ফয়েটে দুপুর

উলুম্বুশ এর ছবি
লিখেছেন উলুম্বুশ [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৫/২০০৮ - ৭:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

************উলুম্বুশ************
***kamrultopu@yahoo.com**
******************************
রেষ্টুরেন্টে বসে কি খাব মেনুতে চোখ বুলাচ্ছি। এমন সময় ,"আরে আপনাকে বসিয়ে রাখলাম" বলতে বলতে এক তরুণী এসে আমার সামনে বসল। আমি তো ভেবেই পাচ্ছিনা কারো কি আমার সাথে lunch করার কথা ছিল কিনা। কিন্তু তরুণী ভাবতেই মনে মনে পুলকিত হয়ে উঠতে গিয়েই হোঁচট খেলাম। চেহারাতে অতটা পুলকিত হবার কিছু নেই কিন্তু খুবই চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি। মেনুটা ওনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি যা বললেন তাতেই আমি তাকে চিনে ফেললাম।
"আমি তো লাঞ্চে ১ টার বেশি কিছু খাইনা।" মেনু হাতে নিয়েই বলল।
এ তো সেই পেটুক মহিলা উইলিয়াম সমারসেট মম কে যিনি ফতুর করে ছেড়ে দিয়েছেন। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝলাম আরে আমি যে ফয়েটে বসে আছি। কিন্তু ইনি এখানে কেন। একেবারে সেই চেহারা, "imposing rather than attractive" ভীত হয়ে উঠেই মানিব্যাগে হাত দিলাম আমি। উনি বসেই আমাকেও ফতুর করার মিশন শুরু করে দিলেন। আর আমি মনে মনে ভাবি সচলায়তনে আর ক্যাডেট কলেজের একটা ব্লগে লেখি কিন্তু ভক্ত হওয়ার তো চান্স নেই ইনি আমাকে পেল কোথায়। বেশিক্ষণ চিন্তা করতে পারলাম না, বিশাল একটা বিল এসে গেল আমার হাতে। কিন্তু মমের যা ছিল না তা আমার আছে একখানা ক্রেডিট কার্ড। তা দিয়ে বিল দিয়ে বেরুতেই তরুণী দেখি হাওয়া।
আমার চোখের সামনে ছেড়া জামা আর বিশাল এক নাবিক টুপী পড়া ancient mariner. জীবে দয়া করার উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে।এবার আর আমার চিনতে দেরী হয় নি। সাথে সাথেই চিনতে পেরেছি। এলবাট্রসটাকে যে কেন উনি মারতে গেলেন সেটা জিজ্ঞেস করতে এগুবো তখনই পেছন থেকে বাচচা একটা ছেলে আমার জামা টেনে ধরল। চিনতে পারলাম জেরীকে। একেই তাহলে বলে integrity। হায়রে কত ভাবে পড়েও এর মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারিনি । ওর হাতের ভারী জিনিস কিভাবে বহন করছে জিজ্ঞেস করতে গিয়েই বুঝে ফেললাম কি বলবে ও। "size dont matter chopping wood"
আমার চারপাশে ছোটবেলায় পড়া সব চরিত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার আমি রেষ্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম জিম আর ডেলাকে খুঁজে বের করার জন্য। কোনার দিক একটা কাপল পেয়ে গেলাম। চুপটি করে ওদের পিছনে বসে ওদের পুতুপুতু প্রেমময় কথাবার্তা শুনেই চিনতে পারলাম ওদের। দুজন দুজনে এত ব্যস্ত তাই আমি আর জানতে পারলাম না ডেলার চুল লম্বা হতে কত সময় লাগল আর জিমই বা ঘড়ির চেইনটা দিয়ে কি করল।

ঘড়ির কর্কশ এলার্মে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আরে চমতকার একখানা স্বপ্ন দেখলাম তো। গতরাতে প্রথম আলোতে luncheon এর বাংলা অনুবাদ পড়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে hsc তে পড়া ইংরেজির গল্পগুলার কথা মনে পড়ছিল। সেটাই আমার জীবনের প্রথম ইংরেজী সাহিত্য পড়া। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের ইংরেজি সিলেবাস একই থাকার কারণে অনেক বড় ভাইয়াদের সাথেও এই কথা গুলা মিলে। "size dont matter ", " imposing rather than attractive" এই কথা গুলা সবার সামনে বললেই বুঝে ফেলে। এখনকার পোলাপান এইগুলা বুঝে না। ওরা মনে হয় অনেক জানে তবে আমার মনে হয় ইন্টারে থাকতেই ইংরেজি সাহিত্যের ৪টা ছোট গল্পের সাথে পরিচয় অন্তপক্ষে আমার জন্য একটা বিশাল ব্যপার ছিল।


মন্তব্য

শাহীন হাসান এর ছবি

উইলিয়াম সমারসেট মম
শার্ল বোদলেয়ারকেও পাওয়া গেল....
চম ত্ কার উপস্থাপনা! ভাল-লাগলো।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তীরন্দাজ এর ছবি

একেবারে সপ্নের রাজ্যে! এমন সপ্ন দেখাও সৌভাগ্যের ব্যাপার!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বেশ গুছিয়ে লিখেছেন। গল্পগুলো আমিও পড়েছিলাম। অনেকদিন পর মনে পড়ে গেল। আপনার স্বপ্নে 'রিডিং ফর প্লেজার'-টা বাদ পড়ে গেল মনে হয়! চোখ টিপি
'মাদার ইন ম্যানভিল'-টাই আমার বেশি প্রিয় ছিল।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

-ভালো লেগেছে ।

----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল না বলে উপায় আছে?
নাফে এনাম

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই। এখন ওরা ইংরেজী বলতে শেখে। লিখতে শেখে। আগের চেয়ে ভালই শেখে কিন্তু সাহিত্য সম্পর্কে অনেকটা আধারেই থাকে। আমার মনে হয় এই গল্প গুলো থাকা দরকার ছিল এখনো।
সুন্দর লিখেছেন।

---
স্পর্শ

দুর্দান্ত এর ছবি

ভাল লাগল। লেগে থাকুন।

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুন লাগলো , গল্পগুলির সাথে পরিচয় আমার কাছেও অনেক বড় ব্যাপার ছিল, বারবার পড়তাম, দারুন লাগত ।

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অতিথি লেখক এর ছবি

এ তো সেই পেটুক মহিলা উইলিয়াম সমারসেট মম কে যিনি ফতুর করে ছেড়ে দিয়েছেন।

লাইনটা পড়েই লেখকের অনুধাবন ক্ষমতা সম্পর্কে টের পেলাম।
ধন্যবাদ।

সাহোশি এর ছবি

He has no mother, he has no skates. এই লাইনটুকু প্রথমবার পড়ে ঝিম মেরে বসে ছিলাম অনেকটা সময়। জীবনের তাগিদে এক বছরের মতো নর্থক্যারোলিনায় ছিলাম, ম্যানভিল শহরে যাওয়া হয়নি অবশ্য, না যেতে পারার দুঃখ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি।
-সাহোশি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এখানে সবুজাভ জঙলার মধ্যে কখনো গেলে আমার কেবল 'আন্ডার দ্য গ্রীন উড ট্রি'র কথাই মনে পড়ে!

কাম হিদার, কাম হিদার, কাম হিদার
হিয়ার উইল ইউ সী, নো এনিমি
বাট উইন্টার এণ্ড রাফ ওয়েদার।

লেখাটা ভালো লেগেছে দারুণ। মাথার ভেতর বসবাস করতে থাকা চরিত্রগুলো বের হওয়ার একটু অবকাশ পেলো বোধহয়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রায়হান আবীর এর ছবি

সেরম!!!

---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ইশ! আরেকটু ঘুমালে আমরা টম সয়্যার, টিনটিন, আর্চি, বেতালদেরও দেখা পেতাম! খাইছে

লেখাটা বেশ ভালো।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।