KISS প্রিন্সিপল, ফটোইলেক্ট্রন আর জাতে মাতাল দুই প্রতিভার বক্তিমা

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/০৭/২০০৭ - ৬:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা assumption দিয়ে শুরু করছি, যারা নোবেল পান তারা প্রতিভাবান। আর প্রতিভা মাত্রই জাতে মাতাল।
গিয়েছিলাম দু'জন নোবেল লরিয়েটের বক্তিমা শুনতে। আঁতলামি আর কি। তবে শুন্য হাতে ফিরতে হয়নি। প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা আমার মত লেকচার হলের আরো হাজার খানেক আমজনতাকে নিরাশ করেননি একেবারেই।
এইধরনের অনুষ্ঠান সাধারণত ভাবগম্ভীর করে তোলার সব চেষ্ঠাই আয়োজকরা করে থাকেন। কিন্তু যাদেরকে নিউক্লিয়াস করে এই আয়োজন, সেই সব মানুষ মাত্রেই জাতে কিছুটা মাতাল হওয়ায় সেই চেষ্ঠা সব যথারীতি বিফলে।

অনুষ্ঠানের দুই নিউক্লয়াসের একজন রসায়নে আর অন্যজন পদার্থে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত। প্রথম পাবলিক লেকচারটা দিলেন আমেরিকান রসায়নবিদ। তিনি যে জাতে আসলেই মাতাল তার প্রমাণ হিসেবে স্টেজে গিয়ে বেঢপ স্যুটের পকেট ইতিউতি করে অনেক খুঁজে যা বের করলেন তা হলো দুই বোতল মিনারেল ওয়াটার। রাখলেন ডায়াসে (ডায়াসে কিন্তু পানির বোতল ছিলই)। মৃদু হাস্যরস হলো। সেটা ব্যাপার না, হিউমার দিয়ে লেকচার শুরু করা একটা বড় গুন। তারপর তিনি পাওয়ার পয়েন্টে যে প্রেজেনটেশনটা এনেছিলেন সেটা ওপেন করতে গিয়ে কোথায় কি যেন চেপে কম্পিউটারের মাথা খারাপ করে দিলেন। হল ভর্তি সবাই অপেক্ষায় চুপচাপ, আর আমাদের বক্তা তখন ইতিউতি তাকাচ্ছেন চোখের কোণে please help me নিয়ে। একবার ডায়াসের ওপারে উবু হয়েও কি বা কাকে যেন খুঁজলেন।
আরেকটা গোলমাল তিনি করলেন পয়েন্টার নিয়ে। বিশাল স্ক্রিনের দিকে তাক করে পয়েন্টার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবাইকে যতবারই কিছু একটা দেখাতে চান, লেজার কাজ করে না। হাজার শ্রোতার সামনে তিনি কিছুটা বিব্রত, অনেকটা যেন i am too old for this shit.

দ্বিতীয়জন যিনি একজন ফরাসি দেশীয় আইনস্টাইন সৈনিক,শুরু করলেন এমন একসেন্ট নিয়ে (হুইন ই ফুটুন হিট এন ইটুম, when a photon hit an atom) প্রথমবারের মতন মনে হলো পালাই।
শুধু এই হলে কথা ছিল। মাঝে মাঝে তিনি পাবলিক লেকচার ভুলে নিজের সাথে কথা বলতে শুরু করেন। তখন এক দেখার মতন অবস্থা হয়। আত্মভোলা পাগল বৈজ্ঞানিক বোধহয় একেই বলে।

প্রথমজন বলছিলেন তার রসায়নের KISS principle নিয়ে। KISS মানে এখানে চুমু নয়, keep it simple,stupid. নতুন যৌগ, ধনন্তরি জৈবযোগ, আরও কত কি চোখের নিমিষে রান্না করে পরিবেশন করার হাতসাফাই।

দ্বিতীয়জন বললেন কেন আইনস্টাইনের ভুত এখনও আমাদের পিছু ছাড়ছে না। সেটা এক ইতিহাস। না জানাই ভাল। তবু বললেন, আমি কিছুটা ঘুমিয়ে নিলাম এসির বাতাসে।

বক্তিমার সব কিছুই যদি বুঝতে পারতাম তাহলে কি আর আমজনতা হয়ে ওটা শুনতে যাই? তাহলে তো নিজেই নোবেল টোবেল গলায় ঝুলিয়ে এবেলা ওবেলা মৌজ করে বেড়াতাম।
তাই টেকনিক্যাল কিছু বেশি বুঝিনি। আশেপাশে হ্যাভভি আতেঁল যারা মাথা নাড়ছিল বারবার, তারাও যে বুঝে শুনে ঠিকঠিক মাথা নাড়ছিল তা মনে হয় না।

তবে কিছু মুক্তা তো অবশ্যই কুড়িয়ে এনেছি। সবচেয়ে চকচক করাটা বলি। জাতে মাতাল দুই ভদ্রলোক নিজেদের মতন করে যেন আমার কানে কানে বলে গেলেন,For God's Sake, have a meaningful life.

সবচেয়ে অবহেলারটা বলি।
লেকচার শেষে হল ভর্তি সহস্র মানুষ যখন এই তটস্থ সংকুচিত মানুষদ্বয়কে উঠে দাড়িয়ে মুহুর্মুহু করতালির ভাষায় বলছিল ধন্যবাদ আপনাদেরকে,ধন্যবাদ আপনাদের কষ্টকে, ধন্যবাদ আপনাদের সাহসকে, ধন্যবাদ আপনাদের বিসর্জনকে তখন গোধূলিবেলার কিছু পথহারা ফটোইলেক্ট্রন এসে আমাকেও KISS করে গেল গভীর মমতায়।


মন্তব্য

তারেক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি মজা পাইলাম।
_________________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে...

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

simple stupid এর মাঝে এ্যান্ড হবে না।
-----------------------------------------------
গাধারে সাবান দিয়া গোসল দেয়ানোটা গাধাপ্রীতির উজ্জ্বল নমুনা হতে পারে; তবে ফলাফল পূর্বেই অনুমান করা সম্ভব, গাধার চামড়ার ক্ষতি আর সাবানের অপচয়।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হযবরল এর ছবি

ভাল্লাগলো।

ফারুক হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ শোহেইল মতাহির চৌধুরী ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য। ঠিক করা হয়েছে।
KISS Principle নিয়ে আরো মজার জিনিস জানতে চাইলে অবশ্যই পড়ুন এখানে
http://en.wikipedia.org/wiki/KISS_principle

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মজাই লাগলো। আরো চলুক।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।