বাংলাদেশ- একটি গিনিপিগ!!

বাউলিয়ানা এর ছবি
লিখেছেন বাউলিয়ানা [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৬/০১/২০১১ - ৯:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
সম্প্রতি মেহেরজান চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে চারিদিকে। এই সমালোচনা যতটা না ছবির মেকিং বা টেকনিক্যাল দিক নিয়ে তার চেয়েও বেশি ছবির গল্প বা কাহিনী নিয়ে। এই চলচ্চিত্র বানিয়েছেন মূলতঃ একজন বাংলাদেশি যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী নারী মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ তথা বীরাঙ্গনাদের নিয়ে গবেবষনা করেছেন। তো এই গবেষনা হচ্ছে বাংলাদেশের বাইরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বোধকরি সেই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে চালিত হয়েছে এই গবেষনা। তার ফলস্বরুপ কাহিনীকার পাচ্ছে তার কাংক্ষিত ডিগ্রী- মাষ্টার্স বা পিএইচডি। সচল আনন্দী কল্যাণের পোষ্ট থেকে আমরা জেনেছি, লেখিকার প্রাপ্ত ডিগ্রীর বিষয়

"I did my Masters in South Asian Studies at University of Pennsylvania and the topic of my thesis was 'rape of women,' particularly the Birangonas of 1971."

২।
আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছি, সেখানেও আছে সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ক প্রোগ্রাম। এখানেও গবেষনা করেছেন বা করছেন অনেক বাংলাদেশি। তাদের গবেষনার বিষয়বস্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খোদ বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। এই সব বিষয়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি জড়িত। একজনকে জানি যিনি পিএইচডি করছেন আমাদের দেশের উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে। আমাদের দেশে থাকা বিহারী বা রোহিঙ্গা এমন যারা আছে তাদের সমস্যা নিয়ে। তো জার্নাল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশাল সাইন্সে প্রকাশিত তার এক পেপারের বিষয়বস্তু হচ্ছে, বাংলাদেশের বিহারীরা কতটুকু অবহেলিত!! পেপারের শিরোনামই হচ্ছে, "বাংলাদেশের অবহেলিত, ভুমিহীন বিহারী জনগন- রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক হানাহানির স্বীকার।" (ইংরেজি শিরোনামটা আর দিলাম না)। পেপারটাতে দেখলাম ঢাকার বিহারী ক্যাম্পের রঙ্গিন ছবি সহকারে দেখানো হয়েছে তারা বাংলাদেশে কতটুকু কষ্টে আছে। দেখা যাচ্ছে, গবেষনার বিষয়বস্তুটাই এমন যে, এই গবেষনা শেষে প্রকাশিত থিসিস, উপরের উল্লেখিত ঘটনার মত, কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে।

৩।
বাংলাদেশ গবেষনার বিষয়বস্তুতে ভরপুর একটা দেশ। এমন খুব কম একাডেমিক এরিয়া আছে যেটাতে বাংলাদেশকে গবেষনার বিষয় হিসেবে কাজে লাগানো যায়না। আর্টস-সোশাল সাইন্স থেকে শুরু করে লাইফ সাইন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায় সব শাখায় বাংলাদেশে (গবেষনা) কাজ করার জন্য ইলেমেন্ট আছে। কদিন আগে এখানকার আইন বিভাগ থেকে একজন মাস্টার্স করেছেন যার বিষয় ছিল, বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প নিয়ে। বাইরের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশকে নিয়ে গবেষনা করার আগ্রহ দেখালেই ফান্ড পাওয়া যায়। বিশেষ করে আর্টস বা সোশ্যাল সাইন্সের যেকোনো এরিয়াতে ফান্ড পেতে "বাংলাদেশ" একটি মোক্ষম বিষয়। নারী স্বাধীনতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করেন এমন একজন ইংল্যান্ড থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছেন যার বিষয় ছিল- বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন। তারপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের বস্তিবাসিদের জীবন-যাত্রা নিয়ে কাজ করেন এমন গবেষক পাওয়া যাবে অনেক। এছাড়াও পরিবেশ বিষয়ক কোনো গবেষনাতেও বাংলাদেশ একটা অগ্রবর্তী নাম। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে পৃথিবীর যে কয়টি দেশ প্রথম আক্রান্ত হবে তার একটি বাংলাদেশ। এরকম হয়তো হাজারও উদাহরন দেয়া যাবে যেখানে গবেষনার মূল বিষয়বস্তু বাংলাদেশকে ঘিরে আবর্তিত।

৪।
উপরের কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য একটাই- আমরা উচ্চ শিক্ষা নিতে দেশের বাইরে যাব, এটা আমাদের অধিকার। অন্যদিকে পোষ্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীর জন্য টাকা/ফান্ড ম্যানেজ করাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। এখন সেই টাকার জন্য আমরা কি দেশের নাম বেচে দেব বা এমন একটা বিষয় নির্বাচন করব যা সত্য নয়? একবারও ভেবে দেখবনা যে, আমি ডিগ্রী পাচ্ছি ঠিকই কিন্তু আমার গবেষনার বিষয়টা দেশের ভাবমূর্তির কতটুকু ক্ষতি করতে পারে! হ্যা, একথা অবশ্যই মানতে হবে যে, আমাদের দেশের ছাত্ররা বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে গবেষনা করে আন্তর্জাতিকভাবে নাম করছেন, সাথে দেশের নামও উজ্জ্বল করছেন। কিন্তু এমনও অনেক উদাহরন সামনে আসছে, যাদের গবেষনা প্রাকাশিত হবার কারনে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনধারা ইত্যাদি বিষয়ে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের মানুষের বিষয়ে ভুল ধারণা জন্ম নিচ্ছে। এ বিষয়ে এখনই সতর্ক হওয়া জরুরী।


মন্তব্য

আনরেজিস্টার্ড পাঠক এর ছবি

দেশের ভাবমুর্তি বাড়ানোর জন্য আমরা র‌্যাবের 'বন্দুক যুদ্ধে'র উপর কোন গবেষনা করব না? জাহাজ ভাণ্গা শিল্পের পেছনের কত অজানা শ্রমিকের রক্ত / হিল ট্রাক্টেসর পাহাড়ী জনগনের উপর নির্যাতনের কথা চেপে গেলে একজন আমেরিকানের কি দায় পড়েছে গুয়ান্তানামা বে /ইরাক প্রিজনের তার সৈন্যদের নানা কর্মকান্ড আমাদের কাছে তুলে ধরার?

বাউলিয়ানা এর ছবি

দেশের ভাবমুর্তি বাড়ানোর জন্য আমরা র‌্যাবের 'বন্দুক যুদ্ধে'র উপর কোন গবেষনা করব না?

-হ্যা অবশ্যই করব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গবেষনার এ্যাপ্রোচটাতে। র‍্যাবের বন্দুক যুদ্ধের পাশাপাশি এর বিকল্প সমাধানের বিষয়টাও সমান্তরালে দেখাতে হবে। শুধু বন্দুক যুদ্ধের কথা লিখে হিরো হতে চাওয়া বা আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাহবা কুড়ানো কোনো কাজের কথা না। কী বলেন?

দেশের ভাবমূর্তি নিয়েতো অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। বিদেশে আপনি নিজেই যে দেশটাকে উপস্থাপন করছেন। আর আপনি গুয়ান্তানামা বে /ইরাক প্রিজনে আমেরিকান সৈন্যদের নানা কর্মকান্ডের সাথে আমাদের দেশের কোনো সমস্যাকে তুলনা করেন কোন প্রেক্ষিতে?

অতিথি লেখক এর ছবি

রুবাইয়াৎ যা বলেছেন তার থিসিস নিয়ে...

"I did my Masters in South Asian Studies at University of Pennsylvania and the topic of my thesis was 'rape of women,' particularly the Birangonas of 1971. I primarily looked at the nationalist representation and marginalisation of female narratives of the war. As I learnt more about the Birangonas, I became deeply involved with the issue. I felt as a Bangladeshi woman, who has been given a chance to raise her voice, I needed to work more on bringing out women's experiences in 1971, the inception point of this nation."

রুবাইয়াৎ যা বলেছেন সিনেমায় বীরাঙ্গনাদের ভুমিকা ও মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা ও ভুমিকা নিয়ে...

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্পের অধীনে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে সংগৃহীত ও প্রকাশিত হয় আট খণ্ডে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দলিলপত্র। এটিই মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র আনুষ্ঠানিক তথ্যকোষ, যাতে এই নারীদের বিবৃতি আছে। মোট ২২৭ জনের মৌখিক জবানবন্দির মধ্যে ২৩ জন নারী। তাঁদের মাত্র ১১ জন যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। এসব দলিলে একাত্তরে মেয়েদের ওপর ধর্ষণের নৃশংসতার কিছুটা আভাস পাই, কিন্তু তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। সেনাশিবিরে সংঘটিত যৌন দাসত্বের পুরো চিত্রটিও এতে অনুপস্থিত। ফলে ১৯৭১ সালের নিপীড়িত নারীদের নির্ভরযোগ্য ইতিহাস লিখতে গিয়ে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের সংখ্যার ব্যাপক তারতম্য। সুসান ব্রাউনমিলারের অ্যাগেইনস্ট আওয়ার উইল: মেন, উইমেন অ্যান্ড রেপ, সিরাজুল ইসলাম ও মিয়া শাজাহান সম্পাদিত বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ ও অন্যান্য দলিলপত্রের ভিত্তিতে ধর্ষিত নারীর সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে আড়াই লাখ, গর্ভপাতের সংখ্যা ২৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং যুদ্ধশিশুর সংখ্যা ৪০০ থেকে ১০ হাজারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানে আসতে না পারায় বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে যায়।

দাদা, আপনার লিখার পর আমি ব্যাপারটা ধরতে পারছি। তার ভাষায় যখন ব্যাপারটা অমীমাংশিত... তখন তা নিয়ে যা ইচ্ছে তা করার অধিকার তিনি এমনিতেই পেয়ে যান। আর তিনি থিসিস করেছেন এই বিষয়ে, তাই তার ওপর কথা বলার মানুষও থাকবে না! প্রথম আলোর তার লিখার লিঙ্ক... "মেহেরজান যা বলতে চেয়েছে"

--- থাবা বাবা!

বাউলিয়ানা এর ছবি

ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর রেফারেন্স এর অপ্রতুলতার সুযোগ নিয়ে একটা বিষয়কে নিজের মত করে সাজানো রীতিমত অপরাধ। তাও আবার মুক্তিযুদ্ধের মত একটা বিষয়ে! সংখ্যা বিচার করে কি তার গৌরব কখনও কমানো যাবে? এদেশের বীরাঙ্গনাদের ধর্ষনের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে তাঁদের সম্মান করতে হবে? নাকি নির্যাতনের ভয়াবহতার উপর স্কেল বসিয়ে তাঁদের বীরত্ব মাপতে হবে? হাহ্‌ সেলুকাস! এরকম কথা তারাই বলতে পারে, যাদের কাছে এদেশের ইতিহাস শুধু আর পাঁচটা গবেষনার স্যাম্পলকে ম্যানিপুলেট করার মত বিষয়!!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

শরীরে কোথাও ঘা থাকলে সেটা নিয়ে গবেষণা তো করতেই হবে। হয়তো একটা সমাধানের আশায় অথবা ব্যাপারটার গুরুত্ব বোঝানোর জন্যে।
কেবল গবেষণার জন্য সুস্থ শরীরে ঘা আবিষ্কার করে ফেললে সেটাতে আপত্তি আছে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

বাউলিয়ানা এর ছবি

চলুক
অতিউৎসাহী কেউ কেউ সব ঘা'কে ক্যান্সার বানিয়ে দেন যে মনে হয় বাংলাদেশে বুঝি সুস্থ মানুষই নেই!!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ট্রল করতে চাচ্ছি না, কিংবা সাবেক জোট সরকারের কুকর্মের সাফাই গাইতে বলছি না। সজীব ওয়াজেদ জয়ের এরকম ১টি পেপার (সম্ভবত) পড়েছিলাম। জানি না, উনি কি তথ্যের ভিত্তিতে এরকম ১টি লিখা লিখিছিলেন। কিন্তু সেই পেপারের কিছু অংশ আমার কাছে মনগড়া মনে হয়েছিল। কিছু কিছু তথ্য সম্পুর্নভাবে রেফারেন্স বিহীন ছিল। বাংলাদেশ যে তালেবানী দেশ হওয়ার সীমান্তে দাড়িয়ে, সেই ইঙ্গিত প্রচ্ছনভাবে ছিল। প্রতিপক্ষকে হেয় করতে গিয়ে এভাবে নিজের দেশের নামে বানোয়াট তথ্য না দিলে কি হত না? জোট সরকারের অনেক কুকর্ম ছিল, কিন্তু সেসব বাদ দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে যখন মুসলমান দেশগুলো কোনঠাসা, তখন তিনি এরকম তথ্য দিয়ে গেলেন। তিনি কি পারতেন না তার এই তথ্যগুলো বাংলাদেশে প্রকাশ করতে, কিন্তু সেটা না করে বিদেশী পেপারে সেই তথ্যগুলো প্রকাশ করার কি অভিপ্রায় থাকতে পারে? আমার দেশের তথ্য আমাকে না জানিয়ে বিদেশীদের কে জানাচ্ছেন একজন বাংলাদেশী নাগরিক। জয়ের দেওয়া তথ্যগুলো যদি সঠিকও হয়, তিনি কেন সেগুলো বাংলাদেশে প্রকাশ করলেন না! অবাক ব্যাপার হচ্ছে, এই ব্যাপারটিতে সবাই কেন জানি চুপ মেরে গিয়েছিলেন।

অটঃ দয়া করে আমাকে জোট সরকারের সমর্থক বানাবেন না। জয়ের এই কাজটি আমার কাছে প্রচন্ডরকমভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য করা মনে হয়েছে।

guest_writer এর ছবি

Master's thesis is not a big deal. I think she was just trying to expose herself by telling about her Master's thisis. Nowadays almost every public or private universities students are doing internship or thisis for fullfill their requirement the degree of undergraduation as well as graduation. So I think the statement given by the director of this film is nothing but trying to focus herself that how cleaver (actually idiot) she is.

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ভাই, কথা সত্য। আমি বেশি কিছু না, শুধু ফটোগ্রাফির কথা একটু তুলে ধরি। যে কোনো ইন্টারন্যাশনাল ফটো কনটেস্টে কোনো বাংলাদেশী ফটোগ্রাফারের ছবি দেখলে হতাশ হবেন আর তারও চেয়ে বেশী হতভম্ব হবেন যদি কোনো ফটো ডকুম্যান্টারি দেখেন। একটা এওয়ার্ড, কিছু ডলার পাবার আশায় আমরা সবখানে শুধু বাংলাদেশের দারিদ্রতা, ক্ষুধা আর হতাশার চিত্রই তুলে ধরি। এইদেশের বেশিরভাগ ফটোগ্রাফারের কাছে সবচেয়ে প্রিয় সাবজেক্ট হচ্ছে নগ্ন, না খেতে পাওয়া বাচ্চা-কাচ্চা আর ছিন্ন কাপড়ের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। আমি এটা বলতে চাইছিনা যে ওগুলো মনগড়া, কিন্তু এইসব দৃশ্যের বাইরে আমরা কোনো ভালো জিনিশ দেখতে পাইনা। কিন্তু কেনো???

আসলে মানসিকভাবে আমরা যথেষ্ট নীচ, নইলে শুধু নেগেটিভ ভাবে নিজের দেশকে তুলে ধরার মানসিকতা আমরা কেনো বদলাতে পারিনা???

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

বাউলিয়ানা এর ছবি

ঠিক বলেছেন। বাংলাদেশের অপুষ্ট, ভুখা নাংগা, হাড় জিরজিরে শিশুদের ছবি দিয়েই কি এদেশটাকে উপস্থাপন করতে হবে?!

অতিথি লেখক এর ছবি

নিচের মন্তব্যটা আমি প্রথম আলো ব্লগে রুবাইয়াতের বক্তব্যে করেছি। মডারেশন কিউ পেরিয়ে আদৌ ছাপা হবে কিনা- দেখা যাক!

"রুবাইয়াত আপা, আপনি কি মনে করে এ ধরনের ছবি করলেন- জানিনা। উপরে যে যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছেন, এই প্যাটার্নটা খুব পুরনো হয়ে গেছে। যদি যুক্তি দেবার মত বিশেষ কিছু না থাকে, তাহলে পাঠককে তথ্য- বিদ্ধ করতে হয়। এতগুলো তথ্য পাঠক একসাথে হজম কিংবা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেনা। মাঝখান থেকে সে কনফিউজড হয়ে যাবে এবং তর্ক করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। সে কারণেই, অন্য ব্লগে যেখানে এত বিতর্ক চলছে মেহেরজান নিয়ে, সেখানে এই পৃষ্ঠায় মন্তব্য প্রায় নেই বললেই চলে।

"শিল্প ও ইতিহাসের মধ্যকার যোগসূত্র সব সময় যুক্তিনির্ভর নয়, বরং প্রায়ই তা আবেগনির্ভর। ইতিহাসে ‘একমাত্র’ সত্যের অনুসন্ধান যে ফলপ্রসূ কোনো চর্চা নয়" -এখানে আপনি ঠিক কোন 'বিকল্প সত্যের' অনুসন্ধান করেছেন- একটু নিজমুখে পরিষ্কার করে বলুন। আমরাও শুনি। ইতিহাস দু'ভাবে লিখিত হয়। ১। বিজয়ীর দ্বারা, ২। সংখ্যাগরিষ্ঠের বক্তব্য দ্বারা। কখনো শুনেছেন, যে বিচ্ছিন্ন দু'একটা ঘটনাকে 'ইতিহাস' বলে? ইতিহাসের এ কোন নতুন সংজ্ঞা দাড় করাচ্ছেন আপনি?

"নীলিমা ইব্রাহিম তাঁর আমি বীরাঙ্গনা বলছির ভূমিকায় ৩০-৪০ জন মেয়ের উল্লেখ করেছেন, যাঁরা আত্মসমর্পণকারী বা বন্দী পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে ভারতে চলে গিয়েছিলেন"- কেন চলে গিয়েছিলেন, সেটাও একটু বলুন এখন!

"ইতিহাসে বীরাঙ্গনাদের অবহেলিত অবস্থান চূড়ান্তে পৌঁছায় যখন ২০০৫ সালের মাধ্যমিক ইতিহাস বই বাংলাদেশ ও প্রাচীন বিশ্ব ইতিহাস-এ বীরাঙ্গনাদের কোনো উল্লেখই আর রাখা হয় না।" "সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক, বিত্তবান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক থেকে সবার—বাদ যায় শুধু মেয়েরা।" "মোট ২২৭ জনের মৌখিক জবানবন্দির মধ্যে ২৩ জন নারী। তাঁদের মাত্র ১১ জন যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। এসব দলিলে একাত্তরে মেয়েদের ওপর ধর্ষণের নৃশংসতার কিছুটা আভাস পাই, কিন্তু তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। সেনাশিবিরে সংঘটিত যৌন দাসত্বের পুরো চিত্রটিও এতে অনুপস্থিত।" এ অংশগুলো পড়ে আমি নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলামনা। আপনি বাংলাদেশে কয়দিন থেকেছেন আপনার সারা জীবনে? বাংলাদেশের কোন গ্রামে গিয়ে কোনো মেয়ের জীবনযাত্রা দেখেছেন? বাংলাদেশের ৯৯.৯% নারী তাদের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা নেয় বিয়ের রাতে স্বামীর সাথে। এটা আমাদের সংস্কৃতি, এটাই আমাদের পরিচয়! আমাদের দেশে একজন মেয়ে সামনে এগিয়ে এসে সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার আদ্যোপান্ত দশজনের সামনে তুলে ধরবেনা- এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু এটাতে আপনি রং চড়াচ্ছেন। আপনার বক্তব্যের অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে আমরাই বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছি এসব। আসলে খুব নগণ্য পরিমাণে কিছু বিচ্ছিন্ন নারী লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। আর আপনার সিনেমায় আপনি একজন ধর্ষিতার মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, যে সে নাকি আগেও ধর্ষিত হয়েছে। এর মানে কি? একটু বুঝিয়ে বলেন। এই বক্তব্য কোন তথ্যের ভিত্তিতে রচিত?

"নারীর একাত্তর-এ বাঙালি মেয়ের পাকিস্তানি সৈন্য কর্তৃক উদ্ধার পাওয়ার উল্লেখ আছে। ১৯৭১ সালে একদল পাকিস্তানি বাংলাদেশের প্রতি নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদনামায় যাঁরা স্বাক্ষর করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন পাকিস্তানের মানবতাবাদী কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ।" কী-এর মধ্যে কী! পান্তা ভাতে ঘি!!! নারীদেরকে ৭১-এ পাকিস্তানীরা উদ্ধার করেছে, এটার ঐতিহাসিক দলিল হল পাকিস্তানী কবি ফয়েজ আহমেদ? ব্যাপারটা বুঝলামনা। আপনার এ দাবির সপক্ষে কোনো সঠিক এবং যাচাইযোগ্য তথ্য থাকলে দিন প্লিজ!

বিনীতভাবে প্রশ্ন রাখি: জাহানারা ইমামের নাম জানেন? যে দেশে তাঁর মত মানসিক শক্তির অধিকারী জননী এবং রুমীর মত সাহসী যোদ্ধা ছিল, সে দেশর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আপনি এই নানাজান-এর মত দুর্বল চরিত্রের একটা মানুষই খুঁজে পেলেন?

আজকে জাতির লজ্জায় মুখ লুকোনোর ও কোনো জায়গা নাই। আর অবাক হচ্ছি, আপনি কি অকপটে নির্লজ্জের মত নিজের সাফাই গেয়ে চলেছেন!"

রানা মেহের এর ছবি

আপনার লেখাটা খুব জরুরী একটা বিষয়ে লেখা।
আমরা নিজেরাই নিজেদের দেশকে যেই পরিমান ছোট করি,
বাইরের কারো আর কিছু করার দরকার পড়েনা

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

বাউলিয়ানা এর ছবি

ধন্যবাদ।
এই জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা নিয়ে আলোচনার জন্যই এই পোষ্টের অবতারণা। উপরের অনুপমের মত আরও কিছু বিষয় সামনে আনতে পারলে ভাল হতো।

মাহবুব রানা এর ছবি

গবেষনাতো আসলে 'সমস্যা'র উপরেই হয়, আর এজন্যই গবেষনাপত্রের শুরুতেই 'প্রব্লেম স্টেটমেন্ট' জানিয়ে দিতে হয়। বিদেশের টাকায় দেশের সমস্যা নিয়ে গবেষনাকে বরং পজিটিভলি দেখাই ভালো। তবে আপনার সাথে একমত, অনেকেই সমস্যাকে এমন করে দেখান যে সারা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই এই সমস্যা।

বাউলিয়ানা এর ছবি

সেটাই, নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছুতে দেশকে আর কে মনে রাখতে চায়!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।