দেবদূতের নগর ভ্রমণ - ১

ঝরাপাতা এর ছবি
লিখেছেন ঝরাপাতা (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৬/২০০৭ - ৪:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একদিন গভীর রাত্রিতে স্বর্গ হইতে এক দেবদূত আমাদের এই "ধনধান্যে পুষ্পে ভরা " বসুন্ধরার 'সকল দেশের রাণী' বাংলাদেশের দুর্দশা অবলোকন করিবার নিমিত্তে বন্দর নগরীর বুকে অবতরণ করিলেন । কিন্তু বিধি বাম ! দেবদূত যেই স্থানে ল্যান্ড করিলেন সেই স্থান ছিলো বস্তুত ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল ! সীসাময় বিষাক্ত বাতাস হইতে রক্ষা পাইতে মুখে মাস্ক পড়িয়াছিলেন বলিয়া অন্ধকারে তাহার দৃষ্টিভ্রম ঘটিয়াছিলো। তাই আর শেষ রক্ষা হইলো না। দেবদূত ম্যানহোলের ভিতর ভাসিতে ভাসিতে অবশেষে কর্ণফুলির জেটিতে আসিয়া পড়িলেন । দেবদূত এক মাছের ট্রলারে উঠিবার চেষ্টা করিলেন । জেলেরা মুখোশ পরা দেবদূতকে চোর মনে করিয়া আচ্ছামতো উত্তম-মধ্যম দিয়া ছাড়িয়া দিল । দেবদূত ছিন্নবস্ত্র রক্তাক্ত শরীর লইয়া রাস্তায় আসিয়া দাড়াঁইলেন । তখন দেখা দিলো নতুন বিপত্তি । কোথা হইতে চকিতে দুই মহিলা আসিয়া তাহার দুই হাত ধরিয়া টানিতে লাগিল । তাহাদের টানাটানিতে দেবদূতের প্রাণ ওষ্ঠাগত হইবার জোগাড় হইলো । ইতিমধ্যে সৌভাগ্যক্রমে কোথা হইতে এক পুলিশ ভ্যানের আগমন ঘটিল । মহিলাদ্বয় তড়িত দেবদূতকে ধাক্কা মারিয়া অশ্লীল গালি পাড়িতে পাড়িতে মুহুর্তের মধ্যে উধাও হইয়া গেল । দেবদূত টলিতে টলিতে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়িয়া গেলেন । এক পুলিশ কাছে আসিয়া দেবদূতকে মাতাল মনে করিয়া পাছায় কষিয়া এক লাথি ঝাড়িল । অতপর তাহাকে চ্যাংদোলা করিয়া হিন্দী ছবির স্টাইলে পিক আপ ভ্যানের ভিতর ছুড়িয়া ফেলিল । দেবদূতের সমস্ত হাড়গোড় মড়মড় করিয়া উঠিল ।

আরো অনেক লাথি-গুঁতা, কিল-চাপপর মারিবার পর তাঁহাকে থানার ওসির সামনে হাজির করা হইলো । ওসি কিয়তক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন-
ঠিক করিয়া বল, তুই চোর না মাতাল?
দেবদূত কহিলেন, আমি দেবদূত ।
ওসি বিচক্ষণ হাসি দিয়া কহিলেন, আই সি! ব্যাটা তাহলে গুপ্তচর ! কার ? বুশ না লাদেনের ?
দেবদূত বোকার মতো কহিলেন, আমি কৃষ্ণের দূত ।
কৃষ্ণ ! মানে- লাল কৃষ্ণ আদভানি ? তা কার কাছে পাঠাইয়াছেন, আওয়ামী লীগ নাকি বি.এন.পি-র কাছে?
তিনি আমাকে সাধারণ মানুষের কাছে পাঠাইয়াছেন ।
মাই গুডনেস ! পাবলিক ডিলিংস ! ভেরি ডেঞ্জারাস ! এই সেন্ট্রি, ব্যাটাকে 14 নাম্বার সেলে ঢুকিয়ে দড়ি দিয়ে বাঁধ । আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফোন লাগাই ।

দেবদূতকে দড়ি দিয়া শক্ত করিয়া চৌকির সহিত বাঁধা হইলো । আপাদমস্তক দড়িবেষ্টিত হইয়া দেবদূত উদাস নেত্রে এমনভাবে ছাদের দিকে তাকাইয়া রহিলেন, যেন এখনি ছাদ ভেদ করিয়া স্বয়ং কৃষ্ণ দেথা দিবেন । কিন্তু দেবদূত তো আর দ্রৌপদী নহেন যে "কৃষ্ণ ডাকিবামাত্র হাজির হইতে বাধ্য থাকিবেন "। অধিকন্তু কৃষ্ণ তথন বৈকুনঠে প্রেমলীলায় মত্ত । তাই দেবদূত কৃষ্ণের দেখা পাইলেন না । ইত্যেবসরে ওসি সাহেব এক মস্ত বড় তেল চকচকে ডান্ডা লইয়া প্রবেশ করিলেন । সেই ডান্ডা দর্শনে দেবদূত জ্ঞান হারাইলেন, ওসির সাগরেদের হাতে কি ছিলো তা আর দেথিবার অবকাশ পাইলেন না ।

** লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো কলেজ পুর্নমিলনীর ম্যাগাজিনে। অতপর সামহয়্যারে। এখন প্রিয় ব্লগ সচলায়তনে আপনাদের মতামতের প্রতীক্ষায়।


মন্তব্য

কর্ণজয় এর ছবি

বেশতো..

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বাহ্
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

দ্রোহী এর ছবি

পরে কি ঘটলো, জানার অপেক্ষায় থাকলাম। লেখাটা ভালো লেগেছে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হুম।উত্তম হইয়াছে।

ঝরাপাতা এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে। পরের পর্ব আসবে শিগগির।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হে হে। এই পোস্টের নাম্বারটা শয়তানের নাম্বার! 666!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।