অন্য ভাষায় লেখালেখি

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ০৯/০৬/২০০৭ - ১২:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
জেবতিক আরিফ মূলত একটা পোস্টে এই ভাবনা উসকে দিয়েছেন। সচলায়তনের এই একটা ব্যাপার আশা করি আমাদের আরো উপকারে আসবে। সামহোয়্যারে উঠতে বসতে ছাগু তাড়ানোর জন্য সময় দিতে হতো, রিসোর্স ব্যয় হতো, সচলায়তনে কিছু আলাদা ভাবনার সময় ও সুযোগ ব্লগারুরা নিজেরাই করে নিতে পারবেন। বাংলা উপন্যাস এখন আসলে কোন পর্যায়ে আছে? উপন্যাসের উপজীব্য কী কী? উপন্যাসের পাঠক কারা? উপন্যাস রচনায় রচয়িতা মূলত কী সংকটের মুখোমুখি হন? আমাদের চিন্তার ধারাটি কতটুকু ভাষান্তরিত হচ্ছে? একজন ইংরেজি ভাষার পাঠক (উভয়লিঙ্গার্থে) বাংলা সাহিত্য নিয়ে কতটুকু জ্ঞাত? জানি না, জানি কি, জানি কী? লেখকরা পাঠকের রুচি নির্মাণ করতে সক্ষম, কিন্তু পাঠকের সামর্থ্যও অনেক সময় লেখকের রুচি পাল্টে দেয়। কাগজের দামের অর্থনীতি আর কূটনীতিও চলমান সাহিত্যের মান পাল্টে দিতে পারে বলেই মনে হয়। বইয়ের দাম যদি কোন অজানা অলিখিত Threshold Price বা সংকট মূল্যের ওপরে হয়, তাহলে সে বই অনেকাংশে অপাঠ্য অধরা রয়ে যায় মূল পাঠক সমাজের কাছে। নোট ১: পরিসংখ্যানপ্রেমী গবেষক কিছু কাঁচা উপাত্ত নিয়ে বসতে পারেন আমার এ বুলির সত্যতা যাচাইয়ে। বইয়ের দামের বিপরীতে তার কাটতি সংখ্যা রেখে গ্রাফ আঁকুন। নিজে দেখুন, আমাদেরও দেখান। বইয়ের দাম তখনই বেশি হচ্ছে, যখন উপন্যাসের ব্যাপ্তি অনেক বেশি, যেখানে ঔপন্যাসিক অনেক কিছু বলে ফেলেছেন। বিস্তৃত একটি উপন্যাস পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারছে না তার মূল্যের কারণে। ঔপন্যাসিক যদি লিখে খেতে চান, তাহলে এমন উপন্যাস লেখায় তিনি কখনো হাত দেবেন না, যা লিখলে তাঁকে অর্ধাহারে শুকিয়ে যেতে হয়। তিনি যদি অর্থনীতি ১০১ কোর্সটি পড়ে আসেন, তাহলে আরো দ্রুত হাত দেবেন একটি ক্ষীণকটি উপন্যাস রচনায়, যা লিখতে সময় কম লাগে, যা পাঠকের মাসিক গ্রন্থবাজেটের নাগালে, এবং সর্বোপরি প্রকাশকের ভুরুর কুঞ্চনবিরোধী। কিছু উত্থানপতনের ইতিহাস ছাড়া মোটামুটি উপন্যাস লেখার ব্যাপারটা এমনই। পাঠককে ভাবাতে হলে ঐ চার-পাঁচ-ছয় ফর্মার মধ্যে ভাবাতে হবে। আয়তনে শীর্ণা হতে বাধ্য হয়ে উপন্যাস তার বিষয় বেছে নেয় এমন কিছু থেকে, যার শুরু নেই, শেষ নেই, এক অতল সমুদ্রের মতো, যা থেকে কয়েক পেয়ালা আহরণ করলেও শেষ হয় না। মধ্যবিত্তের জীবন এমন এক সমুদ্রের মতো। যুবতী নারীর প্রেমও এমন আরেক সমুদ্র। দুয়ের কম্বিনেশন এক মহাসমুদ্র। সেঁচে যেতে পারলেই হলো। মাঝেমধ্যে নতুন একটা ধারা যে বেরিয়ে আসে না, তা নয়, কিন্তু মূলধারা সেই সাগর-মহাসাগরেই গিয়ে পতিত হয় পদ্মামেঘনাযমুনার মতো। এ থেকে নিস্তার পেতে হলে ঔপন্যাসিককে চিন্তার স্বাধীনতা, অর্থের স্বাধীনতা, প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। বাজার থেকে বেরিয়ে বাজার দখল করতে হবে তাকে। সম্প্রতি তাহমিমা আনামের উপন্যাস রচনা নিয়ে একটা আলাপ হচ্ছিলো সচলায়তনে। তাহমিমা মুক্তিযুদ্ধে মধ্যবিত্ত কিছু মানুষের কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি উপন্যাস রচনা করেছেন। তবে তাকে নাহক ফাঁপিয়ে বাজারে কাটানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। কিন্তু আমার ধারণা তার পেছনে শুধু তার সম্পাদক পিতাই নেই, আছে ঔপনিবেশিক ইংরেজির মাজা, আর বইয়ের মাজা। এই দুইয়ের মাজার জোরে তিনি মিডিয়াতে জোর কাটতি পেয়েছেন। ইংরেজিতে আমরা এখনো সেভাবে লেখা শুরু করিনি, কারণ সেই একই, বাজার। ভারতে ইংরেজিতে না লিখলেই বরং পাঠক কমে যাবে, বই মার খাবে। বাংলাদেশে উল্টো হবে। ইংরেজিতে কিছু লিখলে লিখতে হবে ইংরেজি লোকজনের কথা মাথায় রেখে। তারা কী খায়, তারা কী চায়। হুমায়ূন আহমেদ যদি আজ তার একখানা উপন্যাস ইংরেজিতে লেখে, সেটা কি লোকে খাবে? লোকে খাওয়ার ব্যাপারটাই আসল, যখন আপনি খাওয়ার জন্য লিখবেন। আপনাকে খেতে হবে, প্রকাশককেও খেতে হবে। তাহমিমা ছাইপাঁশ যা-ই লিখুন, আমি খুশি, কারণ কেউ একজন শুরু করেছে। বিশ্বসাহিত্যবোদ্ধারা কষ্ট করে উঁকি দিয়ে দেখে না বিশ্বের চতুর্থ ভাষাভাষী মানুষগুলির সাহিত্যকে। সেই কবে একবার রমাপদ চৌধুরীর অভিমন্যুকে নোবেল কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিলো, তারপর সব শেষ। তাদের উপেক্ষাদর্পী কপালে তাহলে একটা শক্ত ইংরেজি জুতোই ছুঁড়ে মারতে হবে, কী আর করা? তাহমিমা একটা ঢোলে বাড়ি দিলো শুধু। এখন নাচুনে বুড়িদের মাঠে নামার সময়। একটা কিছু করে দেখাতে হবে।

মন্তব্য

ভাস্কর এর ছবি
হিমু নোবেল চিজটা আসলে এক্কেরে ভিন্ন অংকে চলে...ল্যাংগুয়েজ এইখানে কি ভূমিকা পালন করে তা আমার জানা নাই তয় ইংরেজীতে পরে অনুবাদ হওয়া সাহিত্যকর্মের ভিত্তিতে নোবেলের নজীর কিন্তু কম না। এই উপমহাদেশে ইংরেজী লেখা অনেকেই বছরের পর বছর আলোচনায় আইসাও নোবেল থেইকা বঞ্চিত হইছে, এইটা কি মনে হয় কোয়ালিটির তারতম্যে!? মনে হয় না। আর কে নারায়নরে বহুত প্রাজ্ঞজনেরাও পুছতো বইলাই জানি। ইংরেজীতে সাহিত্য করা লেখকেরা কিছু পুরস্কার পায় জানি পশ্চিমাগো কাছ থেইকা...কিন্তু ঐ সব পুলিৎজার আর বুকার পাওয়া ম্যাক্সিমাম সাহিত্য যে কিসের ভিত্তিতে পায় সেইটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। আমি নিজে বেশ কয় বারই পাঠ্যসূচীতে ঐসব ভারতীয় লেখকগো আইনা বিরক্ত হইছি। একবার সাড়ে নয়শ পাতার সুইটেবল বয় তিন সপ্তাহ ধইরা পইড়া বুঝছিলাম কেমনে সময় নষ্ট হয়! সাম্প্রতিক সময়ে দেখলাম শশী ঠারুররে... শীর্ণকায়া উপন্যাস লেখা হয় বাজার মাথায় রাইখা এই তথ্য অনেকাংশেই সত্যকথন। কিন্তু অমিয়ভূষণ মজুমদারের মধু সাধুখাঁ, কিংবা মহিষকূড়ার উপকথা পড়লে কিন্তু মাথা ঘুইরা ওঠে। বাংলাদেশীগো ইংরেজী ভাষায় লিখতে কোন বাধা থাকনের কথা আমি কইতে চাই না। কিন্তু দেশের সাহিত্য বিকাশে এইটা খুব প্রয়োজনীয়ও মনে হয় না। সৈয়দ হকের অনেক উপন্যাসই আন্তর্জাতিক মানের হইছে। অনুবাদ হইয়া ঐগুলিও হয়তো বুকার পাওনের সম্ভাবনা রাখে বইলা আমার মনে হয়। (বিতর্ক করতেছি বিষয়টারে প্রাঞ্জল রাখনের জন্যই) ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হিমু এর ছবি
দেশের সাহিত্য বিকাশের জন্য ইংরেজিতে লেখার কোন দরকার নাই। দরকার আছে কনুই মেরে জায়গা করে নেয়ার জন্য।
আরিফ জেবতিক এর ছবি
হিমু ভাইজান,কানে কানে কই,আমার নাম আরিফ জেবতিক। জেবতিক আরিফ নহে।
অপ বাক এর ছবি
বাংলা ভাষা আমার মনে হয় পৃথিবীর দুরহতম একটা ভাষা, তবে যদি আমাদের কেউ চায় ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা করতে তাকে বাধা দেওয়ার কিছু নেই- সাহিত্যবিকাশ উন্নয়ন এসব শব্দ আমাকে বিভ্রান্ত করে, আমি কোনো অবস্থানকেই একেবারে আদর্শ ভাবছি না এমনকি উপন্যাস কিংবা কবিতা কোনো কিছুকেই আমি চিরকালীনতার আবহে দেখতে চাইছি না- পরিবর্তনটাই একটা রীতি- ইংরেজিতে লিখলে সাহিত্য যদি আমার ভুল না হয় তাহলে সাহিত্যমানের প্রশ্নে না বরং আমাদের অভ্যস্ততা তৈরির নিমিত্তে লিখিত হবে- এটা অপচয়- পছন্দের কিছু বই আমরা ইংরেজিতে অনুবাদের চেষ্টা করতে পারি- আমার নিজের তেমন স্পষ্ট বাছাই নেই- তবে বাংলাদেশের মানুষকে ইংরেজি সাহিত্য গেলানোতে আমার আপত্তি আছে-
অপ বাক এর ছবি
বাংলা ভাষা আমার মনে হয় পৃথিবীর দুরহতম একটা ভাষা, তবে যদি আমাদের কেউ চায় ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা করতে তাকে বাধা দেওয়ার কিছু নেই- সাহিত্যবিকাশ উন্নয়ন এসব শব্দ আমাকে বিভ্রান্ত করে, আমি কোনো অবস্থানকেই একেবারে আদর্শ ভাবছি না এমনকি উপন্যাস কিংবা কবিতা কোনো কিছুকেই আমি চিরকালীনতার আবহে দেখতে চাইছি না- পরিবর্তনটাই একটা রীতি- ইংরেজিতে লিখলে সাহিত্য যদি আমার ভুল না হয় তাহলে সাহিত্যমানের প্রশ্নে না বরং আমাদের অভ্যস্ততা তৈরির নিমিত্তে লিখিত হবে- এটা অপচয়- পছন্দের কিছু বই আমরা ইংরেজিতে অনুবাদের চেষ্টা করতে পারি- আমার নিজের তেমন স্পষ্ট বাছাই নেই- তবে বাংলাদেশের মানুষকে ইংরেজি সাহিত্য গেলানোতে আমার আপত্তি আছে-
উৎস এর ছবি
তবে আমি আস্তে আস্তে ইংরেজিতে সুইচ করার পক্ষে। অথবা ইংরেজী না বলে হয়তো বলা যায় গ্লোবাল যে ভাষা ক্রমশ বেড়ে উঠছে তাতে বদলে যাওয়ার পক্ষে। যতই চেষ্টা করি না কেন, বাংলা যেভাবে আজ দেখছি, সেভাবে ৫ বছর পরে থাকবে না, ৫ বছর আগেও একটু হলেও ভিন্ন ছিলো। এখন যেমন ঢাকায় কথ্য বাংলায় ১৫-২০% ভিন্নভাষার শব্দ, বিশেষত ইংরেজী আর হিন্দী। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, বাধা দেয়া বোকামি, অনেকটা মোল্লাদের মতো হবে। বরং আমাদের উচিত কিভাবে এই পরিস্থিতিতে বাংলা সাহিত্যের মাধ্যমের (সাহিত্য নিজে না, বরং যে ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছে) আশানুরূপ রুপান্তর ঘটাতে পারি।
উৎস এর ছবি
আরেকটা হচ্ছে কাগজের বই ভিত্তিক সাহিত্য কিন্তু ক্ষয়িঞ্ষু মাধ্যম। তবে সাহিত্যকরা সবাই বলতে গেলে সুইচ করে গেছেন, সেটা আমিও সমর্থন করি।
ভাস্কর এর ছবি
আমার মনে হয় কিছু তালিকা করা বই অনুবাদ হওনটা জরুরী... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হিমু এর ছবি
ভাস্কর ভাই, অনুবাদের তীব্র প্রয়োজন এমন কিছু লেখা প্রস্তাব করি চলেন। আপনি শুরু করেন। একটা আলোচনা জমে উঠুক। ভালো কথা, শোমচৌদা কই?
ভাস্কর এর ছবি
দূরত্ব, নিষিদ্ধ লোবান, স্তব্ধতার অনুবাদ - সৈয়দ শাসমুল হক যেখানে খঞ্জনা পাখি, নিরাপদ তন্দ্রা - মাহমুদুল হক গাভী বৃত্তান্ত - আহমদ ছফা খোয়াবনামা - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নন্দিত নরকে - হুমায়ুন আহমেদ আমি কয়েকটা দিলাম...এইবার আপনে দ্যান। শোমোচৌরে তো আমিও মনে মনে খুঁজি... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
দারুন দারুন এইধরনের আলোচনার জন্যইতো আমাদের এই সচলায়তন। রাতে জমিয়ে কমেন্ট করব।
হিমু এর ছবি
সৈয়দ হকের বৃষ্টি এবং বিদ্রোহীগণ , কিছু ছোটগল্পও পাশাপাশি করা যায়। শহীদুল জহিরের ছোটগল্প "কোথায় পাবো তারে"। শওকত আলির ছোটগল্প "সোজা রাস্তা"।
হিমু এর ছবি
আর আমি মনে করি নতুনদের উচিত অন্য ভাষাকে বাজিয়ে দেখা। ইংরেজিতে লেখালেখির একটা ভালো মাধ্যম হতে পারে ব্লগ। কোন ঝামেলা নাই, প্ল্যাটফর্মগত জটিলতা-তৈলমর্দন-তোষামুদির দরকার নাই, শুধু ল্যাখো আর পড়াও।
হিমু এর ছবি
আমার খুব পছন্দের একজন নাট্যকার, আখতার ফেরদৌস রানা একটা নাটক লিখেছিলেন বহু আগে, বিটিভিতে দেখানো হয়েছিলো। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে রয়ে যাওয়া এক যুবক বহু বছর পর ফিরে আসে দেশে। যোগাযোগ ছিলো না পরিবারের সাথে। মায়েরও সময় লাগে তাকে চিনে নেবার। সহজে আপন করে নিতে পারে না তাকে কেউ। সেই যুবক দেখা করতে যায় বন্ধুর সাথে, শিক্ষকের সাথে, আরো অনেকের সাথে, সবাই কী এক নিদারুণ ঘৃণায় ফিরিয়ে দেয় তাকে, যেন সে-ই পাকিস্তান। নিজভূমে পরবাসী এই যুবকের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন হুমায়ূন ফরীদি। এই নাটকটার কোন উপন্যাসরূপ যদি দেয়া হয়ে থাকে, আমি তা অনুবাদে আগ্রহী আছি। আখতার ফেরদৌস রানা আর লিখলেন না তেমন। বহু আগে এক ঈদ সংখ্যায় একটা উপন্যাস পড়েছিলাম, নাম ছিলো সম্ভবত "শেয়াল"।
ভাস্কর এর ছবি
আখতার ফেরদৌস রানা এখন ফেরদৌস হাসান নামে টিভি চ্যানেলে নাটক লিখে আর বানায়। তার লগে বিয়া হইছে আমাগো এক বন্ধুর। মায়ের কাছে যাচ্ছি - রশীদ করিম শহীদুল জহিরের সে রাতে পূর্নিমা ছিলো হাসান আজিজুল হকের নামহীন গোত্রহীন, আত্মজা ও একটি করবী গাছ (এইটার একটা অনুবাদ হইছে মনে হয়) শাহেদ আলীর জিব্রাইলের ডানা হা. আ. হ. আর শা. আ.'র বই দুইটা ছোটগল্পের... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হিমু এর ছবি
বলেন কী! মেটামরফোসিস এরেই বলে।
ভাস্কর এর ছবি
হ...যাই এইবার ঘুমাইতে যাই...সামহোয়্যারে তো ক্যাচাল লাগছে...কি যে হইবো... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

সুমন চৌধুরী এর ছবি
প্রদোষে প্রাকৃতজন- শওকত আলী ....................................... ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
হাসিব এর ছবি
১. দুইটা বই নিয়ে কিছু বলতে চাইতাছিলাম । এক নাম্বার হলো গাভী বৃত্তান্ত । বিদেশী পাঠকের এটা বুঝতে গেলে বাংলাদেশে বিবদমান সমাজ বোঝার দরকার আছে বলে মনে হয় । রচনাটা দেশ কাল অতিক্রম করে না বলেই আমার ধারনা । এধরনের বই অনুবাদ প্রস্তাবনায় রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত ? এমনকি ঢাকার কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পাঠক এটার রস আস্বাদন করতে পারবে কিনা সেবিষয়েও আমার সন্দেহ আছে । এরপর আসি সুমন চৌধুরী যে বইটার কথা বলছেন । বইটাতে যে সময়টা বর্ননা করা হইছে সেটার সাথে একাত্ন হবার জন্য শওকত সাহেব যে ভাষার প্রয়োগ ওখানে ঘটাইছেন সেটার দরকার আছে । অন্য ভাষায় সেটা প্রকাশ করাটা দুরূহ ব্যাপার হবার কথা । ২. জামাল ভাস্কর খোয়াবনামার কথা বলছেন । এটা মনে হয় অনুবাদের জন্য উপরের লিস্টিগুলোতে সবচেয়ে পারফেক্ট ক্যান্ডিডেট । দেবেশ রায়ের একটা বই আছে । তিস্তা পারের বৃত্তান্ত । ওটার কথাও ভাবা যাইতে পারে ।
ভাস্কর এর ছবি
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের একটা উপন্যাস আছে ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অফ সলিচিউড যেইখানে মূলতঃ তিনি মেক্সিকোর ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস আর মানুষের রুখে দাঁড়ানের ইতিহাসের গল্প বলছেন। কিন্তু আমি যখন পড়ছি আমি কিন্তু অনেক ইতিহাস না জাইনাও সেইটারে রিলেইট করতে পারছিলাম। ল্যাটিনো ভাষায় লেখা একটা বড় অংশের পুস্তকই এমন। কুন্ডেরার প্রত্যেকটা বইই তাই, কিন্তু কম্যূনিকেট করতে মনে হয় না কোন সমস্যা হয়। একটা উপন্যাসের মেসেজ আসলে কালজয়ী হয় উপস্থাপণরীতি নিয়া। আর সেই উপস্থাপণ রীতিতে গাভী বৃত্তান্ত আমার কাছে স্মরণীয়। প্রদোষে প্রাকৃতজন হয়তো সাধুরীতিতে লিখা একটা বই কিন্তু ঐ গল্পের ভাষারীতির পাশাপাশি উপস্থাপণরীতিটাও অনেক কারণে উল্লেখ্য। বরং এই অনুবাদ হইবো চ্যালেঞ্জিং। আর ভারতীয় বাংলা বইয়ের অনুবাদের দায়িত্ব নিতে আমি আসলে মাথা খাটাইতে চাই নাই। দেবেশ রায় কিম্বা অভিজিৎ সেন যার কথাই কন না ক্যান তারা এমন একটা জায়গায় ছিলেন আর এখনো আছেন যেইটা অলরেডী অনুবাদ সাহিত্যের অনুকূল। যেইটা এইপার বাংলায় এখনো প্রশ্নহীন না। ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

কনফুসিয়াস এর ছবি
আমি দুইটা নাম প্রস্তাব করলাম। নম্বর একঃ লালসালু। নম্বর দুইঃ পদ্মা নদীর মাঝি। -যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হাসান মোরশেদ এর ছবি
বছরখানেক ধরে লাইব্রেরীতে কাজ করার সুবাদে,ইংরেজী বইপত্তর ঘাঁটাঘাঁটির একটা সুযোগ তৈরী হয়েছিল । ভারতীয় যাদের কথা আমরা জানি, বিক্রম শেঠ,রোহিতন মিস্ত্রী, ঝুম্পা লাহিড়ী এরা ছাড়া ও গন্ডায় গন্ডায় ভারতীয়রা ইংরেজীতে লিখছেন । বিক্রম শেঠের 'এ সুইটেবল বয়' এর মতো বিশাল ভলিউম থেকে শুরু চটি সাইজের বই পর্যন্ত । উপন্যাস থেকে শুরু করে ভারতীয় কায়দায় শরীর ম্যাসেজ করে দেয়া- কিছুই বাকী নেই । ভারতীয় ইংরেজীভাষীরা সবকিছু নিয়েই লিখছেন । আর এসবের মাঝে খুব সুক্ষভাবেই 'মিস্টেরিয়াস ইন্ডিয়া' ধারনা বিক্রীর একটা প্রবনতা দেখেছি । অন্ততঃডজনখানেক বই দেখেছি যেগুলোর প্লট কমন । ইংল্যান্ডে বড় হওয়া ভারতীয় মেয়েকে মা-বাবা বেড়ানোর নাম করে ভারতে নিয়ে জোর করে বিয়ে দিয়েছে । হয়তো যারা লিখেছেন, ভারতীয় জীবনের সর্ব্বোচচ সমস্যা তাদের কাছে এটাই ঠেকেছে । ঠিক এই জায়গাতেই আমি আশংকা করি মাহফুজ আনাম কন্যা বিরচিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস, আন্তর্জাতিক অংগনে মুক্তিযুদ্ধকে ঠিক কোন ঢংয়ে উপস্থাপন করবে? অনুবাদের ক্ষেত্রে হাসিব যে আশংকা করছেন, সেটা ও কিন্তু ফেলনা নয় । পাঠক বদলে যাওয়ার সাথে সাথে ম্যাসেজ ও কিন্তু বদলে যায় । পছন্দের তালিকা বাংলাদেশের সীমানায় আবদ্ধ না থাকলে, আমার প্রথম পছন্দ হবে- জিতেন সেনের 'রহু চন্ডালের হাড়' তারপরই সৈয়দ হক । বহুল পঠিত' খেলারাম খেলে যা' বাদ দিলাম । 'জনক ও কালো কফি' কিংবা 'কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন' এই মুহুর্তে আমার স্মৃতিতে ঘাঁই দিচ্ছে । -------------------------- আমি সত্য না হলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

লাল মিয়া এর ছবি
বনবালা কিছু টাকা ধার নিয়েছিল-সৈয়দ হক পঞ্চুহুরির শেষ বিবাহ-আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিন

লাইন ছাড়া চলেনা রেলগাড়ি

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সহমত@হাসান মোরশেদ ....................................... ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
আরিফ জেবতিক এর ছবি
আমি মনে করি,অনুবাদ সাহিত্যের পাশাপাশি আমাদেরকে সরাসরি ইংরেজী ভাষায় মৌলিক লেখা শুরু করে দিতে হবে,এবং এটা জরুরী। ইংরেজী ভাষায় লেখালেখির একটা বাজার দেশেই তৈরী হবে খুব শিগগীর,এখন মধ্যবিত্ত তার সাধ্যের মধ্যেই বাচ্চাদের ইংরেজী মিডিয়ামে পড়াচ্ছে,এবং ইংরেজী মিডিয়ামের এই কিশোর-তরুন(উভলিঙ্গ) একটা বিশাল মার্কেট।এরা বাংলা বই পড়ে কমুনিকেট করতে পারে না,হয়তো সেটা উন্নাসিকতা অথবা বাস্তবতা।তাদের জন্য অবশ্যই ইংরেজী ভাষায় লেখা উচিত,এবং এতে করে এক বিশাল গোষ্ঠীকে পাঠক সমাজে যুক্ত করা যাবে। --------------- অনুবাদের ক্ষেত্রে আমাদের ক্লাসিকগুলোর কথা সবাই বললেন,এবং সে বিষয়ে আমার মতৈক্য আছে,তবে একই সাথে বেসিক পেপারব্যক পাঠকদের জন্য হুমায়ূনের আবজাব,মিলনের প্রেম কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর শাহরিয়ার কবির,কাইজার চৌধুরী এদের কিশোর সাহিত্যগুলোও অনুবাদ জরুরী।এগুলো আমাদের কিশোরদের পাঠ্যাভাস গড়ে দেয়।আমি নিজে মাসুদ রানা পড়ে পড়ে বই পড়া শিখেছি,প্রথমেই আমাকে একটা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কিংবা সেলিনা হোসেন,বা সৈয়দ হক,মাহমুদুল হক এরা টানতে পারেন নি। ------------- শাহাদুজ্জামানের ছোটগল্পগুলিও অনুবাদের লিস্টে যোগ করতে চাই একটু পরিপক্ক পাঠকদের জন্য। ---------- হুমায়ুনের নন্দিন নরকে আর শঙ্খনীল কারাগারের ইংরেজী অনুবাদ বহু আগে থেকেই আছে,সম্ভবত:৯০ সালের দিকে ইউপিএল বের করেছিল@ভাষ্কর। ------- উৎসের দ্বিতীয় কমেন্টটি আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি,তিনি আশংকা করছেন যে কাগজে লিখিত বইপত্রের মাধ্যমটি ক্রমশই শীর্ণ হয়ে পড়বে,তবে আমি তার সাথে একমত নই।টিভির প্রচলনের পর এ ধরনের একটি কথা চালু হয়েছিল,কিন্তু এখনও বইয়ের বাজার এই দেশে বাড়তির দিকেই আছে। এমনকি রাতে টিভি নিউজ শোনার পরও কিন্তু আমরা সকালে সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলাই।
হিমু এর ছবি
ভাষারীতির ব্যাপারে কিছু কায়দা বের করা যায় এবং গেছেও। সৈয়দ হক যেমন তাঁর লন্ডনকেন্দ্রিক কাহিনীগুলিতে ইংরেজি সংলাপ সাধু ভাষায় লিখেছেন। প্রদোষে প্রাকৃতজনের ক্ষেত্রে সংলাপেও মধ্যযুগীয় ইংরেজির ব্যবহার পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে (উদাহরণ, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের কিং সলোমন'স মাইনে কুকুয়ানাদের সাথে কোয়াটারমেইনের সংলাপ)।
হিমু এর ছবি
রহু চন্ডালের হাড় কিন্তু অনেক আগেই অনূদিত হয়েছে @ মোরশেদ ভাই। অভিজিৎ সেনের দেবাংশী বরং আরেকটা জোরালো গল্প, অনুবাদের জন্য।
ভাস্কর এর ছবি
জেবতিক আমি অবশ্য ই.হ. মিলনের বই কিম্বা পেপারব্যাক ইংরেজিতে অনুবাদের ব্যাপারটা বুঝি নাই। মিলনের লেখা অনুবাদ করলেই কি আর না করলেই কি...ইংরেজী সাহিত্যের পাঠকেরা এর চাইতে ভালো পেপারব্যাক সাহিত্য পায় শোভা দে কিম্বা জ্যাকি কলিন্সের কাছ থেইকা। তয় শিশূ সাহিত্য নিয়া আপনে আমারো স্মৃতিরে উসকাইলেন...আহা! কাইজার চৌধুরী!!!শাহরিয়ার কবির! শাহাদুজ্জামানও মনে হয় বিবেচনায় আসতে পারে... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

আরিফ জেবতিক এর ছবি
মিলনের প্যানপ্যানিটা এ দেশীয় প্রেক্ষাপটে তৈরী।তাই এদেশীয় চেহারার ইংলেজী ভাষী ত্রিভুজদের কে সরাসরি ক্লাসিকে টেনে না এনে এই সব দিয়ে টানলে মনে হয় সুবিধা হবে। কিশোর সাহিত্যের পাশাপাশি আমি মনে করি ঠাকুরমার ঝুলি,ঠাকুরদার ঝুলি,উপেন্দ্র থেকে সুকুমার যতোদূর পারা যায় অনুবাদ করে আমাদের কিন্ডারগার্টেন গুলোতে পড়ানো উচিত। আমার ভাতিজি দুনিয়ার সব বড়ো বড়ো কার্টুন কারেক্টারের নাম যানে,হ্যান্স এন্ডারসনের সব চরিত্র জানে,কিন্তু বুড়ো আংলা'র মতো মজার চরিত্রটির কথা জানে না! এই জিনিষটি আমাকে প্রচুর কষ্ট দেয়।
বোহেমিয়ান এর ছবি

ওয়াও!!
জোশ আলোচনা!

এরপর কি হলো?!
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।