এলএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৫/২০১০ - ১১:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (লিকুয়েফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস বা LNG) আমদানি করতে ইচ্ছুক। সেই প্রেক্ষিতে আমি মূলত এলএনজি কেন, এর আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াটাই বা কী, বাংলাদেশের জন্য আদৌ এলএনজি আমদানির প্রয়োজনীয়তা আছে কি না এবং এর যৌক্তিকতা কতটুকু, যদি আমদানি করা হয় তাহলে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরী, আমদানিকৃত গ্যাসের মূল্য, ঠিক কত মূল্যে এলএনজি আমদানি করা লাভজনক ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্ঠা করব। এলএনজি আমদানি একটি মহা কর্মযজ্ঞ এবং যতই দিন যাচ্ছে ততই অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং বৈদ্যুতিক শক্তির প্রাসঙ্গিকতায় এর উপর যে কোনো আলোচনা এবং ধারণা লাভ করা আমাদের জন্য একটা প্রয়োজনীয় ব্যাপার হয়ে দাড়াচ্ছে।

তবে একটু অন্য জায়গা থেকে শুরু করা যাক।

শীবের গীত
গ্যাসীয় হোক কিংবা তরল, প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে আমরা এত লাফাচ্ছি কেন? প্রাকৃতিক গ্যাস মূলত এক ধরণের জ্বীবাশ্ম জ্বালানি এবং একটি সম্পদ - এ আমরা সবাই জানি। বর্তমান পৃথিবীতে অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মাটির নিচের এই জ্বীবাশ্ম জ্বালানি যাদের মধ্যে তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মজুদ। এরাই হচ্ছে বর্তমান সভ্যতার শক্তি যোগানদাতা। সবচয়ে বেশি শক্তি আসে তেল পুড়িয়ে, তারপর কয়লা, তারপরই গ্যাস। পৃথিবীর সবগুলো দেশ প্রতিবছর যে পরিমাণ শক্তি বিভিন্ন কাজে ব্যয় করে তার চারভাগের একভাগই আসে প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর মাধ্যমে। সভ্যতা চলে বিদ্যুতের উপর আর তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায় । প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে আমরা সেই তাপশক্তিই পাই।

শক্তি উৎপাদন কিংবা ব্যবহার করার হার (ক্ষমতা) মাপার একটা একক হচ্ছে ওয়াট। আর এক মেগাওয়াট মানে হচ্ছে ১০ লক্ষ ওয়াট। খুব সহজ একটা হিসাব দেই। বাড়িতে আমরা যে বৈদ্যুতিক বাতি (টিউবলাইট) জ্বালাই তাদের বেশিরভাগই ৪০ ওয়াট এবং একটা প্রমাণ সাইজের টেবিল ফ্যান চালাতে প্রয়োজন ৬০ ওয়াট শক্তি। একটা বাড়িতে যদি তিনটি বাতি এবং তিনটি টেবিল ফ্যান চলে তাহলে মোট ৩০০ ওয়াট হারে শক্তির সরবরাহ প্রয়োজন। ধরলাম, আপনার বাসার ফ্রিজটির লাগে ৫০০ ওয়াট এবং আনুসঙ্গিক অন্যান্যতে আরো ২০০ ওয়াট। অর্থাৎ, একটি বাসার মোট বিদ্যুৎ চাহিদা ১০০০ ওয়াট (এটা একটা আনুমানিক হিসাব)। এর মানে হচ্ছে, যদি আপনার একটি ১ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকে তাহলে আপনি এরকম এক হাজারটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবেন (কোনো লোডশেডিং ছাড়াই চোখ টিপি )।

কিন্তু এলাকায় যদি দুই হাজার বাড়ি থাকে? বুঝতেই পারছেন, লোডশেডিং! লোডশেডিং দূর করতে চাইলে একটা উপায় হলো আরেকটি এক মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। যাই হোক, হিসাবটা অবশ্য এত জলবৎতরলং নয়, ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসলে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না, ট্রান্সমিশন লস হবে, যন্ত্রপাতির দক্ষতা বা এফিশিয়েন্সিও গোণায় নিতে হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ চাহিদা ৫২০০ মেগাওয়াট (তথ্যসূত্র)। যদি এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সামর্থ্য থাকতো এবং শুধু বাসাবাড়িতেই বিদ্যুৎ লাগতো তাহলে উপরের হিসেব অনুযায়ী (এক মেগাওয়াটে একহাজার বাড়ি) অর্ধকোটিরও বেশি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেত কোনো লোডশেডিং ছাড়াই। কিন্তু বাসাবাড়িতে (হাউজহোল্ড) যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে তার চেয়ে অনেক বেশি লাগতে পারে শিল্পকারখানায়, সেচের কাজে, হিমাগারে, অফিস আদালতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, শপিংমলে, বিয়ে বাড়িতে চোখ টিপি এবং আরো অনেক জায়গায় অনেক কাজে। বাংলাদেশে এক জনসংখ্যার কোনো ঘাটতি নেই, এছাড়া অন্য সবকিছুর মতই বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে জোগান কম, ঘাটতি প্রায় ৬০০ থেকে ১২০০ মেগাওয়াট।

এই ঘাটতির পেছনে অনেক কারণ বিদ্যমান। আমাদের যতগুলি বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকা প্রয়োজন তত নেই, যেগুলি আছে সেগুলিও সবসময় চলে না, যার একটা বড় কারণ জ্বালানির অভাব। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন, বর্তমানে সরবরাহ করা যাচ্ছে তার চেয়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম। বাংলাদেশে কয়লার মজুদও আছে এবং কয়লা পুড়িয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু কয়লার উত্তোলন এবং ব্যবহার দুইই পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এ প্রক্রিয়ার দক্ষতাও বেশি নয়। সাময়িক বিকল্প হিসেবে সরকার ফারনেস তেল ব্যবহার করে বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলছে যা 'কুইক রেন্টাল' পদ্ধতিতে সরকার কিনে গ্রীডে সরবারহ করবে। ফারনেস তেল ভিত্তিক কিছু প্রকল্পে গতিও এসেছে। কিন্তু এটা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়, আর এই পদ্ধতিতে বিদ্যুতের দাম পড়ে অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের সারকারখানাগুলো, শিল্পগুলো, পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো গ্যাসভিত্তিক করে গড়ে তোলা হয়েছে। গ্যাস না পেলে এদের চলবে না।

তাই সব মিলিয়ে, বর্তমান সময়ে উপলব্ধি, আমাদের গ্যাস আমদানি করা প্রয়োজন। এই প্রয়োজনটা যৌক্তিক।

এলএনজি কেন?
সবচেয়ে সহজে বেশি পরিমাণ গ্যাস আমদানি করা যায় কীভাবে? উত্তর খুব সহজ - পাইপলাইনের মাধ্যমে। অন্যান্য উপায়ের থেকে পাইপলাইন তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হয় সবচেয়ে কম, এই সাপ্লাই চেইন সহজেই গড়ে তোলা যায় এবং এর অপারেটিং কস্ট কম, পাইপলাইনের কিছুদূর পরপর শক্তিশালী কম্প্রেসর থাকলেই হলো। আমদানিকৃত গ্যাসের দামও তুলনামূলকভাবে কম পড়ে। যদি প্রতিবেশি কোনো দেশ থেকে গ্যাস আমদানি করা সম্ভব হয় তাহলে পাইপলাইনের মাধ্যমে সেটা করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

তবে পাইপলাইনই একমাত্র উপায় নয়। ধরুন, কোনো এক শুভক্ষণে আবিস্কৃত হলো যে বঙ্গোপসাগরে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ আছে। আগামী একশো বছরেও সেই গ্যাস পুড়িয়ে শেষ করা যাবে না। দেশের সব চাহিদা পূরণ করার পর আমরা যদি এই গ্যাস আমেরিকা কিংবা ইউরোপে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেই, তাহলে কি পাইপলাইন দিয়ে সেটা করা সম্ভব? সেটা কি আদৌ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক? মহাসাগরের উপর দিয়ে পাইপলাইন বানানো কোনো কাজের কথা নয়। আমেরিকা-ইউরোপ না হয় বাদ দিলাম, এই যে কাতার থেকে গ্যাস আনার কথা হচ্ছে, সেটাই কি পাইপলাইন দিয়ে আনা লাভজনক কিংবা আদৌ সম্ভব? সেটা করতে হলে যে সমস্ত দেশের উপর দিয়ে এই পাইপলাইন বানাতে হবে তাদের মধ্যে পড়বে ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারত। আমি হলে এই পাইপলাইন বানানোর আগে একবারই ভাববো এবং পাইপলাইনের বুদ্ধিটা আধাসেকেন্ডের মাথায় নাকচ করে দিবো।

তাহলে উপায় কী? একটা উপায় হচ্ছে, জাহাজ দিয়ে গ্যাস আনা। ভাবছেন প্রাকৃতিক গ্যাস কি আলু, ছোলা, মটরদানার মত নাকি যে তাকে বস্তায় ভরে জাহাজে ফেরি করতে বেরুবে কেউ! মজাটা এখানেই। গ্যাসকে যে গ্যাসীয় অবস্থায়ই আনতে হবে সেটা তো কোথায়ো লেখা নেই। সুতরাং যারা জাহাজ দিয়ে গ্যাস রপ্তানি করবে তারা গ্যাসকে প্রথমে তরলে রূপান্তরিত করে ফেলবে এবং সেই তরল জাহাজে ভরে পাঠিয়ে দেবে যারা কিনছে তাদের কাছে। পাইপলাইনের কোনো প্রয়োজনই নেই। যারা কিনছে তারা সেই তরল জ্বালানিকে আবার গ্যাসীয় অবস্থায় ফিরিয়ে আনলেই হয়ে গেল!

এটাই হলো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা লিকুয়েফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস বা LNG (এলএনজি)।

এই এলএনজি কিন্তু এলপিজি বা সিএনজি নয়। এলপিজি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস, পাওয়া যায় রিফাইনারি থেকে। এটি মূলত প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ। আর এলএনজিতে সবচেয়ে বেশি থাকে মিথেন। অন্যদিকে সিএনজি মানে হচ্ছে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস। এটাও মিথেন কিন্তু এলএনজি বা এলপিজির মত সিএনজি তরল অবস্থায় থাকে না, গ্যাসকে কেবল প্রচন্ড চাপে সংকুচিত (কম্প্রেস) করা হয় যাতে অনেক বেশি গ্যাস ছোট একটা সিলিন্ডারে জমা করে রাখা যায়। অন্যদিকে, এলএনজিকে কম্প্রেস করা হয় না, বরং প্রাকৃতিক গ্যাসকে এত বেশি ঠান্ডা (রেফ্রিজারেশন) করা হয় যে একসময় এটা কোনো চাপ টাপ ছাড়াই তরল হয়ে যায়। এই কারণেই, সিএনজির চেয়ে এলএনজি অনেক নিরাপদ।

এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, যখন প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরল করে ফেলা হয় তখন এর আয়তন কমে যায় প্রায় ৬০০ গুন। অর্থাৎ ৬০০ লিটার গ্যাসকে আপনি মাত্র এক লিটারের ছোট্ট একটা বোতলে ভরে ফেলতে পারবেন এলএনজি বানিয়ে। এ জন্যই এলএনজি জাহাজে পরিবহন করা সুবিধাজনক। একসাথে অনেক বেশি জ্বালানি পরিবহন করা যায় পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্তপ্রান্তে।

lng

উপরে বলেছি, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের ঘাটতি দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মত। সেই হিসাব মতে, একটু অংক কষলেই বের করা যাবে যে, মাসে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি (গ্যাসের পরিমাণ বের করতে হলে একে ৬০০ দিয়ে গুণ করুন) আমদানি করলেই এই ঘাটতি পোষানো সম্ভব। ধরলাম, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম মাসে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিই আনবো বাইরে থেকে। জেনে আশ্চর্য হবেন যে, মাত্র পাঁচটা প্রমাণ সাইজের এলএনজি জাহাজ মাসে একবার করে এলএনজি এনে দিলেই সেই পরিমাণ এলএনজি আমরা পেয়ে যাবো।

(এলএনজি কে এখন কি ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে? ভাবছেন, ভালোই তো, তাহলে এলএনজি আমদানি শুরু করে দেই! একটু রয়েসয়ে। মেয়ে দেখে পছন্দ হলেই তো হলো না, দেনা-পাওনার ব্যাপার আছে, জানা-শোনা, চিন-পরিচয়ের দরকার আছে চোখ টিপি । সেটা করলে কিন্তু তখন অতটা ইন্টারেস্টিং মনে হবে না। )

এলএনজি আমদানি-রপ্তানি

মাসিক ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি - এটা ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটা হিসাব। কারণ, এ থেকে আমরা ধারণা পাই ভবিষ্যতে আমরা কতটুকু এলএনজি আমদানি করবো, আর করলে রিসিভিং টারমিনালের সাইজ কতটুকু হবে, আমদানি করার জন্য যে অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে তার পেছনে কত ব্যয় করতে হবে, ইত্যাদি। এলএনজি আমদানি করলে আমরা অবশ্যই মাসে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি আমদানি করবো, সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এই ব্যাপারটা পরে বিশদ আলোচনা করবো।

এলএনজি প্রযুক্তি উত্তরোত্তর উন্নত হচ্ছে এবং এর চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহকৃত গ্যাস পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি। আর আগেই বলেছি, যে সমস্ত গ্যাসের উৎস থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাসকে সরবরাহ করা যায় না, সেখানে এলএনজি প্রযুক্তি খুবই কার্যকরী একটা সমাধান। লক্ষ্য করুন, আমি এখানে এলএনজিকে 'প্রযুক্তি' বলছি। এলএনজি আলাদা কোন জ্বালানি নয়, আদতে এটি প্রাকৃতিক গ্যাসেরই তরল রূপ। এর আবির্ভাব কেবলমাত্র সমুদ্রপথে গ্যাস পরিবহনের সুবিধার জন্য (এইখানে ছোট্ট একটা কুইজ - এলএনজি বানানোতে কার ঠ্যাকা বেশি, যে গ্যাস আমদানি করবে তার? নাকি, যার গ্যাসটা বেঁচা দরকার তার? ঘুরিয়ে বললে, বিবাহযোগ্যা মেয়ের বিয়েতে ঠ্যাকা কার বেশি, বাপের? নাকি অবিবাহিত এবং বিবাহ করতে ইচ্ছুক পাত্রদের?)। আদতে যদি ভূমিতে দুই হাজার মাইলের কমে গ্যাসকে পরিবহন করতে হয় তাহলে পাইপলাইনই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। সমুদ্রপথে এই দূরত্ব কমে গিয়ে সাতশো মাইল। অর্থাৎ, এলএনজি তখনই অর্থনৈতিকভাবে সাচ্ছন্দদায়ক যখন আমদানি এবং রপ্তানিকারক নিদেনপক্ষে ভূমিপথে দুই হাজার মাইলের বেশি কিংবা সমুদ্রপথে সাতশো মাইলের বেশি দূরত্বে অবস্থান করে।

এর কারণ কি? কারণ হচ্ছে এলএনজি তৈরি করতে এবং তারপর তা রপ্তানি করতে যে পরিমাণ এককালীন বিনিয়োগ করতে হয় তা কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এলএনজি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঠান্ডা করলেই সে এলএনজি হয়ে বসে থাকে না। কেবলমাত্র মাইনাস ১৬০ ডিগ্রী বা তারও নিচের তাপমাত্রা হলেই প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তরিত হয়। এত কম তাপমাত্রায় পৌছানো সাধারন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্ভব নয়।

এলএনজিতে এত বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হয় কেন সেটা বুঝতে হলে এর পুরো সাপ্লাই চেইনটা সম্পর্কে একটু আইডিয়া থাকলে ভালো হবে।

কিন্তু এক টানে এতদূর লেখার পর প্রচন্ড চায়ের পিপাসা পেয়েছে। একটু চা খেয়ে আসতে হবে। সবার আগ্রহ থাকলে পরের পর্বে আজকে যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই শুরু করবো। সব প্রশ্নের উত্তরই আমরা খুঁজবো।

প্রমিজ হাসি


মন্তব্য

নৈষাদ এর ছবি

তাড়াতাড়ি আসেন। অপেক্ষায় রইলাম।

ফারুক হাসান এর ছবি

তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা তো করবোই। তবে এই উইকএন্ডের আগে বোধহয় চা খেয়ে শেষ করতে পারবো না চোখ টিপি

হিমু এর ছবি

সাধু, সাধু।

আমি অনুরোধ করবো কিছু সাধারণ গ্রাফ (রেখা, স্তম্ভলেখ) যোগ করে পরিস্থিতি বোঝাতে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অগ্নিবীণা এর ছবি

হাসান ভাই, চা পান শেষ হলো না এখনো? খুবই ইন্টারেস্টিং লেখা...পরের টুকু চাই শিঘ্রী!

নুভান [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার ভাবে ব্যাক্ষা করেছেন ভাইয়া। আমি ল্যাবে কিছুদিন এলএনজি প্রজেক্টে ছিলাম। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতটা জানা ছিলোনা। বেশ উপকারে লাগবে। ধন্যবাদ।

গতিহীন [অতিথি] এর ছবি

এই বিষয় জানার আগ্রহ আরো আগেই ছিল কিন্তু সময় ও সুযোগ ছিল না বলে আমল করতে পারি নাই, আপনার লিখায় আমার অনেক ধরনা স্বচ্ছ থেকে আরো স্বচ্ছ হল, ধন্যবাদ (১ ঘনফুট LNG),এই বিষয় আরো অনেক কিছু জানার আগ্রহ আছে যেমন,
১। খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন ও বিতরন প্রক্রিয়া,
২। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমাদের গ্যাস আমাদের জন্য কতত সুফল বয়ে আনবে বা এর থেকে কি আমরা পূর্ন উপযোগ পাব কি না ?

সময় ও সুযোগ পেলে অব্যশ্যই লিখবেন। অপেক্ষায় থাকব,
পারলে একটা মেইল দিয়েন sabbirahatএটজিমেইল.কম।
ভাল থাকবেন

লীন এর ছবি

দারূণ লাগলো। পরের পর্বের আশায় রইলাম।

______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

শামীম এর ছবি

এই চা খাওয়ার অভ্যাসটা খুব খ্রাপ ... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

চাচু খাওয়া শেষ করেন তাড়াতাড়ি। পড়তাছি ...



অজ্ঞাতবাস

দুর্দান্ত এর ছবি

চলুক সাধুবাদ। পারলে উইকেন্ডের আগেই...

তানভীর এর ছবি

কাজের পোস্ট চলুক

রানা মেহের এর ছবি

এতো ভালো করে বুঝিয়ে বলেছেন, আমার মতো মূর্খও বুঝতে পারছে।
জরুরী লেখা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।