দুরবিন দূরত্বে-১

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/০১/২০০৮ - ১২:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিন মোর কর্মের প্রহারে পাংশু
রাত্রি মোর জ্বলন্ত জাগ্রত স্বপ্নে। (বুদ্ধদেব বসু)

এইভাবেই জীবনের কোড়ানো নারিকেল খাওয়া। আর মাঝে মাঝে সেই জীবনের হঠাত্ উজ্জ্বল বলয়রেখায় চোখ বুলানো। সবই দুরবিন দূরত্বে থেকে দেখা।

১.
সাপ খোলস বদলাচ্ছে।

এই ঈদে টাইট, খটখটে, মলিন আর ছোটো হয়ে গেছে গত ঈদের নতুন জামা। তার মানে বেড়েছে দেহে, গায়ে গতরে। সাপ এখন বড় হচ্ছে।
দেহের তালে নিশ্চই চামড়াটা বাড়েনি। যে খোলস তাকে একদা বাঁচিয়েছে গ্রীষ্মের উত্তাপ থেকে, কনকনে শীতে দিয়েছে ওম, বর্ম হয়ে রক্ষা করেছে কোমল বুক- সেই বহুব্যবহৃত খোলস এখন সাপের বাড়ন্ত শরীর ধরে রাখতে অক্ষম। তাই খোলসটা বদলাচ্ছে আমাদের পরিচিত এই সাপ, ইঁদুর মারছিলো বলে যাকে একদা আমরা বাহবা দিয়েছিলাম।
আরো কি মজা! খোলস বদলালে গা থেকে ঝেড়ে ফেলা গেলো কিছু অনাহুত প্যারাসাইট, ঘা আর ক্ষত।

সাপ খোলস বদলাচ্ছে।
বুঝতে পারছি। কারণ গত দুসপ্তাহ ধরে আমাদের প্রিয় সাপ কোনো ইদুর ধরেনি, ঘোলাটে চোখ আর ঠান্ডা দেহ নিয়ে শুয়ে ছিল ড্রয়ারের ভেতর। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আজ দেখি সেখানে ফেলে গেছে পরিত্যক্ত খোলসখানি।

জানি না, কেন বদলে গেলো ওরা চারজন। কেবল জানি, সাপের গায়ে এখন আরো উজ্জ্বল, চকচকে নতুন চামড়া উঠেছে বরাবর।

২.
নিউ হ্যাম্পশায়ারে জিতেছে উত্তেজিত, নিজচর্চায় হিতাহিত জ্ঞান হারানো, হঠাত্ নিজেকে ফিরে পাওয়া, হঠাত্ নারীসুলভ হিলারি । তবু আমি মুগ্ধ ওবামায়। এরপরও কিন্তু ঠিকই ভাবি, জন এডওয়ার্ডস কি শেষমেষ পারবে সব কর্পোরেট লবিকে ঠ্যাংগানোর মতলবে বাকি ককাসগুলো জিততে?
ইউটিউবে এখন ভাষণের বান। এই ডিবেট, সেই ডিবেট।

৩.
রাত সাড়ে নটার চ্যানেল ফাইভ নিউজ আমাকে আবার দুরবিন দূরত্বে নিয়ে যায়। খবর হয়েছে জবর। দুই কুকরের বিয়ে হচ্ছে ঘটা করে। জানি, বর-বধুর সৌজন্যে ভুড়িভোজ, উপহার, স্টেজ, মিডিয়া কভারেজ ইত্যাদি ইত্যাদিতে কয়েক হাজার সিংডলার উড়ানো মানুষের সুখ দেখে আমারও উচিত্ ছিলো ভালো থাকা। অথচ কেন যে এখনও প্রতিটি কোষের তীব্র আকুতি অগ্রাহ্য করে আমি স্বস্তির মুখোশটা এটেঁ নিতে চাই মুখে! কেন যে মগজের কোণায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে চল্লিশ টাকা সের চালের ভূত!

আকাশে মেঘ ঘনালে পর কিছুই দেখা হবে না ভেবে দুরবিনের হৃদয় শুধু কেঁপে উঠে একবার।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনার লেখাটা ভালো লাগলো কিন্তু তার চেয়েও ভালো লাগলো জেনে যে এখনও লোকে বুদ্ধদেব বসু পড়ে !!!!

বুদ্ধদেব বসু'র প্রতি আমার অসীম দুর্বলতা। ওই দু'লাইন কোন কবিতাটা থেকে?

ফারুক হাসান এর ছবি

হ্যা, এখনও কেউ কেউ বুদ্ধদেব বসু পড়ে। রবীন্দ্রকাব্যের ছায়া যারা পেতে চায় তারা পড়ে; যৌবন, নারী আর স্বকীয়তার প্রেমে যারা পড়েন তারাও বসু পড়েন।
লাইন দুটি 'রুপান্তর' কবিতা থেকে নেয়া।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

রুপান্তর
-----বুদ্ধদেব বসু

দিন মোর কর্মের প্রহারে পাংশু,
রাত্রি মোর জ্বলন্ত জাগ্রত স্বপ্নে |
ধাতুর সংঘর্ষে জাগো, হে সুন্দর, শুভ্র অগ্নিশিখা,
বস্তুপুঞ্জ বায়ু হোক, চাঁদ হোক নারী,
মৃত্তিকার ফুল হোক আকাশের তারা |
জাগো, হে পবিত্র পদ্ম, জাগো তুমি প্রাণের মৃণালে,
চিরন্তনে মুক্তি দাও ক্ষণিকার অম্লান ক্ষমায়,
ক্ষণিকেরে কর চিরন্তন |
দেহ হোক মন, মন হোক প্রাণ, প্রাণে হোক মৃত্যুর সঙ্গম,
মৃত্যু হোক দেহ প্রাণ, মন |

s-s এর ছবি

যারা ত্রিশোত্তর কবিতায় মগ্ন এবং নব্বই পরবর্তী কবিতার তেমন একটা ভক্ত নন, তারাও হাসি

ফারুক হাসান এর ছবি

এই পোস্ট পইড়া নব্বই পরবর্তী কবিরা আবার মাইন্ড না খায়!!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

স্নিগ্ধা এর ছবি

রবীন্দ্রকাব্যের ছায়া যারা পেতে চায় তারা পড়ে;

বুঃ বঃ কিন্তু খুব সচেতনভাবে এবং সোচ্চারে রবীন্দ্রনাথের 'ছায়া' থেকে তাঁর কবিতাকে বিযুক্ত করেছিলেন। কল্লোল গোষ্ঠির বৈষিষ্ট্যই ছিলো তাই - তখনকার সময়ের অপরিহার্য্য রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে কবিতার শৈলী বদলে ফেলা। তবে আপনার কথাটা বুঝতে পেরেছি, বুদ্ধদেব নিজেও রবীন্দ্রনাথের কবিতার অনুরাগী ছিলেন।

কবিতার লাইন গুলোর জন্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।