এই আমাদের সমকাল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/১২/২০১২ - ৭:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ইহা একটি হাতি-মার্কা লেখা]

সবাই বলে সময়টা অন্ধকার, সামনে পথ বন্ধুর, হতাশা আর গ্লানিতে মানুষ আকণ্ঠ নিমজ্জিত, ইত্যাদি। আমি অতটা নিরানন্দ চোখে দেখি না। হাজার রকম মতবাদ, মতামত, এবং বিপদ-আপদের মধ্যে এরকম আশার কথা বলায় সমালোচিত হতে হয় অনেক। সমালোচনা খুবই যৌক্তিক, কারণ যে-মানুষ পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে তার কাছে পুকুর এবং মহাসাগরে কোনো তফাৎ নেই। আমরা যারা পাড়ে বসে নুড়ি কুড়াচ্ছি, তাদের এখনও আশাবাদের বিলাস আছে। আমি নিজে একটু বেহায়া এবং অনেকটা অলস কিসিমের মানুষ, তাই আশা এবং আশার বিলাস দুইটাই আছে। আমার আশার ভিত্তিটা খুবই বৈষয়িক। হতাশার অংশে যাওয়ার আগে এই আশার কথাটুকু বলে নেই।

স্বাধীনতার ৪১ বছরের মাথায় নেতৃত্বের কাছ থেকে তেমন কোনো সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে ত্বরান্বিত প্রগতির একটি ধাপে। এর পেছনে কারণ দুইটি – সময় এবং প্রযুক্তি। আমার কর্মক্ষেত্র প্রবাসে, তাই সেই রেফারেন্স থেকেই বলছি।

একটা সময়ে বাংলাদেশ ছিলো মেধাপাচারের দেশ। দেশের টাকায়, দেশের সম্পদে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সবাই পাড়ি জমাতো দূর প্রবাসে। আজ সেই প্রবাসীদের মধ্যে প্রজন্মান্তর ঘটছে। প্রথম প্রজন্মে যাঁরা প্রবাসী হয়েছিলেন, তাঁরা দেশে ফিরছেন। এঁরা দেশে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফ্র্যাঞ্চাইজ খুলছেন, বিদেশের জীবনধারার সাথে মিল রেখে নিত্যনতুন ধারণার প্রবর্তণ করছেন, আন্তর্জাতিক মানসম্মত কাজ নিজের ঘরে বসেই করার চেষ্টা করছেন। যাঁরা এখনও প্রবাসে আছেন তাঁদের অনেকেই ভারতীয় ও চৈনিকদের মতো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অফিস-আদালতের উচ্চ অবস্থানে আছেন। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তাঁদের অনেকে দেশ থেকে ছাত্র বা কর্মচারী আনছেন নিজ কর্মক্ষেত্রে।

দ্বিতীয় প্রজন্মে যাঁরা আছেন, তাঁরা বিদেশে থাকা অবস্থায়ই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে জড়িত হয়েছেন। এঁরা মিনিটে ৮ ডলার হারে তিন মাসে একবার ট্রাঙ্ক-কল করা প্রজন্ম নন। এঁদের মনের নোঙ্গর কোনো সারেং বাড়িতে পড়ে নেই। এঁরা ইন্টারনেট প্রচলনের সূচনালগ্নের প্রজন্ম। এঁরা নিজ নিজ অবস্থানে বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ হিসাবে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়াচ্ছেন, প্রবাসের অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশেও চালু করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন, যেকোনো রকম পরিকল্পনা- ও অর্থায়ন-বিষয়ক প্রকল্পে বাংলাদেশের নাম প্রস্তাব করছেন, এবং সর্বোপরি স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই নিজেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বিবেচনা করছেন।

এই দুই প্রজন্মের প্রতিষ্ঠা এবং তাদের কাছ থেকে দেশ উপকৃত হওয়ার কারণ মূলত সময়। এঁদের তারুণ্যে বাংলাদেশ ছিলো স্বৈরশাসনের অর্গলবন্দী। এঁদের কাজের সুফল পেয়েছে পরদেশ, অবহেলিত থেকে গেছে হতভাগা বাংলাদেশ। এখন কিছুটা দেশের টানে, কিছুটা বিবেকের তাড়নায় তাঁরা দেশের জন্য কাজ করছেন।

তৃতীয় প্রজন্মে আছে সদ্য ইউনিভার্সিটি জীবনে প্রবেশ করা ইয়াং-অ্যাডাল্টদের দল। পূর্বপ্রজন্মের গড়ে দেওয়া ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে তারা দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত। তাদের কাছে প্রবাস কোন দুরতিক্রম্য বিষয় নয়, তারা নতুন দেশে এসে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকে না। তাদের কাছে নিউ ইয়র্ক যা, নরসিংদীও তা। সাত-সমুদ্দুর পাড়ি দিয়ে বিদেশ দেখে তারা অবলীলায় বলে, ধুরো এর চেয়ে দেশ ভালো। এই যে নিঃসংকোচ চেতনা, এটাই আমার আশার মূল স্তম্ভ। এই প্রজন্ম বড় হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের মাঝে। এরা বিশ্ব সম্পর্কে জানে, এরা জগতের জ্ঞান-ভাণ্ডার কীভাবে কাজে লাগাতে হয় জানে, এরা যেন প্রযুক্তির সন্তান। এরা গরীব দেশের গরীব সন্তান, এমন সংকীর্ণতা মনে স্থান দেয় না। আকরাম খান আর হাবিবুল বাশারদের প্রজন্মের পর এরা প্রত্যেকে একেক জন সাকিব আল-হাসান।

এই তিনের ফলাফল হলো, বাংলাদেশে এখন ক্ষুরধার মস্তিষ্কের তরুণের অভাব নেই। শুধু তাই নয়, এরা নিজের ইচ্ছা, চিন্তা, এবং পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের পথও চিনে নিয়েছে। এদের পক্ষে পুরো পৃথিবী জয় করা সম্ভব। আফসোস একটাই, এরা নিজেরাও হয়তো তাদের সম্ভাবনার মাত্রা জানে না। তবুও সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান বাংলাদেশকে দূর থেকে দেখি আর দুইটি ধারণার কথা মনে করি। একটি সামাজিক ধারণা, যা সম্পর্কে জেনেছিলাম ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েলের ‘দ্য টিপিং পয়েন্ট’ বইটিতে। দ্বিতীয়টি ভৌত বিজ্ঞানের ধারণা, শিখেছিলাম সম্ভবত ৮ম শ্রেণীতে চৌম্বকত্বের অধ্যায়ে। এই দুইয়ের ব্যাখ্যা আরেকটু পরে দিচ্ছি, তার আগে অন্য কিছু প্রসঙ্গ সেরে নেই।

প্রশ্ন হলো, এতই যদি আশার কারণ থাকে, তবে নিরাশা আসছে কোথা থেকে? আমার নিরাশার স্থান হলো, এক কালে মানুষের দক্ষতা কম থাকলেও মনুষ্যত্ব অনেক ছিলো। বঙ্গ তখন সরল কিন্তু নরম মনের মানুষের দেশ ছিলো। এখন পাল্লাটা উল্টোগামী। আমাদের দক্ষতা আজ আকাশচুম্বী, কিন্তু সেই সাথে মনুষ্যত্বও প্রায় শূন্যের কোঠায়। অনেক দিন পর এই হাতি-মার্কা লেখায় হাত দেওয়ার কারণ শুধু এই আশংকার নিরসণ এবং প্রত্যাশার পূরণ কীভাবে করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোকপাত।


বিভক্তির রেখা ও প্যাকেজ নাটক

ভাবতে খারাপ লাগলেও বাস্তবতা এটাই যে আমাদের বিভেদের রেখাগুলো রাজনৈতিক। এই বিভেদ অস্বাভাবিক নয়, তবে ভবিষ্যতের পথে প্রতিবন্ধক। আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা এই পর্যায়ে নড়েচড়ে বসতে পারেন। আমিও রুবাইয়াত ও প্রথম আলোর পথ অনুসরণ করে ডিসকোর্স-ন্যারেটিভ-রিকনসিলিয়েশনের ধোঁয়া তুলছি ভেবে মনে মনে “এট টু, ইশতি” বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারেন। ভয় নেই, আমি ঠিক উল্টোটা বলছি। “সবাই মিলেমিশে এক” হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, যা প্রয়োজন তা হলো নিজেদের প্রতিটি আবেগকে মৌলিক অংশে বিশ্লিষ্ট করা।

রিকসিলিয়েশন তত্ত্বকে আমি রাজায় রাজায় যুদ্ধের সাথে তুলনা করি। মধ্যযুগে স্রেফ রাজার হুকুমে হাজার হাজার মানুষ আমরণ লড়াই করতো। সাধারণ মানুষের এতে কোনো লাভ না হলেও এর অন্যথা করার উপায়ও ছিলো না। আমজনতার তুলনায় রাজাদের ঘটে বুদ্ধি স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। তাই ঝগড়া-বিবাদ স্থগিত করে রাজায় রাজায় রিকনসিলিয়েশন করে নানাবিধ সাম্রাজ্য ও ফেডারেশন করে ফেলা ছিলো দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোর মতো সহজ ব্যাপার। সাম্রাজ্যের বিশাল ছাতার নিচে ক’দিন আগ পর্যন্তও বিবাদমান পক্ষগুলো পরষ্পরকে ঠিকই ঘৃণা ও অবিশ্বাস করতে থাকলো, শুধু রাজারা পেলো নিশ্ছিদ্র ক্ষমতা ও আরামের জীবন।

বাংলাদেশে যারা রিকনসিলিয়েশনের কথা বলেন, তাদের ভূমিকাও এই রাজাদেরই মতো। সাধারণ মানুষ তার অন্তরের গভীরতম বিশ্বাস ও চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে দিলেই তো হানাহানি চুকে যায়, কী দরকার তাহলে এতসব ঝামেলা করার? ঝামেলাটুকু প্রয়োজন, কারণ এই ঝামেলাটুকু মানুষকে অস্তিত্ব দেয়। এই ঝামেলার কারণে মানুষের একটি পরিচয় থাকে। এই ঝামেলার কারণে এক ছটাক লবণ, দুই হালি ডিম, এবং তিন সের আলুর সাথে একজন মানুষের পার্থক্য আছে। রিকনসিলিয়েশনের পথে যাওয়া কোনো সমস্যার সমাধান করবে না, সমস্যাগুলোকে চোখের আড়াল করবে শুধু। এটা চর্মরোগ নিরাময় করতে পারে, মর্মযাতনার টিকিটাও ছুঁতে পারে না।

প্রশ্ন হলো, বিভেদরেখাগুলোকে আরও স্পষ্ট করে কীভাবে উন্নতি সম্ভব? ব্যাপারটা অনেকটা প্যাকেজ নাটকের মতো। আরেকটু গুরু ভাবে বললে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের সাথেও তুলনা করা যায়। লঘু উপমা দিয়েই শুরু করি।

নব্বইয়ের দশকে প্যাকেজ নাটকের আবির্ভাব ছিলো আমাদের মিডিয়ায় সত্যিকার এক বিপ্লব। ধারণাটা খুব সহজ। আমি একটি অনুষ্ঠান বানাবো, যা আগ্রহী টিভি চ্যানেল কিনে নিয়ে সম্প্রচার করতে পারবে। শর্ত একটাই, আমার সৃষ্টিকে একক ভাবেই প্রচার করতে হবে, এতে কোনো রকম কাটা-ছেঁড়া করা যাবে না। এর সুফল ছিলো অবশ্যই, তবে পাশাপাশি কুফলও ছিলো প্রচুর। কোনো অনুষ্ঠান ভালো ও মন্দের মাঝামাঝি হলে তাকে বর্জন করতে হতো, অল্প একটু শুধরে নিলেই উৎরে যায় এমন অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যেতো, কোনো একটি পক্ষ অনড় থাকলেই ইগোযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার ভয় ছিলো, ইত্যাদি।

হঠাৎ কেন প্যাকেজ নাটকের কথা এলো? গুরু উদাহরণে গেলে স্পষ্ট হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্যাকেজ নাটকের মতো ‘মাই ওয়ে অর হাইওয়ে’ পন্থায় বিশ্বাসী। তাদের সমর্থক ধরে রাখার পদ্ধতিগুলো খুবই গোষ্ঠীতান্ত্রিক। এখানে সমালোচনার সুযোগ নেই, ভিন্নমতের সুযোগ নেই, আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ নেই, বড় বড় কাজের ছোটো ছোটো ভুলগুলো শুধরানোর সুযোগ নেই। ফলত, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও আচরণ আলাদা ভাবে বিবেচনা করার সুযোগ পায় না জনগণ। সবাইকে বেছে নিতে হয় দুই প্যাকেজ নাটকের একটি।

রাজনৈতিক দলগুলো এই দোষে দুষ্ট হওয়ার পরিণতি জানি আমরা সবাই। সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। দলীয় ফোরামে গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসালে দল থেকেই বহিষ্কৃত হতে হয়। শুধু এটুকুতে সীমিত থাকলে সমস্যা ছিলো না। সেরের উপর সোয়া সের হিসাবে এই সেদিনই তো আওয়ামী লীগ আবদার করে বসলো দলের অমতে নির্বাচনে দাঁড়ালে দুই দফার জন্য প্রার্থিতা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হোক। (আমার খুব অবাক পর্যবেক্ষণ, এই ন্যাক্কারজনক চিন্তাটার জন্য কেউ তেমন সমালোচনাও করেনি! ভালো-মন্দ নির্বিচারে যারা নিষ্ঠার সাথে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে থাকে, তারাও আশ্চর্য রকম নিরব ছিলো। অথচ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটাকে সবচেয়ে ঘৃণ্য দাবি বলে মনে করি আমি।)

এগুলো খুব স্পষ্ট উদাহরণ, এবং সবাই এগুলো সম্পর্কে সবাই সচেতন। সবাই এর সমাপ্তি চাই, চাই আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আক্ষেপের বিষয় হলো, আমরা ব্যাক্তিজীবনে কেউ এই নীতিটি অনুসরণ করি না। যা আমি, আপনি, আমরা সবাই অনুসরণ করি না, তা আমাদের ‘প্রতিনিধি’ অনুসরণ করবে এমনটা আশা করা অন্যায্য নয় কি? এ-কারণেই চারপাশের সমস্যাগুলো আমাদের সচেতনতাকে আচ্ছন্ন করলে আমরা খুব বেশি মোটা দাগে বিভক্ত হয়ে যাই। এই সামষ্টিক প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে নির্দিষ্ট আবেগ ও সিদ্ধান্তের একক প্রকাশ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অথচ উপেক্ষিত।


সুপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার সন্ধানে

প্যাকেজচরিতমানসজনিত অলস আক্রোশের মানসিকতার প্রথম বলি হলো মানবিক প্রসঙ্গে বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষের ঐক্যের সম্ভাবনা, যার তাৎক্ষণিক প্রভাব দেখতে পাওয়া যায় প্রতিটি দুর্যোগ ও দুর্ঘটনার পর। সমস্যা শুধু এটুকুতে সীমিত থাকলে দুশ্চিন্তার কিছু ছিলো না। সত্যিকার দুশ্চিন্তার উদ্রেক হয় যখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার বিষয় নিয়েও দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া, এবং তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রাজনীতি। স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া অনেক বড় কলঙ্ক। কিন্তু তার চেয়েও বড় কলঙ্ক এটা যে আমরা আজও নিশ্চিত নই যে বিচার হবেই হবে। একটা ঘোলাটে নির্বাচন, কোনো নাম-না-জানা থানায় ভোটাধিকারবঞ্চিত হাজার বিশেক নাগরিক, রাজপথে কিছু ভাংচুর-সন্ত্রাস-লাশ-ঢিল-শ্লোগান, গোটা দশেক নামদার মানুষকে ভয় দেখানো কিংবা গুম করে দেওয়া, বিদেশি শক্তির কল্যাণে এক ঝুলি স্বর্ণমুদ্রা, চাকরির বাজারে কিছু সুবিধাদি, কিংবা টিভির আলোচনা অনুষ্ঠানে কোনো দায়িত্ববান ব্যাক্তির নির্বোধ উক্তির মতো ঘটনা মুছে দিতে পারে ত্রিশ লক্ষ শহীদের অধিকার, ভুলিয়ে দিতে পারে লক্ষ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের দাম।

প্রারম্ভিকায় বলা টিপিং পয়েন্ট এবং চৌম্বকত্বের ধারণা এখানে প্রাসঙ্গিক।

বিখ্যাত লেখক ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল তাঁর ‘দ্য টিপিং পয়েন্ট’ বইটিতে বেশ সবিস্তারে বিশ্লেষণ করেছেন সর্বগ্রাসী পরিবর্তনের ধরন ও কারণ। ইতিহাসের খুঁটিনাটি তুলে ধরে গ্ল্যাডওয়েল দেখিয়েছেন যে ঘটে যাওয়ার পর ফলাফলের আকস্মিকতায় পরিবর্তনকে যতটা বড় ও অপ্রত্যাশিত বলে ধারণা করা হয়, প্রকৃত ঘটনা তা নয়। প্রতিটি বড় পরিবর্তনের পেছনে থাকে খুব ছোট্ট একদল মানুষের নিরলস পরিশ্রম ও অগ্রণী ভূমিকা। কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষণে তাদের ‘নিজস্ব’ কাজটা জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়ে যায়, এবং ব্যাপক আগ্রহ ও সমর্থনের কারণে এই স্ফুলিঙ্গ দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায়। একাধিক যুগান্তকারী ঘটনা অনুসন্ধান করে গ্ল্যাডওয়েল দেখিয়েছেন যে পরিবর্তনের মৌলিক উপাদানগুলো অনেক সময় ধরেই তৈরি হয়ে বসে সাথে একটি স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষায়, একটি টিপিং পয়েন্টের অপেক্ষায়।

আমার দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের জন্য এমনই একটি স্ফুলিঙ্গ। জন্মলগ্ন থেকে বিভাজিত হতে থাকা এই দেশকে আর কোনো ঘটনা, চেতনা, বা উদ্দেশ্য একত্র করতে পারবে না। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪১ বছর ধরে বাংলাদেশ অলস বসে থাকেনি, নৈমিত্তিক সংগ্রামের আড়ালে এই দেশের পরিশ্রমী মানুষ অনেক বড় বড় কিছু অর্জন করেছে। এই একটি কাজ সুসম্পন্ন করতে পারলে সেই অর্জনগুলোর কাঁধে সওয়ার হয়ে আমরা সামনে আগাতে পারবো। কথাগুলো স্রেফ বলার জন্য বলা নয়, এর সমর্থনে অনেক উপাত্ত আছে।

এত বিভাজনের পরও বাংলাদেশ আগামী দশকের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশের তালিকায় ১ম স্থান দখল করে আছে। থাকবে না কেন? এই দেশের উপর যত রকম আপদ এসেছে, তার প্রতিটি উত্তরণের জন্য মানুষ বের করেছে নতুন কোনো সমাধান। যেই দেশের জন্ম হয়েছে ‘শতকে মারলে হাজারে আসবো, হাজারে মারলে লাখে’, সেই দেশ তো এরকম দৃঢ়ই হওয়ার কথা।

ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস এসেছে তো আমরা ঘর-বাড়ি-স্কুল গড়েছি উঁচু কলামের উপর। নেতারা চুরি করেছে তো নিজেরাই দ্বিগুণ শ্রম দিয়ে সংসার চালিয়েছি। লাখ খানেক মানুষের জন্য গোটা দশেক ট্রেন আছে তো সেই ট্রেনের প্রতিটি ইঞ্চিতে মানুষ-গরু-মালামাল তুলতে শিখে গেছি। সবেধন নীলমণি এক তৈরি পোশাক শিল্প পেয়ে তাতেই বিশ্বসেরা হয়ে গেছি। কম্পিউটার-ইন্টারনেট নেই তো মোবাইল নেটওয়ার্ক দিয়েই ঘিরে দিয়েছি সারা দেশ। এছাড়া শীর্ষ অর্জন হিসাবে আছে প্রতি বর্গকিলোমিটারে হাজারেরও বেশি মানুষ গিজগিজ করা একটি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব। বেঁচে থাকার অদম্য তাড়না থেকে কী দারুণ সব অর্জন আমাদের।

এই অর্জনগুলো বিবেচনা করলে অবাক হতেই হয়। যেই দেশ এতটা করতে পারে, সেই দেশ কেন আর একটু পথ পাড়ি দিতে পারছে না? এখানেই টিপিং পয়েন্টের প্রয়োজনীয়তা। এই রকম অবস্থায় প্রয়োজন এমন কিছু যা সবার প্রতি আবেদন রাখবে, দল-মত নির্বিশেষে যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা সুপ্ত আছে সেই দানবকে জাগাতে।

পাঠকদের একটি বড় অংশ এই পর্যায়ে এসে খুব ছোট্ট ও মৌলিক একটি প্রশ্ন করতে পারেন – “তো?”

খুব সহজ, স্বাভাবিক প্রশ্ন, কিন্তু ঠিক এই পর্যায়ে এসেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে আমরা বিভক্ত হয়ে যাই। দুঃখের বিষয়, একটি বড় অংশ বিভিন্ন রকম সমস্যার কষাঘাতকে এই বিচারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। তাঁদের মতে এত সমস্যার অথৈ সাগরে ভাসতে ভাসতে এই বিচারের বিলাস অবান্তর।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যাগুলো মোটেও তুচ্ছ না। তেমনটা বলি না আমি কখনও। কারণটা একদম শুরুতেই বলেছি – ডুবন্ত মানুষের কাছে নীল নদ আর পানা পুকুরের তফাৎ নেই। তাই বলে এই সমস্যাগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অন্তরায় হতে পারে না। বহু বছর ধরে এই ধারার প্রচারণা চালিয়ে এসেছে দেশদ্রোহী রাজাকারের দল। এদের সকল বক্তব্যের সারবস্তু হলো, আপাতত অমুক সমস্যার “যথাযথ সমাধান” করে নেই, তার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যাবে। বলার ভঙ্গি বেশ কোমল হওয়ায় অনেক শিক্ষিত, বুদ্ধিমান মানুষও এদের ফাঁদে পা দিয়ে বসেন। শুধু তাই না, সবাই ভুলে যায় যে এরকম নৈমিত্তিক সমস্যা প্রতিটি দেশেই আছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ কোনো না কোনো মাত্রায় সন্ত্রাসকবলিত। অধিকাংশ দেশই দেনাদায়গ্রস্ত। প্রতিটি দেশেই অনাহারে মানুষ মারা যায়। প্রতিটি দেশেই রাজনীতিক নামের কুলাঙ্গারেরা সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে খায়। প্রতিটি দেশেই কোনো না কোনো বিপর্যয়ে অনেক মানুষ এক সাথে মারা যায়। এটাই জীবন, এর মধ্যেই চলতে হবে। কারণ এই সমস্যাগুলোর অজুহাতে কোনো দেশ তার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ বা বিলম্বিত করে না।

ন্যায়নিষ্ঠ ও বুদ্ধিমান অনেকেই এই ভুলটা করেন, এবং তাঁদের কাঁধে বন্দুক রেখে বিচারবিরোধীরা গুলি চালিয়ে যায়। দুঃখের বিষয়, নির্বোধের মতো অনেকেই এতে সায় দিতে থাকেন। এই ধারায় আরও যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধীরা। অথচ এঁদের একটি বড় অংশ মনে-প্রাণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। হানাহানির গণতন্ত্রে এই একটি মাত্র দিকে আমাদের বিশাল এক সুপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। পৃথিবীর কোনো গণতন্ত্রে ঐক্যের এত বড় সূত্র নেই। বাইরে থেকে দেখে অনেক দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রশংসা করি আমরা। অথচ ভেতরের কলকব্জার খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায় কট্টর বিরোধিতা ও বিভাজনের চিত্র। সেই গণতন্ত্রগুলোকে কার্যকর রাখবার জন্য প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দরদাম চলতে থাকে। এত কষ্ট এবং ত্যাগের পরও তারা কোনো ইস্যুতে এত বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারি না।

এই পর্যায়ে সময় এসেছে চৌম্বকত্বের উপমাটি ব্যাখ্যা করার। স্কুলে পড়েছিলাম, প্রতিটি ধাতু ছোটো ছোটো অনেকগুলো চুম্বকের সমন্বয়ে গঠিত। এই ক্ষুদ্রকায় চুম্বকগুলোর এলোমেলো ভাবে বিভিন্ন দিকে মুখ করে থাকে। এর ফলে একটি ক্ষুদ্র চুম্বকের চৌম্বকত্ব তার আশেপাশের ক্ষুদ্র চুম্বকগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেয়। কোনো ধাতব বস্তু তখনই চুম্বকে পরিণত হয় যখন তার ভিতরের ক্ষুদ্র চুম্বকগুলো একই দিকে বিন্যাস্ত হয়, অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষুদ্র চুম্বকের উত্তর প্রান্ত একই দিকে ফিরে থাকে। এই পুনর্বিন্যাসের জন্য প্রায়ই কোনো সহায়ক শক্তি প্রয়োজন, যা প্রথম কিছু ক্ষুদ্র চুম্বককে একমুখী করে। তারপর তাদের সমন্বিত চৌম্বকত্বের কারণে বাকি ক্ষুদ্র চুম্বকগুলোও ঠিক দিকে বিন্যাস্ত হয়।

অনেক কষ্টে পাওয়া এই দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের জন্য কিছু করার অদম্য স্পৃহা, এবং যেকোনো মূল্যে দেশের উন্নতি চাওয়া আমার কাছে এই ক্ষুদ্র চুম্বকগুলোর মতো। প্রতিটি নাগরিকের অন্তরেই এই চাওয়াটুকু আছে, অথচ প্রত্যেকেই তার আশেপাশের কোনো ব্যাক্তি, বিষয়, বা ঘটনার কারণে এই আবেগকে প্রত্যয়ে রূপ দিতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো সেই বাহ্যিক নিয়ামক যা আমাদের সুবিন্যাস্ত ও প্রত্যয়ী করতে পারে।

এই কারণেই প্রয়োজন অনুভূতিগুলোকে যৌগিক অবস্থা থেকে পৃথক করে মৌলিক কিছু পরিচয় দেওয়া, তাদের আলাদা করে বিশ্লেষণ করা। গতানুগতিকের বিপরীত এই পথে হাঁটতে শিখলেই আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন মতধারার কাউকে বলতে পারবো, “আমি সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, কিংবা রাজনীতিতে আপনার সাথে একমত নই, কিন্তু আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো কর্মকাণ্ডে আমাকে সাথী হিসাবে পাবেন।“ এভাবেই মানুষ ভিন্নমতের মানুষের সাথে কাজ করতে শেখে, গণতান্ত্রিক আচরণে ব্যুৎপত্তি পায়।

জাতির কলঙ্কমোচনের জন্য এই ঐক্য আজ খুব বেশি প্রয়োজন। আনন্দের বিষয় হলো, এই ঐক্য আজ শুধু অলীক স্বপ্ন নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অনেকগুলো সংগঠনের এক গ্র্যান্ড কোয়ালিশন নিরবে কাজ করে যাচ্ছে আজ ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে। সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন ব্লগ ও ফোরাম বেশ অন্তর্কলহে লিপ্ত। এ-বাড়ির কেউ ও-বাড়িতে যাবেন না, ও-বাড়ির কেউ সে-বাড়িকে নিয়ে খিস্তি না আউড়ে কথা বলতে পারেন না, সে-বাড়ি আবার এ-বাড়ির সমালোচনায় সদামুখর। এসব রঙ্গ মিলিয়ে বাংলা ব্লগ/সাইট/ফোরামগুলো যেন এক কুরুক্ষেত্র। তার উপর আছে বিভিন্ন ধরনের মিডিয়ার মধ্যে রেষারেষি। টেলিভিশনের বড় সেলিব্রিটি ব্লগে এসে বেয়াদব ছেলে-ছোকরাদের কাছে সমালোচনা শুনে যান, ব্লগের লোকজন বছর শেষে হাভাতের মতো ঘুরেও প্রকাশক পায় না, আবার মুদ্রণের আশীর্বাদ পাওয়া লেখক ব্লগার ও টেলিভিশন শিল্পীদের মতো অগণিত পাঠক-দর্শকের কাছে পৌঁছতে না পারার আক্ষেপে ভোগেন।

এত বিভেদ সত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সবাই আজ একাট্টা। সবাই নিয়মিত জনসচেতনতা সৃষ্টি করে চলেছেন, পরষ্পরকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করে চলেছেন অপপ্রচার রুখতে। এই কাজের জন্য কেউ নিজের নাম প্রকাশ করছেন না, কৃতিত্ব জাহির করছেন না, বরাই করছেন না, তিল পরিমাণ দূরত্ব তৈরি হতে দিচ্ছেন না নিজেদের মধ্যে। এই প্রচারবিমুখ, নিরলস, নিঃস্বার্থ ঐক্যই প্রমাণ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কীভাবে আমাদের মধ্যকার সুবৃত্তিগুলোকে বের করে আনতে পারে।


অতীতের উদ্বৃত্ত সম্ভাবনাই ভবিষ্যৎ হতাশার জ্বালানি

প্রাণ যখন পিপাসায় ওষ্ঠাগত, তখন বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খাওয়া বিরল কিছু না। তাই বলে ক্ষণিকের এই অহিংস সহাবস্থানে কারও চরিত্র শ্বাপদ থেকে সফেদ হয়ে যায় না। সেই কারণেই এই ধরনের ঐক্যকে লালন করতে হয়, সময় দিতে হয়, দম নেওয়ার সুযোগ দিতে হয়। নচেৎ দূর থেকে কেউ পানিতে ঢিল ছুঁড়লেই ঢেউয়ের আলোড়ন দ্রুত আন্দোলনে পরিণত হয়, সসংকোচ মিলের স্থান নিয়ে নেয় চিরচেনা অবিশ্বাস। খুব গভীর দুঃখের বিষয়, ঠিক এই রকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া বানচালে জামায়াত-শিবিরের সর্বশেষ আক্রমণের পর। এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সব শুভশক্তি আবারও বিভক্ত ও কলহরত, অন্যদিকে অপরাধীর দল এই সুযোগে নতুন করে শুরু করেছে দেশে-বিদেশে চক্রান্ত। একে একে দেখা যাক সকল কুশীলবের অতীত-বর্তমান। ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করবো না, ওটুকু পাঠকের বিবেচনাবোধের উপরই ছেড়ে দিচ্ছি।

প্রথমেই উল্লেখ্য সাধারণ জনগণ, কারণ তারা এক রকম ঘাড়ে ধরে বিচার করিয়েছে, এবং সরকার সেই দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে বাধ্য হয়েছে। দল-মত নির্বিশেষে এই বিচারের মালিকানা সবার। ২০০৮-এর নির্বাচনে যাঁরা বিচারের দাবিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছিলেন, তাঁদের কারও আজ পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আগামী ৩০ বছরে আর কোনো সরকার এই বিচারে হাত দিবে না, অতএব এবারই বিচার করতে হবে এবং তা নিশ্চিত করার জন্য চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা কি সেটুকু করছি? মোটেও না। আমরা প্রাত্যহিক জীবনের ফাঁকে ১০ মিনিট সময়ও দিচ্ছি না, কিন্তু জামায়াত-শিবিরের প্রতিটি নতুন কৌশলের সাথে গলা মিলিয়ে বিচারপ্রক্রিয়ার সমালোচনা করছি। আমাদের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেন জানাজার নামাজ! দাবি জানিয়েই আমরা সবাই খালাস। কেউ না কেউ তো নিশ্চয়ই এই দাবি বাস্তবায়ন করে দেবেন, শুধু শুধু সবার ভিড় করতে যাওয়ার কী দরকার?

এরপর স্বাভাবিক ভাবেই আসে ক্ষমতাসীন সরকার, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই যার বন্ধুর চেয়ে শত্রু বেশি। যেমনটা আগেও বলেছি, আমি সরকারের অন্যান্য সব কাজের সাথে এই বিচারকে মিলিয়ে দেখি না। এই বিচার এত বড় গণদাবি যে তা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ঊর্ধ্বে। এই কারণেই এই একটি জায়গায় সরকারকে সমর্থন দিতেই হবে। মাঠে-ঘাটে সহিংসতা প্রতিরোধ করে সরকার বিচার শুরু করেছে এবং তা চালু রেখেছে, বিদেশি অনেক পরাশক্তির ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে গেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নাগরিকদের একটি বড় অংশকে আওয়ামী লীগ তার নিশ্চিত ভোট-ব্যাংক হিসাবে গণনা করতে পারবে না জেনেও বিচার চালিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, হ্যাকিং-এর ফলে প্রকাশিত কথোপকথন থেকে এটাও স্পষ্ট যে সরকার বিচার দ্রুত শেষ করতে চেয়েছে, কোনো টালবাহানা করে একে আরও এক শাসনামল পর্যন্ত বিলম্বিত করতে চায়নি। এই কারণে সরকার নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

একবার শুরু হয়ে যাওয়ার পর বিচারিক প্রক্রিয়ায় সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই, তবে তার পরিবর্তে সরকারের উপর দায়িত্ব বর্তায় বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম সাহায্যের বন্দোবস্ত করার, বিচারের বিরুদ্ধে নানাবিধ অপপ্রচার খণ্ডন করার। অথচ এই বিচারের জন্য বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই বাহ্যিক সাহায্য পেলেও বিচারকদের জন্য সাহায্যের কোনো কাঠামো তৈরি করে দেওয়ার দূরদর্শিতা দেখাতে পারেনি সরকার। ফলাফল স্বরূপ স্বাভাবিক কথোপকথন ও আলোচনাও আজ ‘স্কাইপ কেলেংকারি’ হিসাবে প্রচার করছে জামায়াত-শিবিরের প্রোপাগান্ডা মেশিন। এই পরিস্থিতি কতটা দুঃখজনক, তা উপলব্ধির সুবিধার্থে একটি উদাহরণ দেই।

আমেরিকার বর্তমান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস তাঁর পেশাজীবনের একদম শুরুতে কাজ করতেন ‘লিগ্যাল ক্লার্ক’ হিসাবে। যাঁর অধীনে কাজ করতেন, সেই বিচারপতির নাম উইলিয়াম রেনকুইস্ট। তিনি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান পদে জন রবার্টসের পূর্বসুরী। একজন প্রধান বিচারপতির ক্লার্ক মাত্র দুই দশক পর হয়েছেন তাঁরই উত্তরসুরী! ভেবে দেখুন উচ্চ আদালতের বিচারপতি কী অসামান্য মেধা ও গবেষণায় ঋদ্ধ। আমরা কি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য এর ভগ্নাংশ পরিমাণ মানসম্মত গুণগত সহায়তা দিয়েছি আমাদের বিচারকদের? বিচারককে যেন হাত-পা বেঁধে সাঁতরাতে ছেড়ে দিয়েছি আমরা। এই সীমাবদ্ধতা মোচনের চেষ্টা করার ‘পুরষ্কার’ হিসাবে বিচারক পেলেন তাঁর নিজের ঘরে আড়ি পাতা এবং সেটা নিয়ে সারা দুনিয়ার বিশ্রী কূটকচালি।

এই সূত্র ধরেই পরবর্তী কুশীলব বিচারক নিজামুল হক নাসিমের প্রসঙ্গে আসি। শ্রদ্ধেয় বিচারকের দোষ একটাই, তিনি কেন বিশেষজ্ঞের কাছে মতামত নিতে গেলেন। বিচারক ও তাঁর পরামর্শদাতা ডঃ আহমেদ জিয়াউদ্দীন ১৯৭১-এর গণহত্যার বিপক্ষে হওয়ায় আসামীপক্ষ বিচারকের উপর নাখোশ। এদের সাথে সুর মেলাচ্ছেন দেশে-বিদেশে অনেকেই। হাস্যকর এই সব অভিযোগের জবাব দেওয়া বিচারকের কাজ নয়। এই সত্য আমাদের সবার ধরিয়ে দিতে হবে যে একজন চোরের বিচার করার জন্য দুইজন সৎ মানুষ, একজন ডাকাত, ও একজন মাতালের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয় কমিশন গঠিত হয় না। চুরির বিচার যেই ব্যাক্তি করেন যিনি নিজে চুরিকে অপরাধ বলে গণ্য করেন। এক্ষেত্রে মূল প্রশ্ন যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়েছে কি না, এবং সেই প্রশ্নে বিচারক নাসিমের বিরুদ্ধে খোদ জামায়াত-শিবিরও কোনো অভিযোগ তুলতে পারেনি।

রইলো বাকি দুই – স্বাধীনতার সপক্ষের দুইটি সংগঠন যারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরলস কাজ করে গেছে বিচারপ্রক্রিয়াকে সাহায্য করতে। পরিতাপের বিষয় হলো, এই দুই পক্ষের মধ্যে দুঃসময়ে প্রয়োজনীয় ঐক্যের পরিবর্তে বিরাজ করছে গভীর অনাস্থা। একটি পক্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে বহু বছর ধরে সম্মুখসমরে নিয়োজিত – একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। দুই দশক ধরে সরিসৃপের জীবন যাপন করা একটি জাতি নিজের পরিচয় ও মেরুদণ্ড খুঁজে পেয়েছে শহীদজননী জাহানারা ইমামের হাতে গড়া এই সংগঠনের কর্মতৎপরতায়। এঁরা রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে ঘুরেছেন, এঁদের নেতারা জামায়াতের শাসনামলে অবর্ণনীয় নির্যাতন সয়েছেন, বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তাঁরা জনমত গড়েছেন ও বাদীপক্ষকে নানান সহায়তা দিয়েছেন।

সব প্রদীপের মতো একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উজ্জ্বল আলোর নিচেও আছে নিকষ অন্ধকার। এই সংগঠনের বিপুল জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে অনেক দুধের মাছি এতে জুড়েছে। এদের একাংশ আসিফ নজরুলদের মতো স্থান করে নিয়েছেন ‘জাতির বিবেক’ পদে। কেউ কেউ সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে জামায়াতের ওয়াজ প্রচার করে বেড়াচ্ছেন যত্রতত্র। অনেকেই পরিমিতিবোধের অভাবে সবার চোখে চিহ্নিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের দালাল হিসাবে। সর্বোপরি, এখানে অনেকেই প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সুফল কুড়াতে, এই লাভের গুড় পেটে পুড়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিষ্কার করতে।

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। প্রকাশ্য সংগঠনের সম্পূরক হিসাবে এখানে একত্র হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যাঁরা রাজনীতিতে তিলেক পরিমাণ আগ্রহী নন। এঁরা সারা বিশ্বের লাইব্রেরি ঘেঁটে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল যোগাড় করেছেন। এঁরা অনলাইনে সক্রিয় থেকেছেন গোলাম আজমের বংশধরদের হাতে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা প্রতিহত করতে। পৃথিবীর যেকোনো কোণায় এই বিচারপ্রক্রিয়ার সমালোচনা হলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রতিবাদে, আলোচনা সভা ও অভিসন্দর্ভের মধ্য দিয়ে জবাব দিয়েছেন ইকোনমিস্টের মতো প্রতাপশালী পত্রিকা থেকে শুরু করে বিশ্ববিধাতা রাষ্ট্রের হোমরা-চোমরা নেতাদের, এবং যেমনটা সবাই জানেন বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

আইসিএসএফ-এর কার্যক্রমও ত্রুটিমুক্ত নয়। এই সংগঠনের সমালোচনা আজ সর্বত্র। অনেকে এঁদের কার্যক্রমকে অনধিকারচর্চা মনে করছেন। কেউ মনে করছেন এটি নিরপেক্ষতার লংঘন। মাত্র গতকালই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে একে ভূঁইফোঁড়, অনিবন্ধিত, এবং ওকালতির পরীক্ষায় অকৃতকার্য ২২-২৩ বছর বয়সী তরুণদের সংগঠন হিসাবেও অভিহিত করা হলো। জামায়াত-শিবিরের গাত্রদাহ এবং তদসংশ্লিষ্ট অভিযোগের বয়ানে যাওয়া নিরর্থক। কে জানে, হয়তো এতদিন এদের সাহায্য নিয়ে আসা অন্য সব প্রতিষ্ঠানও সমালোচনার কোনো কারণ খুঁজে পাবে। খুঁটির জোরে বা খোঁজে কাজ না করে যাওয়া এই সংগঠনটিই যে এই পরিস্থিতিতে বলির পাঁঠা হিসাবে সর্বোৎকৃষ্ট, তা উপলব্ধির জন্য আইনস্টাইনীয় বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন নেই।

গত দুই সপ্তাহ ধরে পরষ্পরের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে চলার এই মোচ্ছব দেখে সুমনের বিখ্যাত একটি গানের কলি মনে পড়ছিলো আমার। “সূর্য বললো, ইশ! আমি উঠলাম ভাগ্যিস, তাই রাত্তির হলো ভোর!” এতদিন ধরে পরিপূরক হিসাবে কাজ করে এসে আজ সবাই কী অস্থির হয়ে উঠেছে নিজের স্থান থিতু করতে। এত রক্ত, এত শ্রম, এবং এত ত্যাগের পর যেই বিচারের দ্বারপ্রান্তে আমরা উপনীত, তা এই পক্ষগুলোর কারও একার দায়িত্ব বা কৃতিত্বে না। এর জন্য সবার ভূমিকা প্রয়োজন ছিলো, এবং এর সুসমাপ্তির জন্য এই পক্ষগুলোর প্রতিটির ভূমিকা এখনও অত্যাবশ্যক। সরকার ব্যতীত কেউ আইনী দিক সামলাতে পারবে না, বিচারক ব্যতীত কেউ শেষ সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মতো নাগরিক সংগঠনের সাহায্য ছাড়া সামাজিক সচেতনতা ধরে রাখা যাবে না, এবং আইসিএসএফ-এর মতো সংগঠনের সাহায্য ব্যতীত বাইরের বিশ্বের চোখে গ্রহণযোগ্য মাণদণ্ড অর্জন করা কঠিন হবে।

তাই শেষ প্রশ্ন – এই মুহূর্তে কি এ-ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন ছিলো? তার চেয়েও বড় কথা, কেউ কি খেয়াল করেছেন যে আসামী পক্ষ তথা জামায়াত-শিবির নিয়ে আলোকপাত করিনি এখনও? করার প্রয়োজন পড়েনি, কারণ ঢিল ছুঁড়ে দৌঁড়ে পালানো এই অপশক্তির ভূমিকা কারো কাছেই বিবেচ্য নয় আর। বাঘ এবং মহিষ খুব সহসা একত্রে পানি খাওয়ারও সম্ভাবনা নেই আর। মুহূর্তের উন্মাদনায় এই সম্ভাবনা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল, ভবিষ্যতের খাতায় জমা হলো আরো একটি হতাশা।


এক কাপ চায়ের রঙে লেখা ইতিহাস

ইতিহাস কখনও পরিকল্পনা করে রচিত হয় না। আমরা তেমনটা মানতে চাই না, সবাই পূর্ব-পরিকল্পিত কোনো কাজ সম্পন্ন করার সাথে ইতিহাস জুড়ে দিতে চাই, কিন্তু ইতিহাসের নির্মমতার কাছে এই প্রচেষ্টা পাত্তা পায় না। ইতিহাস নিজের গতিতে চলে, নিজের মর্জিমাফিক বিষয়াদি লিখে রাখে অমলিন আখরে। অনেকটা চায়ের কাপ ছলকে জামায় কিছু চা পড়ার মতো। এই দুর্বিপাকের কারণেই পরিপাটি ভাবে পরিহিত দামী জামার চেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকে চায়ের দাগ পড়ে থাকা সাধারণ জামা, নতুন জামার চকচকে রূপের চেয়ে অনেক বেশি গল্প জমে থাকে পুরানো জামার মলিনতায়।

বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে। তবে সেই বিচার হয়তো আমাদের ঐক্য এনে দেবে না। বিচারপ্রক্রিয়ার সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত মানুষগুলোই বিপদে নিজেদের দেখে রাখতে পারে না, বাকি জাতি কীভাবে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর ভরসা পাবে? জামায়াত-শিবিরের শত শত মিলিয়ন ডলারের পেশিশক্তি আজ একত্রে মাঠে নেমেছে। এরা সব দিক দিয়ে আক্রমণ করেছে বিচারের পক্ষের প্রতিটি শক্তিকে।

সরকারকে ব্যাস্ত রাখার জন্য জামায়াতের হয়ে একে একে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক শক্তি। আজ সৌদি হুজুরেরা চাপ দিচ্ছেন তো কাল তুরস্কের প্রতিনিধি দল নাম ও উদ্দেশ্য ভাড়িয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আগুনে ঘি ঢালছেন। দেশের বাইরে আরও অগণিত সাংবাদিক, রাজনীতিক, ও সংগঠনের অপতৎপরতা সম্পর্কে সরকার না থাকছে অবগত, না দিচ্ছে কোনো জবাব। এই সুযোগে সন্তর্পণে নথিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে মিথ্যা ইতিহাস, সেই ইতিহাস পড়েই বড় হচ্ছে আরো একটি ভ্রষ্ট প্রজন্ম।

আদালতকে বিব্রত ও বিলম্বিত করতে এদের বেতনভুক 'জাতির বিবেক'-এর দল সমস্বরে দাবি তুলছেন বিচার বানচাল করে নতুন করে শুরু করতে। আদালতের সীমিত জনবলের সুযোগ নিতে প্রতিদিন জমা দেওয়া হচ্ছে শত শত পৃষ্ঠার রিট। প্রয়োজনের মুহূর্তে আদালত নিজেকে আরো গুটিয়ে নিচ্ছেন, যৎসামান্য যা সাহায্য ছিলো তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বাকি সময়ের জন্য।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মধ্যে স্থান করে নেওয়া প্রতিক্রিয়াশীল সংঘ সুকৌশলে তাদের ক্ষুব্ধ করে তুলছে একেবারেই ভিন্ন ধাঁচের কাজ করে যাওয়া প্রতিষ্ঠান আইসিএসএফ-এর বিরুদ্ধে। এদেরই কূটচালে জামায়াতের ‘অভিযোগ’গুলো পালে হাওয়া পাচ্ছে এই শ্রদ্ধেয় সংগঠনকে ব্যবহার করে। আধুনিক প্রযুক্তি ও বিস্তারিত তথ্যের ঘাটতির কারণে তাঁরা ভুল মানুষকে একের পর এক সত্যায়ন করে যাচ্ছেন, সেই বিষয়গুলো তাঁদের দৃষ্টিগোচর করার কেউ থাকছে না।

অন্যদিকে তেরটি ভিন্ন প্ল্যাটফর্মের শত শত নাম-প্রকাশে-অনিচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবীর সংগঠন আইসিএসএফ-এর দুই-চারজন পরিচয় উন্মোচিত সদস্য দিনাতিপাত করছেন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে। বিচার আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে উপদেশ দিয়ে ডঃ জিয়াউদ্দীন বেলজিয়ামে বসে মৃত্যুহুমকি শুনছেন, সেই সাথে বাংলাদেশ থেকে শুনছেন একই পথের অন্য পথিকদের বিষোদ্গার। রায়হান রশিদ যুক্তরাজ্যে বসে শুধু অনুরূপ হুমকিই পাচ্ছেন না, পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের ব্লগে দেখছেন তাঁর স্ত্রী-সন্তানের নাম-ঠিকানা-ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার উন্মুক্ত আহ্বান। এই আগ্রাসন রোধ করার শক্তি যাদের আছে, তাদের কাউকেই প্রয়োজনে পাশে পাচ্ছেন না তাঁরা।

আজ যদি এক কাপ চা ছলকে পড়ে, তাহলে ইতিহাস কী লিখে রাখবে এই মহাযজ্ঞে আমাদের ভূমিকা নিয়ে?


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

একটানে পড়লাম ইশতিয়াক ভাই। বিশাল লেখা। আপাতত ছোট্ট মন্তব্য করে ভালোলাগা জানিয়ে যাই। আবার আসছি। পাঁচতারা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ এত লম্বা লেখা প্রকাশের সাথে সাথেই পড়ার জন্য। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে।

হতেই হবে।

ফারাসাত

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হতেই হবে।

চরম উদাস এর ছবি

চমতকার বিশ্লেষণ হাততালি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক গুরু গুরু হাততালি

সতর্কীকরণ এর কোন দরকার নাই এরকম একটি লেখায়।
অসংখ্য ধন্যবাদ - সাথে আছি আমৃত্যু।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আছে, আছে। আমি নিজেই তো আকার দেখে ভাগতাম। লিখতে শুরু করে দেখি এক সময় ১০-১১ পৃষ্ঠা হয়ে গেছে। আমি নিজেই তো ৩-৪ পৃষ্ঠার বেশি লম্বা লেখা পড়তে পারি না আর।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুদীর্ঘ বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধ। আপনার আশাবাদ একটু বেশি স্বাপ্নিক হলেও প্রশংসা করব। কারণ মানুষ আশা নিয়েই বাঁচে এমনকি দুর্ভাগারাও! দুএকটা জায়গায় একটু প্রশ্ন আছে,

স্বাধীনতার ৪১ বছরের মাথায় নেতৃত্বের কাছ থেকে তেমন কোনো সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে ত্বরান্বিত প্রগতির একটি ধাপে। এর পেছনে কারণ দুইটি – সময় এবং প্রযুক্তি। আমার কর্মক্ষেত্র প্রবাসে, তাই সেই রেফারেন্স থেকেই বলছি।

এটা একটু বেশি আবেগী কথা বলে আমার মনে হয়। কারণ সত্যি বলতে কি নেতাদের গ্রীন সিগ্ন্যাল ছাড়া ভালো খারাপ কিছুই হয় না। মানুষ নিজে বড় হবার প্রয়োজনেই অবকাঠামো গড়ে তোলে, পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতিতে নেতারাও এর বাইরে নন। আজকের অধিকাংশ নেতাই কিন্তু বড় ব্যবসাদার এবং বেসরকারী খাতটিও কিন্তু নেতাদেরই তৈরি। হতে পারে এরা তার জন্য বহুরকম বিতর্কিত পন্থা অবলম্বন করেছেন, সেটা নেতা ছাড়া অন্য উদ্যোগপতিরাও করে থাকেন। বিশ্বইতিহাস নেতারাই নির্মাণ করেন, সাধারণ মানুষ তাতে ভূমিকা পালন করে মাত্র।

প্রতিটি দেশেই রাজনীতিক নামের কুলাঙ্গারেরা সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে খায়।

- তাই কি? তাহলে তো প্রতিটি দেশেরই এল,ডি,সি তালিকাভূক্ত হবার কথা! কোন কোন দেশের কিছু কিছু নেতা আবার বিদেশি রক্তের ভক্ত। কিন্তু আমার ক্ষুদ্র অধ্যয়নে যেটুকু জেনেছি, তাতে মানবেতিহাস উত্থান-পতনে পূর্ণ। তার মধ্যে সমাজ-প্রগতির নির্দেশক সৎ নেতৃত্ব এবং সহানুভূতি সম্পন্ন জনতা। দুটিই বর্তমান বাংলাদেশে অনুপস্থিত। কাজেই ক্ষুরধার মেধাবীদের বিকাশে ক্ষুরধার নেতারও প্রয়োজন। জাফর ইকবাল স্যার লিখেছেন যে কিভাবে কর্তারা তাদের দেয়া পরামর্শগুলো নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করেন। সমাজের পশ্চাদগতির লক্ষণ অসৎ নেতৃত্ব এবং আত্মকেন্দ্রিক জনতা। একজন বিশ্বজিৎ বা একজন ডাঃ সাজিয়ার জন্য আমরা ঠিক ক'টি গণমিছিল করেছি?

জাতির বিভক্তি শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পরপরই। কিন্তু আপনি যে সুপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার সন্ধান পেয়েছেন তা অন্তত আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে মেলে না। অবশ্য বিগত নির্বাচনের হিসেব করলে আসলেই অধিকাংশ লোক এই বিচার চায়। বি,এন,পির খুব বেশি লোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান না। দলটির প্রতিষ্ঠাতার মন্ত্রী ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান এবং ম্যাডাম জিয়ার মন্ত্রী ছিল মইত্যা রাজাকার! দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সাহেব 'ন্যায়বিচার' বলতে কি বোঝেন সেটি খোলাসা করেন না। বোধহয় এখন যারা বন্দী তাদের ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী বানালেই ন্যায়বিচার সম্পন্ন হবে! কর্মক্ষেত্রে একমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থক(বা আওয়ামী লীগের ভোটার) বা বামপন্থী মানুষ ছাড়া কাউকেই আমি এই বিচার নিয়ে সোচ্চার দেখিনি। বি,এন,পির যাদেরকে চিনি তারা অনেকেই সরাসরি এই বিচারের বিরুদ্ধে এবং বলে এটা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল, যুদ্ধ হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে -ইত্যাদি। তবে সব মিলিয়ে মনে হয় দেশের ৬০% মানুষ এই বিচার চায় এবং যে ৪০% এই বিচার চায় না তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী বিধায় সংবিধানের নবম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারক নন।

আপনার প্রোফাইলে দেখলাম আন্ডারগ্র্যাডও আমেরিকায়। যদি সেখানকার ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রসংসদ সম্পর্কে কিছু লেখেন তবে উপকৃত হতাম।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের উচিত স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন গড়ে তুলে সরকার ও নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনালকে সাহায্য করা। ক্ষুদ্র মতান্তর সত্ত্বেও লেখা খুবই ভালো লেগেছে! হাসি

নির্ঝর অলয়

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আশাবাদ একটু বেশি স্বাপ্নিক

এটা তো অধমের পুরানো রোগ। তবে, দেশ নিয়ে কি একটু বেশি স্বাপ্নিক, একটু বেশি আবেগী না হলে চলে? হাসি

নেতাদের গ্রীন সিগ্ন্যাল ছাড়া ভালো খারাপ কিছুই হয় না। মানুষ নিজে বড় হবার প্রয়োজনেই অবকাঠামো গড়ে তোলে, পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতিতে নেতারাও এর বাইরে নন। আজকের অধিকাংশ নেতাই কিন্তু বড় ব্যবসাদার এবং বেসরকারী খাতটিও কিন্তু নেতাদেরই তৈরি।

কথা সত্য, তবে এখানেও কিন্তু হতাশ হওয়ার কিছু নাই তেমন একটা। কারণটা উপলব্ধি করতে সুবিধা হবে একটা ছোট্ট কাজ করতে গেলে -- বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে এক শব্দে প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। খুবই দুষ্কর একটা কাজ, কারণ আমরা অনেক রকম পন্থার সংকর একটা দেশ। না পুঁজিবাদী, না সমাজতান্ত্রিক, না ইসলামিক, না অসাম্প্রদায়িক, না গণতান্ত্রিক, না পরিবারতান্ত্রিক। এই কারণেই কোনো এক দিকে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা নাই আমাদের। আমাদের সম্পদ কম, শিক্ষা কম, জনসংখ্যা বেশি। এর জন্য আনুষাঙ্গিক সমস্যা থাকবেই। তাছাড়া, আমাদের অসৎ নেতারা যেসব প্রাচীন শিল্পের মালিকানা কব্জা করে রেখেছেন সেগুলোর আয়ূ দ্রুত ফুরাচ্ছে।

মানবেতিহাস উত্থান-পতনে পূর্ণ। তার মধ্যে সমাজ-প্রগতির নির্দেশক সৎ নেতৃত্ব এবং সহানুভূতি সম্পন্ন জনতা। দুটিই বর্তমান বাংলাদেশে অনুপস্থিত। কাজেই ক্ষুরধার মেধাবীদের বিকাশে ক্ষুরধার নেতারও প্রয়োজন।

নেতৃত্বেরও শ্রেণীবিভেদ থাকে। রাষ্ট্রনায়ক যেমন নেতা, একজন অফিসের ম্যানেজারও তেমনি নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষ অবস্থানে নেতৃত্বের আকাল সহসা কাটবে না। সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে অনেক দারুণ কর্মকর্তা আছেন যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত নন, দেশকে ভালোবাসেন, প্রযুক্তিকে ভালোবাসেন, কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করেন না। হাসিনা-খালেদার মধ্যে পরিবর্তন খুঁজতে গেলে শুধুই হতাশ হতে হবে। সেটা না করে নতুন প্রজন্মের কর্মকর্তাকে দিকে তাকালে কিন্তু অনেক আশার চিত্র দেখতে পাবেন।

সব মিলিয়ে মনে হয় দেশের ৬০% মানুষ এই বিচার চায় এবং যে ৪০% এই বিচার চায় না তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী বিধায় সংবিধানের নবম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারক নন।

আমি মনে করি সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। আমি নিজে অনেককেই চিনি যারা রাজনীতির মাঠের কার্যকলাপের কারণে আওয়ামী লীগের কট্টর বিরোধিতা করেন, কিন্তু মন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। এদের অনেকেই সাম্প্রতিক কালে দলের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে চুপ করে আছেন। ঠিক যেমন আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেকেই মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন ওলামা গোষ্ঠীর মনোরঞ্জনের জন্য আওয়ামী লীগের বিবিধ সার্কাসের সময়। ঠিক এখানেই আমাদের রাজনৈতিক অনুভূতিগুলোর ডিসটিলেশন জরুরী। এভাবে দেখলে ৭০ ভাগেরও বেশি মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন পাওয়া যাবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বলেইছি তো আপনার সাথে মতান্তর খুব কম। এখন দেখছি পরিসংখ্যানের ভাষায় সেটা মাত্র ১০%(৭০-৬০)!

আরে ভাই, আমিও আশাবাদী। তবে কিনা আমিও দুর্ভাগাদের দলে পড়ি!

যে আওয়ামীবিরোধীদের কথা বলছেন, যারা বিচার চায় তারা মূলত বামপন্থী। আর বামপন্থীরা এদেশে সবচেয়ে সংখ্যালঘু! বি,এন,পির খুব সামান্য অংশই এ বিচার চায় এবং তারা ভয়ে মুখ খোলে না। ওলামা মনোরঞ্জনেও কিন্তু ভয়াবহ পিকেটিং হয়েছে। ধানমণ্ডিতে একটা সব্জীবাহী ভ্যান উলটে দিয়েছে, একটা রিকশাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছে -যেগুলো পত্রিকায় আসেনি। প্রচুর ককটেল বিস্ফোরণও হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক ভুল বিতর্ক থাকলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমার মনে হয় না তাদের নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব। বি, এন,পি ক্ষমতায় এলে এবার হয়তো নিজামীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী রূপে দেখবেন! হাজার হোক জেল খাটা ত্যাগী নেতা বলে কথা!

৬০% ই যথেষ্ট। আর বিলম্ব নয়, আর বিলম্ব নয় নয়, আর বিলম্ব নয়!

নির্ঝর অলয়

রহমান এর ছবি

খুব ভালো লাগলো অনেকদিন পর আবার আপনার লেখা পড়ে। একটু বড় কিন্তু এই অংশটি চমৎকার লেগেছে।

"একটা ঘোলাটে নির্বাচন, কোনো নাম-না-জানা থানায় ভোটাধিকারবঞ্চিত হাজার বিশেক নাগরিক, রাজপথে কিছু ভাংচুর-সন্ত্রাস-লাশ-ঢিল-শ্লোগান, গোটা দশেক নামদার মানুষকে ভয় দেখানো কিংবা গুম করে দেওয়া, বিদেশি শক্তির কল্যাণে এক ঝুলি স্বর্ণমুদ্রা, চাকরির বাজারে কিছু সুবিধাদি, কিংবা টিভির আলোচনা অনুষ্ঠানে কোনো দায়িত্ববান ব্যাক্তির নির্বোধ উক্তির মতো ঘটনা মুছে দিতে পারে ত্রিশ লক্ষ শহীদের অধিকার, ভুলিয়ে দিতে পারে লক্ষ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের দাম। "

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
স্মরণীয় একটা লেখা।

সৌরভ কবীর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ

তপু এর ছবি

ঘা দা নি ক " হয় এর ভিতর ঝামেলা ঢুকেছে, না হয় এরা সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগছে, মন্তব্য কিছু করার আগে একটু জানা বুঝা উচিৎ ছিল তাঁদের।
আর এটাও মনে রাখা দরকার, এ বিচারের জন্য তাঁরা হয়ত কষ্ট পেয়েছে অনেক, কিন্তু এটা সকলের দাবী, তাঁদের একার দাবীর ফল এই বিচার না। তাঁরা কন্সারন ভাল কথা কিন্তু তাঁদের বুঝে ঝামেলা দেখা যাচ্ছে।

পোস্ট টা অতি প্রয়োজনীয় ছিল।
ধন্যবাদ। চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি অনেক বড় এবং পুরানো সংগঠন। অনেক রকম মানুষ এখানে আসবেন, এটাই স্বাভাবিক। সবাইকে তো আর দেখে রাখা সম্ভব না। তবে আসিফ নজরুলের মতো পল্টিবাজের উদাহরণ থেকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নির্মূল কমিটির নাম নিয়ে হম্বিতম্বি করে বেড়ানো এমন অনেককে নিয়েই এই সংগঠনের বাইরের মানুষ এই ভয় করেন। পাশাপাশি রেখে তুলনা করলে দেখতে পাবেন যে জামায়াত এবং নির্মূল কমিটির আক্রমণের টার্গেট অভিন্ন, সমালোচনার ভাষা অভিন্ন, ইত্যাদি। এই ধরনের ঘটনা থেকে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

এই প্রসঙ্গে ক'দিন আগে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস লিখেছিলাম, সেটাই টুকলিফাই করি --

পথ চলতে চলতে যদি হঠাৎ খেয়াল করেন যে একটি সাপ আপনার সাথে সাথে চলছে, তাহলে শুধু দুইটি উপসংহার হতে পারে -- হয় আপনি সাপের বাড়ি যাচ্ছেন, নয়তো সাপ আপনার বাড়ি যাচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই সমাপ্তিটা আপনার জন্য ক্ষতিকর, সাপের জন্য নয়।

বাংলাদেশের 'শিক্ষিত', 'সুশীল', এবং 'বিবেকবান' জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের এই কমনসেন্সটুকু নেই। তাঁরা রাজনীতির ঘোলাপানি এবং নৈমিত্তিক দুর্নীতি-অনাচারের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে মিলিয়ে ফেলেন প্রায়ই। ফলাফল হিসাবে দেখতে পাই জামায়াত এবং স্বঘোষিত মুক্তিযুদ্ধের-স্বপক্ষ-শক্তি একই ভাষায় কথা বলছে।

বিজয়ের মাস, হয়তো অনেক বছরের প্রতীক্ষার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার মাস। এই মাসে ফালতু কথা বলার আগে দুই সেকেন্ড চিন্তা করবেন সবাই। সমালোচনায় গা ভাসানোর আগে মিলিয়ে নেবেন আপনাদের বক্তব্যের সাথে জামায়াত-শিবিরের কথাবার্তায় বিপজ্জনক মাত্রায় মিল আছে কী না।

সজাগ থাকুন, সতর্ক থাকুন, বিচার প্রক্রিয়ার সাথে থাকুন।

মনে হয় নির্মূল কমিটি-সংশ্লিষ্ট অনেকের সময় এসেছে এই দিকটা খেয়াল করার।

স্বপ্নহারা এর ছবি

গুরু গুরু

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হাসি

সাকিন উল আলম ইভান  এর ছবি

চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ

জাবেদুল আকবর এর ছবি

চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ

রু এর ছবি

অনেক সময় নিয়ে পড়লাম। আমিও আশাবাদী। লেখাটা খুব ভালো হয়েছে।

কুমার এর ছবি

হাতি-মার্কা লেখা হলেও লেখার একটা আলাদা গতি আছে, চমৎকার লেখা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।