পিচ্চিতোষ গল্প ০৩: হাবুলের জলদস্যু জাহাজ

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বুধ, ১৯/০৯/২০০৭ - ৫:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাবুল ঠিক করেছে সে বড় হয়ে জলদস্যু হবে।

এখন থেকেই সে তার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে।

হাবুল এখন ছোট, কিন্তু সে এর মধ্যেই অনেক ছবিসহ আর ছবিছাড়া জলদস্যুদের গল্প পড়ে ফেলেছে।

জলদস্যুরা একটা কালো টুপি পড়ে থাকে এক চোখে। সেরকম একটা টুপি হাবুলের খালামণি হাবুলকে বানিয়ে দিয়েছেন।

জলদস্যুদের একটা তলোয়ার থাকে, যেটাকে কাটলাস বলে। ছোটমামা তাকে একটা বেঁটে কাঠের তলোয়ার বানিয়ে দিয়েছেন, সেটা উঁচিয়ে হাবুল মাঝে মাঝে ঘোরাফেরা করে, ফুলির মার কোমরে মাঝেসাঝে দুয়েকটা খোঁচা দেয়, ফুলির মা চেঁচিয়ে ওঠে, "ওরে মাইরা ফালাইলো!"

জলদস্যুদের একটা পা কাঠের হয়। কাঠের পা নিয়ে হাবুল একটু সমস্যায় আছে। তার দুটো পা-ই মাংসের। অবশ্য হাবুলের ছোটমামা বলেছেন, মাংসের পা নিয়েও জলদস্যু হওয়া যায়। তবে একটু খুঁড়িয়ে হাঁটলেই চলবে।

হাবুল তাই একটা পা একটু টেনে টেনে হাঁটে।

হাবুলের মা একদিন বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে বললেন, "হাবুলসোনা, পা টেনে হাঁটছো কেন বাঁদরের মতো?"

দুঃখে হাবুলের বুকটা ফেটে গেলো। সে চেঁচিয়ে বলে, "আমি বাঁদর নই! আমি জলদস্যু!"

হাবুলের মা হেসে ফেলেন ফিক করে। বলেন, "তাই তো! ভুলেই গিয়েছিলাম!"

হাবুল আবার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে চায়। জলদস্যুদের অনেক কষ্ট।

কিন্তু জলদস্যুদের তো একটা বড় কাঠের জাহাজও থাকে। হাবুলের কাঠের জাহাজ নেই। ছোটমামাকে একবার সে অনেক আশা করে জিজ্ঞেস করেছিলো, "মামা, কাঠের জাহাজ কি দোকানে কিনতে পাওয়া যায়?"

হাবুলের ছোটমামা ভুরু কুঁচকে বললেন, "সে কি রে হাবলো, কেনা জাহাজ দিয়ে তো জলদস্যু হওয়া যাবে না! সত্যিকারের জলদস্যুরা গাছ কেটে নিজের জাহাজ বানিয়ে নেয়!"

হাবুল শুনে একটু মুষড়ে পড়েছিলো। গাছ কাটা নিশ্চয়ই খুব কঠিন কাজ। ফুলির মা রোজ শাক কাটতে গিয়ে আর আলু কাটতে গিয়ে আর মাছ কাটতে গিয়ে হাবুলের মা-র বকা খায়। আর একটা গাছ কাটা নিশ্চয়ই তারচেয়ে অনেক শক্ত কাজ? ফুলির মা কি হাবুলকে একটা গাছ কেটে দিতে পারবে?

ছোটমামা মাথা নাড়েন। "তাহলে তো ফুলির মা-ই জলদস্যু হয়ে যাবে। তোকে নিজের হাতে কেটে নিতে হবে।"

হাবুল শুকনো মুখে বলে, "গাছ কাটা কি অনেক কঠিন?"

ছোটমামা বলেন, "অ-নে-ক কঠিন। গাছ কাটা কঠিন বলেই তো আজকাল জলদস্যু এত কম। নাহলে সবাই একটা করে গাছ কেটে জাহাজ বানিয়ে জলদস্যু হয়ে যেতো।"

হাবুল বলে, "গাছ কাটতে কী লাগে?"

ছোটমামা বলেন, "গাছ কাটতে কুড়াল লাগে। তারপর গাছ কেটে ডাল ছেঁটে তক্তা চিরে বার করতে করাত লাগে। তারপর তক্তাকে ঘষে ঘষে সমান করার জন্য রাঁদা লাগে। তারপর সেই তক্তা কেটেকুটে জোড়া লাগানোর জন্য পেরেক, হাতুড়ি আর নাটবল্টু লাগে। অনেক কিছু লাগে।"

হাবুলের মনটাই খারাপ হয়ে যায়। সে বলে, "কাঠমিস্ত্রির দোকানে গিয়ে বললে ওরা আমাকে একটা জাহাজ বানিয়ে দেবে না?"

ছোটমামা বলেন, "ওরা কি আর জাহাজ বানাতে জানে? ওরা তো শুধু চেয়ার টেবিল আলমারি বানায়। জলদস্যুদের জাহাজ বানানোর কায়দা শুধু জলদস্যুরাই জানে!"

হাবুল বলে, "তাহলে আমি কার কাছ থেকে শিখবো?"

ছোটমামা বলেন, "বই পড়ে শিখবি। জলদস্যুদের জাহাজ বানানোর সব কায়দাকানুন বইতে লেখা আছে।"

হাবুল খুশি হয়ে ওঠে। সে বলে, "ঐ বইটা কাঠমিস্ত্রিকে পড়ে শোনালে সে জাহাজ বানিয়ে দিতে পারবে না?"

ছোটমামা গম্ভীর হয়ে যান। বলেন, "কাঠমিস্ত্রি জাহাজ বানানোর পর যদি তোকে না দেয়? যদি জাহাজ বানানোর পর সে নিজেই জলদস্যু হয়ে যায়?"

হাবুল ভাবে, তাই তো! সবাই তো জলদস্যু হবার জন্য মুখিয়ে আছে। তাহলে জাহাজ তাকে একাই চুপিচুপি বানাতে হবে।

হাবুল বলে, "কুড়ালের কি অনেক দাম?"

ছোটমামা বলেন, "হুঁ! দাম তো বটেই। তারচেয়ে বেশি দাম করাতের। তারচেয়ে বেশি দাম পেরেক আর হাতুড়ির আর নাটবল্টুর। তারচেয়ে বেশি দাম রাঁদার। তবে সবচেয়ে বেশি দাম গাছটার।"

হাবুল বলে, "কোন গাছটার?"

ছোটমামা বলেন, "কেন, যে গাছটা কেটে জাহাজ বানাবি সেটার?"

হাবুল বলে, "গাছ কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?"

ছোটমামা বলেন, "গাছটা পাওয়া যাবে দূরের একটা দ্বীপে। সেখানে গাছ কেটে তক্তা চিরে বার করে জাহাজ বানিয়ে সাগরে ভাসাতে হবে।"

হাবুল বললো, "ঐ দ্বীপে কিভাবে যাবো?"

ছোটমামা বলেন, "স্পিডবোট ভাড়া করে যাওয়া যায়, আবার লঞ্চে করেও যাওয়া যায়। একভাবে গেলেই হলো।"

হাবুল বলে, "আমি লঞ্চে করে যাবো!"

ছোটমামা বলেন, "কেন?"

হাবুল বলে, "আমি লঞ্চে করে যাবো, তারপর জাহাজ বানিয়ে ঐ জাহাজে চড়ে এসে লঞ্চটাকে জলদস্যু করবো!"

ছোটমামা বলেন, "ছি ছি, যে লঞ্চে চড়ে যাবি সেটাকে লুট করবি? তুই তো খুব পাজি জলদস্যু!"

হাবুল বলে, "মুহাহাহাহাহাহা!"


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

জোশ জোশ! চলুক।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দ্রোহী এর ছবি

আবারো সেই অর্ধেক গল্প?????????
এই লোক খুবই খারাপ।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সৌরভ এর ছবি

মুহহাহাহা...
আমি শেষ করার পর পড়ছি।
হিমু ভাইর গল্প দেখার পর আমি আগে শেষ দেখে নেই। শেষ হইসে মনে হইলে তারপর পড়া শুরু করি।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঠিক আছে। চলুক - - -

সুমন চৌধুরী এর ছবি

দেঁতো হাসি
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অয়ন এর ছবি

দারুণ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

তাপ্পর?


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

হিমু এর ছবি

গল্প এখানেই সমাপ্ত।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুজন চৌধুরী এর ছবি

বেশ!
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

হরফ এর ছবি

অসাধারণ হিমু। আমার বিচারে এই গপ্পটা পিচ্চিতোষরত্ন পেল আর সেকেন্ড হ'ল রামকাঙা।

তিথীডোর এর ছবি

এই সিরিজটাই বই হয়ে বেরুলো এবার?
ইয়েএএএএএ! দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।