মেলায় যাইরে

উলুম্বুশ এর ছবি
লিখেছেন উলুম্বুশ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২১/০৪/২০০৮ - ৩:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

*********************উলুম্বুশ********************
*********kamrultopu@yahoo.com*********
************************************************
এত দিন পরে বৈশাখী মেলা নিয়ে কিছু লেখাটা মনে হয় একেবারেই বেমানান হচ্ছে। কি করব জাপানে মেলাটা হল যে গতকাল। অনেকদিন পরে মেলায় গেলাম। অনেকদিন পরে মেলায় যাব বলে বেশ আগ্রহ কাজ করছিল। অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রাখছিলাম কি পরে যাব কখন যাব কিভাবে কাদের সাথে যাব এইসব। কিন্তু যাওয়ার আগেরদিন অনেক ঝামেলা হয়ে আমার সব প্ল্যান গেল ভেস্তে। আগের দিন অলস শনিবার আমি ঘুম থেকে উঠে রান্না করব না ধুনফুন করে পার করে দিব ভাবছি তখনই এক ভাই ফোন করে বলল ফুটবল খেলব চলে আস। আমি আবার খেলাধূলার নাম শুনলে থাকতে পারি না। চলে গেলাম ফুটবল খেলতে। তখন আবার আরেক ভাই বলল খেলে চলে আস আমার এখানে রাতে থাক কাল একসাথে মেলায় যাব। আমিও আর কিছু না ভেবে চলে গেলাম ওনার ওখানে। তখনই মনে হল আরে আমার মাঞ্জা মারার কি হবে। অন্তত পাঞ্জাবি তো লাগবে। ঐ ভাইয়া আবার আমার থেকে অনেক লম্বা। খুঁজে খুঁজে একটা পাঞ্জাবি নামানো হল সেটা আবার তার বিয়ের। পড়ার সময়ই আমাকে হুঁশিয়ার করে দিলেন কিছু হলে খবর আছে। পাঞ্জাবি পড়ে যখন রিহার্স্যাল দিচ্ছি তখকন লুংগি পড়া ছিলাম বলে বাকি সবার মনে পড়ে গেল পাঞ্জাবি লুঙ্গি বেশ মানাবে। যেই কথা সেই কাজ। মানাবের থেকে বেশ জোকস হবে সেটাই আসল কথা। পাঞ্জাবি লুঙ্গি আর উপরে একটা ওড়না পড়েই রওনা দিলাম মেলায়। পাঞ্জাবিটা এত বড় ছিল যে নিচে যে লুঙ্গি ছিল অনেকে বুঝতেই পারেনি। (অবশ্য সাবধানের মার নেই ভেবে লুঙ্গির নিচে কিন্তু জিনস ছিল)।
গেলাম মেলায় , জায়গার নাম ইকেবুকোরো। সেখানে আবার একটা শহীদ মিনার বানানো হয়েছে ৩ বছর আগে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী এসে উদ্বোধন ও করে গিয়েছিলেন। গিয়ে সবার আগে সেটাই দেখতে গেলাম। কেমন যেন খুব ভালো লাগা অনুভব করলাম। আস্তে আস্তে লোকজন বাড়ল। এরপর সৌরভ ভাইর সাথে দেখা।ওনার পিছন থেকে কে যেন বলল আরে এই কি উলুম্বুশ নাকি। আমি চিনতে পারিনি শুধু বললাম না ভাইয়া এখনো অতিথি লেখক। সৌরভ ভাই হুমকি দিয়ে দিলেন যে আজীবন নাকি তাই থাকতে হবে। কি আর করা যাই হোক সচল দুজনের সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল। এরপর আরো অনেকে চলে আসল এক এক বড় ভাই আসে এক এক জন এক এক জিনিস খাওয়ায়। প্রথমে মিষ্টি দিয়ে শুরু করে একে একে সিংগাড়া, জিলাপী, বিরিয়ানি, সমুচা খেলাম। মনে হচ্ছিল দেশেই আছি।
আনিসুল হক এসেছিলেন মেলায়। ওনার সাথে গিয়ে হালকা কথা বলে আসলাম। আমি সৌরভ ভাইর মত ওনাকে দেশের কথা জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। ব্যক্তিগত প্রশ্নই করলাম। এক্সিডেন্টের পর এখন কেমন আছে সেই খবর নেওয়ার ইচ্ছেই ছিল। আর ঐ ভীড়ের মধ্যে দেশের খবর বেশি আঁতলামি হয়ে যেত। এরপর শুরু হল নাচগান।
মেলায় যাওয়ার আমার প্রধান আকর্ষন ছিল এসো হে বৈশাখ -সেই কালজয়ী - গান । কিন্তু কারা যে গানটা গাইল আমি গান বাজনা ভাল বুঝিনা তাও মনে হল এমনটা নয় এরকম করে নয়। ওহ সচলায়তনের সবচেয়ে পছন্দের গান এর সাথে নাচ নিয়ে আসল একটু পরেই এক পিচ্চি মেয়ে (উপস্থাপক তাই বলেছিল । সেই মেয়ের বয়স নাকি ১৫ ) সাথে সাথেই আমার সচলায়তনের মিলার কথা মনে পরে গেল। সেই রূপবানের গান। রায়হান আবীর কে এসেই খবর দিব যে , মিলার নাচ না দেখতে পারি , সেই মেয়ে যে নাচ দিল সেটা মিলার থেকে বোধ করি খুব একটা কম দোলানো হবে না।
মেলার মজাও হল সবার সাথে প্রচুর আড্ডাও হল। কিন্তু শেষ হওয়ার পর ফিরে আসার সময় একটু ছোটবেলায় চলে গেলাম। আমরা ছোট থাকতে রথের মেলায় যেতাম। সেই মজা আমি আর কোনদিন পাইনি। কিছু কিনতে পারতাম না কারন আমাদের সেই বয়সে আমাদের হাতে টাকা থাকত না আর অনেক কষ্ট করে আম্মুর থেকে ২ টাকা নিতে পারতাম তাও বরাদ্দ থাকত পটাশ বলে একটা জিনিসের জন্য। সেটা ছিল বাশ দিয়ে বানান একটা জিনিস যেটা দিয়ে বন্দুকের মত একটা গাছের বিঁ চি মারা যেত। সেটা দিয়ে রথের মেলার পরদিন আমাদের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হত। সেই দিনগুলা কোথায় হারিয়ে গেল। এখন আর কাউকে শুনিনা যে রথের মেলায় যায়। নাকি এখনো কোন এক পিচ্চি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছে আর আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে সব হারাবার জন্য।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।