সচলায়তন ভাবনা

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: বুধ, ০১/০৭/২০১৫ - ৩:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শুভ জন্মদিন সচলায়তন! সচলায়তন সূত্রে পরিচিত হয়েছি অনেক মানুষের সাথে। তাদের কেউ কেউ হয়ে উঠেছে একেবারে আত্মার আত্মীয়। এই এক জীবনের সঞ্চয় যে বন্ধুত্বগুলো তার বড় অংশটাই সচলায়তন সূত্রে। সচলায়তন সূত্রেই, দেশ, কাল, সীমানা, বয়স সব কিছু পেরিয়ে সমমনা কিছু মানুষের কাছাকাছি হতে পেরেছি। এমন অনেকে আছে অন্য কোনো সূত্রে দেখা হলে হয়তো আঙ্কেল বলে সালাম দিয়ে চলে যেতাম, আবার এমন অনেকে আছে, যারা হয়তো বড় ভাই বলে হাতের বিড়িটা ফেলে দূরে সরে যেত। এমন অনেকে আছে, যারা এই বাক-অপটু আমাকে অন্য কোথাও দেখলে দাম্ভিক অথবা বেকুব ঠাউরাতো।

জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টাতে অসাধারণ কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়েছে সচলায়তন। সেই প্রথম দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। একটা পোস্ট দিয়ে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকতাম নীড়পাতার দিকে। কখন ছাপা হয়! তারপর উত্তরায় প্রথম সচলাড্ডা। লেখা পড়ে কাউকে হয়তো ভাবতাম ভাবগম্ভীর কোনো বুড়ো, দেখি ২০ বছরের সদ্যকৈশোরত্তীর্ণ তরুণ। কাউকে ভাবতাম একটু ফিচলে টাইপের যুবক, দেখি রীতিমত গুরুগম্ভীর ‘লোক'। রাতবিরাতে দল বেধে হাজির হতাম নজরুল ভাই এর বাসায়। তারপর অবারিত আড্ডা। বই মেলার সময় তো কথা-ই নেই। যেখানে যত কাজ ই থাকুক প্রতিদিন মেলায় আসা চাই। মেলা থেকে লাইভ ব্লগিং হতো। লাইভ ব্লগিং হতো সচলাড্ডা থেকে।

তারপর পেরিয়েছে বহুদিন। সেই স্বর্ণালী সময়টা আসলে আর নেই। বই মেলা এখন একটা মৃত্যুপুরী যেন। হাঁটতে হাঁটতে, সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয় চারিদিকে। সে সময় কী অবলীলায় মনের গহীন কথাটা লিখে ফেলতাম অনলাইনে। তেমন কি আর লিখতে পারি এখন? সেই বন্ধুত্বের পরিবেশটাও কেমন যেন বদলে গেছে। আগে যেমন ছিলো সচল মাত্রই প্রাণের কাছের মানুষ। এখন, একটা গ্রেডিং সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ এসে গেছে খুব কাছে, কেউ কেউ এখন আর অত নিকটে নয়। মনে আছে, প্রথম দেশত্যাগের পর, সেই দূরদেশে কাকতালীয়ভাবে কোনো সচলের দেখা পেয়ে যেন প্রাণের বন্ধু পেয়েছি বলে মনে হত। সচল সূত্রে প্রাণের বন্ধু পেয়েছিও। কিন্তু এখন কী যেন বদলে গেছে। হয়তো সচলায়তন নিজেই তার হাসিখেলার কৈশোর পেরিয়ে প্রবেশ করেছে তারুণ্যের কঠিন বাস্তবতায়। এভাবে কি একদিন বার্ধক্যও আসবে?

একটা সময় পর সচলায়তন স্রেফ হাসিখেলার অনুসংগ হয়ে থাকেনি। আমাদের কারো কারো জীবনের গতিপথই পালটে দিয়েছে আমূল। সচল না থাকলে, রায়হান আবীর, অভিজিৎ দা, শাহরিয়ার মামুন, জিহাদ, জামান, সামিয়া, মুহম্মদ, নজরুল ভাই, নূপুর আপু, রণদীপম দা, আনিস ভাই, সহ অনেকের দেখাই পেতাম না কখনো। কী নিরানন্দ, আর বিবর্ণ একটা যৌবন পার করতাম তখন!

মনে পড়ে, শীতের রাত। বেশ গভীর। শুনশান রাস্তাঘাট। সচলাড্ডা শেষে হেঁটে ফিরছি গাড়ির খোঁজে। সঙ্গে সদ্য দেখা হওয়া চিরপরিচিত কিছু বন্ধু। সুজনদার আঁকা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই স্টিকার লাগাচ্ছি রাস্তা ঘাটে ল্যাম্পপোস্টে। তখন মিলিটারির আমল। দলবেধে ঘোরাঘুরি নিষেধ। জামাত-শিবিরের কেউ যদি আমাকে ধরে? রগটগ যদি কেটে দেয়! কেমন যেন থ্রিল কাজ করত সে সময়টাতে। কিন্তু, মানুষকে জানাতে হবে যে আমরা বিচার চাই। এক সময় সেই দাবি ছড়িয়ে গেল লাখো যুবকের কন্ঠে। আর এখনতো বিচারে সাজাও পেয়ে গেছে অনেকে। কম পথ পাড়ি দেইনি আমরা।

মাঝে মাঝে কুৎসিত ভুলবোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে ব্লগে। হারিয়েছি কিছু সহযাত্রীকে। মাঝে মাঝে কিছু মানুষের মুখোশ খুলে পড়ে গেছে। চিনে গেছি বন্ধু বেশেও শত্রু থাকতে পারে। চিরকাল, শুধু যুক্তি আর সত্যের কাছে দায়বদ্ধ থেকেছি। অন্তত সচলে মতামত প্রকাশে, দ্বিমত প্রকাশে কখনো দ্বিধা করিনি। একটা সময় অবাক হয়ে জেনেছি যে কেউ কেউ গোপনে জামায়াতী/বামাতি এপলোজিস্ট। আবার কেউ কেউ কোনো বিশেষ দলের পেইড ব্লগার! কিছুদিন আগেই কী অনাবিল হাসি-খেলায় মেতে ছিলাম যাদের সাথে তাদের কেউ কেউ কিনা ধর্মান্ধ উন্মাদ। কৈশোরের সেই সহজাত বিশ্বাস প্রবণতায়, 'যাকিছু ভাল তার সাথে প্রথম আলো’ টাইপ কথা বিশ্বাস করতাম। অস্বীকার করব না যে সত্যি-ই ডক্টর ইউনূস, মুসা ইব্রাহীমদের নিয়ে গর্ব হত! কত তর্ক বিতর্ক করেছি এইসব নিয়ে, এই সচলেই। হোমোফোবিক ছিলাম। সচল খুঁজলেই আগা-মাথাহীন ক্লিসে অপযুক্তি দিয়ে তুমুল তর্ক করছি তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। কিন্তু এইসব আলোচনার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছি। সে যুগে, হুঠ করে ‘ট্যাগ' হয়ে যবার ভয় কাজ করত না কারো মধ্যে। এখন কিন্তু কিছুটা করেই।

তবে সচলায়তন নিয়ে আমার একটা হতাশা আছে। এত সব তরুণ সৃষ্টিশীল মানুষের সংস্পর্শে এসে তখন মনে হতো এদের কেউ কেউ আগামী ছয়-সাত বছরের মধ্যে হয়ে উঠবেন দেশের প্রধান লেখক। কেউ হয়ে উঠবেন শহিদুল্লাহ কায়সারদের মত নাট্যকার। কেউ হয়ে উঠবেন জহির রায়হান এর মত চলচ্চিত্রকার। কেউ হয়ে উঠবেন সত্যজিৎ রায়ের মত আঁকিয়ে, লেখক, গীতিকার, গল্পকার, চলচ্চিত্রকার। কেউ হয়ে উঠবেন সুকুমার রায়ের মত ছড়াকার। মনে হত কী সৌভাগ্য আমার এই যে যাদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি এখন, এরাই বাঙালী সংস্কৃতির মূল ধারা রচনা করবে কিছুদিনের মাঝেই। তেমন একটা স্বপ্নের আভা দেখা যেত অন্যদের মাঝেও। কিন্তু কী যেন ঠিক ক্লিক করল না। কিছু কিছু লেখক, কবি বেরিয়েছেন। কিন্তু যেমন একটা সংস্কৃতিক রেনেসার সূচনা হবে ভেবেছিলাম তা আর হয়নি। সম্ভবত আমাদের মাঝে কর্মমুখর থাকার মানসিকতা নেই। একজন রবীন্দ্রনাথ, কিংবা একজন সত্যজিৎকে সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, বছরের পর বছর, কখনো নিজের সব সঞ্চয় লগ্নি করে, ধার-দেনা করে নিজের সৃষ্টির পিছনে যেভাবে লেগে থাকতে হয় সেভাবে লেগে থাকার শক্তি হয়তো আমরা অর্জন করতে পারিনি। আর এখন তো দেশে টেকাই দায়। বই লিখে মোড়ক উন্মোচন করব, দেখা যাবে কেউ কুপিয়ে দিয়ে যাবে। তার উপর, আমরা যেন ভুলতে বসেছি, স্রেফ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে থাকা। সুকুমারীয় ননসেন্স ছড়া আর লেখা হচ্ছে কটা? কিংবা স্রেফ মজার জন্য লেখা মজার কোনো গল্প? বাংলা ব্লগগুলো যেন হয়ে উঠছে, পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগ। নানান জন তার অভাব অভিযোগ, আর রাজনৈতিক মতামতই শেয়ার করছেন এখানে। সচলায়তনও যেন সেই ধারায় চলেছে। এর প্রয়োজনও আছে। কিন্তু জীবন যদি শুধু এসব নিয়েই আবর্তিত হয় তাহলে কী দুর্ভাগ্য! কারণ, সঙ্গীত, চিত্রকলা, রম্য, কাব্য, রহস্য, এগুলো ছাড়া জীবন বহনযোগ্য থাকলেও যাপনযোগ্য থাকে না।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শুভ জন্মদিন সচলায়তন! হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

[img]DSCN1511 by Kabir Ahmed 26, on Flickr[/img]

এক লহমা এর ছবি

শুভ জন্মদিন সচলায়তন!
"একজন রবীন্দ্রনাথ, কিংবা একজন সত্যজিৎকে সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, বছরের পর বছর, কখনো নিজের সব সঞ্চয় লগ্নি করে, ধার-দেনা করে নিজের সৃষ্টির পিছনে যেভাবে লেগে থাকতে হয় সেভাবে লেগে থাকার শক্তি হয়তো আমরা অর্জন করতে পারিনি। আর এখন তো দেশে টেকাই দায়।" চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভ জন্মদিন সচলায়তন হাসি । সৃত্মিমাখা এই লেখা ভাল লাগল।

আমি তোমাদের কেউ নই -> আতোকেন

রানা মেহের এর ছবি

কিছু কিছু লেখক, কবি বেরিয়েছেন। কিন্তু যেমন একটা সংস্কৃতিক রেনেসার সূচনা হবে ভেবেছিলাম তা আর হয়নি।

হ‌ওয়া উচিত ছিল, আমরা পারিনি। আমরাই দায়ী।

(সমপ্রেম নিয়ে তোমার আমার আর স্নিগ্ধা আপুর তর্ক মনে পড়ে গেল) হো হো হো

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

স্পর্শ এর ছবি

জ্বীনের বাদশার একটা পোস্টে সম্ভবত। ঐ তর্কেই আমার চোখ খুলেছিলো। সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভালো বিশ্লেষণ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আহা সেই পুরনো সচলায়তন! মনটা খারাপ করে দিলেন!
পুরনো দলবল নাই। নয়তো লিখতে ইচ্ছে যে করে না, তা নয়।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক

পুরো লেখাটাই অদেখা স্মৃতির ইন্দ্রজালে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। অতীত বোধহয় সব সময় স্বর্ণালী হয়।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

আয়নামতি এর ছবি

ভালো বলেছেন। চলুক এই দেখেন অনার্যদা কী বলেছেন!

পুরনো দলবল নাই। নয়তো লিখতে ইচ্ছে যে করে না, তা নয়।

পুরনো দলবলের জন্যেই শুধু লেখা যায়? এমন চিন্তা নিয়ে থাকলে কেম্নে হয় বাপু!

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে সচলায়তন নিয়ে আমার একটা হতাশা আছে। এত সব তরুণ সৃষ্টিশীল মানুষের সংস্পর্শে এসে তখন মনে হতো এদের কেউ কেউ আগামী ছয়-সাত বছরের মধ্যে হয়ে উঠবেন দেশের প্রধান লেখক। কেউ হয়ে উঠবেন শহিদুল্লাহ কায়সারদের মত নাট্যকার। কেউ হয়ে উঠবেন জহির রায়হান এর মত চলচ্চিত্রকার। কেউ হয়ে উঠবেন সত্যজিৎ রায়ের মত আঁকিয়ে, লেখক, গীতিকার, গল্পকার, চলচ্চিত্রকার। কেউ হয়ে উঠবেন সুকুমার রায়ের মত ছড়াকার।

সুন্দর লেখা, এই লেখার আবেগ হয়ত আরো অনেকেই ধারণ করেন।
তবে আমি এতটা হতাশ নই, স্পর্শ ভাইয়া, কারণ আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝেছি, সচল মূলত লেখক-শিল্পী তৈরীর প্লাটফরম নয়; বরং, সচল একটা আন্দোলন, প্রগতির পথে অবিরাম, অকুতোভয়, আপোষহীন লড়াইয়ের এক অনুপ্রেরণা!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমার সচলে অংশগ্রহণ শুরু হয়েছে সেই সোনালি সময়টার পরে। সত্যি কথা বলতে কি তখন অংশগ্রহণে ভয়ই পেতাম কিছুটা। ভিন্ন জগতের মানুষ মনে হতো সবাইকে। ভালো লাগা কাজ করতো। ধীরে ধীরে অংশগ্রহণ শুরু করি। দেখতে পাই এই অসাধারণ মানুষগুলো খুব সাধারণ একজন মানুষ, চেহারায় বিশেষত্ব নেই কোনো। যার লেখা পড়লে মন্তব্য পড়লে চরম গম্ভীর, রাশভারি মানুষ মনে হতো তাদের দেখি আমার মতোই বা আমার চেয়েও ফাজিল কোনো ছোকরা। ধীরে ধীরে সবাই পরিচিত হতে থাকল। আসলেই সত্যি যেই লোকটাকে দেখলে হয়ত সালাম দিয়ে আঙ্কেল বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম, সেই লোকটার সাথে একেবারে সমবয়েসি বন্ধুর মতো আড্ডা দেয়া যায় এইসব সচলে না আসলে হতো না আসলে।

আপনার প্রায় সব পর্যবেক্ষণের সাথে একমত। এবং সবচেয়ে দুঃখজনক হলো আপনার হতাশাটাও আমাকে খুব গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। এত পোটেনশিয়াল সব মানুষ এক হয়েও যত বড় দাগ কাটার কথা ছিল তত বড় দাগ সম্ভবত কাটা হয়নি। কেন হয় নি সেই আলোচনাও হওয়া দরকার।

তবে সচলায়তন নিয়ে আমার একটা হতাশা আছে। এত সব তরুণ সৃষ্টিশীল মানুষের সংস্পর্শে এসে তখন মনে হতো এদের কেউ কেউ আগামী ছয়-সাত বছরের মধ্যে হয়ে উঠবেন দেশের প্রধান লেখক। কেউ হয়ে উঠবেন শহিদুল্লাহ কায়সারদের মত নাট্যকার। কেউ হয়ে উঠবেন জহির রায়হান এর মত চলচ্চিত্রকার। কেউ হয়ে উঠবেন সত্যজিৎ রায়ের মত আঁকিয়ে, লেখক, গীতিকার, গল্পকার, চলচ্চিত্রকার। কেউ হয়ে উঠবেন সুকুমার রায়ের মত ছড়াকার। মনে হত কী সৌভাগ্য আমার এই যে যাদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি এখন, এরাই বাঙালী সংস্কৃতির মূল ধারা রচনা করবে কিছুদিনের মাঝেই। তেমন একটা স্বপ্নের আভা দেখা যেত অন্যদের মাঝেও। কিন্তু কী যেন ঠিক ক্লিক করল না। কিছু কিছু লেখক, কবি বেরিয়েছেন। কিন্তু যেমন একটা সংস্কৃতিক রেনেসার সূচনা হবে ভেবেছিলাম তা আর হয়নি। সম্ভবত আমাদের মাঝে কর্মমুখর থাকার মানসিকতা নেই।

চলুক মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মেঘলা মানুষ এর ছবি

দাগ কাটার সময় তো আছে সামনে, আমাদের মত বুড়োরা না হয় পারবে না। ‌তবে, নতুন লেখকরা ঠিকই পারবে।
(কোথায় যেন পড়েছিলাম, সচলে যাদের লেখা পড়ে বুড়ো মনে হয়, তারা আসলে বুড়ো না। তাই মন্তব্যে একটু বুড়ো সাজার [অপ]-চেষ্টা)

এইসব আলোচনার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছি

ভালো লাগলো পর্যবেক্ষণটা।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু যেমন একটা সংস্কৃতিক রেনেসার সূচনা হবে ভেবেছিলাম তা আর হয়নি।-------
ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন । সচলায়তনের সচলরা এটা করে দেখাবে
শুভজন্মদিন সচলায়তন
Jaraahzabin

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বহুত পুরনো স্মৃতি দিয়ে মাথাটা আউলায়া দিলেন
লেখা ভালো হইছে
হতাশ হইয়ো না যদি মুমীন হও হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্বপ্নাহত এর ছবি

শৈশবের দিনগুলার কথা ভাবলে যেমন হাহাকার লাগে, মনে হয় আর পাওয়া যাবেনা সেইসব সুন্দর দিনগুলা। সচলায়তনে প্রথম দিককার ব্লগিং এর কথা ভাবলেও সেরকম একটা অনুভূতি হয়।

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

মরুদ্যান এর ছবি

সচলে ঘুরাঘুরি শুরু এই সোনালি সময়টার পর, সে হিসাবে আমি আপনাদের তুলনায় নতুন। তার আগে সামু আর আমু ব্লগে ঘুরাঘুরি করতাম। সচল সম্পর্কে ধারণা ছিল যে খুব উঁচুমানের লেখক পাঠক না হলে এখানে না আসাই ভাল। সচলে প্রথম রেগুলার হই প্রবাস জীবনের শুরুতে।

এখনো খুঁজে খুঁজে পুরানো পোস্ট পড়ি, আমিও একমত যে সচলে বড় পরিবর্তন এসেছে, পুরানো অনেকেই এখন আর লিখেনা, তাই তাদের ভাই ব্রাদার রাও আর মন্তব্য অংশে খুনসুঁটি করেনা হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

এক লহমা এর ছবি

"এখনো খুঁজে খুঁজে পুরানো পোস্ট পড়ি, আমিও একমত যে সচলে বড় পরিবর্তন এসেছে, পুরানো অনেকেই এখন আর লিখেনা, তাই তাদের ভাই ব্রাদার রাও আর মন্তব্য অংশে খুনসুঁটি করেনা" - সহমত।

নূতনদের মধ্যে আমি কিন্তু মাঝে মাঝে "খুনসুঁটি" না করলেও খুনসুটি করি। চোখ টিপি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মরুদ্যান এর ছবি

হেহে আমি চোখ টিপি মটরশুঁটির ভক্ত কিনা!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

এক লহমা এর ছবি

ডুপ্লি, ঘ্যাচাং

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পুরানো দিনের কত কথা মনে পড়ে গেল। অনেক আনন্দময় দিন ছিল সেসব। কীভাবে কীভাবে যেন দৃশ্যপট সব বদলে গেল। দেয়াল উঠে গেছে যেন চারপাশে। কত ভাবি যে লেখালেখিতে নিয়মিত হবো। কেন যেন হয়ে ওঠে না। মাথার ভেতর শব্দ ঘোরে। লিখতে গেলে আসে না।

তারপরও, এখনও আশা রাখি... কখনও না কখনও সচলায়তনের সেই "স্বর্ণযুগ" ফিরে আসবে আবার। হাসি

কল্যাণ এর ছবি

আপনার লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো। ভালো লিখেছেন, সত্যি কথা লিখেছেন। আপনার

সুকুমারীয় ননসেন্স ছড়া আর লেখা হচ্ছে কটা? কিংবা স্রেফ মজার জন্য লেখা মজার কোনো গল্প? বাংলা ব্লগগুলো যেন হয়ে উঠছে, পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগ। নানান জন তার অভাব অভিযোগ, আর রাজনৈতিক মতামতই শেয়ার করছেন এখানে। সচলায়তনও যেন সেই ধারায় চলেছে। এর প্রয়োজনও আছে। কিন্তু জীবন যদি শুধু এসব নিয়েই আবর্তিত হয় তাহলে কী দুর্ভাগ্য! কারণ, সঙ্গীত, চিত্রকলা, রম্য, কাব্য, রহস্য, এগুলো ছাড়া জীবন বহনযোগ্য থাকলেও যাপনযোগ্য থাকে না।

কথাটা আমারো মনের কথা।

সামগ্রিকভাবে একটা মোটিভেশনের অভাব কি থেকে যাচ্ছে? আমরা সবাই মিলেইত সচলায়তন। আমাদের যেটুকু করার মানে লেখার এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল, আমরা মনে হয় তা করছি না। নিজেকে নিয়ে আমরা সম্ভবত অনেক ব্যাস্ত হয়ে গেছি। এছাড়া আছে ফেসবুক। ফেসবুকে নোট লেখা আর স্ট্যাটাস লেখার পরে ব্লগে এসে লেখার সময় বা শক্তি আর না থাকারই কথা। একটা লেখা পোষ্ট করলে দায়সারাভাবে ভাল হয়েছে বা ভাল হয়নি বলে চলে যাচ্ছি। কিন্তু লেখককে যে ছাই দিয়ে ধরা দরকার, সেটা হচ্ছে না। মানে লেখাটা নিয়ে আলোচনা বা গরম গরম যাকে বলে মিথস্ক্রিয়া - হচ্ছে না উচিতমত। এইত কয়দিন আগে রউফ ভাইএর পোষ্টে বেশ একটা গর্মাগরম ঝগড়া লেগে উঠছিল কিন্তু সবাই এসে ভালরে ভাল বলে থামিয়ে দিলে। আমিও আজ সক্কাল সক্কাল জিজ্ঞেস করলাম চোরকাঁটা বাংলাদেশের বাইরে কোথায় হয়, রনি ভাই সেটার উত্তর না দিয়ে খালি তার আগেরটুকুর জবাব দিয়েই পালিয়ে গেলো। আবার ধরেন এক অতিথি মিস্টার জিরো লিখেছেন বিবাহ ! বন্ধন নাকি নারীর দাসত্ব ! আর মন্তব্যের উত্তরে ধন্যযোগ (!) দিচ্ছেন, লেখাটায় অনেকগুলো কথা কিন্তু ঠিক আছে, কিন্তু তারপরেও পুরো লেখায় কোথায় যেন একটা খাপছাড়া ভাব আছে যেটা অস্বস্তি তৈরি করে। লেখার সুরটা কি? পীরসাব কিন্তু বলেও গেছে যে সে হালকা রিভার্সের গন্ধ পাচ্ছে; কিন্তু পোস্টে তেমন আলোচনা হল না, মানে ঐ মিথস্ক্রিয়াটা আরকি বাদ থেকে গেলো।

লেখালিখির ব্যাপারে অন্যদের কথা বলার আগে নিজের দোষ স্বীকার করা উচিত। আমি আসলে খুব যে লিখতে পারি তা না। তারপরেও এই সচলেই অনেকে উতসাহ দিয়েছেন, কিন্তু লেখালিখিতে নিয়মিত হতে পারিনি। অনেক কথা মাথায় ঘোরে সত্যি, সেগুলো যে খুব উচ্চমানের সাহিত্য তা না, কিন্তু মোদ্যা কথা হল আলসেমি করে আর লেখা হয়ে ওঠেনা। দেখুন নিজে না লিখলেও লেখার কথা অবিশ্যি মনে করিয়ে দিতে আমি বরাবরই পারঙ্গম; এইত সেদিন হিমু ভাইকে চণ্ডীশিরার কথা মনে করিয়ে দিয়ে আসলাম! হিমু ভাই এর কথায় আবার বেশি খুশি হয়েননা আপনারটাও আছে একটু পরেই।

প্রতিভা বা সৃষ্টিশীলতা আসলে একটা জিনিস, মানে বেশ শক্ত পোক্ত ধারওলা জিনিস যেটা ডেডিকেশন না থাকলে তেমন একটা উল্লেখযোগ্য মানে দাগ কাটার মত কিছু করে দেবে না। এখন আমার যতই প্রতিভা থাক (তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি আছে), আমার ডেডিকেশন আমার প্রফেশনে, আমার কাটাকাটিও সব সেখানেই, তাহলে আর একটা কল্যাণ কায়সার হয়ে ওঠার সময় কোথায় আমার? আর কারোও পেটে আর মাথায় মাল থাকলে সেই সাথে উপযুক্ত পরিমাণ ডেডিকেশন যায়গামত খরচ করলে, সে ডিম ফুটে বের হবেই। এই যে দেখেন আগে চরম উদাস আদাড়ে বাদাড়ে তেল খোজাখুজির ফাঁকেফাঁকে অতিথি একাউন্ট থেকে এসো নিজে করি পোষ্ট করে যেত, আজকে সে বই ছাপিয়ে বেড়ায়, কালকে হয়ত পুতুমালো থেকে জীবনানন্দ পুরস্কার নিয়ে যাবে ড্যাংড্যাং করে। এখন পর্যন্ত সে হোল্ড-হোল্ড-নাউ আলাদের প্যান্ট খুলেই চলেছে। এটাও কি কম? চিন্তা করে দেখুন, দু-চারটে সফল লেখক বা চিত্র পরিচালক বা ছড়াকারের থেকে বেশি দরকার শ-দুয়েক ঘাড় ত্যাড়া খোলা মনের মানুষ যারা কোদাল কে কোদাল বলবে। এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করবেন না; প্রতিভা ট্রতিভা চুলোয় যাক তারচে বরং ২০১৩'র জুলাই ২৩এ যে একটা সত্য লিখেছিলেন, ওর থেকে জম্পেশ করে একটা কল্পগল্প ছাড়েন তাত্তাড়ি।

আসল কথা হল সচলায়তন আছে হাত খুলে লেখালেখি করার জন্যে, এরকমই থাক এই আশা করি। মডুরা সব ত্যালহারামি ছিল, ঐ রকমই থাকুক। আসুন আমাদের সময় সুযোগমত - আমাদের যেটা করার কথা সেটা করে যাই।

সুযোগ পেয়ে অনেক কথা বলে ফেললাম কারণ হল যথারীতি সেই চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির। ভাল থাকবেন স্পর্শ।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।