ভীতিমালা প্রসঙ্গে আমার কিছু কথা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: সোম, ০৯/০৭/২০০৭ - ৭:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় মহারথী ব্লগারেরা,

আপনাদের সমস্যাটা এখানেই। আপনারা সবাই অনেক বেশি পথ পেরিয়ে এসেছেন। সবাইই মহারথী আপনারা। বহুকাল ধরে বহুঘাটে ব্লগের নৌকা ভিড়িয়েছেন আপনারা। আমি এই দিকে একেবারেই নবীন। আপনাদের মত এমন প্রোলিফিক ব্লগার আমি না। নিজের মত অন্যত্র অন্য মাধ্যমে প্রকাশ করতাম। আমার কাছে খুব কটু লাগছে আপনাদের কার্যকলাপ। লজ্জাষ্কর সব প্রতিক্রিয়া দেখছি আপনাদের মধ্যে।

সকালে নাস্তা করিনি কাজে যাবার আগে, তবে নতুন ব্লগ পোস্ট করেছেন কিনা কেউ তা ঠিকই দেখে গেছি। ৮ ঘন্টা কাজের পর ঘরে ফিরলাম। খাইনি এখনও। ফেরার পথে ভিজে গেছি, তবু কাপড়ও ছাড়িনি। সেই একি লজ্জা আবারও কাজ করলো মনের মধ্যে। আপনারা নিজেদের মতো করে ব্যানাবেনি খেলুন। আমি আমার দিনপঞ্জি থেকে সচলায়তনকে ব্যান করলাম এক দিনের জন্য। এটা পাঠকের ব্যান, মডারেটরের ব্যান না। আপনারা এখনো প্রস্তুত নন। সচলায়তন ডট কম এখনো সচল নয়। এটা এখনো পলায়ন ডট কম। অতীত থেকে পালাচ্ছেন আপনারা। প্রত্যেকে।

ব্যান খাওয়ার আগে ব্যাখ্যা করি। আমি নিজে না লিখলেও হিমু ভাইয়ের লেখা পড়তাম নিয়মিত। বুকমার্ক ধরে ওনার লেখা পড়ে আসতাম অন্য ব্লগে। কখনো সামহোয়্যার, কখনো রয়েসয়ে, কখনো ওয়্যার্ল্ডপ্রেস। ওনার আমন্ত্রণে এখানে আসা। বলেছিলেন এটা ক্লোজড গ্রুপ। ঝামেলাবাজ আর জামাতীর উৎপাত এড়াতে, লেখালেখির একটা ন্যূনতম মান ও পরিবেশ বজায় রাখতে। কোন নীতিমালা ছিল না সচলায়তনের। তবে একটা মানদণ্ড ছিল। আপনাদের মেধাবী কলম (কীবোর্ড?) দিয়ে বেঁধে দেওয়া মানদণ্ড। আমার চোখে সেটা ছিল হিমু ভাইয়ের লেখা, আপনাদের আর সবার লেখা।

মনের মধ্যে একটা তাগিদ কাজ করেছিল লেখা পড়ে। মনে হয়েছিল সচলায়তনকে চিনতে হবে, এর সদস্যদের চিনতে হবে। আমি আপনাদের সবার ৭৫% লেখা পড়ে ফেলেছি এই কয়েকদিনে। এত ভাল যাদের লেখা, সেই লেখক-লেখিকাদের চেনা যেকোন উদ্দমী পাঠকের নৈতিক দায়িত্ব। দুঃখ পেলাম এখানেই। 'সচল' থাকার জন্য সচলায়তনকে চেনা যথেষ্ট নয়। এই কথাটাই মনে হচ্ছে আমার এখন। আপনারা যত উদ্দোগীই হন না কেন, যত চিন্তাশীল লেখকই হন না কেন, আপনাদের চিনতে হলে পাশের পাড়ার ব্লগের লেখাগুলো পড়তে হবে! আপনাদের পরিচ্ছন্নতা অ্যাপ্রিশিয়েট করতে হলে আরেক বাড়ির নোংরা ঘেঁটে আসতে হবে। এটাই সচলায়তনের নীতিমালার অলিখিত 'নীতি' এখনো পর্যন্ত।

সরাসরি একটা প্রশ্ন করি সব মহারথীকে। অন্য ব্লগেরও তো নীতিমালা আছে এখন। আপনারা তাহলে কোন দিক দিয়ে বেটার? জবাবটা মনে হয় 'লেখার মান', তাই না? আমি সবাইকে চিনি না (২ দিন আগ পর্যন্ত ভাবতাম চিনেছি)। তবে আমি হিমু ভাই ও মাশীদ আপুকে চিনি। একজন আমার বড় ভাই, একজন বড় বোন। রক্তের আত্মীয়ের চেয়েও কাছের এবং আপন। আমার কাছে নীতিমালা ছিল একটাই। এমন কিছু বলা বা করা যাবে না যাতে তাঁরা আমার সাথে তাঁদের পরিচিতি স্বীকার করতে কুণ্ঠা বোধ করেন। ওটাই কি যথেষ্ট ছিল না?

ভূত থেকে ভূতে করেই তো সদস্য নিচ্ছেন আপনারা। আমার মত আধাচেনা লোকেরাই তো সদস্য হচ্ছিল। লেখাগুলো জমতে জমতে মানটাও জমাট বেঁধে যেত সময়েই। এখনও তো কমেন্টগুলো ওপেন হয়নি। খাস বাংলায় বললে গাই কেনার আগে মাইঠ্যা কেনার মত হয়ে গেছে এই নীতিমালা প্রণয়ন এবং ব্যানিং।

সচলায়তনের উদ্যোক্তাদের সম্মানের সাথে অনুরোধ জানাচ্ছি নিজেরা সচল হতে। ভুলে যান সামহোয়্যার। তুলে দিন আরএসএস ফিডে ওখানের লেখা আমদানি করা। ছুঁড়ে ফেলুন নীতিমালা। মুক্ত কণ্ঠ আর গতিময় লেখাগুলোকে থামিয়ে দিল এই ভীতিমালা। নীতিমালাকেই এই অপরাধের দায়ে নির্বাসন দেওয়া হোক কিছুদিন। আমার মত নতুন আরও অনেকেই এসেছেন, আসবেন। দয়া করে আমাদের কথা মাথায় রাখবেন।

কাউকে আঘাত করার জন্য এই লেখা নয়। আমার কিছু অবজারভেশন আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারলাম না। অনভিপ্রেত দুরাচার করে থাকলে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।


মন্তব্য

তারেক এর ছবি

"আপনারা যত উদ্দোগীই হন না কেন, যত চিন্তাশীল লেখকই হন না কেন, আপনাদের চিনতে হলে পাশের পাড়ার ব্লগের লেখাগুলো পড়তে হবে! আপনাদের পরিচ্ছন্নতা অ্যাপ্রিশিয়েট করতে হলে আরেক বাড়ির নোংরা ঘেঁটে আসতে হবে।" - সেরকমই তো মনে হচ্ছে।

রউফ ভাই, সচলায়তন বলে কথা না। এরকমটা সবসময় হতেই পারে। সচলদের ভালবাসাতেই এসব ব্যাপার সামলে নেওয়া যাবে।

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার বিশ্বাসটাও এরকমই। সচলায়তন নিয়ে অনেক উদ্দম, অনেক ভালবাসা এর প্রতিষ্ঠাতাদের। একথাও সত্যি যে তাঁরা বন্ধুর সময় পার করে এসেছেন সামহোয়্যারে। তবে সেটা মনে হয় না সিন্দবাদের বুড়োর মত ঘাড়ে চড়ে থাকতে দেবার কোন কারণ আছে। যিনি বা যাঁরা ক্ষেপে গিয়ে কিছু এদিক-ওদিক করে ফেলেছেন মন্তব্যে, তাঁরা সবাইই কিন্তু সচলায়তনের মূলধারার শক্তিমান প্রতীক। তাঁদের মধ্যেই যদি ঝগড়া বেঁধে যায়, তাহলে দুঃখ লুকাবো কোথায়? ভাল মানুষগুলো একমত, একদল থাকতে না পারার জন্য কম মূল্য দিচ্ছি না আমরা প্রতিমূহুর্তে। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে এই কথা সত্য।

তারেক এর ছবি

ভাই, এইখানে প্রত্যেকটা নিকের আড়ালে তো একেকজন মানুষই। তাদের অনুভূতি, মেজাজ মর্জি আলাদা। কারও ভুল হইতে পারে, কেউ জেদ ধরতে পারে, কেউ ভুলও বুঝতে পারে। আসেন যা ঘটছে সেইটা আর মনে করার চেষ্টা না করি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজের ভাল লাগা মন্দ লাগাটারে চেপে রাখি। যার যা বোঝার তারে তার মত করেই বুঝতে দিই। নিজেদের জড়িয়ে কারো বোঝা আর না বাড়াই।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাল বলেছেন এটা। সচলায়তন এক সময় অনেক বেশি খোলা হবে, অনেক সদস্য হবে এর। এখন যারা আছেন, তাদের প্রত্যেকেই তখন একেকজন সুডো-মডারেটর হয়ে যাবেন। সেই জন্যই এখনকার লোকেরা নিজেরা এক থাকার কথা বলছি।

আমার হতাশাটা অন্য জায়গায়। প্রতিটা ব্যাপারেই এক-কথা দু-কথার পরে সবাই চলে যায় সামহোয়্যার বিষয়ক কোন কিছুতে।

হিমু এর ছবি

ভীতিমালার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে শুনলাম। সবার পরবর্তী পোস্ট পড়ার অপেক্ষায় আছি। পুরানো ভাবিয়া চেও না, চেও না আমারে আধেক আঁখির কোণে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ইশতিয়াক,
ভরসা থাকুক ভাই । ঠিক হয়ে যাবে সব ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তথাস্তু। আপনারা ঝগড়া করলে খারাপ লাগে দেখতে, এটাই মূল প্রতিপাদ্য। দেখা মানুষগুলোকে শেষ দেখেছি ৪ বছর আগে। অদেখা মানুষ তো ভুরি ভুরি। তবু এখানকার সবার আন্তরিকতা খুব ভাল লেগেছে আমার। নিজের মনে হয় কেন যেন।

শামীম এর ছবি

মানুষের শুভবুদ্ধির প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে (আরিফ জেবতিকের মত করে বললাম)।

একটু সময় লাগবে, কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করছি, কারণ এখানকার সকলেই প্রাপ্তবয়স্ক।

আপাতত নিজের কাছে পরিষ্কার থাকি।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ঝরাপাতা এর ছবি

মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে।

বস যে কোন গ্রুপেই এরকম একটু আধটু হবে। এসব নিয়ে সিরিয়াস হইয়েন না। এর চাইতে আপনি প্রবাসের কথোপকথন লিখেন। আমরা পইড়া আনন্দ লাভ করি।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

সিরাত এর ছবি

কনটেক্সট আন্দাজ কইরাই পইড়া ফালাইলাম! ভাল্লাগলো, হুদা কামেই! হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।