দুই হাতে লেখা - ৩

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: বুধ, ৩০/০৪/২০০৮ - ১:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[ নিজেকে নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে এই সিরিজের সূচনা। দুই হাতে লেখার এক্সপেরিমেন্ট! যথারীতি আব্‌জাব গল্প। বিশেষত্ব হচ্ছে আমি ঘন্টায় কয়টা গল্প লিখতে পারি এটা তার একটা স্ব-পরীক্ষা। গল্পের মান সম্পর্কে তাই কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। হিসেবের জন্য মোবাইলে টাইমার অন করেছি। টিক্‌ টিক্‌ টিক্‌ ... গল্প শুরু হল!]

ভাবুক

হাতে প্রচন্ড ব্যথা। বাইসেপ ট্রাইসেপ দুইটাই টনটন করছে! গত রাতে এক সিনেমা দেখেছি। সিনেমার নায়কের বাইসেপ ট্রাইসেপের নাচন নাকি সেই বাইসেপ ট্রাইসেপ ধরে এক শঙ্খিনী-দেবীর নাচন কুদন কোনটা দেখে যে এই আকামটা করলাম বলা মুশকিল। তবে সিনেমাদেখার পর দুড়দাড় করে খানকয়েক বুকডন মেরে যে মহা পাপ করে ফেলেছি, সেটা এখন বুঝা যাচ্ছে। আহ্‌ নায়িকাটা না ছিল... সেইরকম! হালায় ক্যান যে আরো দুই বছর আগেই বুকডন মারা স্টার্ট করিনাই। এখন আমার ঐ বডি থাকলে কি মজাটাইনা হত!! সুন্দরী-শঙ্খিনী আমাদের দেশেও তো আর কম নাই...

ভাবনা এখানেই থেমে যায়। লাফ মেরে ক্যাত্‌ করে উঠি। আমার জিগরি দোস্ত আমার সেই আহত বাহুমূলে এক গোত্তা দিয়ে বলে
-কিরে এত কি ভাবিস সারাক্ষন?
আমি উস্কু খুস্কু চুল আর চশমার ফাক দিয়ে বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি
-না মানে ইয়ে। কি যে ভাবছিলাম...!!
ও আর কিছু জিগায় না। এখনই যদি কোন গাণিতিক আলোচনা স্টার্ট করি!! আমি গণিত প্রিয় লোক আর একটু যে ভাবুক সেটা ওরা জানে। কে চায় লেকচার শুনতে।

...

খুশবন্ত সিং এর একটা গল্প পড়েছিলাম। নাম ‘নিতম্বে চিমটি প্রদানকারী’। পড়ার সময় প্রবল অবিশ্বাসে নাক কুঁচকে বলেছিলাম, ধুরো এটা হয় নাকি। গল্পটা অবশ্য মজার ছিল। তবে ‘এটা যে হয়’ সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। দাঁড়িয়ে আছি বাসের মধ্যে। শতাব্দী পরিবহন। অফিস সেরে মিরপুরের দিকে যাচ্ছি। বাসে সেইরকম ভীড়। ভীড় টিড়ে আমার দম বন্ধ হয়না। তার পরও এখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক তরুনী। গায়ে ভাঁজ সচ্ছ জামা। শরীরের কোথায় কোন ভাঁজ আছে সব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। এইরকম ড্রেস পরে কেউ পাবলিক বাসে উঠে নাকি? নিজের গাড়ি হলে এক কথা। সেই সব ভাজ আমার চোখের গলা টিপে ধরেছে। আর নাকের গলা টিপে ধরেছে পারফিউম। পারফিউম এর গন্ধে কিছু মনে হয় আছে। আমার ডান হাতের আঙ্গুল গুলো তির তির করে কাঁপা শুরু করেছে! এই জামা এই মেয়ে পরলো কি করে? পেটের কাছে এত চিকন!! ওপরে নিচে তো সেইরকম! ব্যপারটা গাণিতিক ভাবে সম্ভব না। নাকি এইসব ফল্‌স। কে যেন ‘পম্পাস...’ টাইপের একটা টার্ম শিখিয়েছিল। এইটা সেই বস্তুনাতো। পাম্প দেওয়া?! কানের কাছে খুশবন্ত সিং বলছে, ‘ দে দে দে... একটা চিম্‌টি!’ ওহ মাইগড! ওহ মাইগড্‌!! আলিফলাইলার সিন্দবাদের মত জোরে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে, আল্লাহ রক্ষা কর!!! এমন সময় গাড়ি করল তুমুল এক ব্রেক। হুড়মুড় করে পড়তে যাব সামনে। সাথের বন্ধুটা আমাকে থামিয়ে দিল সেই আহত ট্রাইসেপ ধরে! আমি ক্যাক করে উঠলাম।
-কি ব্যপার? এত কি ভাব? এখনিতো হুমড়ি খেয়ে পড়তে ।
আমি আমার সেই তির তিরানি কাঁপা আঙুল দিয়ে চশমাটা ঠিক ঠাক করতে করতে অন্যমনস্ক ভাবে বলি
-বাংলা উইকিপিডিয়ার জন্য একটা আর্টিকেল লিখছিলাম। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর উপর...ব্লা ব্লা।
এসব শুনায় তার আগ্রহ নেই। আমি যে একটু ভাবুক সেটা সেও জানে।

...

বাসায় ফিরেছি। ভাত খাচ্ছি। এক আন্টি বেড়াতে এসেছে। সাথে তার মেয়ে। মেয়ের বয়স বার কি তের। এইরকম মেয়ে দেখেই মনে হয় লোলিতা গল্পটা লেখা হয়েছিল। এখন বুঝতে পারছি যে তখন গল্পটা বুঝতে পারিনি! একটু আগে এই লোলিতা যখন আমার দিকে ফিরে একটা চোখ রাঙানী দিলো ওমনি আমি নভোকভকে দেওয়া সব গালি ফিরিয়ে নিলাম। এই ধরণের মেয়ের কি যেন একটা নাম দিয়েছিল রিদোয়ান...? উমম... ওহ মনে পড়েছে। বি.এইচ.এম.এইচ. মানে ‘বড় হলে মাল হবে’...

এমন সময় আবার সেই বাইসেপে খোঁচা। মা বলে,
-কি এত রাজা উজির মারিস মনে মনে। আন্টি কি বলে শুনছিস?
আন্টি বলে,
- এত বেশি চিন্তা করলে তো বুড়ো হয়ে যাবা।
আমি ঘোর কাটিয়ে চশমাটা নিয়ে গেঞ্জির কানা দিয়ে মুছতে মুছতে চোখ বড় বড় করে তাকাই আর ‘না...মানে ইয়ে... কি যে ভাবছিলাম দিলেন তো ভুলিয়ে’
-বুঝলেন ভাবি, ছেলেটা আমার একটু ভাবুক...

তাদের আলোচনা চলতেই থাকে। আমি আবার ভাবনায় ডুব দেই। কোথায় যেন ছিলাম? ওহ্‌ মনে পড়েছে। বি.এইচ.এম.এইচ...


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ওহ হো!!
সাইন করতে ভুলে গেছি!
কমেন্টে করে দেই

----
স্পর্শ

রায়হান আবীর এর ছবি

যথারীতি দারুন...আপনার বিশাল ফ্যান হয়ে গেছি...
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা, হা, হা

এই গল্প লিখে বিশাল টেনশনে ছিলাম! কখন যে কে গাইল দেয়!
ভাল লেগেছে জেনে টেনশন মুক্ত হলাম। হাসি
অনেক ধন্যবাদ।

---
স্পর্শ

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ভাবুকের ভাবনা কি কেবলই মেয়েদেরকে নিয়েই?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

অতিথি লেখক এর ছবি

না... মানে... ইয়ে... কি যেন ভাবছিলাম

হিলবার্ট স্পেসে ডিফারেন্সিয়াল মেনিফোল্ড...... খাইছে

----
স্পর্শ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আগুন হৈছে।
চিমটি নিয়া খুশবন্ত সাহেব কানের কাছে কাঁই কাঁই না করলেও একটা কাহিনী আমার জানা আছে এ সংক্রান্ত। এবং ঘটনাটা সত্যি। হাসি

নব্য বিবাহিত এক দম্পতি গিয়েছিলো গাউছিয়াতে। প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে ভদ্রলোক হঠাৎ লক্ষ্য করলেন তার বউ খানা হঠাৎই ক্যাঁক করে উঠলো। বউকে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেলো কে যেনো বউয়ের 'নিতম্বে চিমটি' কেটে দিয়েছে। ভদ্রলোক শুধু 'ওহ্' শব্দ করলেন, যেনো কিছুই হয় নি। তারপর আবার পথ চলতে লাগলেন। একটু পর বউ খানা নিজেই আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলেন, যে তার পতিদেবটাই তারই সামনে অন্য এক মহিলার 'নিতম্বে কুটুশ করে একটা চিমটি' দিয়ে দিলেন, এবং যথারীতি এই মহিলাটাও ক্যাঁক করে উঠলো। ভদ্রলোক এবার আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দিয়ে বউয়ের দিয়ে তাকিয়ে শীষ বাজাতে লাগলো যেনো দুনিয়া জয় করে ফেলেছে।

বউ রেগে মেগে জিজ্ঞেস করলো, 'এইটা কী করলা তুমি'?
স্বামী ভদ্রলোক উত্তরে বললো, 'কী করলাম। তোমার নিতম্বে যে চিমটি দিছে তার নিতম্বে আমি চিনটি দিয়া তো কোনো মজা পাবো না। তার চেয়ে আমার বউয়ের নিতম্বে মানুষ চিমটি দিছে, আমি আরেকজনের বউয়েরটায় দিয়ে দিছি। সমান সমান।'

_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা ...
আপনার ঘটনা টাও আগুন হইছে! দেঁতো হাসি

কিন্তু এইটা সত্য ঘটনা সেটা আপনি জানেন কেমনে?
ঘটনার নায়ক নিজেই নাতো?? চোখ টিপি

---
স্পর্শ

ধুসর গোধূলি এর ছবি
মুশফিকা মুমু এর ছবি

ভালো লিখেছেন কিন্তু আপনার "বি.এইচ.এম.এইচ" কমেন্ট টা খুব ইনসাল্টিং, এটা কি আসলেই সবাই বলে?

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়ে মানে! সবাই নিশ্চই বলেনা।
তবু কেউ কেউ নিশ্চই বলে। না হলে আর আবিষ্কার হল কেন?!

আর এটা আব্‌জাব লেখা। মোটেই সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নেই। হাসি

আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ! হাসি

----
স্পর্শ

তারেক এর ছবি

বরবাদ!! পুরা বরবাদ!! দেঁতো হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

অতিথি লেখক এর ছবি

বরবাদ। ইয়ে, মানে...
আশলেই। খাইছে

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বি.এইচ.এম.এইচ আসলেই বেশ আপত্তিকর! হাসি তবে ভালো লিখেছেন। দুই হাতে লেখা পরের দুইটা গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম! হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই আপত্তিকর।
কিন্তু 'ভাবুক' রা আপত্তিকর কথাও ভাবে! লেখকের আর কি করা! মন খারাপ

বিপ্রতীপ এর ছবি

ভাল্লাগছে হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ!
হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

মজার লেখা!

নিজের ভার্সিটি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বি.এম.এইচ.এম. জাতীয় কথাবার্তা ভার্সিটি স্টুডেন্টদের কাছে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আমার এক বন্ধু আছে সে বিভিন্ন বাংলা শব্দের সমাস করেছে আদিরসাত্মাক ভাষায়। শুনলে কান গরম হয়ে যায়। কিন্তু না হেসেও পারা যায় না। জানি না মডারেটরের কাঁচি আমার এ মন্তব্যের উপর পড়বে কিনা, তারপরও একটা উদাহরণ দিচ্ছি-
গাম্ভীর্য = গামলা ভরা বীর্য

কেউ আমার মন্তব্যে মর্মাহত হবেন না আশা করি।

ফেরারী ফেরদৌস

আশফাক এর ছবি

ভালো লাগল।

অতিথি লেখক এর ছবি

রিদোয়ান কে আভাবে পচানো তা কি ঠিক হলো...... খাইছে
গল্প ভালো।। কিন্তু মাঝি এর মত আরও লেখা চাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।