অনুবাদ প্রচেষ্টা - ক্যারল এ্যআন ডাফির কবিতা

ফকির লালন এর ছবি
লিখেছেন ফকির লালন (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/০৯/২০০৯ - ৫:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(স্কটিশ কবি ক্যারল এ্যআন ডাফির জন্ম ’৫৫ তে, গ্লাসগোতে। পড়াশুনা করেছেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কবিতা খুবই জনপ্রিয় ও পাঠক সমাদৃত। কবিতার জন্য নানা পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমানে পড়ান ম্যাঞ্চেস্টার মেট্রোপলিটান বিশ্ববিদ্যালয়ে।)

শব্দ এবং চওড়া রাত্রি

এই যে চওড়া রাত্রি, এর অন্য পাশে কোথাও এবং আমাদের
মধ্যকার বিদ্যমান এই দূরত্বেও, আমি তোমার কথাই ভাবছি।
আর আমার রুমটাও সরে যাচ্ছে চাঁদ থেকে ক্রমশ আরো দূরে।

এটাইতো বেশ আনন্দের। নাকি আমি অতিক্রম করে যাবো এই দূরত্ব
এবং বলবো যে এটা খুব দুঃখের? বলবো, তোমাকে ব্যাকারনের সেই সুরে
যে সুরে গাইছি কামনার অসম্ভব এক গান – তোমার অগোচরে।

লা-লালা-লা। দেখেছো? চোখ বন্ধ করি আর কল্পনা করি
সেইসব অন্ধকার পর্বতমালা - তোমার কাছে পৌঁছাতে যা আমাকে
আমাকে অতিক্রম করতে হবে। কারন আমি যে তোমাকে ভালোবাসি -

এবং সে ভালোবাসা ঠিক এরকমই, কিংবা বলতে
পারো, শব্দে প্রকাশিত করলে তা এরকমই দাঁড়ায়।

ভালোবাসা তাড়িত

আমি সেই আপেলটা খুঁজে পেয়েছি।
একটা লাল এবং চকচকে আপেল।
আর আমি তার ফটোও তুললাম।

আপেলটা লুকিয়ে রাখলাম চিলেকোঠায়।
তারপর খুলে দিলাম ছাদের জানালাটা
এবং সূর্য আপেলটা দেখে বলে উঠলো - আহ্।

রাতে - আমি নজর রেখেছি - আপেলটা
হাস্যোজ্জ্বল সব তারা আর ধূর্ত চাঁদের নীচে
নিরাপদেই আছে, আমার সেই চমৎকার আপেল।

তুমি তাই যে কারনেই ডেকে থাকোনা কেন
আমি আর সে ডাকে আগ্রহী নই। তুমি তোমার
কুৎসিত বড় দাঁতগুলো নিয়ে দূরে যাও, ভাগো।

বালিকা কথন

ঈদের দিনে আমার খালাতো বোনকে পাঠানো হয়েছিলো
গ্রামে। তারপর তার কিছু একটা হলো। আমাদের ধারনা তার
কোনো ব্যাথা উঠেছিলো। দোকানীকে সে দিয়েছিলো গম,
বদলে দোকানী তাকে দিয়েছিলো কিছু আটা। তারপর তার আর
ব্যাথা করছিলোনা, তাই সে কিছুক্ষন বানালো চাপাতি। তার
বান্ধবীরা তাকে তখন ডাকছিলো – ‘তাসলীন, চলো বেড়িয়ে আসি’।

তারা দোলনার কাছে নিজেদের লাজুকতা নিয়ে মগ্ন ছিলো।
জায়গাটা অনেকটা মাঠের মতো; কখনো কখনো কুয়ার পাশে
সেখানে চাষ হতো তরমুজ, পালং বা আমাদের মজ্জা। সে বসে
থাকতো দোলনায়, এবং তারা তাকে অবিরত ধাক্কা দিতো,
যতক্ষননা সে চেঁচিয়ে উঠতো ‘বন্ধ করো’, হঠাৎ তার শরীর
খারাপ লাগলো। সাহায্যের জন্য তাসলীন কাউকে ডাকতে বললো -
আম গাছের নীচে তার রক্তপাত হতে লাগলো ক্রমাগত।

তার মা তাকে ধরে রেখেছিলো। সে হয়তো ভেবেছিলো
তার পেট জ্বলছে। আমরা হাতে মেহেদী লাগাই। আমরা
তাকে দেখতে যাই, একে অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করি।
বাইরে বাচ্চারা তাস-গুল্লি খেলে চলে। প্রতিদিন কুয়া
থেকে সে মসজিদে পানি বয়ে নিয়ে যেতো আর
মুসুল্লীরা সেই পানিতে ওজু করে নামাজ পড়তেন।

প্রায় ঘন্টা খানেক পরে সে মারা গেলো। তার মা কাঁদলো চিৎকার করে।
তারা তারপর এক হুজুরকে ডাকলো। দিনা থেকে জং চক পর্যন্ত তিনি
হেঁটে এলেন। এসে দেখলেন সে মরে গেছে। তিনি বললেন সে দুপুরে
বাইরে গিয়েছে তাই তার হৃদয়ের দখল নিয়েছে প্রেত।
সেইদিন থেকে
আমাদের সতর্ক করা হয়েছে যে আমরা যেন এরকম না করি। বাহর
একটা ছোট লাল ফল। আমরা আমাদের হৃদয়কে তাই খুব পাহারা দেই।

ওপেনহাইমারের কাপ-পিরিচ

সে আমাকে ফারের জ্যাকেট পরে দুপুরে খেতে বলেছিলো। পুরুষদের
অট্টহাসি থেকে দূরে আমাদের দু’জনার গোপন সেই জীবন ছিলো আলোড়িত।

তার চোখদুটো মনে পড়ে, মনে পড়ে তার মেরুদন্ডের লম্বা সরু সুতোটাকে;
এই হচ্ছে তোমার কাপ, আর এটা আমার – ফিসফিস করে সে বলেছিলো।

দুজন গরম মিষ্টি চা খেয়েছিলাম আর নোংরা সব কথা বলেছিলাম। যখন
সে আমাকে অনাবৃত করেছিলো তার স্তনযুগলকে মনে হয়েছিলো আয়না

আর আমাদের শয্যাতেও ছিলো আয়না। সে বলেছিলো তোমার
পাদুটো দিয়ে আমার গ্রীবা জড়িয়ে ধরো; হ্যা, এইতো এবার ঠিক হচ্ছে।

ইংরেজীর হেড টিচার

মেয়েরা আজ ক্লাসে আমাদের মধ্যে একজন কবি রয়েছেন।
একজন সত্যিকারের কবি যার প্রকাশিত কবিতার বই রয়েছে।
তোমারা ওনার কালিমাখা হাত লক্ষ্য করো। সম্ভবত, কে
জানে, আমরা আজ প্রেস থেকে সদ্য ছাঁপা হওয়া ওনার
কবিতার দু’লাইন শুনতে পাবো। এখন হাত তালি দিয়ে
তোমাদের কৃ্তজ্ঞতা জানাও, না না অত জোড়ে নয়। সোজা

হয়ে বসে এখন ওনার কথা শোনো, আর ধ্বনি অন্তমিলের উপর
ক্লাসের কথা মনে রেখো, কেননা দুঃখজনকভাবে আজকাল খুব
কম কবিতাতেই ছন্দ থাকে। তারপরেও, যাকগে বাদ দাও এসব।
বরাবরের মতোই ফিসফিস করা একদম চলবেনা, কিন্তু প্রশ্ন করতে
দ্বিধা করোনা। আমরা তো তাকে আজকের জন্য চল্লিশ পাউন্ড দিচ্ছিই।

তোমাদের যাদের ইংরেজী দ্বিতীয় ভাষা বিরতির পর
আমার সাথে দেখা করো। আমরা সৌভাগ্যবান যে তার
মতো ব্যক্তি আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত। কুয়াশা মাখা ঋতুর
উপর লেখা এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি নিজেও দু-একটা
কবিতা লিখেছি, আর এখন গ্রেড চারে পড়াচ্ছি কিপলিং।

ঠিক আছে। আমার কাছ থেকে এপর্যন্তই। এবার কাব্যলক্ষীর
পালা। পিছনের শুধু একটা জানালা খুলে দাও। আমরা নিশ্চয়ই
চাইনা যে বাতাস এসে এই জায়গাটা বদলে দিক। ঠিক মতো
নোট নিও কিন্তু দিস্তা দিস্তা লিখোনা। কবির চিন্তা ভাবনার উপর
একটা রচনা জন্য হলেই চলবে। বেশ, এবার তাহলে শুরু করা
যাক। আমাদের বোঝান যে এমন কিছুও আছে যা আমরা জানিনা।

চমৎকার; সত্যিই। মেয়েরা, এবার ছুটি। আমি নিশ্চিত যে বাইরের
একটা বিষয়ে ভেতরের কারো থেকে একটা ধারনা পাওয়া গেলো।
হ্যা, হ্যা হাততালিই যথেষ্ট। অনেক অনেক ধন্যবাদ আজ আমাদের
মাঝে আসবার জন্য। দুপুরের খাবার কি বড় হলে? দয়া করে
আরো কিছুটা সময় থাকুন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাকে
এখনই চলে যেতে হবে। ওরা আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দেবে।


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

প্রজেক্ট ম্যানহাটনের ওপেনহাইমার নাকি? অনুবাদের সঙ্গে এক দুই স্ট্যান্জা মূল থাকলে মন্দ হতো না।
______________________________________________
to be or not to be - that was never a question (jean-luc godard)


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ফকির লালন এর ছবি

আগ্রহ পেলে, দয়া করে মূল বই খুঁজে পড়ুন। ভালো লাগবে বলে আশা করি। অনুবাদ করে মনে খুব তৃপ্তি হয়নি।

ডাফি খুব সম্ভবত প্রথম স্কটিশ, প্রথম নারী, এবং সমকামী যিনি বৃটেনে পোয়েট লরেল হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। মাইনরটি মাইগ্রান্টদের উপর তার খাসা সব কবিতা রয়েছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বস, '৯৪-এ উইলিয়াম মেরেডিথের কবিতা যেগুলো অনুবাদ করেছিলেন সেগুলো কি হারিয়ে ফেলেছেন? হারিয়ে না ফেললে এবার সেগুলো পোস্ট করতে পারেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফকির লালন এর ছবি

বস, হারিয়ে ফেলেছি।

জিফরান খালেদ এর ছবি

ক্যারলকে আমার ভাল লাগে না তেমন। পপুলার কালচারের মূল ধারাবাহী কবিতা। যাই হোক, বেশ জনপ্রিয়তা আছে। তার কবিতাপাঠে একবার থাকবার সুযোগ হয়েছিলো। অভিভূত হতে পারিনি তখনো।

অনুবাদ ভাল লাগলো না তেমন; ক্রিয়াপদগুলো ভোগালো খুব। কিন্তু, প্রচেষ্টাই তো, তার জন্যে সাধুবাদ। সামনে আরো কাজ পাবো বলে আশা রাখি।

ফকির লালন এর ছবি

ঠিক, খুব যে ভালো করেছি সেকথা নিজেরও মনে হয়নি। মূলেও অবশ্য ক্রিয়াপদের বাহুল্য আছে। কিভাবে তা ভাষান্তর করা যেতো আরো ভালো, ভেবেছি, পেরেছি কিনা জানিনা। সাংস্কৃতিক পার্থক্য একটা কারন হতে পারে। এমন অনেক বিষয় থাকে যা হয়তো অনুবাদে দূরে সরে যায়।

তারপরেও ইচ্ছে আছে, আরো কিছু যন্ত্রনা দেবার, সহ্য করেন আর কি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।