ফ্রানস বারনার্ডের ফিরে আসা আর ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি
লিখেছেন রাতঃস্মরণীয় [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২০/১০/২০১০ - ১১:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাত প্রায় সোয়া ১১টা। বসে আছি ল্যাপটপে, কিছু জরুরী কাজ নিয়ে। হঠাৎ ফোন আসলো। কলার আমার স্নেহাষ্পদ সাবেক টিম মেম্বার বর্তমানে এনজিও সিকিউরিটি এ্যানালিষ্ট হিসেবে অন্যত্র কাজ করে। ও বললো যে ফ্রানসকে ছাড়িয়ে আনতে হিমান এন্ড হিব ষ্টেটের প্রেসিডেন্ট সেই দূর্গম এলাকায় গেছেন। আনন্দ সংবাদ। ১০ মিনিট পরে আবার ওর ফোন। ২ মিনিট আগে ফ্রানস মুক্ত হয়েছে। বুক ভরে স্বাস নিলাম। মনে হলো আমি নিজেই এ ...রাত প্রায় সোয়া ১১টা। বসে আছি ল্যাপটপে, কিছু জরুরী কাজ নিয়ে। হঠাৎ ফোন আসলো। কলার আমার স্নেহাষ্পদ সাবেক টিম মেম্বার বর্তমানে এনজিও সিকিউরিটি এ্যানালিষ্ট হিসেবে অন্যত্র কাজ করে। ও বললো যে ফ্রানসকে ছাড়িয়ে আনতে হিমান এন্ড হিব ষ্টেটের প্রেসিডেন্ট সেই দূর্গম এলাকায় গেছেন। আনন্দ সংবাদ। ১০ মিনিট পরে আবার ওর ফোন। ২ মিনিট আগে ফ্রানস মুক্ত হয়েছে। বুক ভরে স্বাস নিলাম। মনে হলো আমি নিজেই এক বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেলাম। যে মানুষটা আমাদের পরম যত্নে শিখিয়েছিলো যে অ্যবডাকটেড হলে কি আচরণ করতে হয়, ইত্যাদি আর সেই মানুষটাই অ্যবডাকটেড ছিলো।

গত পরশু আমার লেখা ফিরে আসো ফ্রানস বারনার্ড অনেকেই পড়েছেন। ফ্রানস কিভাবে অ্যবডাকটেড হলো তা লিখেছিলাম। আজ লিখছি ওর অপহৃত হওয়ার খেকে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত।

ফ্রানসকে ধরার পর অপহরনকারীরা ওকে নিয়ে যায় সোমালিয়ার সাউথ সেন্ট্রাল রিজিওনের হিমান এন্ড হিব ষ্টেটের রাজধানী আডাডো থেকে ৭০ কিলোমিটার দুরে একটা দূর্গম গ্রামে। হিমান এন্ড হিব ষ্টেটে মুলতঃ দুটো ক্লানের আধিক্য দেখা যায়। এদের মধ্যে প্রথমটা হচ্ছে সালিবান ক্লান, জনসংখ্যায়, ক্ষমতায়, সামরিক শক্তিতে, ক্লান মিলিশিয়ার সংখ্যায়, সবদিক থেকে সালিবান এগিয়ে। হিমান এন্ড হিবের প্রেসিডেন্ট একজন সালিবান, অধিকাংশ মন্ত্রী-আমলারা সালিবান, ব্যবসায়ী মহলেও সালিবানদের আধিক্য। আর অন্য ক্লানটা আকারে এবং সামরিক শক্তিতে, ক্ষমতায়, সবদিক থেকে সালিবান থেকে পিছিয়ে। এরাই ফ্রানসকে অপহরন করেছিলো। ধান্ধা ছিলো ফ্রানসকে চড়া দামে আল-শাবাব অথবা পাইরেটসদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া। সমঝোতা ভালোই এগোচ্ছিলো আল-শাবাবের সাথে।

ফ্রানস যখন অপহৃত হয়, তখন ও থাকছিলো যে গেষ্ট হাউজে সেটা এক সালিবান এলডারের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া। অপহরনের ঘটনার পরে আহলে সুন্নাহ ওয়াল-জামেয়া হিমান এন্ড হিব সরকারকে সন্দেহ করে যখন সরকারের কাছ থেকে কয়েক ঘন্টার জন্যে ক্ষমতা কেড়ে নেয়, তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবার সমঝোতাও হয়ে যায়। হিমান এন্ড হিবের প্রেসিডেন্ট প্রমিজ করে যে যে কোনও মূল্যে ফ্রানসকে মুক্ত করে আনার। এরপর আহলে সুন্নাহ আবার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়।

হিমান এন্ড হিব সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে থাকে ফ্রানসকে ছাড়িয়ে আনার কিন্তু এই চেষ্টা ফল দিচ্ছিলো না। এইরকম একটা অবস্থায় ওদের কাছে যখন খবর আসে যে ফ্রানসকে যে কোনও মুহুর্তে আল-শাবাবের কাছে তুলে দেয়া হবে, হিমান এন্ড হিব প্রশাসন আর দেরি না করে সালিবান মিলিশিয়া দিয়ে ঝটিকা অধিযান চালিয়ে অপহরনকারী দুই গ্যাংষ্টারের বাবা-ভাই সবাইকে অপহরণ করে নিয়ে আসে। ভাবগতিক খারাপ দেখে অপহরনকারীরা সন্মত হয় ফ্রানসকে ছেড়ে দিতে তবে দুই শর্তে, এক, তারা কেবলমাত্র প্রেসিডেন্টর হাতেই ফ্রানসকে তুলে দেবে; আর দুই, প্রেসিডেন্টকে রাতের বেলায় আসতে হবে।

প্রেসিডেন্ট তার পুরো সামরিক শক্তি নেয় রাতের বেলায় যায় ফ্রানসকে আনতে। দুই বদমাশ ফ্রানসকে ছেড়ে একটু দুরে অপেক্ষা করতে থাকে। প্রেসিডেন্ট যখন ফ্রানসকে গ্রামবাসীদের কাছে থেকে বুঝে নেয়, সাথে সাথে ওই দুটোকে সারেন্ডার করার জন্যে বলে। ওরা দুটো সারেন্ডার না করে দ্রুত কোষ্টের দিকে পালাতে থাকে। প্রেসিডেন্ট জনসমক্ষে ঘোষনা দেয় যে যদি সে ওদের দুটোকে ধরতে না পারে তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আর আডাডোতে ফিরবে না। পথেই রিজাইন করে যাবে। ফ্রানসকে সাথে নিয়েই রাতভর অভিযান চলে। অবশেষে ভোরে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরের এক দূর্গম যায়গায় পালিয়ে থাকা দুই বদমাস সাঙ্গোপাঙ্গোসহ ধরা পড়ে। প্রেসিডেন্ট চামচাগুলো আর এ্যারেস্ট করেনি, করেছে শুধু ওই দুটোকে। তারপর ফ্রানস সহ সবাই আডাডোতে ফিরে এসেছে। সন্ধ্যায় আল-জাযীরায় প্রথমবারের মতো এই খবর বলছিলো।

গুলির শব্দ শুনছি আর এই লেখাটা লিখছি। একদল মিলিশিয়া আমার বাসা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে মেয়রের অফিসে হামলা চালিয়ে ১ জন সোলজারকে খুন করে অফিস অবরোধ করে বসে আছে। বিস্তারিত জানতে পারিনি এখনও, অপেক্ষা করছি। এরকম অপেক্ষা প্রায় প্রতিদিনই করতে হয়।


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

!! মন খারাপ !!


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

অনিন্দ্য ভাই, এইসব নিয়েই আমাদের জীবন। মূলতঃ রুটিরুজি আর সাথে কিছুটা কমিটমেন্ট, এই আর কি! আপনাকে ধন্যবাদ।

রাতঃস্মরণীয়

নিবিড় এর ছবি

আগের লেখাটাও পড়েছিলাম তাই এইবার যখন বন্ধু ফিরে আসার খবর দিলেন তা পড়ে ভাল লাগল হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ নিবিড় ভাই।

রাতঃস্মরণীয়

কৌস্তুভ এর ছবি

কি কাণ্ড! যাক, শেষমেষ বেচারা আস্তই ফিরেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্বী কৌস্তভ ভাই, স্বস্তিদায়ক সংবাদ। জানিনা পিছনে কি ঘটেছে তবে আল জাযীরা তো এক কাহিনী ফেঁদে ফেলেছে মুক্তিপণের, ১০০,০০০ ডলারের। আমার সোর্স যথেষ্ঠ রিলাইয়্যাবল, আমি মুক্তিপণ বা এমন কিছুই শুনিনি আমার সোর্স থেকে। তবে সিকিউরিটি পয়েন্ট-অব-ভিউ থেকে আমাদের মধ্যে একটা নীতিগত ঐক্য আছে যে মুক্তিপণ দিলেও সে মুক্তিপণের কথা কক্ষোনো স্বীকার না করা। তবে সবথেকে বড় কথা ফ্রানস সুস্থ্যভাবে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে, এটাই। বিবিসিও বেশ ভালো কাভার করেছে।

বেচারা একটু স্থির হোক, তারপর ২-১ দিন পরে একটা মেইল পাঠাবো। আর সামনের সপ্তাহে নাইরোবিতে দেখা হতে পারে, তখন কথা বলবো।

রাতঃস্মরণীয়

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নিখিলেশের মতো আপনার সাথে আমার জীবন বিনিময় করতে ইচ্ছে করে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

পান্ডবদা আপনার সদিচ্ছের জন্যে শ্রদ্ধা। কিন্তু এ জীবন যে বড়ই কঠিন! কিছু ভয়ংকর কথা ফেসবুক বা সচলে লিখিনা কারণ আমার অনেকগুলো কাজিন এখানে ঘোরাঘুরি করে; ওই পোংটাগুলো বাড়িতে বলে দেবে, তাই। তবে ইচ্ছে আছে সামনের মাসে কিছু লিখবো।

রাতঃস্মরণীয়

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকবো।

নিখিলেশের মতো জীবন বিনিময় করলে কী হবে তা জানি। "মহিমায় থাকবো কিন্তু গ্লানিতে থাকবোনা" তাতো হয় না। থ্রিল চাইলে সাথে ঝুঁকিতো নিতেই হবে। আপনার সাহসের প্রতি আবারো শ্রদ্ধা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে কি জানেন পান্ডবদা, বিপন্ন মানুষের পাশে গিয়ে যখন দাঁড়াই, তখন ভয়ডর যেন কোথায় পালিয়ে যায়। আপনাদের মন্তব্য আমাকে প্রতিনিয়ত পেরণা যোগায়। ভালো থাকবেন।

রাতঃস্মরণীয়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।