্যুষিত এলাকা। নারায়ে তাকবির খুবই কমন শ্লোগান। তো আমার এক নারায়ে তাকবির বলা সহপাঠীকে বললাম, তুই কি জানোস শিবির এইরকম করে এক ছেলেকে খুন করছে। আমি কি উত্তর আশা করেছিলাম মনে নাই, তবে উত্তর শুনে আক্ষরিক অর্থেই চোদনা হয়ে গেলাম। উত্তর ছিল, “ওই ছেলে নিশ্চয়ই কিছু করছে, এমনি এমনি তো শিবির মারে না”। একটা ছোট ছেলে, ৮-৯ বছরের ছেলে, যার এখনো মৃত্যু ব্যাপারটাই মেনে নেয়ার কথা না, সে মনে করে ছাত্রশিবিরের অধিকার আছে তাদের সাথে “কিছু করলে” আরেকটা মানুষকে মেরে ফেলার।

৩.
জামাত শিবির মতাদর্শের রাজনীতি করে। মতাদর্শটা কি এবং তাতে কি সমস্যা সেইটা নিয়া বহুত প্যাচাল পারা সম্ভব। সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায় মতাদর্শটা মউদুদী নামক এক মাদারচুদের তৈরী করা। মউদুদী কে, তার কি কি সমস্যা সেটা ইন্টারনেটে বাংলা এবং ইংরেজীতে সহজলভ্য। সেদিকে গেলাম না। যেই দিকে আলোকপাত করতে পারি সেইটা হলো এই আদর্শে যারা বিশ্বাস করে তাদের কাজের ধরনটা কেমন। ৭১’এর নয় মাসে অনেক ঘটনা ঘটছে। লাখ লাখ সাধারণ মানুষ মারা গেছে। এর মধ্যে আমার আপনার অনেকের আত্মীয়স্বজন আছে। পুরো নয় মাসে কি কি অপরাধ ঘটছে সেইদিকে না যাই। খালি ১৪ই ডিসেম্বরের দিকে তাকাই। তার আগে এই লিস্টে একবার চোখ বুলায়া নেই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম আছে, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকের নাম আছ। যেই ব্যাপারটা আমার কাছে মূখ্য মনে হয় সেইটা হলো এই লিস্টির সবার স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ নাই। অনেকে যুদ্ধের পুরা সময়টা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। অর্থাৎ পাকিস্তানীদের নেক নজরে থাকার পরেও তাদের কাছে মনে হইছে এদের হত্যা করাটা জরুরী। এইটা কেন মনে হইলো? প্রথমে খেয়াল করতে হবে ১৪ই ডিসেম্বরে যুদ্ধ শেষই বলতে গেলে। পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই সময়ে একদল “বাঙালী” তরুণ যুবক এই শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকদের বাসায় গিয়ে গিয়ে চোখবেধে ধরে নিয়ে আসতে শুরু করলো। মিরপুর আর রায়েরবাজার নিয়ে তাদের হত্যা করলো। হত্যাকান্ডের ধরনটা এখানে জানাটা জরুরী। এই ব্লগ থেকে নেয়া

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা,”আর একটু এগিয়ে যেতেই বাঁ হাতের যে মাটির ঢিপিটি ছিল তারই পাদদেশে একটি মেয়ের লাশ।মেয়েটির চোখ বাঁধা।গামছা দুটো আজও অখানে পড়ে আছে।পরনে কালো ঢাকাই শাড়ী ছিল।এক পায়ে মোজা ছিল।মুখ ও নাকের কোন আকৃতি নেই।কে যেন অস্ত্র দিয়ে তা কেটে খামচিয়ে তুলে নিয়েছে।যেন চেনা যায় না।মেয়েটি ফর্সা এবং স্বাস্থ্যবতী।স্তনের একটা অংশ কাটা।লাশটা চিৎহয়ে পড়ে আছে।বিভৎস চেহারার দৃশ্য বেশীক্ষণ দেখা যায়না।তাকে আমি চিনতে পারিনি।পরে অবশ্য সনাক্ত হয়েছে যে ,মেয়েটি সেলিনা পারভীন।’শিলালিপি’র এডিটর।তার আত্মীয়রা বিকেলে খবর পেয়ে লাশটি তুলে নিয়ে গেছে।”

আরেকটি বর্ণনা,”পাশে দুটো লাশ, তার একটির হৃৎপিন্ড কে যেন ছিঁড়ে নিয়েছে।সেই হৃৎপিন্ড ছেঁড়া মানুষটিই হল ডঃ রাব্বী।—————-ডঃ রাব্বীর লাশটা তখনও তাজা।জল্লাদ বাহিনী বুকের ভেতর থেকে কলিজাটা তুলে নিয়েছে।তারা জানতো যে তিনি চিকিৎসক ছিলেন।তাই তার হৃৎপিন্ডটা ছিঁড়ে ফেলেছে।”"

ভয়ংকর নোংরা অপরাধীরাও তো এভাবে মানুষ মারে না। আরো ভয়ংকর লাগে এটা চিন্তা করলে যে, যেই খুনী ডাঃ রাব্বীকে হত্যা করেছে সে ডাঃ রাব্বী কিসের ডাক্তার সেটাও জানে। রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে পাওয়া লাশগুলো দেখলে এটাই মনে হয়। আলবদরের বিভত্স প্রাণীগুলো হত্যা করা বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যেকের সম্পর্কে জানতো। রাও ফরমান আলীর ডাইরীতে বুদ্ধিজীবীদের একটা তালিকা পাওয়া যায়। ওই তালিকার অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীকে ১৪ই ডিসেম্বর হত্যা করা হয়। এই তালিকা শত মাইল দূর থেকে আসা কিছু মাদার্চুদ জেনারেলের পক্ষে তৈরী করা সম্ভব না। বছরের পর বছর ধরে যেই জামাতী শুয়ারগুলো ঘাপটি মেরে বসে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে, সরকারী অফিসে, খবরের কাগজে, হাসপাতালে তারাই মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, এস এম রাশীদুল হাসান, শহীদুল্লাহ কায়সার, খোন্দকার আবু তালেব, আবদুল আলীম চৌধুরীদের হত্যা করে। এর পরিকল্পনায় ছিল জামাত-ই-ইসলামের আর বাস্তবায়নে ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। তত্কালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মো: মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, মো: কামরুজ্জামান, আশরাফুজ্জামান খান, চৌধুরী মইনুদ্দিনের নেতৃত্বে এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়।

বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জামাত-ই-ইসলামীর প্রাপ্তি কি ছিল? প্রাপ্তি ছিলো ১৯৭৫, ১৯৭৮ আর ১৬ বছরের সামরিক শাসন। ১৪ই ডিসেম্বরে বাঙালী জাতির যে বুদ্ধিবৃত্তিক শূণ্যতা সৃষ্টি হয় সেই শূ্ণ্যতা থেকে আমরা এখনো উদ্ধার পাইনি। এখনো আমাদের তর্ক করতে হয় স্বাধীনতা যুদ্ধে কতজন মারা গিয়েছেন, রাষ্ট্রের মুসলমানী কেন করা উচিত এইসব নিয়ে। ৮-৯ বছরের অবোধ বালকেরা এখানে মনে করে শিবির দরকারে মানুষ খুন করতেই পারে। সেই দিক থেকে বলা যায় যেই উদ্দেশ্যে ১৪ই ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় সে উদ্দেশ্য অর্জনে জামাত সফল। তবে এখনো সময় আছে।

৪.
৭১’এ ইসলামী ছাত্রসংঘ কর্তৃক বাঙালী মতাদর্শ হত্যা করার আদর্শের উপর ভিত্তি করেই ১৯৭৭ সালে গঠিত হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। ৭১ সালে মুক্তবুদ্ধি, সমাজচেতনা, শিক্ষা, প্রগতি যেমন এদের কাছে আতংক ছিল আজো তাই আছে। চট্টগ্রাম কলেজ, মহসীন কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য ছাত্র এদের বিরোধীতা করার কারণে নিহত কিংবা পঙ্গু। ৪২ বছরে এদের খুনের ধরনে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। ৭১’এ এদের হত্যাকান্ডগুলোতে যেই বিভত্সতা ছিলো আজো তাই আছে। হৃৎপিন্ড খুবলে নিয়ে, চোখ উপড়ে ফেলে ৭১’এ হত্যা করেছে, আজ এদের কাছে হত্যার ধরন হলো রড দিয়ে পিটিয়ে, ড্রিল দিয়ে ফুটো করে।

কিছু কিছু ভদ্রলোক আছে যারা জামাত শিবির নিষিদ্ধ করাকে ফ্যাসিবাদের সাথে তুলনা করে। ওই ভদ্রলোকদের নাত্সীবাদের ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনা করাটা জরুরী। নাত্সীবাদ এবং জামাতী রাজনৈতিক আদর্শ বেশ কাছাকাছি। এই আদর্শ হলো সকল ধরনের বিরুদ্ধমতের ধ্বংস। এটা পুরোপুরি ক্যান্সারের মতো। যথাসময়ে কেটে ফেলতে না পারলে আস্তে আস্তে পুরো শরীরকে গ্রাস করে নেবে। একমাত্র সমাধান যথাসময়ে কেটে বাদ দেয়া এবং যেকোন জায়গায় এই ক্যান্সারকে দেখা মাত্র ধ্বংস করা। কারণ আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন এই মূহুর্তে জামাত শিবির এর কাছে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের একটা তালিকা আছে ঠিক রাও ফরমান আলীর ওই ডাইরীর তালিকাটার মতোই। সেখানে একসময় হুমায়ুন আজাদের নাম ছিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহম্মদ ইউনুস, ডা: তাহেরের নামও ছিল, এখন নামগুলোর পাশে ক্রস দেয়া। আমরা যদি জামাত শিবিরকে উত্খাত করতে না পারি তাহলে এই তালিকার আরো অনেক নামের পাশেই ক্রস পড়বে। হয়তো সকাল বেলা স্যার যখন হাটতে বের হবেন, তখন কিছু ছিনতাইকারী এসে ঠিক কিডনী কিংবা হৃৎপিন্ডের অনেক গভীরে ছুরিটা গেথে দেবে। তারপর আমরা এই ভালো মানুষটার জন্য ১ মিনিট নীরবতা পালন করে আবার যে যার কাজ করতে চলে যাবো। আমি এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই না।


মন্তব্য

মেঘা এর ছবি

মনে আছে খুব ছোট ছিলাম মাত্রই স্কুলে ভর্তি হয়েছি এমন। সকাল ১০টা ১১টার দিকে অনেকগুলো ছেলে মিলে স্কুলের গেটের বাইরে একটা ছেলে কে কুপিয়ে মেরে ফেলেছিল। ছেলেটা চিৎকার করে সাহায্য চাচ্ছিলো। কেউ সাহস পেলো না তাকে সাহায্য করার। আমার বড় বোন এই ঘটনা দেখার পর অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল কাঁদতে কাঁদতে।

জামাত-শিবির মুক্ত একটা দেশ চাই। যে দেশে কেউ কোন একটা ধর্ম/মত দিয়ে খুনোখুনি করবে না। কেউ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য গোপনে একটা লিস্ট বানাবে না খুন করার জন্য। এই সব কিছুর হাত থেকে মুক্তি চাই। সমূলে উৎপাটন করা হোক এই অমানুষদের!

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

অমি_বন্যা এর ছবি

জামাত-শিবির মুক্ত একটা দেশ চাই। যে দেশে কেউ কোন একটা ধর্ম/মত দিয়ে খুনোখুনি করবে না। কেউ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য গোপনে একটা লিস্ট বানাবে না খুন করার জন্য। এই সব কিছুর হাত থেকে মুক্তি চাই। সমূলে উৎপাটন করা হোক এই অমানুষদের! চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

র তে রাজাকার
ব তে বাংলা ছাড়

--- ঈয়াসীন

হিমু এর ছবি

সোনাব্লগে এই পোস্টের চারদিন পরে থাবাবাবার জবাই করা লাশ বাসার সামনে ফেলে দিয়ে গেছে কসাইয়ের দল এইরকমই খবর।

যুদ্ধটা দোরগোড়ায়, রুখে দাঁড়ান সবাই।

সাজ্জাদ এর ছবি

'স্পর্শের বাইরে' নামক ঐ ব্লগার পোস্ট সরিয়ে ফেলছে। যাই হোক তার সোনা ব্লগ id হল tanimaust . ডিবি পুলিশের উচিত এই ব্যাটাকে রিমান্ডে নেয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

যুদ্ধের ডাক শুনেছি মাগো
বাধা দিওনা আর;
একাত্তরের প্রতিশোধ নেবো
হটাবোই রাজাকার! গল্পের টোনা

SADIK CHOWDHURY এর ছবি

চমৎকার লিখা। জামাত শিবিরের নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের অনেক বিবরণ আছে। সহজ সরল ধর্মপ্রাণ জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন করা উচিৎ।
SADIK CHOWDHURY

তানিম এহসান এর ছবি

বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জামাত-ই-ইসলামীর প্রাপ্তি কি ছিল? প্রাপ্তি ছিলো ১৯৭৫, ১৯৭৮ আর ১৬ বছরের সামরিক শাসন। ১৪ই ডিসেম্বরে বাঙালী জাতির যে বুদ্ধিবৃত্তিক শূণ্যতা সৃষ্টি হয় সেই শূ্ণ্যতা থেকে আমরা এখনো উদ্ধার পাইনি। এখনো আমাদের তর্ক করতে হয় স্বাধীনতা যুদ্ধে কতজন মারা গিয়েছেন, রাষ্ট্রের মুসলমানী কেন করা উচিত এইসব নিয়ে। ৮-৯ বছরের অবোধ বালকেরা এখানে মনে করে শিবির দরকারে মানুষ খুন করতেই পারে। সেই দিক থেকে বলা যায় যেই উদ্দেশ্যে ১৪ই ডিসেম্বরের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় সে উদ্দেশ্য অর্জনে জামাত সফল। তবে এখনো সময় আছে।

আলোচনা ভাল্লাগলো।(Y)

অতিথি লেখক এর ছবি

জামাত শিবির নামের ক‌্যানসার সারাতে আধুনিক ওষুধ লাগবে। নিষিদ্ধ করার পরও ব্যঙের ছাতার মত ভিন্ন ভিন্ন নামে গজাতেই থাকবে। এদের দমনে চাই বিরামহীন আন্দোলন। আলো জললে আধাঁর পিছু হটবেই, সাথে আধাঁরের জীব জামাতী পিশাচগুলো!

কসাই এর ছবি

আচ্ছা জামাত কথার মানে কি? বাংলায় জামাতা কথার মানে তো জামাই - তা এরাও কি কারো ....

অমি_বন্যা এর ছবি

জামাত শিবির আসলেই একটা ক্যান্সার। এরা ক্রমেই মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

মনে আছে ইউনিভার্সিটিতে যখন ভর্তি হই তখন এই সব ছাগুদের প্রথম টার্গেট হিসেবে একে বারে সদ্য ভর্তি হওয়া ছাত্রদের দেখেছি। এদের শুরুটাই হত নানা রকম সাহায্য দিয়ে। ধরা যাক হলে রুম দিয়ে দেয়া, টাকা দিয়ে সাহায্য করা। এরপর লাইনে আসলে এদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাসও দিতে দেখেছি।

অনেক সহপাঠীদের এ পথে পা বাড়াতে দেখেছি। হলে এই ধরনের মগজ ধোলাইয়ের সাথে অনেক কেই যুক্ত থাকতে দেখেছি। তাই আমার মনে হয় আজ সময় এসেছে এইসব ফাণ্ড এর উৎস খুজে বের করা আর তা আইন করে বন্ধ করা।

তবে সবার আগে এদের রাজনীতি নিসিদ্ধ করতে হবে। বিশ্ব বিদ্তিযালয়ের প্রতিটা হলে হলে এইসব মগজ ধোলাইয়ের যারা উদ্যোক্তা তাদের চিনহিত করতে হবে যেন তরুন সমাজ শুরুতেই এদের পাতা ফাদে পা দিতে না পারে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি মনে করি -
১। ১৯৫২ থেকে ১৯৭০ এর নির্বাচন - এই সময়ের মধ্যে, যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পথ দেখিয়ে যাচ্ছিল, সেসব দল তখনো একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য এবং তা হাতে পেলে কিভাবে তার সামাজিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ও পরিপালন করবে - তাও ভেবে দেখার সময় পায়নি।

২। ফলে ৭১-এ একটি দেশ নেতার ‘এবারের সংগ্রাম - স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এর ভিত্তিতে আপামর জনগনের অস্তিত্ত্বের লড়াইয়ে এবং ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় হঠাৎ ইতিহাসের গর্ভ থেকে বেরিয়ে নবজাতক মানব শিশুর মতো জন্ম নিল কিন্তু সেসময়ের নেতৃত্ব দেশের যে সংকট সমূহকে মোকাবেলা করে যুদ্ধগ্রস্থ একটি ভগ্নপ্রায় দেশকে কোলে নিয়ে গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন, তারা কেহই এবং ১৯৭৫ পরবর্তী ১৯৯০এর পূর্ব পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমরা পেয়েছি, তারা পর্যন্ত-ও একবারও কেউ ভেবে দেখবার অবকাশ পেলনা যে, আমাদের প্রকৃত দৈন্যের জায়গাটা কোথায়।

৩। আমরা জাতিগত ভাবে দরিদ্র। কিন্তু এটা আমাদের মূল সমস্যা নয়, আমি তা মনে করি না। আমাদের মূল সমস্যা হলো আমাদের শিক্ষার বড়ই অভাব। স্কুল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কি পড়ানো হবে, কেন পড়ানো হবে - এই ব্যাপারে আমাদের কোন জাতিগত দর্শন নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনেক কিছুর সাথে তুলনা করা যায়। যেমন, বাতিল ভাঙ্গাচোরা খেলনা, শিশু তার ভালো-ভাঙ্গা সব খেলনাই একসাথে রাখে। প্রতিটি দিয়েই খেলে। তেমনি হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। হঠাৎ একটি দুটি ভাঙ্গা খেলনা হারিয়ে গেলে শিশুটি বড় জোর একবেলা তা খুঁজে কিন্তু পরের বেলাই ভুলে যায়। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তদ্রুপ উদাসীন।

৪। বিশাল পুরনো রাজবাড়ী, উঁচু ছাদ, প্লাষ্টার খসে গেছে, জায়গায় জায়গায় মাকড়সার জাল, এরকম একটা পুরনো রাজসিক পোড়ো বাড়ীতে সজোরে চিৎকার দিলে প্রতিধ্বনি হয়। কিন্তু এই প্রতিধ্বনি কোন কাজে লাগে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক এরকম একটা পুরনো বিশাল দালান। ছাত্ররা পরীক্ষার আগের রাতে টেপ রেকর্ডারের মতো সব মুখস্থ করে আর পরীক্ষার হলে প্রতিধ্বনি করে। অব্যবহিত পরে এই প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যায়।

এগুলো হলো আমার মতো সামান্য এক মানুষের শিক্ষা-অভিজ্ঞান।
১৯৭১-এ রাও ফারমান আলীর ডায়েরীতে যে শিক্ষক-বুদ্ধিজীবিদের হিট লিষ্ট ছিল, এটা যে তার / তাদের যুদ্ধাপরাধ - সেটা প্রমানে আমরা যে পরিমান মেধা, সময় এবং জাতীয় অর্থ ব্যয় করেছি, তার শতকরা এক ভাগও করিনি এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজায়- যে, এতকিছু থাকতে, তারা হিট লিষ্টে শিক্ষক-বুদ্ধিজীবিদের নাম রাখল কেন? এমনকি এসব শিক্ষকদের একটা বড় অংশই যেখানে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না?
আমার মনে হয়, এই প্রশ্নটি খতিয়ে দেখার দরকার ছিল, জানুয়ারী ১৯৭২ এর মধ্যেই। অন্যান্য একাধিক কারণ এর পেছনে আছে বা থাকতে বাধ্য। তবে, আমার সামান্য ধারনায় আমি মনে করি, রাও ফারমান আলী সেই ডায়েরী এবং এর হিট লিষ্ট থেকে আমরা একটা মোক্ষম শিক্ষা লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আর ঠিক এই শিক্ষাটাই সাগ্রহে লালন, কর্ষন এবং বিকাশ ও ব্যবহার করেছে পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবে অনুমোদিত জামায়াত-ইসলাম-বাংলাদেশ।

তাদের কার্যক্রমের গোড়া বলতে গেলে শুরু হয়ঃ
ক। মাদ্রাসা থেকে এবং খ। মসজিদ থেকে।
একটি সরাসরি শিক্ষা কেন্দ্র এবং অপরটিতে ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি শিক্ষা দেয়া চলে।

আমরা ১৯৭১ এর ১৪ই ডিসেম্বর থেকে আজ ২০১৪ পর্যন্ত স্বীকার করতে পারিনি যে, আমাদের শিক্ষার দৈন্য-ই ব্যপকতম দৈন্য। কিন্তু জামায়াত তা জানে, মানে এবং তাই পুরনো রাজবাড়ীর আকৃতির হলো শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে ঢুকে পড়েছে শিক্ষার নামে নিজস্ব গোলা-বারুদ-কামান নিয়ে।

একটা শিক্ষা ব্যবস্থা যদি এমন থাকত হায় - যা দিয়ে যুক্তির কষ্টি পাথরে উঠতি ছাত্র সমাজ দেশের কর্মকান্ড, ঘটনা প্রবাহ এবং নিজের কৃত কর্মকান্ড যাচাই করতে পারত - তাহলে বিজাতীয় শিক্ষার আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য - আমাদের সামরিক যুদ্ধ করতে হতো না।

অনেকেই নৃশংস ভাবে নিহত হয়েছেন, জামায়াত-শিবির গং এর হাতে। ভবিষ্যতেও যে হবে - তাও পরিস্কার।
শুধু আফসোস, আমাদের দূর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার ওরা করতে পারল - আর -
আমরা আমাদের ঘর-বাড়ীর অর্গল-টাও দেয়া শিখলাম না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।