অনুগল্প: ফেরেশতার হাসি

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: বুধ, ১৮/০৭/২০০৭ - ১০:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হঠাত কষ্টের ঠাসবুননে আঠালো এক পরিবারের গল্প শুনাই এবার।

গল্পটা পারিবারিক, যে পরিবারে একজন অগাধ দুঃখী মানুষ বাস করে।
তুমি হয়তো ভাববে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমার জন্য বলি,আসলেই কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অসম্ভব রকমের দুঃখ নিয়ে পৃথিবীতে জন্মায়।
স্টোরিটা জমানোর জন্য আসো আমরা মানুষটার দুটো চোখ অন্ধ বলে ধরে নেই, যদিও ধরে নেয়াটা অনেক সহজ একটা কাজ, যদি না নিজের জীবনে না হয়।
এরকম শুধু রূপকথার দৈত্যরা হয়, দৈত্য হয়েও তাদের ধোপা শ্রেণীর মানুষের কাছে পরাজিত হতে হয়, অন্ধ ও বধির বলে। তাই বলছিলাম, কোনো মানবীয় শিশু এরকম হলে তা হয়ে উঠে প্রকৃতির এক অসভ্য রসিকতা।
তুমি যে অন্ধ তা আমি ক্যামনে টের পাই? তোমাকে তো প্রমাণ দিতে হবে। তোমার খিদে পেলে তুমি কাঁদো, দ্যাটস ওকে। ইতি উতি তাকাও, কাকে যেন খোঁজো। তাহলে আমি কিভাবে ধরে ফেলি তোমার অন্ধত্ব? তোমার মা তার জৈবিক বোটাটা তোমার মুখে পুড়ে দিলে তুমি অফ যাও। প্লাস্টিকে তোমার বড্ড এলার্জি, থু দিয়ে ফেলে দিয়ে তারস্বরে চেঁচাতেই থাকো যতখ্খন না আবার জৈবিকতার স্বাদ তোমার ঠোটে লাগে।
আমি বান্দর হই, শাকচুন্নি ভুত হই, ওলেলেলে আওয়াজ তুলি- তোমার বিরক্তি বাড়েই, তুমি কাঁদো। আমি কি করে বুঝবো, যে চোখ দিয়ে অমন টসটসে শিশির ফুটে সেই চোখে তুমি শুধু চেয়ে থাকো, দেখো না কিছুই। ক্যামনে কি?
তোমার জননী কিন্তু কোনো এক মুখপোড়া মুহুর্তে ঠিকই ধরে ফেলে তোমার চালাকি।
কিংবা ভুল বললাম, মায়ের আগে ধরে ফেলে তোমার ডানপিঠে ভাইটা। হুলোবিড়ালটার লেজে অহর্নিশ বাধা যার ছুটোছুটি।
তুমি কি মুচকি হেসেছিলে, যখন তোমার পাড়া দাবড়ানো ভাই গত রমজানের ঈদে কিনে দেওয়া মিলিটারি পোষাক পড়ে বিড়াল পায়ে তোমার দোলনার কাছে এসে হঠাত্গর্জন করে উঠেছিল, তোমাকে আচানক কাঁপিয়ে দেবে বলে।
তুমি নিশ্চিন্ত মনে তাকিয়ে ছিলে তার দিকে, হয়তো বা তাকে নয়, তার মাথার পেছনে কিছুটা দূরে দেয়ালের গায়ে সাপটে থাকা কালো মাকড়শার দিকে। কোনদিকে তাকিয়েছিলে তুমি? কারদিকে?
তুমি কি শুনেছিলে তারস্বর?

তারপর গল্পটা আর গল্প থাকে না। আবিস্কার কাহিনী হয়ে উঠে।
কিংবা এ.আই. এর মতন ভিন্নধর্মী কোনো ফিকশন মুভি হয়ে যায়, যার শেষ দৃশ্যে একটি পরিবারের ছয়টি অবাক চোখকে দৃষ্টির আলো খোঁজে ফিরতে দেখা যায় বাকী দুটি চোখে গভীরে।
তার বয়স কম,যতটা সময় একটা শিশু কানে শুনতে পায় না এই মর্মান্তিক ব্যাপার তার বাবা-মার আবিষ্কার করতে লাগে- ঠিক ততটাই। ব্যাপারটা শকিং, স্পেশালি যদি তা কোনো অন্ধ মেয়ের বাবা-মার বেলায় ঘটে।

আমাদের দুঃখী মানুষটা কি কারনে যেন হেসে উঠে। সবাই বলে, ওটা নাকি ফেরেশতার হাসি!


মন্তব্য

??? এর ছবি

অ-সা-ধা-র-ণ শুরু। ভীষণ সংবেদী বিস্তার। গল্পটা এখানেই শেষ নয়, হতে পারে না। আরো আরো আবিষ্কারের বেদনা আছে এখানে, আরো বিস্ময়, আরো আরো ভুলে থাকার আনন্দ, হয়ত।

ভ্লাদিমির করলেংকো-র "দ্য ব্লাইন্ড মিউজিশিয়ান" নামে যে উপন্যাসটা আছে, মনে পড়ছে সেই সঙ্গীতকারের বাল্যকালের কথা।

যতই তাড়াহুড়া থাকুক আপনার, আমি কিন্তু গোঁ ধরে বসে থাকলাম, ফাহা!

অপালা এর ছবি

সত্যি ভাললেগেছে

??? এর ছবি

আলবৎ পারবেন। আপনার সামর্থের দৌড় আমি কেন, স্বয়ং খোদাও জানেন কিনা জানি না। মানুষের সম্ভাবনার ওপর খোদার পাক্কা ঈমান আছে। পক্ষপাতও আছে। থামবেন না, অন্তত এই গল্পটায়। রিকোয়েস্ট।

ফারুক হাসান এর ছবি

মানুষের সম্ভাবনার ওপর খোদার পাক্কা ঈমান আছে। হা হা হা।

আপনি তো নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ছেন দিনদিন।
আপনার কথায় ভরসা পাচ্ছি।

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তুমি কি শুনেছিলে তারস্বর?
এই লাইনে এসে থেমে গেলে কি হতো?
তারপরের ব্যখ্যাটুকু,আবিস্কারটুকু না হলে কি হতো?

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ঝরাপাতা এর ছবি

অপূর্ব লেগেছে।

কেমন করে বলো তুমি শুনিতে সাধ জাগে,
কথারা সব সুর হয়ে যায় অচিন কোন রাগে।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বেশ ভালো লেগেছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

তারেক এর ছবি

খুব ভাল লাগলো... খুব।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ফারুক হাসান এর ছবি

সুমন রহমান এবং হাসান মোরশেদ দুজনের কথাই রাখা হবে। তবে তার জন্য আমার একটু সময় প্রয়োজন, গল্পটার ব্যাপারে আমি একটু থমকে গেছি, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সবাইকে একটু ধৈর্য রাখার আহবান জানাই। যখন এটা নিয়ে আবার বসতে পারবো, তখন মডিফাই করার ইচ্ছা আছে। আপাতত অন্য পোস্ট পোস্টাই!

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনাদের ভাল লাগা জানানোর জন্য।

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।