বাস্তব

স্পার্টাকাস এর ছবি
লিখেছেন স্পার্টাকাস [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৬/১০/২০০৯ - ৭:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাস্তার দুপাশের বাড়িঘর, দোকানগুলো ধীর লয়ে পেছনে ছুটে যাচ্ছে।একই সাথে মিলি যেন পেছনে ফেলে যাচ্ছে তার অতীতগুলো।এইতো সেদিন ফ্রক পরা,মাথার দুইদিকে বেণী ঝোলানো মিলিকে তার বাবা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছিলেন।ক্লাস থ্রির পরে সে আর বেণী করতে চাইত না, এতে নাকি তাকে ছোট ছোট লাগে।সে অনেক বড় হয়ে গ্যাছে।
চার বোন মিলে তারা বাবা-মাকে কম জ্বালায়নি।ঐতো মোড়ের ঐ কসমেটিকসের দোকানটাতে একটা কেনার কথা বলে ঢুকতো, তারপর বাবাকে ঘিরে শুরু হয়ে যেত চার বোনের হাজারো বায়নাক্কা।এম্নিতে বাবার ভয়ে বাসায় সবাই চুপচাপ, কিন্তু বাসার বাইরে বেরলেই বাবা নিজেই চুপ হয়ে যেতেন।রাত জেগে টিভি দেখতে না পারা, বিকেলে ছাদে বা রাতে এক বিছানায় বসে আড্ডা দিতে না পারা-সব ঝাল মিটিয়ে নিতো তারা একদিনে।
মাকে নিয়ে অবশ্য ভয়ের কিছহু ছিলনা।উলটে মা তাদের ভয় পেত, কখন কি করে বসে আর ওদের বাবার কাছে ঝাড়ি খেতে হয়।বাসার ফুলদানিটা ভেঙ্গে ফেললে বা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আইস্ক্রিম খেয়ে ঠান্ডা বসালে মায়ের মুখখানা দেখার মত হতো-আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় মুখটা ছোট হয়ে যেত, শাড়ির আঁচলের কোণাটা এক হাতে খুঁটতে থাকতো আর আল্লাহর কাছে অনুযোগ জানাত-এখন যদি তার কোন ছেলে থাকতো সে কখনোই এত দস্যি হোত না।
তবে সমস্যা হত যখন কোন কারনে রাগ করে মা খাওয়া বন্ধ করে দিত।মা তখন আলাদা ঘরে যেয়ে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে কাঁদতো।বাবাও এই রাগ ভাঙ্গাতে পারতনা।যে মেয়ে দোষ করেছে তাকে যেয়ে হাতপা ধরে কান্নাকাটি করে মা’র রাগ ভাঙ্গাতে হোত।ঐ হাতপা ধরে কাঁদতে মেয়েদের যে কি সুখ, মা কি তা বুঝত?
একে একে বড় তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেল।মিলিই তারপর থেকে ছিল মায়ের সব।মা শুধু বলত,তোর জন্য একটা ঘরজামাই আনব।তাহলে আর তোকে হাতছাড়া করতে হবেনা।ছোট মেয়ে বলে মিলির যত আবদার তার মা পূরণ করেছে, ততো তার তিন বোন মিলেও পায়নি।
মা’কে প্রথম যখন মিলি বলেছিল সুমনের কথা,মা সব শুনল এবং ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে বুঝালো কেন এই সম্পর্ক মানা যাবে না।ছেলে এই মাত্র চাকরি তে ঢুকল,বেতন কম।খাওয়াবে কি আর পরাবে কি? তাছাড়া দুজনের বয়স এক,তোর পাশে ওকে ছো্ট ছোট লাগবে-ওর বাবা-মা কি এইসব মেনে নেবে?
সেদিন থেকেই যেন মিলির বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।পাত্র পছন্দ না বা মিলির নিজের ইচ্ছা-কোনটাই আটকাতে পারলনা।এত দ্রুত সবকিছু এগোল যে সুমনের সাথে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া সে কোন উপায় খুঁজে পায়নি।
হাতে টান লাগায় মিলির চমক ভাঙ্গল, রিকশা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গেছে।সুমন মিলির পায়ের কাছের ব্যাগ টা নিয়ে ওর এক হাত ধরে ভীড়ের মধ্যে এগুতে লাগল।
মিলির বুকে সাত সমুদ্রের উথাল পাথাল ঢেউ,সুমন যেন সেই ঢেউয়ে ডুবিয়ে মারতে নিয়ে যাচ্ছে তাকে।মিলি দাঁড়িয়ে পড়ল,হাতটা ছাড়িয়ে নিল সুমনের হাত থেকে।
সুমন বোবা দৃষ্টিতে চেয়ে রইল মিলির দিকে।
মিলির দৃষ্টিতে না ছিল প্রেম, না ছিল বিদায়।
(কৃতজ্ঞতাঃ জেমস জয়েস)

স্পার্টাকাস


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

"পিচ্চি",এই নিক্ নেমটা ঘোচাতে পারিনি এখনো ,,তবু স্মৃতিচারনমূলক লেখাগুলো বড্ড ভালো লাগে ! মনে পড়ে গেলো অঞ্জনের "রমা " গানটাও.... *তিথীডোর

অতিথি লেখক এর ছবি

ছেলেদের জন্যও একটা গান দরকার ছিল।
পড়েছেন বলে ধন্যবাদ।

স্পার্টাকাস

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা পরার পর মনে হচ্ছে লেখাটা শেষ হয়নাই। আমি অবশ্য অতো ভাল বুঝিওনা।

- শূন্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দুর্বল লেখনী।তারপরো মডু যখন ঘ্যাচাং করেনাই,তখন কষ্ট কইরা পড়েন।:D

স্পার্টাকাস

রেশনুভা এর ছবি

সুন্দর তো।
বাক্য শেষ হলে পরে নতুন বাক্যের শুরুতে একটা স্পেস দিয়েন আর প্যারাগুলোর মাঝে একটা করে ফাঁকা লাইন থাকলে পড়ে আরো আরাম পাওয়া যাবে।
চলুক। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

স্যারের আদেশ মাথা পাইতা নিলাম।

স্পার্টাকাস

রেশনুভা এর ছবি

স্যার কই থেইকা আসলো? ঘটনা কী?

অতিথি লেখক এর ছবি

আইইউটি তে আপনের 'সিমুলেশন' আমার পছন্দ না হইলেও সচলায়তনে আমি,ভন্ড...আপনের
গুণমুগ্ধ শিষ্য। মাথায় একটু হাত বুলায় দেন। দেঁতো হাসি

স্পার্টাকাস

অতিথি লেখক এর ছবি

স্যার, আমিও! খাইছে

- শূন্য

রেশনুভা এর ছবি

তুম্রা কেনু কেনু স্যার স্যার করতেছ? ফিল্ড তো নষ্ট হয়া গেল... খাইছে
এইবার স্যার কে ছেড়ে দাও... দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও হাসি

~>ছদ্মবেশী<~

মূলত পাঠক এর ছবি

অণুগল্প হিসেবে ভালো লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে। চালিয়ে যান।

মহসীন রেজা

নিবিড় এর ছবি

অণুগল্পটা ভাল লেগেছে। তবে একটা কথা জানার ইচ্ছা হল, এই গল্পটা কি জেমস জয়েসের কোন গল্পের ছায়া অবলম্বনে রচিত?


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অতিথি লেখক এর ছবি

জেমস জয়েস এর 'ইভলিন' ছোট গল্প থেকে অনুপ্রাণিত। গল্পের প্লট ভিন্ন।
ধন্যবাদ।

স্পার্টাকাস

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বেশ একটা অণুগল্প হলো। মূল গল্পটা ঠিক এইরকম ছিলো বলে মনে হচ্ছে না। পুরো লেখাটায় একটা বাঙ্গালিয়ানা থাকলেও শেষে এসে এটা যে অনুবাদ- সেটা ফুটে উঠলো...

-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

অতিথি লেখক এর ছবি

ওই যে বললাম "অনুপ্রাণিত"। জয়েসের ভুত আঙ্গুলের আগায় বসে ছিল। সচলায়তনে এটা আমার ২য় লেখা। ১ম টা তো মডু ঘ্যাচাং মারছিল।
কষ্ট করে পড়েছেন বলে ধন্যবাদ।

স্পার্টাকাস

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালো লাগলো। দুইটা বাক্যের মধ্যে একটা স্পেস দিয়েন।

অতিথি লেখক এর ছবি

থ্যাঙ্কু...মনে থাকবে।

স্পার্টাকাস

অতিথি লেখক এর ছবি

ওরে তুইও আইসা হাজির। বাহ বাহ। ভালোই তো গল্প বেধেঁছিস। চালিয়ে যা। হাসি
মনে রাখিস...মিলিদের সব কথাই মায়েরা শুনে...খালি একটা ছেলেকে পছন্দ করে এই কথাটা শুন্তে পারে না। অতএব মিলিদের থেকে সাবধান!! চোখ টিপি
/
ভণ্ড_মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

ন্যাড়া একবারই বেল তলায় যায়।

স্পার্টাকাস

অতিথি লেখক এর ছবি

'ক' কে তার মা বলেছিল, "তোকে দরকার হলে একটা রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিব, তাও 'খ' এর সাথে না...!" খাইছে

- শূন্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আর খ বলেছিল,'আমি গরীব হতে পারি, কিন্তু রিকশাওয়ালা নই'
ভাল থাকিস

স্পার্টাকাস

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়তে পড়তে শেষে এসে ধাক্কা দিলেন মশাই।
ভাল লাগল।

স্বপ্নদ্রোহ

অতিথি লেখক এর ছবি

এইটাই বাস্তবতা।
ভাল লাগল জেনে খুশি হলাম।

স্পার্টাকাস

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়া...লম্বা প্রেম তো, তাই হয়তো দূরে সরিইয়ে দিলো! পড়ে ভাল্লাগলো। আরো চাই...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার নাম টা ত দিলেন না....যা হোক, সব অতিথি লেখকদেরকে অনেক অনেক ধইন্যা পাতা

স্পার্টাকাস

চশমাওয়ালি এর ছবি

বেশ লাগল।

---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।

---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

বেশ লাগলো! চালিয়ে যান!
----------------------------
ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং
ত্বগস্থিমাংসং প্রলয়ঞ্চ যাতু।
অপ্রাপ্য বোধিং বহুকল্পদুর্লভাং
নৈবাসনাৎ কায়মেতৎ চলিষ্যতি।।

- ললিতবিস্তর

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আইইউটির একটা গ্রুপ দেখি সবসময়ই সচলে এসে জায়গা দখল করে বসে। এক ব্যাচ বের হয়, আরেক ব্যাচ তাদের উপস্থিতি জানান দেয়।

লেখাটা ভালো লাগছে। প্লটটাও ভালো। কারো সাথে পালিয়ে যাওয়াটা আসলে বয়সের দোষ। একটা বয়সে মনে হয় এটা ছাড়া কোনো পথ খুঁজে পায় না যুগলেরা। 'সিচুয়েশন'কে আসলে এর ভেতরে থেকেই 'হ্যান্ডল' করা বুদ্ধিমানের কাজ, এর বাইরে গিয়ে না।

গল্পের শেষটাও আমার কথার সত্যতা প্রমাণ করে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সাফি এর ছবি

আসলে কি হইলো ব্যপারটা? গেল না কি রয়ে গেল? নাকি শেষ মুহূর্তে দ্বিধান্বিত?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।